1. অন্যরকম
  2. অপরাধ বার্তা
  3. অভিমত
  4. আন্তর্জাতিক সংবাদ
  5. ইতিহাস
  6. এডিটরস' পিক
  7. খেলাধুলা
  8. জাতীয় সংবাদ
  9. টেকসই উন্নয়ন
  10. তথ্য প্রযুক্তি
  11. নির্বাচন বার্তা
  12. প্রতিবেদন
  13. প্রবাস বার্তা
  14. ফিচার
  15. বাণিজ্য ও অর্থনীতি

গুরুত্বপূর্ণ স্থাপনা ঘিরে সিসি ক্যামেরা বাড়াবে সরকার

ডেস্ক রিপোর্ট : ইবার্তা টুয়েন্টিফোর ডটকম
সোমবার, ১৯ ফেব্রুয়ারি, ২০২৪

রাজধানীর বিভিন্ন এলাকার রাস্তায় ক্লোজড সার্কিট (সিসি) ক্যামেরা বসায় ‍সিটি করপোরেশন। বিভিন্ন প্রতিষ্ঠান বা ভবন মালিকরা নিজ উদ্যোগেও নিরাপত্তার কথা চিন্তা করে সিসি ক্যামেরা লাগান তাদের স্থাপনায়। এবার দেশজুড়ে নিরাপত্তা বলয় শক্তিশালী করতে আরও ক্যামেরা বসানোর সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে। ঢাকা মেট্রোপলিটন এলাকাসহ সারা দেশে গুরুত্বপূর্ণ সরকারি-বেসরকারি প্রতিষ্ঠান ও স্থাপনায় বসবে এসব ক্যামেরা। স্ব-স্ব প্রতিষ্ঠানের উদ্যোগে ক্যামেরা বসানো হবে এবং এসব সিসিটিভির ফুটেজ যাতে প্রয়োজনে পুলিশ পেতে পারে সেই ব্যবস্থাও নেওয়ার কথা এতে বলা হয়েছে।

সম্প্রতি স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের এক চিঠি থেকে জানা গেছে, সিসি ক্যামেরা বসানোর ক্ষেত্রে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নিতে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের সিনিয়র সচিব, পুলিশের মহাপরিদর্শক (আইজিপি), ঢাকা মহানগর পুলিশের (ডিএমপি) কমিশনারসহ সংশ্লিষ্টদের অনুরোধ জানানো হয়েছে।

ওই চিঠি থেকে আরও জানা গেছে, গত বছরের অক্টোবরে আইনশৃঙ্খলা সংক্রান্ত মন্ত্রিসভা কমিটির সভায় সন্ত্রাস ও জঙ্গিবাদী কর্মকাণ্ড নিয়ন্ত্রণে ঢাকা মহানগরসহ সারা দেশের গুরুত্বপূর্ণ সরকারি-বেসরকারি প্রতিষ্ঠান ও স্থাপনায় নিজ উদ্যোগে সিসি ক্যামেরা বসানোর অনুরোধ জানানোর সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়। সংশ্লিষ্ট ভবন ও জানমালের নিরাপত্তার স্বার্থে ওই সিসিটিভির ফুটেজ যাতে প্রয়োজনে কাছের থানা-পুলিশ পেতে পারে, সে বিষয়েও কার্যকর ব্যবস্থা নিতে অনুরোধ জানানোর সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়। ওই চিঠিতে সই করেন মন্ত্রণালয়ের জননিরাপত্তা বিভাগের উপসচিব মোহাম্মাদ রাশেদ হোসেন চৌধুরী।

কয়েক বছর আগে ঢাকার দুই সিটি করপোরেশন বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ সড়কের মোড়ে অন্তত ৫০০ সিসি ক্যামেরা লাগিয়েছিল। আরও ক্যামেরা স্থাপনের কথাও ছিল। তবে স্থাপিত সিসি ক্যামেরাগুলোর বেশিরভাগই রক্ষণাবেক্ষণের অভাবে এখন অকেজো। ফলে এগুলো থেকে পুলিশ কোনও সাহায্য পাচ্ছে না, ফলে অপরাধীদের ধরতে বেগ পেতে হচ্ছে।

গত ৭ নভেম্বর দিনগত রাত পৌনে ১২টার দিকে মোটরসাইকেলে করে যাওয়ার সময় রাজধানীর ইস্কাটনে বেপরোয়া গতির একটি ট্রাকের চাপায় ঘটনাস্থলেই মারা যান আরিফুল ইসলাম (৪০) ও সৌভিক করিম (৪২) নামে সাবেক দুই ছাত্রনেতা। কিন্তু দুর্ঘটনার এতদিন পেরিয়ে গেলেও ট্রাকটি কীভাবে পালিয়ে গেলো তা এখনও বের করা সম্ভব হয়নি। ঘটনার কিছু দূর পর সিসিটিভি অকেজো থাকায় এই সংকট তৈরি হয়েছে।

ওই ঘটনায় মামলার তদন্ত কর্মকর্তা হাতিরঝিল থানার উপপরিদর্শক (এসআই) সজিব কোচ বলেন, মগবাজার এলাকার জনকণ্ঠ ভবন পর্যন্ত সিসিটিভি ক্যামেরায় স্পষ্ট দেখা গেছে ট্রাকটি। এরপর সিসিটিভি অকেজো থাকায় ট্রাকটি কোন দিকে দিয়ে বের হয়েছে তা আর ফলো করতে পারিনি। তিনি বলেন, বর্তমানে সময়ে সিসিটিভি ফুটেজ একটি গুরুত্বপূর্ণ বিষয়। সব স্থানে যদি সিসিটিভির ব্যবস্থা থাকতো বা সচল থাকতো তাহলে আমাদের তদন্তের অগ্রগতি আরও বেড়ে যেত।

আবার ঘটনাস্থলের চারপাশে সিসিটিভির ব্যবস্থা থাকায় সম্প্রতি অনেক বড় বড় ঘটনা আইনশৃঙ্খলা বাহিনীকে উদঘাটন করতেও দেখে গেছে। ফলে অপরাধ দমনে বর্তমান সময়ে সিসিটিভি ক্যামেরা একটি গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখছে বলে মনে করছেন সংশ্লিষ্ট অপরাধ বিশেষজ্ঞরা। তারা বলছেন, শুধু সিসি ক্যামেরা বসালেই হবে না, সেইসঙ্গে এগুলোর সঠিক রক্ষণাবেক্ষণও প্রয়োজন রয়েছে। সে উদ্যোগটাও প্রশাসনকে নিতে হবে। তাহলে অপরাধের মাত্রা অনেকটা কমে আসবে।

পুলিশ সদর দফতর বলেছে, নাশকতা, ছিনতাই, সন্ত্রাস, সরকারি-বেসরকারি প্রতিষ্ঠান ও বাড়িতে চুরিসহ বিভিন্ন অপরাধ বেড়েছে। মোবাইল ফোন ছিনতাইকারী চক্রকেও বাগে আনা যাচ্ছে না। বিভিন্ন দফতর থেকে গুরুত্বপূর্ণ ফাইলও চুরি হয়েছে। পুলিশের মাসিক অপরাধ সভায়ও বিষয়টি উঠেছে। কিন্তু বেশিরভাগ ঘটনাস্থলে বা আশপাশে সিসি ক্যামেরা না থাকায় বা ফুটেজ না পাওয়ায় অপরাধীদের শনাক্ত ও গ্রেফতার করা যাচ্ছে না। অপরাধীদের দমনে তথ্যপ্রযুক্তির এই সময়ে সিসি ক্যামেরার ফুটেজ খুব গুরুত্বপূর্ণ, যা অপরাধ রোধ ও অপরাধীদের ধরতে পুলিশকে বিশেষ সাহায্য করে। কিন্তু পুলিশ এই সাহায্য পাচ্ছে না। বিষয়টি পুলিশ সদর দফতরে পক্ষ থেকে ঊর্ধ্বতন মহলে জানানো হয়।

দফতর আরও বলছে, গত বছর সারা দেশে সরকারি-বেসরকারি প্রতিষ্ঠান ও বাসাবাড়িতে ডাকাতির ঘটনায় ২৬১টি মামলা হয়েছে। এর মধ্যে সরকারি অনেক কার্যালয়ের গুরুত্বপূর্ণ নথি গায়েবের মামলাও হয়েছে। কিন্তু এসব স্পর্শকাতর ঘটনার বেশিরভাগ স্থানে ও এর আশপাশে সিসি ক্যামেরা ছিল না। তাই ফুটেজ পাওয়া যায়নি। সেই মামলাগুলোর সুরাহা হচ্ছে না।

এ প্রসঙ্গে বাংলাদেশ পুলিশের সাবেক আইজিপি শহিদুল হক বলেন, বর্তমানে সরকারি-বেসরকারি ও ব্যক্তিগত মালিকানায় লোকজন সিসিটিভি ক্যামেরা বসাচ্ছে। এমন কাজকে স্বাগত জানাই। তবে শুধু সিসি ক্যামেরা বসালেই হবে না, সেই সঙ্গে সেটির সঠিক রক্ষণাবেক্ষণ প্রয়োজন রয়েছে। সে উদ্যোগটাও নিতে হবে। সেক্ষেত্রে আমি বলবো, প্রতিটি থানার পুলিশ সদস্যদের তত্ত্বাবধানে রাখতে হবে। কিছু দিন পর পর এসব সিসিটিভি সচল রয়েছে কিনা তা নজরে রাখার বিষয়ে বলতে হবে। আর সেই কাজটি করতে হবে প্রতিটি থানায় নিরাপত্তায় নিয়োজিত কর্মকর্তাদের। তাহলে একবার কোনও ঘটনার সিসিটিভি ফুটেজ না পাওয়া গেলে পরবর্তীতে দ্বিতীয়বার কোনও ঘটনার ক্ষেত্রে সিসিটিভিতে রেকর্ড রাখতে লোকজন সতর্ক থাকবে।

পুলিশ সদর দফতরের উপমহাপরিদর্শক (অপারেশন্স) আনোয়ার হোসেন বলেন, অপরাধী শনাক্তে তথ্যপ্রযুক্তি এখন অনেক গুরুত্বপূর্ণ। কোনও এলাকা সিসি ক্যামেরার আওতায় থাকলে সেখানে এমনিতে অপরাধ কমে যায়। আবার কিছু ঘটলেও সহজে রহস্য উদঘাটন করে অপরাধীকে শাস্তির আওতায় আনাসহ দায়িত্বরতদের জবাবদিহি নিশ্চিত করা যায়।

এ প্রসঙ্গে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সমাজকল্যাণ ও গবেষণা ইনস্টিটিউটের সহযোগী অধ্যাপক এবং সমাজ ও অপরাধ বিশেষজ্ঞ ড. তৌহিদুল হক বলেন, প্রযুক্তি ব্যবহার করে অপরাধ নিয়ন্ত্রণ করছে সারা বিশ্বে। সেক্ষেত্রে বাংলাদেশও পিছিয়ে নেই। প্রযুক্তি কাজে লাগিয়ে অপরাধ দমনে কাজ করছে প্রতিনিয়ত। বর্তমানে সিসিটিভি ক্যামেরা একটি অন্যতম মাধ্যম। তবে আমাদের দেশে এসব সিসিটিভি ক্যামেরা কন্ট্রোল ও মনিটরিংয়ের অভাব রয়েছে। সিসিটিভি আমরা যে অর্থে ব্যবহার করছি সেটি প্রকৃতভাবে বাস্তবায়ন হচ্ছে না। সম্প্রতি আমরা শুনছি ও দেখছি, কোনও ঘটনার পর অপরাধীকে শনাক্ত করতে গেলে সিসিটিভি ফুটেজ পেতে সমস্যা হয়। দেখা গেছে সেখানে ক্যামেরাটি কাজ করছে না কিংবা অচল ছিল। এতে বিচারপ্রার্থীদের আস্থার জায়গাটা নষ্ট হচ্ছে। শুধু টাকা খরচ করে সিসিটিভি স্থাপন করলেই হবে না। সেটি নিয়ন্ত্রণ ও মনিটরিং করার ব্যবস্থা করতে হবে।

তিনি আরও বলেন, পুলিশ যখন তদন্তের স্বার্থে কারও ব্যক্তিগত বাড়ি বা প্রতিষ্ঠানের সিসিটিভি ফুটেজ চাইবে, অনেকে বিভিন্ন ভয়ভীতির জন্য সেটি দিতে রাজি না হতে পারে। লোকজন যেন কোনও ভয়ভীতি ছাড়া স্বাচ্ছন্দ্যে চলতে পারে, সেটির ব্যবস্থা করতে হবে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীকে। এর জন্য জনগণের সঙ্গে পুলিশেরও সমন্বয় করে কাজ করার পরামর্শ দেন এই অপরাধ বিশেষজ্ঞ।


সর্বশেষ - জাতীয় সংবাদ