1. অন্যরকম
  2. অপরাধ বার্তা
  3. অভিমত
  4. আন্তর্জাতিক সংবাদ
  5. ইতিহাস
  6. এডিটরস' পিক
  7. খেলাধুলা
  8. জাতীয় সংবাদ
  9. টেকসই উন্নয়ন
  10. তথ্য প্রযুক্তি
  11. নির্বাচন বার্তা
  12. প্রতিবেদন
  13. প্রবাস বার্তা
  14. ফিচার
  15. বাণিজ্য ও অর্থনীতি

চট্টগ্রামে চাল নিয়ে চালবাজি করছে কারা?

নিউজ এডিটর : ইবার্তা টুয়েন্টিফোর ডটকম
মঙ্গলবার, ২০ ফেব্রুয়ারি, ২০২৪

চট্টগ্রামে চাল নিয়ে চালবাজি চলছে। কোথাও নির্ধারিত দামে চাল বিক্রি হচ্ছে না। ব্যবসায়ীদের ইচ্ছামতো দামেই বিক্রি হচ্ছে সব রকমের চাল, যা ভোক্তা সাধারণের ক্রয় ক্ষমতার বাইরে। এ নিয়ে কোনো আপত্তি করলে উল্টো শুনিয়ে দিচ্ছে চালের দাম নিয়ে আরও অস্থিরতার সতর্কতা।

সোমবার চট্টগ্রাম মহানগরীর সবক’টি বাজারে চালের ক্রেতা ও বিক্রেতাদের সঙ্গে আলাপ করে এসব তথ্য জানা গেছে। নগরীর বহদ্দারহাট মক্কা রাইস নামে এসক চালের দোকানে চাল কিনতে আসা জহিরুল আলম (৫৪) জানান, বিক্রেতাদের ইচ্ছামতো দামে বাজারে বিক্রয় হচ্ছে চাল।

তিনি জানান, চট্টগ্রামের খুচরা পর্যায়ে গুণগত মানভেদে কাটারি ও মিনিকেট প্রতিকেজি চাল বিক্রয় হচ্ছে ৬৮ থেকে ৮২ টাকা পর্যন্ত। যা সরকারি নির্ধারিত মূল্যের চেয়ে ৩ থেকে ১৭ টাকা বেশি। ফলে চালের দাম এখন সাধারণ ভোক্তার ক্রয় ক্ষমতার বাইরে। চাল কেনা নিয়ে বাজারে প্রতিনিয়ত হিমশিম খাচ্ছেন সাধারণ ভোক্তারা।

চালের দাম চড়া নিয়ে জানতে চাইলে মক্কা রাইসের মালিক ইমরান হোসেন বলেন, চাল নিয়ে সরকার যাই বলুক, সেগুলো শুনছে না কেউ। আড়ত থেকে চড়া দামে কিনে আনি, সে হিসাবে প্রতি বস্তায় ১০০ টাকা লাভে বিক্রয় করি। চালের বাজারের পরিস্থিতি ভালো নয়। সামনে আরও বাড়তে পারে।’

নির্ধারিত দামে চাল বিক্রি না হওয়ার কথা স্বীকার করেছেন চট্টগ্রামের বৃহৎ চালের বাজার পাহাড়তলী বণিক সমিতির সাবেক সাধারণ স¤পাদক মোহাম্মদ নিজাম উদ্দিন। তিনি বলেন, চালের দাম নির্ধারণ করে দিয়ে তো কোনো লাভ হয়নি। আমরা এর সুফল পাচ্ছি না। মিলাররা আমাদের কাছে বাড়তি দরেই চাল বিক্রি করছেন। ফলে বাড়তি দরে আমরাও বিক্রয় করছি।

তিনি বলেন, চট্টগ্রামে চালের অধিকাংশ চাহিদা পূরণ হয় বগুড়ার মিলারদের চালে। মিলাররই নিয়ন্ত্রণ করে চালের বাজার। সামনে রোজা। কাজেই বাজারদর আরও বাড়তে পারে। এতে অস্থির হয়ে উঠতে পারে চালের বাজার। বাজার স্থিতিশীল রাখতে হলে সরকারের কর্মকর্তারা যেভাবে তদারকি করছেন সেটা অব্যাহত রাখতে হবে। একটু ছাড় পেলেই চালের বাজার অস্থির হয়ে উঠতে পারে। তাই অসাধু ব্যবসায়ীদের বিষয়ে তথ্য সংগ্রহ করতে হবে। প্রকৃত ব্যবসায়ীদের সঙ্গে আলোচনায় বসতে হবে।

চাল ব্যবসায়ীরা জানান, গত ২৪ জানুয়ারি ব্যবসায়ীদের সঙ্গে আলোচনা করে চালের দাম নির্ধারণ করে দেন বগুড়ার জেলা প্রশাসক মো. সাইফুল ইসলাম। সেদিন কাটারি ও মিনিকেট চাল মিলার পর্যায়ে ৬২ টাকা, পাইকারি পর্যায়ে ৬৩ টাকা ও ভোক্তা পর্যায়ে ৬৫ টাকা নির্ধারণ করে দেওয়া হয়।

ওই সময় বগুড়ার জেলা প্রশাসক চালের দাম বেশি নিলে ব্যবসায়ী ও চাল নিয়ে গুজবকারীদের বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা নেওয়ার হুঁশিয়ারি দেন। তিন সপ্তাহ আগে নেওয়া এই সিদ্ধান্তের প্রতি বুড়ো আঙুল দেখিয়ে বাড়তি দরে চাল বিক্রি করছেন বগুড়ার মিলাররা। নিয়মের তোয়াক্কা না করেই প্রতিবস্তা চালে ১০০ টাকা বাড়তি লাভ করে যাচ্ছেন।

চট্টগ্রামের চালের আড়তদাররা বলছেন, মিলাররা চালের দাম ধরে রেখেছেন। কম দামে চাল পাওয়া যাচ্ছে না। ৬২ টাকা করে বিক্রি করার জন্য বললেও তারা সেটা মানছেন না। মিলাররাই বিক্রি করছেন ৫০ কেজির প্রতিবস্থা ৩ হাজার ২০০ টাকায়। প্রতি বস্তায় ৭০ থেকে ৭৫ টাকা গাড়ি ভাড়া আছে। কাজেই পাইকারি পর্যায়ে বিক্রি হচ্ছে ৩ হাজার ৩০০ টাকা। আর খুচরা পর্যায়ে বিক্রি হচ্ছে ৩ হাজার ৪০০ টাকায়। পাহাড়তলীর চাল আড়তদার মোহাম্মদ হাবিবুর রহমান বলেন, বগুড়ার জেলা প্রশাসক কত টাকায় চাল বিক্রি হবে, সেটা নির্ধারণ করে দিয়েছেন। কিন্তু মিলাররা তো সেটা মানছেন না। আমরা আড়তদাররা বাড়তি দরে চাল কিনতে বাধ্য হচ্ছি। ফলে আমরাও বাড়তি দামে বিক্রি করছি। আর পাইকার থেকে খুচরা ব্যবসায়ী পর্যন্ত যেতে যেতে দাম আরও বেড়ে যাচ্ছে।

চাক্তাই চাল ব্যবসায়ী মালিক সমিতির সাধারণ সম্পাদক ওমর আজম বলেন, কিছু অসাধু ব্যবসায়ী বাড়তি দরে চাল বিক্রি করছেন। একজন আড়তদারকে বাড়তি দরে চাল কিনতে হচ্ছে। তাহলে ভোক্তার হাতে যেতেই দাম বেড়ে যাবে। এটাই স্বাভাবিক। আমরা মনে করি, তদারকিটা সব জায়গায় সমানভাবে হওয়া দরকার।

নির্ধারিত দামে চাল বিক্রি না হওয়া প্রসঙ্গে প্রশ্ন করা হলে বগুড়ার রাইস মিল মালিক আরিফুজ্জামান পাঠান বলেন, জেলা প্রশাসক চালের দাম নির্ধারণ করে দিলেও সে দামে চাল বিক্রি করা সম্ভব হয় না। কারণ প্রতি মণ ধান ১ হাজার ২৫০ টাকা দিয়ে কিনতে হচ্ছে। আমাদের খরচ বেড়ে গেছে। তাই জেলা প্রশাসক নির্ধারিত ৬২ টাকা কেজিতে পাইকারের কাছে চাল বিক্রি করতে গেলে লোকসান হবে। এটা আমরা কাউকে বোঝাতে পারছি না। অপর প্রশ্নের জবাবে বলেন, মৌসুম শেষ হওয়ায় ধানের সংকট রয়েছে। তাই চালের দাম আরও বাড়তে পারে।

বগুড়ার বুশরা অ্যাগ্রো ফুডসের স্বত্বাধিকারী মোহাম্মদ বেলাল হোসেন বলেন, জেলা প্রশাসক চালের দাম নির্ধারণ করে দিয়েছেন, এটা ঠিক। কিন্তু ওই দামে চাল বিক্রি করার কথা বলা হয়েছে। আমরা সে দামে ধান কিনতে পারছি না। কারণ ধানের সরবরাহ কম, তাই মিল অধিকাংশ সময় বন্ধ থাকে। এ কারণে চালের সরবরাহও কম। সরকারের নজরদারিও রয়েছে। তবুও জেলা প্রশাসকের নির্ধারিত দরেই চাল বিক্রি করা সম্ভব হচ্ছে না। আবার চালের মান ভালো-খারাপের কারণে দামের ভেদাভেদও রয়েছে।

জানতে চাইলে বগুড়ার জেলা প্রশাসক মো. সাইফুল ইসলাম বলেন, চালের দাম বাড়ানোর চেষ্টা করা হলে কঠোর ব্যবস্থা নেওয়া হবে। যে রাইস মিল মালিক পাইকারের কাছে বাড়তি দরে চাল বিক্রি করেছেন, তার বিষয়ে তথ্য পাঠালে আমি প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করব।

জাতীয় ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণ অধিদপ্তর চট্টগ্রাম বিভাগীয় কার্যালয়ের উপপরিচালক ফয়েজ উল্যাহ বলেন, বিষয়টি আমরা অবশ্যই আমাদের ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষকে জানাব। পাশাপাশি আমরা প্রতিনিয়ত বাজার তদারকি করছি। আশা করছি, কোনো ধরনের সমস্যা হবে না। কনজ্যুমারস অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশ (ক্যাব) কেন্দ্রীয় কমিটির ভাইস প্রেসিডেন্ট এস এম নাজের হোসাইন বলেন, অসাধু ব্যবসায়ীরা এক রাতেই মুনাফা করে আঙুল ফুলে কলাগাছ হয়ে যেতে চান। এই প্রবণতা থেকে বের হয়ে আসতে হবে। নিয়ম মেনে সরকার, জনগণ সবাইকে সহযোগিতা করতে হবে। কোনো কিছুর তোয়াক্কা না করেই ব্যবসা করে গেলাম, এটা তো হতে পারে না। কাজেই প্রশাসনের উচিত আরও কঠোর পদক্ষেপ নেওয়া।


সর্বশেষ - জাতীয় সংবাদ