1. অন্যরকম
  2. অপরাধ বার্তা
  3. অভিমত
  4. আন্তর্জাতিক সংবাদ
  5. ইতিহাস
  6. এডিটরস' পিক
  7. খেলাধুলা
  8. জাতীয় সংবাদ
  9. টেকসই উন্নয়ন
  10. তথ্য প্রযুক্তি
  11. নির্বাচন বার্তা
  12. প্রতিবেদন
  13. প্রবাস বার্তা
  14. ফিচার
  15. বাণিজ্য ও অর্থনীতি

বিচারপতি মানিকের ওপর হামলা ও বিএনপির অগণতান্ত্রিক রাজনীতির সংস্কৃতি

অধ্যাপক ড. মিজানুর রহমান : ইবার্তা টুয়েন্টিফোর ডটকম
মঙ্গলবার, ৮ নভেম্বর, ২০২২

বাংলাদেশ সুপ্রিম কোর্টের আপিল বিভাগের সাবেক বিচারপতি এ এইচ এম শামসুদ্দিন চৌধুরী মানিক গত ২ নভেম্বর ২০২২ তারিখে পল্টনে আয়োজিত বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী যুবদলের একটি সমাবেশের পাশ দিয়ে যাচ্ছিলেন। তখন কুরুচিপূর্ণ ভাষায় গালিগালাজ করতে করতে একদল কর্মী তার ওপর ঝাঁপিয়ে পড়ে বলে তিনি অভিযোগ করেছেন। হামলাকারীরা তার গাড়ি ভাঙচুর করে। এও জানা গেছে, দুর্বৃত্তরা কেবল গাড়ি ভাঙচুর করে শান্ত হয়নি, এ সময় গাড়িতে থাকা বিচারপতি মানিক, তার গাড়িচালক ও গানম্যানকে তারা কিল-ঘুষি মেরে আহত করেছে।

বিভিন্ন পত্রপত্রিকার খবরে প্রকাশ, এ ঘটনায় বিএনপির অজ্ঞাতনামা ৫০ নেতা-কর্মীকে আসামি করে পল্টন থানায় মামলা করা হয়েছে। পুলিশ কয়েকজন ছাত্রদল কর্মীকে গ্রেফতার করেছেন। প্রসঙ্গক্রমে উল্লেখ করা যেতে পারে, এরও আগে ২০১৫ সালের অক্টোবরে তিনি বাংলাদেশ সুপ্রিম কোর্ট থেকে অবসর নেওয়ার পর যখন যুক্তরাজ্যে গিয়েছিলেন তখন লন্ডনের বেথনাল গ্রিনে বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী দলের জনৈক সদস্য কর্তৃক তাকে শারীরিকভাবে নির্যাতন করার অভিযোগ রয়েছে। সংবাদমাধ্যমে প্রচারিত খবরে জানা যায়, তার মেয়ে নাদিয়া চৌধুরী বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী দলের ওই সদস্যের বিরুদ্ধে এ অভিযোগ করেছেন।

সাবেক বিচারপতি এ এইচ এম শামসুদ্দিন চৌধুরী মানিকের ওপর বিএনপির ক্ষোভের কারণ কী? বিবিসি বাংলায় প্রকাশিত এক খবরে জানা যায়, দুটি মামলার রায়ের কারণে বিএনপির অনেকে তার ওপর ক্ষিপ্ত হয়েছেন। এর মধ্যে একটি হলো- কর্নেল আবু তাহের হত্যা মামলা। এ মামলার রায়ে বিচারপতি এ এইচ এম শামসুদ্দিন চৌধুরী মানিক কর্নেল তাহেরের ফাঁসির রায়কে ঠান্ডা মাথার খুন বলে অভিহিত করেন। যদিও তিনি বলেননি জিয়াউর রহমান ঠান্ডা মাথায় খুন করেছেন, বিএনপি ধরে নেয় জিয়াউর রহমানকেই খুনি বলা হয়েছে।

এরই জের ধরে সাবেক বিচারপতি এ এইচ এম শামসুদ্দিন চৌধুরী মানিকের ওপর হামলা হয়েছে বলে ধারণা করা হচ্ছে। এ ঘটনায় মোটিভ বেশ স্পষ্ট।

বঙ্গবন্ধু হত্যার বিচার, যুদ্ধাপরাধীদের বিচারের মাধ্যমে বাংলাদেশ চেষ্টা করছে আইনের শাসনের কাঙ্ক্ষিত লক্ষ্যে পৌঁছতে। বাংলাদেশ দায়মুক্তির সংস্কৃতি থেকে বেরিয়ে এসেছে। অবশ্য সন্তুষ্ট হয়ে বসে থাকার সুযোগ নেই।

বর্তমান সরকারকে নিরলস কাজ করে যেতে হবে। তবে আইনের শাসন প্রতিষ্ঠা কেবল সরকারের একার দায়িত্ব নয়। দায়িত্ব রয়েছে বিরোধী রাজনৈতিক দলগুলোর, রয়েছে নাগরিক সমাজের। আইনের শাসনে বিশ্বাস করলে আদালতের রায়ের প্রতি সম্মান প্রদর্শন করতে হবে। বিচারিক আদালতের রায়ে সন্তুষ্ট না হলে আপিল আদালতে যেতে হবে। সেখানে ব্যর্থ হলে আরও উচ্চতর আদালতে যেতে হবে। সবশেষে জনতার আদালত তো রইল। গণতান্ত্রিক সংস্কৃতির ভিত্তি হলো শান্তিপূর্ণভাবে নিজেদের মতামতকে জনগণের কাছে তুলে ধরা। এর কোনো ব্যত্যয় হতে পারে না।

বিখ্যাত জার্মান দার্শনিক ইয়র্গেন হাবার্মাস জনপরিসরের (public sphere) অন্যতম বৈশিষ্ট্য হিসেবে বল প্রয়োগ না করে স্বাধীনভাবে মতামত তুলে ধরার কথা উল্লেখ করেছেন। ব্যক্তিগত বা দলীয়ভাবে যে কেউ মতামত প্রকাশ করতে পারে। এক মতের পাল্টা আরেক মত প্রকাশিত হতে পারে। কথার বদলে কথাই কাম্য। কথার বদলে আঘাত প্রাপ্য নয়। এরকম হলে জনপরিসর ভেঙে পড়ে। সমাজে আইনের শাসন দূরীভূত হয়ে জঙ্গলের শাসন শুরু হয়। বাংলার ইতিহাসে একটি পর্যায়কে বলা হয়- মাৎস্যন্যায় দশা- মানে মাছের ন্যায়! মাছের জগতে বড় মাছ যেমন ছোট মাছকে খেয়ে ফেলে, তেমনি মানব সমাজে ক্ষমতাধর ব্যক্তি ক্ষমতাহীনের অধিকার হরণ করে। এ অবস্থা থেকে মুক্তির জন্যই মানুষ সামাজিক চুক্তিতে সম্মত হয়ে রাষ্ট্র গঠন করে। অন্যের অধিকার খর্ব করলে রাষ্ট্র অপরাধীকে বিচার করে। সহনাগরিক অপরাধ করলে একজন নাগরিক আইন নিজের হাতে তুলে নিতে পারে না। এখন প্রশ্ন হলো, বিচারপতি এ এইচ এম শামসুদ্দিন চৌধুরী মানিক কি কোনো অপরাধ করেছেন? যদি তর্কের খাতিরে ধরেও নিই তিনি বিএনপির বিরুদ্ধে অপরাধ করেছেন, বিচারপতি এ এইচ এম শামসুদ্দিন চৌধুরী মানিককে শাস্তি দেওয়ার অধিকার কি রাষ্ট্র বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী দলের কর্মীদের দিয়েছে? না, একদমই দেয়নি।

আগেই বলেছি, বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী দল ইতিহাসের বিচার জনগণের হাতেই ছেড়ে দিতে পারত। তাদের সেই ধৈর্য নেই। এর কারণ ইতিহাস তাদের পক্ষে নয়। আমরা দুঃখের সঙ্গে লক্ষ্য করেছি, ইতিহাসের বিভিন্ন পর্যায়ে বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী দল আইন অমান্য করেছে। বঙ্গবন্ধুর খুনিদের দায়মুক্তির বিধানকে পঞ্চম সংশোধনীর মাধ্যমে বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী দল সাংবিধানিক বৈধতা দিয়েছে। তখন বঙ্গবন্ধুর খুনিদের বিচার করার উদ্যোগ নেওয়া হলে বাংলাদেশ হয়তো রাজনৈতিক হত্যাকান্ডের অভিশাপ থেকে মুক্তি পেতে পারত। তাহলেও অন্তত জিয়াউর রহমানের খুনিদেরও বিচার হতো। পরবর্তীতে আওয়ামী লীগ বঙ্গবন্ধুর খুনিদের বিচারের ক্ষেত্রে সব প্রতিবন্ধকতা দূর করলেও বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী দল জিয়াউর রহমানের খুনিদের ব্যাপারে উদাসীন ছিল। দুর্ভাগ্যজনক হলেও সত্য, আইনের শাসনের ধারায় না ফিরে এ দলটি বরং রাজনৈতিক হত্যাকে প্রশ্রয় দিয়েছে। এর শীর্ষস্থানীয় নেতৃবৃন্দ যুক্ত থেকেছে। ২১ আগস্টের গ্রেনেড হামলার মতো ন্যক্কারজনক ঘটনায় বিচারের নামে প্রহসন করেছে, সাজিয়েছে জর্জ মিয়া নাটক।

গণতন্ত্র সেখানেই কার্যকর হতে পারে যেখানে রাজনৈতিক দলগুলো গণতন্ত্র মনস্ক। ক্যান্টনমেন্ট যে দলের আঁতুড়ঘর সেই দলের কাছ থেকে গণতান্ত্রিক মূল্যবোধ ও আইনের শাসনের পক্ষে থাকার আশা করা আর অরণ্যে রোদন করা একই কথা। তারা কথার জবাব কথা দিয়ে দিতে পারে না। তাদের আচরণ শক্তি বিবর্জিত পেশিশক্তি নির্ভর ভাড়াটে মাস্তানের মতো। তারা অল্পতেই রেগে আগুন হয়। সহজেই ক্ষেপে ওঠে। যদি বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী দল এ রকম আচরণ অব্যাহত রাখে, জনগণকে ভাবতে হবে এদেশে তাদের রাজনীতি করার অধিকার থাকা উচিত কি না? এ দলটির হাতে জনগণের নিরাপত্তা সুরক্ষিত নয়। এরা ইতোপূর্বে আন্দোলনের নামে পেট্রোল বোমায় মানুষ মেরেছে। এদের জ্বালাও-পোড়াও আন্দোলনে ক্ষতি হয়েছে রাষ্ট্রীয় ও জনগণের সম্পত্তি। গণতন্ত্রের অন্যতম পূর্বশর্ত রাজনৈতিক দলের শান্তিপূর্ণ সহঅবস্থান। কিন্তু দুঃখজনক কথা হলো- বাংলাদেশের প্রথম ৫০ বছরে আমরা গণতন্ত্রের এ শর্ত পূরণ করতে পারিনি। বিরোধী রাজনৈতিক দল বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী দলকে (বিএনপিকে) এর প্রধান দায়ভার বহন করতে হবে, অযাচিত শক্তি প্রদর্শন ও প্রয়োগ অযৌক্তিক আচরণ পরিহার করতে হবে, তবে বিএনপির মতো একটি দলের পক্ষে গণতন্ত্রের এ দাবি পূরণ করা সম্ভব কি না তা একটি বড় প্রশ্ন।

লেখক : অধ্যাপক ড. মিজানুর রহমান – সাবেক চেয়ারম্যান, জাতীয় মানবাধিকার কমিশন।


সর্বশেষ - জাতীয় সংবাদ