1. অন্যরকম
  2. অপরাধ বার্তা
  3. অভিমত
  4. আন্তর্জাতিক সংবাদ
  5. ইতিহাস
  6. এডিটরস' পিক
  7. খেলাধুলা
  8. জাতীয় সংবাদ
  9. টেকসই উন্নয়ন
  10. তথ্য প্রযুক্তি
  11. নির্বাচন বার্তা
  12. প্রতিবেদন
  13. প্রবাস বার্তা
  14. ফিচার
  15. বাণিজ্য ও অর্থনীতি

বিএনপির সর্বাঙ্গে ব্যথা, ঔষধ দিব কোথা?

বিভুরঞ্জন সরকার : ইবার্তা টুয়েন্টিফোর ডটকম
বুধবার, ২ মার্চ, ২০২২

সাবেক জ্যেষ্ঠ সচিব কাজী হাবিবুল আউয়ালের নেতৃত্বে নতুন নির্বাচন কমিশন নিয়োগ দেওয়া হয়েছে। প্রধান নির্বাচন কমিশনার এবং অন্য চার নির্বাচন কমিশনার শপথ নিয়ে আনুষ্ঠানিকভাবে কাজও শুরু করেছেন। তবে এই কমিশন নিয়ে বিভিন্ন মহলে মিশ্র প্রতিক্রিয়া দেখা যাচ্ছে। আওয়ামী লীগ এই কমিশনের ওপর আস্থা রাখছে। নতুন ইসি নিরপেক্ষ ও সুষ্ঠুভাবে আগামী জাতীয় সংসদ নির্বাচন করতে পারবে বলে সরকার পক্ষ মনে করছে। আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের বলেছেন, তারা অনুসন্ধান কমিটির কাছে যে ১০ জনের নাম জমা দিয়েছেন তার মধ্য থেকে একজনকেও কমিশনে রাখা হয়নি।

আওয়ামী লীগের প্রধান রাজনৈতিক প্রতিপক্ষ বিএনপি অভ্যাস মতোই কমিশন নিয়ে নিরাসক্ত ভাব দেখিয়েছে। বিএনপির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর বলেছেন, ‘নতুন নির্বাচন কমিশন নিয়ে তাদের কোনো মাথা ব্যথা নেই। তাদের মাথা ব্যথা একটা বিষয় নিয়েই যে নির্বাচনকালীন সরকারে কারা থাকবে’। বিএনপির সর্বাঙ্গে ব্যথা, ঔষধ দিব কোথা?

তাদের মাথা ব্যথা নির্বাচনকালীন সরকার নিয়ে, মানুষের ব্যথা লাঘবের কথা না বললে তাদের মাথা ব্যথা কমবে কীভাবে?

নির্বাচনের সময় শেখ হাসিনার নেতৃত্বাধীন সরকারেরই ক্ষমতায় থাকার সম্ভাবনা এখন পর্যন্ত শতভাগ। বিএনপির দাবি মতো নির্দলীয় বা অনির্বাচিত সরকারের অধীনে আগামী নির্বাচন অনুষ্ঠানের সম্ভাবনা এ কারণেই দেখা যাচ্ছে না যে, সংবিধানে তেমন সরকারের বিধান নেই। সংবিধান সংশোধন করে নতুন বিধান করার মতো জোর সংসদে বিএনপির নেই। বিএনপি নেতারা অবশ্য সরকার পতনের কথা বলে আসছেন বহু বছর ধরে। রাজপথের বাস্তবতা তেমন নয়। নির্বাচনকালীন সরকার নিয়ে বিএনপির যে মাথা ব্যথা তা দূর করার দাওয়াই কোনো ডাক্তার বা কবিরাজের কাছ থেকে পাওয়া যাবে, বেগম খালেদা জিয়ার ব্যক্তিগত চিকিৎসক দলের কাছে তেমন ওষুধ মজুত আছে বলেও কোনো খবর জানা যায়নি।

বিএনপি দরদি একজন খ্যাতিমান ডা. জাফরুল্লাহ চৌধুরী এতদিন বিএনপির জন্য নানা টোটকা ওষুধ বাতলেছেন, কিন্তু বিএনপি আবার ‘দুস্থ’দের চিকিৎসা নিতে আগ্রহী নয়। ফলে দলটির হয়ে বিনামূল্যে অনেক প্রেসক্রিপশন লিখলেও বিএনপি তা আমলে নেয়নি। নির্বাচন কমিশন প্রশ্নে আবার ডা. জাফরুল্লাহ চৌধুরী উল্টো অবস্থান নিয়ে সবাইকে তাক লাগিয়ে দিয়েছেন।

তার প্রস্তাব থেকেই প্রধান নির্বাচন কমিশনার নিয়োগ দেওয়ায় তিনি বেজায় খুশি। নতুন সিইসি কাজী হাবিবুল আউয়ালের ভূয়সী প্রশংসা করেছেন ডা. জাফরুল্লাহ চৌধুরী।

নির্বাচন কমিশনের কাজ দিয়েই প্রমাণ হবে, তারা তাদের ওপর অর্পিত দায়িত্ব সততা ও নিষ্ঠার সঙ্গে পালনে সক্ষম কি না। এদিকে শপথ নিয়েই নতুন প্রধান নির্বাচন কমিশনার (সিইসি) কাজী হাবিবুল আউয়াল সবাইকে সরাসরিই জানিয়ে দিয়েছেন, চ্যালেঞ্জ নিতে তিনি ভয় পান না। নির্বাচন কমিশনের সামনে প্রধান চ্যালেঞ্জ কোনটি সেটা এখনও নিশ্চয়ই তিনি বা তার সহকর্মীরা চিহ্নিত করেননি। তবে অনেক বিশ্লেষকই মনে করেন, রাজনৈতিক দলগুলোর আস্থা অর্জন করাই নতুন কমিশনের সামনে বড় চ্যালেঞ্জ। দশম জাতীয় সংসদ নির্বাচনে বিএনপিসহ অনেকেই অংশ নেয়নি।

ভোট ব্যবস্থাপনা নিয়ে ভোটারদেরও আস্থার সংকট- কেন্দ্রবিমুখিতা দেখা গেছে। নির্বাচনী সহিংসতায় অনেক প্রাণহানি ঘটেছে। এসব প্রতিবন্ধকতার বিষয় বিবেচনায় রেখে সব দলের অংশগ্রহণে একটি গ্রহণযোগ্য ও নিরপেক্ষ জাতীয় নির্বাচন উপহার দেওয়াই কাজী হাবিবুল আউয়ালের নেতৃত্বাধীন নতুন ইসির জন্য প্রধান চ্যালেঞ্জ বলে মনে করা হচ্ছে।

রাজনৈতিক দলগুলোর আস্থা অর্জনের পাশাপাশি ভোটারদেরও আস্থা অর্জন করতে হবে নতুন ইসিকে। তাদের ভোটকেন্দ্রমুখী করা বর্তমান কমিশনের কাছে একটা বড় চ্যালেঞ্জ। একই সঙ্গে নির্বাচনী কর্মকাণ্ডের সঙ্গে সম্পৃক্ত প্রশাসন, আইনশৃঙ্খলা বাহিনী, ভোটের দায়িত্বে থাকা পোলিং-প্রিসাইডিং কর্মকর্তাসহ রাজনৈতিক দলগুলোকে যদি ইসি সুষ্ঠুভাবে পরিচালিত না করতে পারে তা হলে নির্বাচন নিরপেক্ষ ও সুষ্ঠু হওয়া কঠিন। এটা নতুন সিইসি তার প্রাথমিক প্রতিক্রিয়ায় নিজেই উল্লেখ করেছেন। তাই এটা বলা যায় যে, নিজের কাজ সম্পর্কে নতুন সিইসির ধারণা আছে।

সাবেক নির্বাচন কমিশনার ব্রিগেডিয়ার জেনারেল (অব.) সাখাওয়াত হোসেন একটি দৈনিকের সঙ্গে সাক্ষাৎকারে বলেছেন, কাজী হাবিবুল আউয়ালের নেতৃত্বাধীন নির্বাচন কমিশনের প্রথম ও প্রধান দায়িত্ব সবগুলো দলকে নিয়ে একটা অন্তর্ভুক্তিমূলক নির্বাচন উপহার দেওয়া।

নতুন ইসির উচিত হবে সব অংশীজন- বিশেষ করে প্রশাসন ও আইনশৃঙ্খলা বাহিনীকে সঠিকভাবে কাজে লাগিয়ে নির্বাচন প্রক্রিয়া সুষ্ঠুভাবে সম্পাদন ও ভোটারদের নিরাপত্তা বিধান করা। নিজেদের মধ্যে বোঝাপড়া সুন্দর করে, একই সঙ্গে সাংবিধানিক ক্ষমতার কঠোর প্রয়োগ করে আগামীতে যেসব নির্বাচন রয়েছে সেগুলো পরিচালনার ব্যবস্থা করা।

ট্রান্সপারেন্সি ইন্টারন্যাশনাল বাংলাদেশ-টিআইবির নির্বাহী পরিচালক ড. ইফতেখারুজ্জামান বলেন, নতুন ইসির কাছে প্রথম চ্যালেঞ্জ হলো তারা যে শপথ নিলেন, তার সারমর্ম অনুধাবন করে সেটাকে নিজেদের মধ্যে আত্মীকরণ করা। তারা এতদিন পর্যন্ত সরকারি কর্মকর্তা হিসেবে দায়িত্ব পালন করেছে, সেখানে দীর্ঘদিন একটা আনুগত্য তারা লালিত করেছেন, সেখান থেকে বের হয়ে একটা মনস্তাত্ত্বিক পরিবর্তনের মাধ্যমে তাদের ঘুরে দাঁড়াতে হবে। মনে রাখতে হবে, তারা এখন একটি সাংবিধানিক প্রতিষ্ঠানের কর্ণধার হিসেবে দায়িত্ব পালন করবেন।

একটি ভালো নির্বাচন অনুষ্ঠান শুধু নির্বাচন কমিশনের একক চেষ্টায় সম্ভব হতে পারে না। নির্বাচন সংশ্লিষ্ট সব পক্ষেরই এক্ষেত্রে দায়িত্ব ও ভূমিকা আছে। সরকার এবং রাজনৈতিক দলগুলোর সহযোগিতা ছাড়া নির্বাচন কমিশন এগোতে পারবে না। নির্বাচনে যেনতেনভাবে জয়লাভের উদগ্র বাসনা অনেক সময় সহিংসতার জন্ম দেয়।

বিএনপি দলীয় স্বার্থকে যতটা গুরুত্বপূর্ণ বলে মনে করে, জনস্বার্থ ততটা কি তাদের কাছে গুরুত্ব পায়? খালেদা জিয়া বা তারেক রহমানের জন্য আন্দোলনের কথা বলে, মানুষের জীবনের দৈনন্দিন সমস্যার কথা কি সেভাবে উচ্চারিত হয়? তাদের মাথা ব্যথা নির্বাচনকালীন সরকার নিয়ে, মানুষের ব্যথা লাঘবের কথা না বললে তাদের মাথা ব্যথা কমবে কীভাবে?

লেখক : বিভুরঞ্জন সরকার – জ্যেষ্ঠ সাংবাদিক ও সহকারী সম্পাদক, আজকের পত্রিকা।


সর্বশেষ - জাতীয় সংবাদ