1. অন্যরকম
  2. অপরাধ বার্তা
  3. অভিমত
  4. আন্তর্জাতিক সংবাদ
  5. ইতিহাস
  6. এডিটরস' পিক
  7. খেলাধুলা
  8. জাতীয় সংবাদ
  9. টেকসই উন্নয়ন
  10. তথ্য প্রযুক্তি
  11. নির্বাচন বার্তা
  12. প্রতিবেদন
  13. প্রবাস বার্তা
  14. ফিচার
  15. বাণিজ্য ও অর্থনীতি

খোকা থেকে বঙ্গবন্ধু, অতঃপর বিশ্ববন্ধু

হামিদা নিসা : ইবার্তা টুয়েন্টিফোর ডটকম
বৃহস্পতিবার, ১৭ মার্চ, ২০২২

“টুঙ্গিপাড়ার সবুজ গাঁয়ে একটি খোকার বাড়ি;
স্বপ্ন মনে আকাশ ছোঁয়া, পাতাল দেবে পাড়ি।”

কবি আল আমিন মোহাম্মাদ ছড়া করে এভাবেই এঁকেছেন টুঙ্গিপাড়ার ছোট্ট খোকাকে।

এইপাড়ের তাল,নারকেল,হিজল, বকুলের পাতার ঝিরিঝিরি বাতাস আর ওই পাড়ের মধুমতীর মানস্যপুত্র ছোট্ট খোকা। দু’মেয়ের পর খোকার জন্ম যেন শেখ পরিবারে খুশির বন্যা বইয়ে দেয়। মায়ের বড় চিন্তা ছিলো, শেখ বংশে আবার ছেলে জন্মায় কম। ভোরে মায়ের ঘুম ভেঙে কোল ঘেঁষে ঘুমিয়ে থাকা খোকার নিষ্পাপ মুখ দেখে মায়ের মন ভরে যায়। বাবা শেখ লুৎফর রহমান এন্ট্রান্স পাশ করেই গোপালগঞ্জ মুন্সেফ কোর্টে চাকরী করেন, আসেন সপ্তাহান্তে ১ কিংবা ২দিনের জন্য, তাতে যেনো খোকার বাবাকে দেখবার স্বাদ ই মেটে না।
পরম যত্নে, পরম মমতায় বড় হতে থাকা খোকা ভোরের সূর্যের আগেই জেগে ওঠে, গরম কাপড় গায়ে না জড়িয়েই ঢুকে পরে সুপারি-পেয়ারা গাছের বনে, পুকুর পাড়ের সদ্য পুতে রাখা বাশের কঞ্চির ওপর মাছরাঙার ঠাঁয় বসে থাকাও যেন দারুণ উপভোগের বিষয় এমনটাই মনে হতো খোকার। বন্ধুদের ভূতের গল্পের জমজমাটি আসরের থেকে মাঝ নদীতে নৌকার মাঝির বাজানো বাশির সুর যাকে বেশি টানতো, বন্যার পানিতে নৌকো উলটে সাতার কেটে ঠান্ডা জ্বর বাধানোর জেদ যার ছেলেবেলার রন্ধ্রে রন্ধ্রে, নিজের বর্ষার একমাত্র ছাতাটিও যে দিয়ে দেয় তার দরিদ্র সহপাঠী কে, ষষ্ঠ শ্রেণীতে উঠে বাবার আদেশে টুঙ্গিপাড়া ছেড়ে শহরে যেতে যে দুরন্ত ছেলের কান্না বাধ মানেনা সে যে ভিসুভিয়াস ই হবেন সে আর আশ্চর্য কি?
মাদারীপুর হাইস্কুলে ভর্তি হয়ে পড়াশোনায় তেমন মন নেই খোকার, চোখের সমস্যা তো রয়েছেই তার সাথে যোগ হলো বেরিবেরি। খোকা কে নিয়ে ছুটলেন বাবা কলকাতায় ,প্রথমে বেরিবেরি ও পরে চোখের গ্লুকোমা অপারেশন হলো খোকার। ডাক্তার বলেছে পড়াশোনা বন্ধ, চোখের ওপর কোনো প্রেশার দেয়া যাবেনা। তা শুনে আবার মন খারাপ হয়ে যায় খোকার। গ্রামে ফিরে আবার আগের সোনালী দিন গুলি হাতছানি দেয় তাকে।
শীতের পড়ন্ত বেলায় একদিন খোকাকে হনহন করে ঘরে ঢুকতে দেখে মা জিজ্ঞেস করেন তার চাদর কোথায়। খোকা উত্তর দিতে পারেনি। কিভাবেই বা দেবে? সে যে এক ভিখারী কে নিজের কথা না ভেবেই তা দান করে এসেছে। স্কুলে থাকতে খোকা তার বন্ধুদের নিয়ে গড়ে তুলেছিলো মুষ্টিভিক্ষা সমিতি। যেখান থেকে নিয়মিত গরীব ছাত্রদের সহায়তা করা হতো। একবার এক সভায় কলকাতা থেকে প্রধানমন্ত্রী একে ফজলুল হক ও হোসেন শহীদ সোহরাওয়ার্দী গোপালগঞ্জ সফরে আসলে খোকা তার পথ রোধ করে বিনয়ের সাথে হোস্টেলের ছাদ মেরামতের ব্যাবস্থা করে দিতে বলে। সোহরাওয়ার্দী খোকা কে আশ্বাস দেন এবং কাছে নিয়ে নিজের ঠিকানা দেন এবং কলকাতায় তার সাথে দেখা করতে বলেন। পরদিন স্কুল টিফিনে বড় ক্লাসের ছেলেরা এসে ঘিরে ধরে খোকা কে। কেউ বলেঃ মিটিং দেখতে গেছিলি না? বাড়ি কোথায়?
ওর বন্ধুরা একসাথে বলে ওঠে “টুঙ্গিপাড়ার ছেলে”
ছেলেরা বলেঃ কি নাম তোমার?
খোকা স্মিত হেসে লাজুক ভঙ্গিতে জোরালো কন্ঠে জবাব দেয়, “শেখ মুজিবর রহমান।“

“মুজিবর রহমান।
ওই নাম যেন বিসুভিয়াসের অগ্নি-উগারী বান।”

বিশ্বখ্যাত নিউজউইক পত্রিকা যাকে অভিহিত করেছে “পয়েট অব পলিটিক্স’ বলে, ফিদেল কাস্ত্রো যাকে বর্ণনা করতে টেনে এনেছে হিমালয়ের উপমা, কেমন ছিলো এই টুঙ্গিপাড়ার দুরন্ত খোকা থেকে গণমানুষের নেতা এবং পরে জাতির পিতা হয়ে উঠবার গল্প? কেমন ছিলো জাতীয় নেতা থেকে একজন বিশ্ব বরেণ্য নেতা হয়ে উঠবার নেপথ্য গল্প?

স্কুল জীবন শেষ করে কিশোর মুজিব ভর্তি হন কলকাতা ইসলামিয়া কলেজে। এসময়ে তিনি থাকতেন কলকাতার বেকার হোস্টেলের ২৪ নাম্বার কক্ষে, সেই সময় থেকেই সক্রিয় রাজনীতিতে তিনি সরব ভূমিকা রাখতে শুরু করেন। সেখানে রাষ্ট্রবিজ্ঞানে স্নাতক শেষ করে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে আইন বিভাগে ভর্তি হন যুবক শেখ মুজিব। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি হওয়ার আগেই শেখ মুজিবুর রহমান যুব আন্দোলনে সম্পৃক্ত ছিলেন। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি হয়ে তিনি ছাত্র-আন্দোলনে নেতৃত্ব দেন। ১৯৪৮ সালের ৪ জানুয়ারি ছাত্র নেতাদের নিয়ে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ফজলুল হক হলে পূর্ব পাকিস্তান মুসলিম ছাত্রলীগ গঠন করেন।শেখ মুজিবুর রহমান ১৯৪৯ সালে আইন বিভাগের ২য় বর্ষের ছাত্র ছিলেন। তখন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে ৪র্থ শ্রেণীর কর্মচারীদের মধ্যে দাবি-দাওয়া নিয়ে অসন্তোষ চলছিল। কর্মচারীদের মাসিক বেতন ছিল নগণ্য। শেখ মুজিব তাদের অধিকার আদায়ে সচেষ্ট ছিলেন এবং এজন্য তাকে বহিষ্কারাদেশ ও হয়েছিলো। ছাত্রনেতা থাকার সময় থেকেই তিনি ছিলেন সকল অন্যায় অবিচারের বিরুদ্ধে গর্জে ওঠা অগ্নি স্ফুলিঙ্গ। আটচল্লিশ থেকে ঊনসত্তর এবং তারপরে একাত্তর, যে অদম্য নেতৃত্বে বাঙালী জাতিকে পাইয়ে দিয়েছে স্বতন্ত্র দেশ তিনিই বঙ্গবন্ধু। ১৯৬৯ সালের ২৩ ফেব্রুয়ারি বাংলার আপামর ছাত্র জনতা বাংলার এই অবিসংবাদিত নেতাকে বঙ্গবন্ধু উপাধি তে ভূষিত করেন। তারপর উত্তাল একাত্তর, বাংলাদেশের রক্তক্ষয়ী বিজয় এবং বাহাত্তরে বঙ্গবন্ধুর স্বদেশ প্রত্যাবর্তন।
১৯৭২ সালের ১০ অক্টোবর পৃথিবীর ১৪০টি দেশের শান্তি পরিষদের ২০০ প্রতিনিধির উপস্থিতিতে বিশ্ব শান্তি পরিষদ বাংলাদেশের এই মহান নেতাকে ‘জুলিও কুরি’ শান্তিপদক দেওয়ার সিদ্ধান্ত গ্রহণ করে। ১৯৭৩ সালের ২৩ মে ঢাকায় বাংলাদেশ জাতীয় সংসদের উন্মুক্ত প্লাজায় অনুষ্ঠিত হয় আন্তর্জাতিক এই সম্মেলন। বিশ্বশান্তি পরিষদ আয়োজিত অনুষ্ঠানে আন্তর্জাতিক কূটনীতিকদের বিশাল সমাবেশে বিশ্বশান্তি পরিষদের তৎকালীন মহাসচিব রমেশ চন্দ্র মুক্তি আন্দোলনের মহানায়ক বঙ্গবন্ধুকে জুলিও কুরি পদক প্রদান করেন। এসময় তিনি বলেন, ‘বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব শুধু বঙ্গবন্ধু নন, আজ থেকে তিনি বিশ্ববন্ধুও বটে।’ সেদিন থেকেই বঙ্গবন্ধু আন্তর্জাতিক পরিমণ্ডলে স্বীকৃত বিশ্ববন্ধু হিসেবে।
ব্রিটিশ সাংবাদিক ডেভিড ফ্রস্ট একবার বঙ্গবন্ধু কে প্রশ্ন করেছিলেন “হোয়াট ইজ ইওর কোয়ালিফিকেশন?” এর উত্তরে বঙ্গবন্ধু বলেছিলেন, ‘ আই লাভ মাই পিপল’। পরের প্রশ্ন ছিলো ‘হোয়াট ইজ ইওর ডিজকোয়ালিফিকেশন?’ এর উত্তরে বঙ্গবন্ধু বলেছিলেন ‘আই লাভ দেম টু মাচ ’। প্রভাবশালী ব্রিটিশ দৈনিক দ্য গার্ডিয়ানের মতে, “শেখ মুজিব ছিলেন এক বিস্ময়কর ব্যক্তিত্ব।” এবং ব্রিটিশ লর্ড ফেনার ব্রেকওয়ে বলেছিলেন, “শেখ মুজিব জর্জ ওয়াশিংটন, গান্ধী এবং দ্য ভ্যালেরার থেকেও মহান নেতা ছিলেন।” ফিলিস্তিনের স্বাধীনতা আন্দোলনের প্রাণ পুরুষ ইয়াসির আরাফাতের বলেছিলেন “আপোসহীন সংগ্রামী নেতৃত্ব আর কুসুমকোমল হৃদয় ছিল মুজিব চরিত্রের বৈশিষ্ট্য।”
বাংলাদেশের বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান যে সারা বিশ্বের বন্ধু তা আজ জাতিসংঘ কর্তৃক স্বীকৃত। বঙ্গবন্ধুর ৪৪তম শাহাদতবার্ষিকী উপলক্ষে জাতিসংঘের সদর দপ্তরে আলোচনা অনুষ্ঠানে বাংলাদেশের জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানকে ‘Friends of the World’ বা বিশ্ববন্ধু হিসেবে আখ্যায়িত করে কূটনৈতিকরা।

লেখক : হামিদা নিসা – শিক্ষার্থী, লোকপ্রশাসন বিভাগ, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়।


সর্বশেষ - জাতীয় সংবাদ