1. অন্যরকম
  2. অপরাধ বার্তা
  3. অভিমত
  4. আন্তর্জাতিক সংবাদ
  5. ইতিহাস
  6. এডিটরস' পিক
  7. খেলাধুলা
  8. জাতীয় সংবাদ
  9. টেকসই উন্নয়ন
  10. তথ্য প্রযুক্তি
  11. নির্বাচন বার্তা
  12. প্রতিবেদন
  13. প্রবাস বার্তা
  14. ফিচার
  15. বাণিজ্য ও অর্থনীতি

সমগ্র উপমহাদেশের চিন্তায়-মননে-শ্রদ্ধায় বঙ্গবন্ধুর প্রত্যাবর্তন

রঞ্জন বসু : ইবার্তা টুয়েন্টিফোর ডটকম
শুক্রবার, ১৮ মার্চ, ২০২২

পঁচাত্তর সালের ১৫ আগস্ট আততায়ীদের হাতে জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের সপরিবারে হত্যার মাত্র পাঁচ দিনের মধ্যে নতুন রাষ্ট্রপতি খন্দকার মোশতাক আহমেদের সঙ্গে দেখা করেছিলেন তখন ঢাকায় নিযুক্ত ভারতীয় রাষ্ট্রদূত সমর সেন। দুজনের হাসিমুখে করমর্দনের ছবি পরদিন খবরের কাগজের প্রথম পাতাতেও বেরিয়েছিল। বঙ্গবন্ধুর করুণ হত্যাকাণ্ডের পরও তখন ভারতের প্রতিক্রিয়া যে বেশ ‘শীতল’ ছিল, সমসাময়িক পর্যবেক্ষকরাও তা নিয়ে একমত।

পরবর্তী দু’দশক ধরে বঙ্গবন্ধু ক্রমেই ভারতে বিস্মৃত হয়েছেন, অস্বীকার করার উপায় নেই। অথচ এই মানুষটিই যখন স্বাধীন বাংলাদেশের কাণ্ডারি হিসেবে বাহাত্তর সালের ফেব্রুয়ারি মাসে কলকাতায় এসেছিলেন, তাকে নিয়ে জনতার স্বতঃস্ফূর্ত উচ্ছ্বাস লোকগাথার অংশ হয়ে আছে। ব্রিগেডের ময়দানে শেখ মুজিবের সেই ঐতিহাসিক জনসভায় যোগ দিতে দিল্লি থেকে উড়ে এসেছিলেন প্রধানমন্ত্রী ইন্দিরা গান্ধী। জয় বাংলা, জয় বঙ্গবন্ধু ধ্বনিতে মুখরিত হয়ে উঠেছিল কলকাতার আকাশ-বাতাস।

বঙ্গবন্ধুকে ঘিরে ভারতে সেই উচ্ছ্বাস ও উন্মাদনা ধীরে ধীরে আবার ফিরতে শুরু করে ১৯৯৬ থেকে – যখন শেখ হাসিনার নেতৃত্বে আওয়ামী লীগ বাংলাদেশের ক্ষমতায় ফেরে।

‘আমি তো বলব ভারতে শেখ মুজিব যেন রেজারেক্টেড হয়েছেন, তার পুনর্জন্ম হয়েছে। একটা দীর্ঘ সময় ধরে বাংলাদেশে তাকে যেভাবে ভুলিয়ে দেওয়ার চেষ্টা হয়েছিল, তার প্রভাব পড়েছিল সীমান্তের এপারেও’- বলছিলেন দ্য টাইমস অব ইন্ডিয়ার সাবেক ডিপ্লোম্যাটিক এডিটর ও কূটনৈতিক বিশ্লেষক ইন্দ্রাণী বাগচী।

তিনি আরও বলছেন, প্রেসিডেন্ট জিয়াউর রহমান, পরে জেনারেল এরশাদ বা বেগম খালেদা জিয়ার আমলে বঙ্গবন্ধু যেন ছিলেন ‘ট্যাবু’। তাঁকে নিয়ে যেন আলোচনাও নিষিদ্ধ ছিল, আর বাংলাদেশে তাকে নিয়ে চর্চা না-হলে ভারতে কীভাবে হবে? ফলে আস্তে আস্তে তিনি ভারতীয়দের স্মৃতি থেকেও একটা সময় হারিয়ে যেতে বসেছিলেন।

‘কিন্তু সমগ্র উপমহাদেশের এই গগনস্পর্শী নেতা আবার ভারতেও তার প্রাপ্য জায়গাটা ফিরে পেয়েছেন, তার যোগ্য স্পেস-টা রিক্লেইম করেছেন’, বলছিলেন ইন্দ্রাণী বাগচী।

ভারতের সাবেক শীর্ষ কূটনীতিবিদ সালমান হায়দারও সেই কথার প্রতিধ্বনি করে বলছেন, ‘ভারতের সঙ্গে সুসম্পর্ক রাখাটা যে বাংলাদেশের জন্যও মঙ্গল বয়ে আনবে, এটা শেখ হাসিনা কিন্তু প্রথম থেকেই বুঝেছিলেন। এই কারণেই তিনি প্রথমবার প্রধানমন্ত্রী হওয়ার মাত্র কয়েক মাসের মধ্যে ঐতিহাসিক গঙ্গা চুক্তি স্বাক্ষর করা গিয়েছিল।’

১৯৯৬ সালের ডিসেম্বরে যখন সেই চুক্তি স্বাক্ষরিত হয়, তখন সালমান হায়দারই ছিলেন ভারতের পররাষ্ট্র সচিব।

তিনি আরও বলছিলেন, ‘শেখ মুজিব ছিলেন একজন টাওয়ারিং ফিগার, কিন্তু তিনি অত্যন্ত নিষ্ঠুর পরিণতির শিকার হয়েছিলেন। আঞ্চলিক ভূ রাজনীতির নানা কারণে তাকে একটা সময় ভারতও হয়তো হারিয়ে ফেলেছিল – কিন্তু শেখ হাসিনার বলিষ্ঠ নীতির কারণেই শেখ মুজিবকে আমরা নতুন করে আবার চিনতে পেরেছি।’

এখন ভারতের রাজধানী দিল্লির প্রাণকেন্দ্রে বঙ্গবন্ধুর নামে শেখ মুজিব রোড রয়েছে, দিল্লি ইউনিভার্সিটিতে চালু হয়েছে ‘বঙ্গবন্ধু চেয়ারে’র পদ। দিল্লির জাতীয় প্রেস ক্লাবে রয়েছে বঙ্গবন্ধুর নামাঙ্কিত প্রেস কর্নার। শান্তিনিকেতনে বিশ্বভারতী বিশ্ববিদ্যালয়ে যে ‘বাংলাদেশ ভবন’ স্থাপিত হয়েছে সেখানেও রয়েছে বঙ্গবন্ধুকে নিয়ে গবেষণা ও চর্চার সুযোগ।

এক কথায় বলতে গেলে, ভারতের চিন্তায়-মননে-শ্রদ্ধায় বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান প্রবলভাবে প্রত্যাবর্তন করেছেন।

বর্ষীয়ান কূটনীতিবিদ ও ঢাকায় ভারতের সাবেক হাই কমিশনার মুচকুন্দ দুবে মনে করেন, বঙ্গবন্ধুকে ভারত একেবারে ভুলে গিয়েছিল এ কথাটা ঠিক নয় – কিন্তু একাত্তরে যে উন্মাদনা নিয়ে তারা বাংলাদেশ প্রতিষ্ঠার নায়ককে বরণ করে নিয়েছিল, তারপর নানা কারণে তাতে কিছুটা ভাঁটা পড়েছিল।

‘শেখ মুজিব যখন বাকশালের মাধ্যমে একদলীয় শাসন ব্যবস্থা চালু করতে চেয়েছিলেন তার পেছনে অবশ্যই তার নিজস্ব যুক্তি ছিল – কিন্তু তাতে ইন্দিরা গান্ধী সরকারের মধ্যে কিছুটা সংশয় অবশ্যই তৈরি হয়েছিল। কিন্তু সেটা সরকারি স্তরে – ভারতের সাধারণ মানুষের কাছে বঙ্গবন্ধু চিরকাল নায়কই ছিলেন ও থেকে গেছেন’, বলছিলেন মুচকুন্দ দুবে।

শেখ মুজিব যখন চুয়াত্তরের মে মাসে শেষ বারের মতো ভারত সফরে আসেন, তখন কংগ্রেসের এক তরুণ এমপি ছিলেন মার্গারেট আলভা। প্রধানমন্ত্রী ইন্দিরা গান্ধীরও খুব ঘনিষ্ঠ ছিলেন তিনি।

এখন রাজনীতি থেকে অবসরে যাওয়া মিস আলভা এই প্রতিবেদককে বলছিলেন, ‘পূর্ব পাকিস্তান থেকে ভারতে আসা শরণার্থীদের বাংলাদেশে ফিরে যাওয়া, ফারাক্কা বাঁধ – এই ধরনের কয়েকটি বিষয় নিয়ে শেখ মুজিবের আমলেই কিন্তু ভারত-বাংলাদেশ সম্পর্কে কিছু কিছু অস্বস্তি তৈরি হয়েছিল। কিন্তু তাতে শেখ সাহেবের ব্যক্তিগত জনপ্রিয়তায় কিন্তু এতটুকুও ঘাটতি পড়েনি।’

‘শেখ সাহেব হলেন শেখ সাহেব – তিনি আমাদের কাছে যে উচ্চতায় ছিলেন সেখানেই চিরকাল রয়ে গেছেন’, বলতে বলতে বেশ আবেগপ্রবণ হয়ে পড়েন মার্গারেট আলভা।

সূত্র: রঞ্জন বসু, দিল্লি (বাংলা ট্রিবিউন)


সর্বশেষ - জাতীয় সংবাদ