1. অন্যরকম
  2. অপরাধ বার্তা
  3. অভিমত
  4. আন্তর্জাতিক সংবাদ
  5. ইতিহাস
  6. এডিটরস' পিক
  7. খেলাধুলা
  8. জাতীয় সংবাদ
  9. টেকসই উন্নয়ন
  10. তথ্য প্রযুক্তি
  11. নির্বাচন বার্তা
  12. প্রতিবেদন
  13. প্রবাস বার্তা
  14. ফিচার
  15. বাণিজ্য ও অর্থনীতি

অগ্নিঝরা মার্চ ও সেই সময়ের গণমাধ্যম

সোহরাব হাসান  : ইবার্তা টুয়েন্টিফোর ডটকম
বুধবার, ১ মার্চ, ২০২৩

একাত্তরে এখনকার মতো অত্যাধুনিক তথ্যপ্রযুক্তি ছিল না। পৃথিবীর এক প্রান্তে কোনো ঘটনা ঘটলে সঙ্গে সঙ্গে সেই খবর বিশ্বময় ছড়িয়ে পড়বে, সে রকম সুযোগ ছিল না। ঢাকা শহরের পত্রিকা মফস্বল শহরে যেতেও ২৪ ঘণ্টা সময় লাগত।

সেই দুর্গম সংবাদ প্রবাহের যুগেও বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধের খবরটি দ্রুত দেশের সীমা ছাড়িয়ে আন্তর্জাতিক পরিমণ্ডলে ছড়িয়ে পড়েছিল। বিশ্বের অনেক গণতন্ত্রকামী ও স্বাধীনতাপ্রত্যাশী মানুষ এটিকে নিজের সংগ্রাম বলে গ্রহণ করেছে।

সব ঘটনার যেমন পটভূমি থাকে, তেমনি একাত্তরে বাংলাদেশের বিশ্বদৃষ্টি আকর্ষণেরও একটি পটভূমি আছে। সত্তরের নভেম্বরে বাংলাদেশের দক্ষিণাঞ্চলের ওপর যে প্রলয়ংকরী ঘূর্ণিঝড় বয়ে যায়, তা ছিল নজিরবিহীন। আগে ও পরে এত বিপুল মানবসংহারী প্রাকৃতিক দুর্যোগ আর ঘটেনি। সেই ঘূর্ণিঝড়ের খবর সংগ্রহ করতেও অনেক বিদেশি সাংবাদিক বাংলাদেশে এসেছিলেন। তখন সত্তরের নির্বাচনি হাওয়া বেশ জোরেশোরে বইছিল। অনেক রাজনৈতিক দল নির্বাচন পিছিয়ে দেওয়ার দাবি জানালেও বঙ্গবন্ধু রাজি হননি। তিনি মনে করতেন, নির্বাচন একবার পেছানো হলে পাকিস্তানিরা আর ও-মুখো হবে না। বাঙালির দাবি আদায় কঠিন হয়ে পড়বে। তখন আন্তর্জতিক গণমাধ্যমে পাকিস্তানের ইতিহাসের প্রথম ও সর্বশেষ সাধারণ নির্বাচন নিয়ে প্রতিবেদন ও বিশ্লেষণ প্রকাশ হতে থাকে। এরপর ডিসেম্বরের নির্বাচনে বঙ্গবন্ধুর নেতৃত্বে আওয়ামী লীগ সমগ্র পাকিস্তানে নিরঙ্কুশ সংখ্যাগরিষ্ঠতা পেলে নতুন করে জল্পনা শুরু হয় পাকিস্তানিরা বাঙালির হাতে ক্ষমতা ছড়ে দেবে কি না। পশ্চিম পাকিস্তানের সামরিক ও বেসামরিক নেতৃত্ব নানা ষড়যন্ত্র আটতে থাকে, যার পরিপ্রেক্ষিতে ১ মার্চের জাতীয় পরিষদের অধিবেশন স্থগিত করা হয়। ঢাকাসহ সারা বাংলাদেশে শুরু হয় সর্বাত্মক অসহযোগ আন্দোলন। বাঙালির আন্দোলন তখন আর স্বায়ত্তশাসনের মধ্যে সীমিত থাকেনি, পূর্ণ স্বাধীনতার দিকেই ধাবিত হয়। প্রাকৃতিক দুর্যোগের পর রাজনৈতিক দুর্যোগ আঁচ করতে পেরে বিভিন্ন আন্তর্জাতিক সংবাদমাধ্যম তাদের প্রতিনিধিদের ঢাকায় পাঠায়। ৭ মার্চ নাগাদ কয়েক ডজন বিদেশি সাংবাদিক ঢাকায় আসেন এবং তারা নিয়মিত নিজ নিজ সংবাদ সংস্থা, পত্রিকা ও রেডিওতে খবর পাঠাতে থাকেন।

১৫ মার্চ রাতে পাকিস্তানি সেনাবাহিনী যে অতর্কিত হামলা চালিয়ে বহু মানুষকে ট্যাংকের নিচে পিষে ও গুলি করে হত্যা করে, সেই খবরটি ৩০ মার্চ লন্ডনের ডেইলি টেলিগ্রাফ-এ প্রকাশ পেলে পশ্চিমের মানুষ জানতে পারে পাকিস্তানিদের নৃশংসতা কত ভয়াবহ ছিল। প্রতিবেদনটির শিরোনাম ছিল, ‘ট্যাংকস ক্রাশ রিভল্ট ইন পাকিস্তান’।

বন্দুকের মুখে যখন বিদেশি সাংবাদিকদের হোটেল ইন্টারকন্টিনেন্টালে আটক করা হচ্ছিল, সাইমন ড্রিং ও অ্যাসোসিয়েটেড প্রেসের আলোকচিত্রী মাইকেল লরেন্ট হোটেলের ছাদে আশ্রয় নিয়ে তাৎক্ষণিক বহিষ্কার এড়াতে সক্ষম হন। তারা দুই দিন অগ্নিদগ্ধ শহরের ধ্বংসযজ্ঞ প্রত্যক্ষ করেন এবং শহরময় ছড়িয়ে-ছিটিয়ে থাকা ক্ষতবিক্ষত লাশের ছবি তোলেন। তল্লাশির হাত থেকে সাইমন ড্রিং তার নোটবইটি রক্ষা করতে সমর্থ হয়েছিলেন। পরে করাচি হয়ে ব্যাংককে গিয়ে তিনি সেনাবাহিনীর হত্যাকাণ্ডের বিবরণ পাঠাতে শুরু করেন।

একাত্তরের মার্চ ও গণমাধ্যমের শক্তি

৫ এপ্রিল নিউজউইক-এ প্রকাশিত হয় দীর্ঘ প্রতিবেদন, ‘পাকিস্তান প্লানজেস ইনটু সিভিল ওয়ার’, ১২ এপ্রিল সাময়িকী টাইম ‘পূর্ব পাকিস্তানে’ হত্যাযজ্ঞ ও গণকবরের বিবরণ প্রকাশ করে। ১৯ এপ্রিল নিকোলাস টোমালিন ডেইলি টেলিগ্রাফ-এ লেখেন, ‘ফার ফ্রম দ্য হলোকস্ট’। ভারতের দিল্লিভিত্তিক দৈনিকগুলোসহ সব রাজ্যের পত্রপত্রিকার প্রধান আলোচ্য হয়ে ওঠে পূর্ব পাকিস্তানে সেনাবাহিনীর গণহত্যা ও গণনির্যাতন। সুইডেনের এক্সপ্রেশন লিখেছিল, ‘সাধারণ নির্বাচনের ফলাফল হজম করার মানসিকতা পাকিস্তানি শাসকদের ছিল না, তাই উল্টো সামরিক বাহিনী লেলিয়ে দিয়েছে। এটা স্পষ্ট যে, এই পদ্ধতিতে কখনই পূর্ব ও পশ্চিম পাকিস্তানের পুনর্মিলন ঘটানো সম্ভব নয়।’

এরপর ৯ মাস ধরে বিশ্ব গণমাধ্যমের মনোযোগের কেন্দ্র হয়ে ওঠে পাকিস্তানিদের নৃশংসতা ও বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধ।

২৫ মার্চ রাতে পাকিস্তানি বাহিনীর আক্রমণের পরই বাঙালিরা যে যেখানে ছিলেন, সেখান থেকে প্রতিরোধ গড়ে তুলেছেন। চট্টগ্রাম বেতার কেন্দ্র তখনও মুক্ত ছিল। বেলাল মোহাম্মদের নেতৃত্বে কয়েকজন বেতারকর্মী তাৎক্ষণিক সিদ্ধান্তে ‘স্বাধীন বাংলা বিপ্লবী বেতার কেন্দ্র’ চালুর ঘোষণা দেন। তাদের উদ্যোগেই ২৬ মার্চ বঙ্গবন্ধুর পক্ষে ও নেতৃত্ব মেনে প্রথমে আওয়ামী লীগ নেতা এম এ হান্নান ও পরবর্তীতে ২৭ মার্চ জিয়াউর রহমানের ঘোষণা প্রচার হয়।

দেশের ভেতরে ও বাইরে মুক্তিযুদ্ধের পক্ষে জনমত গড়ে তুলতে মুজিবনগর ও মুক্তাঞ্চল থেকে প্রকাশিত সংবাদপত্রের বিরাট ভূমিকা ছিল। মুজিবনগর থেকে প্রকাশিত পত্রিকা অবরুদ্ধ বাংলাদেশেও পাঠানো হতো। আর যেখানে পাঠানো যেত না, সেখানকার মানুষ সাগ্রহে অপেক্ষা করত স্বাধীন বাংলা বেতার কেন্দ্র ও আকাশবাণীর জন্য। বিবিসির বাংলা অনুষ্ঠানও বেশ জনপ্রিয় হয়ে উঠেছিল। বিবিসি অনুষ্ঠান শুরুর সময় গ্রিনিচ মান সময়ের পাশাপাশি স্থানীয় সময়ও প্রচার করত। একপর্যায়ে তারা ‘পূর্বপাকিস্তান সময়’ না বলে ‘ঢাকার সময়’ বলা শুরু করলেন। এর মাধ্যমে মুক্তিযুদ্ধের পক্ষে এক ধরনের পক্ষপাত প্রকাশ পায়। মার্ক টালি যুদ্ধের সময় ঢাকায় আসেননি, দিল্লিতে এসেছেন। বেশির ভাগ সময় লন্ডনের স্টুডিও থেকে সংবাদ প্রচার করতেন। কিন্তু তার প্রচারের ধরন এমন ছিল যে মনে হতো তিনিই প্রত্যক্ষদর্শী।

একাত্তরের মার্চ ও গণমাধ্যমের শক্তি

মুক্তিযুদ্ধের সময় স্বাধীন বাংলা বেতার কেন্দ্রের পর যে গণমাধ্যমটি মানুষকে নাড়া দিয়েছে, সেটি হলো আকাশবাণী। আকাশবাণীতে দেবদুলাল বন্দ্যোপাধ্যায়ের কণ্ঠের মাধুর্য এখনও কানে বাজে। স্বাধীন বাংলা বেতার কেন্দ্রের সবচেয়ে জনপ্রিয় অনুষ্ঠান ছিল ‘চরমপত্র’। এম আর আকতার মুকুল লিখিত ও পঠিত এই চরমপত্রের জন্য মানুষ অধীর আগ্রহে অপেক্ষা করত। এ ছাড়া দেশপ্রমমূলক সংগীতগুলো ছিল জনপ্রিয়তার শীর্ষে। কোনো কোনো গান পরিবেশিত হলে এখনও শরীরে শিহরণ জাগে। অবরুদ্ধ বাংলাদেশে জীবনের ঝুঁকি নিয়েও অনেকে স্বাধীনতার পক্ষে পত্রিকা বের করেছেন। গোপনে সে পত্রিকা প্রচারও করা হতো। এগুলোর মধ্যে ছিল জয়বাংলা, বাংলাদেশ, বিশ্ববাণী, মুক্তিযুদ্ধ, জন্মভূমি, বাংলার বাণী, নতুন বাংলা, মুক্ত বাংলা, দাবানল, সংগ্রামী বাংলা, অগ্রদূত, স্বাধীন বাংলা, আমার দেশ, অভিযান, দি নেশন, স্বদেশ, সোনার বাংলা, সাপ্তাহিক একতা, সাপ্তাহিক বাংলার মুখ, সাপ্তাহিক আমার দেশ, পাক্ষিক অক্ষৌহিনী, পাক্ষিক স্বদেশ, দর্পণ, ওরা দুর্জয় ওরা দুর্বার, কালান্তর ।

বৈশ্বিক রাজনীতিতে রাষ্ট্র ও সরকার যে অবস্থানই গ্রহণ করুক না কেন, মুক্ত সাংবাদিকতা তখন জনগণকে সঠিক খবরটিই দিয়েছে। পাকিস্তানের মিত্র হিসেবে যুক্তরাষ্ট্র ও চীন সরকার পূর্ব পাকিস্তানে নারকীয় সামরিক হস্তক্ষেপকেও পাকিস্তানের অভ্যন্তরীণ বিষয় হিসেবে এড়িয়ে যেতে চেয়েছে। কিন্তু সব আমেরিকান পত্রিকা পাকিস্তানের বর্বরোচিত কর্মকাণ্ডের নিন্দা করেছে, পাকিস্তানকে অস্ত্র সরবরাহ থেকে বিরত রাখার জন্য যুক্তরাষ্ট্র সরকারের ওপর ক্রমাগত চাপ প্রয়োগ করেছে।

ওয়াশিংটনের ডেইলি নিউজ লিখেছে, ‘পাকিস্তানের সঙ্গে থাকা কিংবা নিশ্চুপ থাকা– দুটোর মানেই আরও বাঙালি নিধনে সহায়তা করা।’ এমনকি ঘানার একটি সাপ্তাহিক পত্রিকা দ্য পালভার উইকলি লিখেছিল, ‘ইয়াহিয়া খান সংখ্যালঘুর একচেটিয়া শাসন কায়েম করতে চান। বিশ্বের শান্তিপ্রিয় দেশগুলোর উচিত সর্বোচ্চ চাপ প্রয়োগ করে জনগণের নির্বাচিত প্রতিনিধিদের হাতে ক্ষমতা হস্তান্তর ত্বরান্বিত করা।’

ভারতের সব পত্রিকাই মুক্তিযুদ্ধের পক্ষের হাতিয়ারে রূপান্তরিত হয়। বিশেষ করে বাংলা ভাষার পত্রিকাগুলো এই যুদ্ধকে নিজের যুদ্ধ হিসেবে নিয়েছিল।

শুধু মার্ক টালি নয়, জীবনের ঝুঁকি নিয়ে নেমেছিলেন সিডনি শনবার্গ, অ্যান্থনি মাসকারেনহাস, সাইমন ড্রিং, নিকোলাস টোমালিন, ক্লেয়ার হলিংওয়ার্থ, মার্টিন ওলাকট, জন পিলজার, ডেভিড লোশাক, পিটার হ্যাজেনহার্স্ট ও আরও অনেকে।

গবেষক মফিদুল হকের মতে, একাত্তরের মুক্তিযুদ্ধ ছিল বিশ্ব গণমাধ্যমে বহুল আলোচিত ঘটনা এবং মুক্তিযুদ্ধে বাঙালির বিজয় অর্জনে তা অবিস্মরণীয় ভূমিকা পালন করেছিল। পঁচিশ মার্চ কালরাত থেকে শুরু করে মুক্তিযুদ্ধের সেই সব ঘটনার নির্মমতা, অন্যায্যতার পাশাশাপি পূর্ব পাকিস্তানের (বাংলাদেশ) স্বাধিকার আন্দোলনের ন্যায্য দাবিকে যৌক্তিকভাবে উপস্থাপনার ক্ষেত্রে বিশ্বের বিভিন্ন মিডিয়ায় কর্মরত সাংবাদিকরা মানবিক ও দায়িত্বশীল ভূমিকা পালন করেছেন। মুক্তিযুদ্ধ চলাকালে আন্তর্জাতিক গণমাধ্যমের অবস্থান ছিল মানবিক ও ন্যায়ের পক্ষে। বিদেশি সাংবাদিকদের সেই অবস্থান বিশ্ববাসীর সামনে বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধের বাস্তবতাকে যুক্তির সঙ্গে তুলে ধরে এবং পর্যায়ক্রমে সচেতন বিশ্ববিবেকের সমর্থন আদায়ে সক্ষম হয়।

মুক্তিযুদ্ধে বিদেশি গণমাধ্যমের ভূমিকাবিষয়ক তথ্যানুসন্ধানে জানা যায়, ১৯৭১ সালে যুদ্ধের শুরু থেকেই বিদেশি সাংবাদিকরা পাকিস্তানি বাহিনীর ধ্বংসলীলা, নির্মম হত্যাযজ্ঞ, ধর্ষণ ও নিপীড়নের বর্বরতার কাহিনি খুব দ্রুত আন্তর্জাতিক পর্যায়ে ছড়িয়ে দিতে বিশেষ ভূমিকা পালন করেন। আশ্চর্যজনক ব্যাপারটি হলো, বাংলাদেশের স্বাধীনতার ব্যাপারে বিশ্বের বেশ কিছু দেশের সমর্থন না থাকার পরও বাংলাদেশে অবস্থানকারী সেসব দেশের সাংবাদিকরা এই যুদ্ধের অমানবিকতার বিপক্ষে এবং সর্বোতভাবে বাংলাদেশের মানুষের পক্ষে ঝুঁকিপূর্ণ ও দায়িত্বশীল ভূমিকা নিতেও পিছু হটেননি।

এপ্রিল মাসে ঢাকার ‘স্বাভাবিক’ অবস্থা বিশ্ববাসীকে জানানোর উদ্দেশ্যে পাকিস্তান সামরিক সরকার ৮ জন সাংবাদিককে ঢাকায় নিয়ে আসে। কিন্তু আমন্ত্রিত সাংবাদিকদের মধ্যে করাচির সাংবাদিক অ্যান্থনি মাসকারেনহাস প্রোপাগান্ডা ছড়াতে সহযোগিতার বদলে তুলে ধরেন প্রকৃত চিত্র। তিনি পূর্ব বাংলায় ১০ দিন অবস্থান করে যুদ্ধাপরাধের নানা তথ্য নিয়ে ‘জেনোসাইড’ শিরোনামে দ্য সানডে টাইমস-এ ১৩ জুন ১৯৭১ প্রতিবেদনটি প্রকাশ করেন। এ ছাড়া দ্য নিউইয়র্ক টাইমস-এর সিডনি শনবার্গ, ইতালির সাংবাদিক ওরিয়ানা ফালাচি, ফরাসি সাংবাদিক বার্নার্ড হেনরি লেভিসহ অনেক বিদেশি সাংবাদিক বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধের সরাসরি প্রতিবেদন প্রকাশ করে বাংলার মুক্তির পক্ষে বিশ্ব জনমত সৃষ্টিতে দায়িত্বশীল ভূমিকা নেন। ভারতীয় গণমাধ্যমের প্রতিবেদকরা সীমান্ত দিয়ে বাংলাদেশে এসে মুক্তিযুদ্ধের তথ্য প্রকাশ করেন। এভাবে যুক্তরাজ্য, যুক্তরাষ্ট্র, কানাডা, ফ্রান্স, জার্মানি, জাপান ছাড়াও বিশ্বের বিভিন্ন দেশের বিখ্যাত গণমাধ্যম প্রতিবেদকরা সীমান্ত দিয়ে বাংলাদেশে প্রবেশ করে মুক্তিযুদ্ধের সংবাদ প্রকাশ করেন।

২৭ মার্চ ১৯৭১ তারিখে লন্ডন থেকে প্রকাশিত দ্য ডেইলি টেলিগ্রাফ পত্রিকার প্রথম পাতায় নতুন দিল্লি থেকে তাদের সাংবাদিক ডেভিড লোমাকের পাঠানো সংবাদের ভিত্তিতে ‘সিভিল ওয়ার ইন ইস্ট পাকিস্তান/শেখ আ ট্রেইটর, সেইস প্রেসিডেন্ট’ শিরোনামে বঙ্গবন্ধু কর্তৃক বাংলাদেশের স্বাধীনতার ঘোষণার কথা লেখা হয়।

২৫-২৬ মার্চ রাতে বঙ্গবন্ধুর ‘স্বাধীনতা ঘোষণা’ বিশ্বের বিভিন্ন পত্রপত্রিকা ২৭ মার্চ ১৯৭১ প্রকাশ করে। ‘ডিক্লেয়ার ইনডিপেনডেন্স’ শিরোনামের নিচে লেখা হয়েছে, শেখ মুজিবুর রহমান পূর্ব পাকিস্তানকে স্বাধীন গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশ হিসেবে ঘোষণা দিলে সেখানে গৃহযুদ্ধ ছড়িয়ে পড়ে।

মুক্তিযুদ্ধকালে রিপোর্টিংয়ে অনেক ধরনের উদাহরণ তৈরি করেছেন বেশ কিছু সাংবাদিক। ৭ মার্চের ভাষণের পর বঙ্গবন্ধুকে ঘিরে নিউজউইক-এর বক্স আইটেম ‘পোয়েট অব পলিটিকস’ এমনই এক উদাহরণ, যেখানে চলমান ঘটনার ভাষ্য তাৎপর্যে ছাপিয়ে যায় সমসাময়িকতা। সানডে টাইমস-এ অ্যান্থনি মাসকারেনহাসের দুই পৃষ্ঠাজুড়ে রিপোর্টের শিরোনাম দিয়েছিল ‘জেনোসাইড’, মোটা হরফে শুধু ওইটুকুই। কিন্তু সেই রিপোর্ট ও হেডিং তো এক ইতিহাস হয়ে উঠেছে।

লেখক : সোহরাব হাসান – কবি ও জ্যেষ্ঠ সাংবাদিক। 


সর্বশেষ - জাতীয় সংবাদ