অধিকৃত ফিলিস্তিনি ভূখণ্ডে ইসরায়েলি বসতি রেকর্ডসংখ্যক বৃদ্ধি পেয়েছে। এতে ফিলিস্তিন রাষ্ট্রের বাস্তব সম্ভাবনা নষ্ট হওয়ার ঝুঁকি রয়েছে বলেও সতর্ক করে দিয়েছেন জাতিসংঘের মানবাধিকার প্রধান। শুক্রবার জাতিসংঘের মানবাধিকারবিষয়ক হাইকমিশনার ভলকার তুর্ক বলেছেন, ‘বসতি স্থাপনের মাধ্যমে ইসরাইল তার নিজস্ব বেসামরিক জনগণকে অধিকৃত অঞ্চলে স্থানান্তর করেছে, যা যুদ্ধাপরাধ।
আন্তর্জাতিক সম্প্রদায় দীর্ঘদিন ধরে ইসরায়েলি বসতি স্থাপনকে আন্তর্জাতিক আইনের লঙ্ঘন ও ফিলিস্তিনি রাষ্ট্রের অন্তরায় হিসেবে দেখে আসছে। অধিকৃত পশ্চিম তীরে ইসরাইল নতুন আবাসন পরিকল্পনা ঘোষণার পর গত মাসে যুক্তরাষ্ট্র বলেছিল, এসব বসতি স্থাপন আন্তর্জাতিক আইনের সঙ্গে অসামঞ্জস্যপূর্ণ।
অবৈধভাবে ইসরায়েলি আবাসনগুলো বৃদ্ধি সম্পর্কে ১৬ পৃষ্ঠার প্রতিবেদনের সঙ্গে ওই বিবৃতিতে তুর্ক জানান, বসতি স্থাপনকারীদের সহিংসতাসহ বসতি স্থাপন সম্পর্কিত লঙ্ঘনের ঘটনাগুলো বিস্ময়করভাবে নতুন স্তরে পৌঁছেছে। এক্ষেত্রে টেকসই ফিলিস্তিনি রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠার যেকোনো বাস্তব সম্ভাবনা মুছে ফেলার ঝুঁকি রয়েছে।
এদিকে জাতিসংঘের ওই রিপোর্ট নিয়ে উদ্বেগ প্রকাশ করেছে ইসরায়েল। ২০২৩ সালে হামাসের হাতে ৩৬ জন ইসরায়েলির নিহতের তথ্য এ প্রতিবেদনে উল্লেখ করা উচিত বলে মনে করে তেল আবিব। মানবাধিকার সর্বজনীন, তার পরও জাতিসংঘ বারবার এসব তথ্য উপেক্ষা করছে বলে অভিযোগ করেছে দেশটি।
জাতিসংঘের নিজস্ব পর্যবেক্ষণ ও অন্যান্য সূত্রের ভিত্তিতে করা এ প্রতিবেদনে অক্টোবরের শেষ পর্যন্ত এক বছরের সময়কালে অধিকৃত পশ্চিম তীরে ২৪ হাজার ৩০০ নতুন ইসরায়েলি আবাসন নথিভুক্ত করা হয়েছে। এটি ২০১৭ সালে পর্যবেক্ষণ শুরুর পর থেকে সর্বোচ্চ।
সংস্থাটির বিবৃতিতে আরো বলা হয়েছে, অধিকৃত পশ্চিম তীরে ফিলিস্তিনিদের বিরুদ্ধে ইসরায়েলি বসতি স্থাপন ও রাষ্ট্রীয় সহিংসতা নাটকীয়ভাবে বৃদ্ধি পেয়েছে। বিশেষ করে গত বছরের ৭ অক্টোবর হামাসের সঙ্গে সংঘাত শুরুর পর থেকে ফিলিস্তিন ভূখণ্ডে আগ্রাসী হয়েছে তেল আবিব।
গাজাকে দুই ভাগ করে রাস্তা বানাচ্ছে ইসরায়েল: ইসরায়েলের প্রতিরক্ষা বাহিনী গাজার মাঝ বরাবর একটি রাস্তার নির্মাণকাজ শেষ করেছে। রাস্তাটি গাজার পূর্ব থেকে পশ্চিম দিকে গেছে। স্যাটেলাইট চিত্রে এ নতুন রাস্তা দেখা গেছে। ইসরায়েল বলছে, পণ্য ও ত্রাণ সরবরাহের উদ্দেশ্যে এ রাস্তা নির্মাণ করা হয়েছে। কিন্তু অনেক বিশ্লেষক উদ্বেগ প্রকাশ করে বলেছেন, এটা হয়তো একটা স্থায়ী অবকাঠামো হতে পারে। তাদের আশঙ্কা, এ রাস্তা হয়তো একটি প্রাচীর হিসেবে ব্যবহার করা হতে পারে, যাতে করে ফিলিস্তিনিরা গাজার উত্তরাঞ্চলে আর ফিরে যেতে না পারে। রাস্তাটি নাহাল অজ কিবুৎজের কাছে ইসরায়েল-গাজার সীমান্ত প্রাচীর থেকে শুরু হয়েছে। এটি গাজার ওপর দিয়ে গিয়ে পশ্চিমে উপকূলীয় এলাকায় শেষ হয়েছে।
রমজানে গাজায় যুদ্ধবিরতি বাস্তবায়ন কঠিন: মার্কিন প্রেসিডেন্ট জো বাইডেন মন্তব্য করেছেন, রমজানে গাজায় যুদ্ধবিরতি চুক্তি বাস্তবায়ন কঠিন হবে। শুক্রবার সাংবাদিকদের সঙ্গে আলাপকালে বাইডেন জানান, রমজানে গাজায় যুদ্ধবিরতি বাস্তবায়ন করা কঠিন হবে। তবে গত পাঁচ মাস ধরে চলা সংঘাতের অবসান ঘটাতে রমজানে যুদ্ধবিরতিতে পৌঁছানোর চেষ্টা আরো জোরদার করা হবে।
এদিকে গাজায় ত্রাণ পাঠাতে সমুদ্রপথে করিডোর খোলা হবে বলে জানিয়েছেন ইউরোপীয় কমিশনের প্রেসিডেন্ট উরসুলা ভন ডার লিয়েন। চলতি সপ্তাহের শেষের দিকে সাইপ্রাস থেকে গাজায় মানবিক সহায়তা পাঠাতে এ করিডোর চালু করা হবে বলে জানিয়েছেন তিনি। তিনি বলেন, সমুদ্র পথে এ করিডোর মানবিক বিপর্যয়ের মধ্যে থাকা গাজায় আরো বেশি ত্রাণ পাঠানোর সুযোগ করে দেবে। সাইপ্রাস থেকে পরীক্ষামূলকভাবে ত্রাণ পাঠানো শুরু হচ্ছে বলে জানান তিনি। এর আগে গত বৃহস্পতিবার গাজায় ত্রাণ পাঠাতে অস্থায়ী বন্দর নির্মাণের ঘোষণা দেয়া হয়।