1. অন্যরকম
  2. অপরাধ বার্তা
  3. অভিমত
  4. আন্তর্জাতিক সংবাদ
  5. ইতিহাস
  6. এডিটরস' পিক
  7. খেলাধুলা
  8. জাতীয় সংবাদ
  9. টেকসই উন্নয়ন
  10. তথ্য প্রযুক্তি
  11. নির্বাচন বার্তা
  12. প্রতিবেদন
  13. প্রবাস বার্তা
  14. ফিচার
  15. বাণিজ্য ও অর্থনীতি

শ্রীলঙ্কার মতো হওয়ার একটি কারণও নেই বাংলাদেশের

বিশেষ প্রতিবেদক : ইবার্তা টুয়েন্টিফোর ডটকম
মঙ্গলবার, ৫ এপ্রিল, ২০২২

আবদুর রহিম হারমাছি

ইতিহাসের সবচেয়ে ভয়াবহ অর্থনৈতিক মন্দার মধ্য দিয়ে যাচ্ছে ভারত মহাসাগরীয় দ্বীপরাষ্ট্র শ্রীলঙ্কা। দুই কোটি জনসংখ্যার দেশটির অর্থনীতি মুখ থুবড়ে পড়ার পর তাদের বিদেশি ঋণের কিস্তি পরিশোধই শুধু অনিশ্চয়তায় পড়েনি, নাগরিকদের সুযোগ-সুবিধাও বন্ধ হয়ে যাচ্ছে। তৈরি হয়েছে রাজনৈতিক সংকট।

দেশটির জনগণ যখন সরকারের বিরুদ্ধে ফুঁসে উঠছে, তখন বাংলাদেশে কথা উঠেছে, এই দেশের সামনেও এমন আশঙ্কা আছে কি না।

তবে আন্তর্জাতিক বিভিন্ন গণমাধ্যমের প্রতিবেদন ও অর্থনীতির বিশ্লেষকরা ভারত মহাসাগরের দ্বীপ রাষ্ট্রটির বিপর্যয়ের যেসব কারণ তুলে ধরছেন, সেগুলো বিবেচনা করলে দেখা যায়, বাংলাদেশের ক্ষেত্রে এই ঝুঁকিগুলো নেই।

পর্যটননির্ভর শ্রীলঙ্কান সরকারের রাজস্ব আয়ের খাত পর্যটনে ধস নেমেছে করোনার দুই বছরে। পর্যটকদের ভ্রমণ বন্ধ থাকায় কার্যত এ খাত থেকে দেশটির আয় হয়নি। সব মিলিয়ে কিছু ভুল পরিকল্পনা আর পদক্ষেপের কারণে এমন দশায় পৌঁছেছে দেশটি।

বাংলাদেশের পরিণতিও শ্রীলঙ্কার মতো হবে কি না, তা নিয়ে নানা লেখা ঘুরছে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে। বিরোধী দলের নেতারাও বক্তৃতায় তুলে ধরছেন প্রসঙ্গটি। তবে এসব আশঙ্কাকে উড়িয়ে দিয়েছেন অর্থনীতিবিদগণ।

বাংলাদেশের অর্থনীতি ও শ্রীলঙ্কার অর্থনীতির মধ্যে তুলনা চলে না। দুটির গতি-প্রকৃতি ভিন্ন। এখানে উৎপাদনে ঘাটতি নেই। পাশাপাশি রপ্তানি আয় ও রেমিট্যান্সও ক্ষতিগ্রস্ত হয়নি। প্রধান খাদ্যপণ্যও আমদানিনির্ভর নয়। আর বাংলাদেশের বিদেশি ঋণও শ্রীলঙ্কার মতো মাথাপিছু এত বেশি নয়। বিদেশি ঋণের কিস্তি পরিশোধ বাংলাদেশের ক্ষেত্রে কোনো চাপই তৈরি করছে না। দেশের রিজার্ভও শ্রীলঙ্কার তুলনায় আকাশচুম্বি বলা যায়।

অদূর ভবিষ্যতেও বাংলাদেশের অর্থনীতিতে কোনো ধসের আশঙ্কা অমূলক এবং বাস্তবসম্মত নয়। এ ধরনের আশঙ্কার কোনো ভিত্তি নেই। বাংলাদেশ সঠিক পথেই আছে। শ্রীলঙ্কার মতো হওয়ার একটি কারণও নেই বাংলাদেশের।

অর্থনীতিবিদ এ বি মির্জ্জা আজিজুল ইসলাম শঙ্কার বদলে উল্টো বাংলাদেশ নিয়ে আশাবাদী। তিনি বলেন, ‘জুনেই পদ্মা সেতু চালু হবে, মেট্রোরেল, বঙ্গবন্ধু টানেলসহ আরও কয়েকটি বিশেষ অর্থনৈতিক অঞ্চলও চালু হবে এ বছরই। এসব প্রকল্প চালু হলে বাংলাদেশের উন্নয়নে নতুন মাত্রা যোগ হবে। আমার মনে হয় না আর পেছনে তাকাতে হবে।’

দুই দেশের মেগাপ্রকল্পের তুলনা

গত ১৫ বছরে শ্রীলঙ্কায় সমুদ্রবন্দর, বিমানবন্দর, রাস্তা এবং আরও নানা প্রকল্প গ্রহণ করা হয়েছে। কিন্তু অনেক প্রকল্প অর্থনৈতিকভাবে লাভজনক হয়নি। এছাড়া গত এক দশকে চীনের কাছ থেকেই শ্রীলঙ্কা ঋণ নিয়েছে পাঁচ বিলিয়ন ডলার, যা তাদের মোট ঋণের ১০ শতাংশ।

অন্যদিকে বাংলাদেশের নেয়া মেগাপ্রকল্প পদ্মা সেতু, কর্ণফুলী টানেল, মেট্রো রেল, ঢাকার এলিভেটেড এক্সপ্রেসওয়ে, রূপপুর পরমাণু বিদ্যুৎকেন্দ্র, রামপাল কয়লা বিদ্যুৎকেন্দ্র, মাতারবাড়ী কয়লা বিদ্যুৎকেন্দ্র, পায়রা সমুদ্রবন্দর, গভীর সমুদ্রবন্দর, এলএনজি টার্মিনালের মধ্যে কেবল রামপাল নিয়ে বিতর্ক আছে এর অবস্থানগত কারণে। তবে এই প্রকল্পগুলো অপ্রয়োজনীয় এবং সেগুলো লাভজনক হবে না- এমন কথা কোনো বিশ্লেষক বলেননি। বরং প্রকল্পগুলো মানুষের জীবনমানকে সহজ এবং উন্নত করবে- এমন আশা করা হচ্ছে।

অর্থনীতিবিদ এ বি মির্জ্জা আজিজুল ইসলাম বলেন, ‘আমার বিবেচনায় বাংলাদেশ যেসব বড় বা মেগাপ্রকল্প বাস্তবায়ন করছে, তার একটাও অপ্রয়োজনীয় নয়; সবই গুরুত্বপূর্ণ এবং প্রয়োজন। এসব প্রকল্প বাস্তবায়ন হলে সঙ্গে সঙ্গে রিটার্ন আসবে। দেশে বিনিয়োগ বাড়বে। কর্মসংস্থান হবে। জিডিপি প্রবৃদ্ধি বাড়বে।’

বঙ্গবন্ধু যমুনা সেতুর উদাহরণ টেনে তিনি বলেন, ‘এই সেতুটি বাংলাদেশের অর্থনীতিতে কী গতি সঞ্চার করেছে, তা এখন আমরা প্রতি মুহূর্তে অনুধাবন করছি। পদ্মা সেতুসহ যেসব প্রকল্প এখন চলমান রয়েছে, সেগুলো বাস্তবায়ন হলেও একই ধরনের রিটার্ন পাওয়া যাবে বলে আমি মনে করি।’

বিদেশি ঋণের কী চিত্র

শ্রীলঙ্কার অর্থনৈতিক ধসের ক্ষেত্রে সবচেয়ে বেশি কথা হচ্ছে বিদেশি ঋণ নিয়ে। দেশটি নানা মেগাপ্রকল্পে বিপুল পরিমাণ ঋণ নিয়েছে, যেগুলো লাভজনক হয়নি। তবে করোনার সময় ঋণ পরিশোধ করতে গিয়ে রিজার্ভে পড়েছে চাপ।

বর্তমানে বাংলাদেশের বৈদেশিক ঋণের স্থিতি বা পরিমাণ ৪ হাজার ৯৪৫ কোটি ৮০ লাখ (৪৯.৪৫ বিলিয়ন) ডলার। পরিসংখ্যান ব্যুরোর তথ্য অনুযায়ী, দেশের মোট জনসংখ্যা ১৬ কোটি ৯৩ লাখ। এই হিসাবে মাথাপিছু বৈদেশিক ঋণের পরিমাণ হয় ২৯২ দশমিক ১১ ডলার।

২ কোটি মানুষের দেশ শ্রীলঙ্কার বিদেশি ঋণের মোট পরিমাণ ৩ হাজার ৩০০ কোটি ডলার। এই হিসাবে মাথাপিছু ঋণের পরিমাণ এক হাজার ৬৫০ ডলার।

অর্থাৎ বাংলাদেশের তুলনায় শ্রীলঙ্কার জনগণের মাথাপিছু ঋণ সাড়ে পাঁচ গুণেরও বেশি।

২০১৪ সাল থেকেই ঋণের বোঝা বাড়তে শুরু করে কলম্বোর। সেই সঙ্গে ক্রমেই মুখ থুবড়ে পড়ে জিডিপি।

২০১৯ সালে বিদেশি ঋণ পৌঁছে যায় জিডিপির ৪২ দশমিক ৮ শতাংশে, বাংলাদেশে এটা ১৩ শতাংশেরও নিচে।

বর্তমানে যা পরিস্থিতি, বছরে সব মিলিয়ে অন্তত ৮ বিলিয়ন ডলার শোধ করতেই হবে শ্রীলঙ্কাকে। অন্যদিকে প্রবাসী আয়, রপ্তানি ও পর্যটন খাতে আয় কমায় এই ঋণ পরিশোধ অনিশ্চিত হয়ে গেছে।

সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ বিষয় হচ্ছে বাংলাদেশের ছোট-বড় সব প্রকল্পেই কিন্তু বিশ্বব্যাংক, এডিবি, আইডিবি, জাইকাসহ অন্য উন্নয়ন সংস্থার ঋণ এবং নিজের অর্থ যোগ করেছে।

এসব সংস্থার সুদের হার খুবই কম। অনেক বছর ধরে শোধ করা যায়। কোনো কোনো ঋণ অবশ্য পরবর্তী সময়ে অনুদান হিসেবে অন্য প্রকল্পেও দেয়। বিশেষ করে জাইকার বেশির ভাগ ঋণের ক্ষেত্রে এমনটা হয়ে থাকে।

অন্যদিকে শ্রীলঙ্কা চীনের কাছ থেকে সাপ্লায়ার্স ক্রেডিট (যে দেশ টাকা দেবে, সে দেশ থেকে পণ্য কেনা) ঋণ নিয়ে বড় বড় প্রকল্প বাস্তবায়ন করেছে। সেসব ঋণ সুদে-আসলে পরিশোধ করতে গিয়েই এখন বিপদে পড়েছে শ্রীলঙ্কা।’

দুই দেশের রেমিট্যান্সের চিত্র

শ্রীলঙ্কার রেমিট্যান্সের জানুয়ারিতে মাত্র ২৭ কোটি ১০ লাখ ডলার। বাংলাদেশে মার্চ মাসে ১৮৬ কোটি ডলারের রেমিট্যান্স পাঠিয়েছেন প্রবাসীরা।

গত ২০২০-২১ অর্থবছরে করোনা মহামারির মধ্যেও ২৪ দশমিক ৭৮ বিলিয়ন ডলারের রেকর্ড পরিমাণ রেমিট্যান্স পাঠিয়েছিলেন বিশ্বের বিভিন্ন দেশে অবস্থানকারী সোয়া কোটি বাংলাদেশি।

শ্রীলঙ্কা ক্যালেন্ডার বছরকে আর্থিক বছর ধরে। ২০২১ সালে দেশটিতে রেমিট্যান্স এসেছিল ৮ বিলিয়ন ডলারের মতো।

অর্থাৎ করোনায় শ্রীলঙ্কার প্রবাসী আয় কমেছে বহুলাংশে। অন্যদিকে বাংলাদেশে এই সময়ে রেমিট্যান্স-প্রবাহ ব্যাপকভাবে বেড়ে যাওয়া বিস্মিত করেছে অর্থনীতিবিদ এমনকি বিশ্বব্যাংকের মতো দাতা সংস্থাগুলোকেও। তাদের পূর্বানুমান ছিল, করোনার সময় রেমিট্যান্স অনেক কমে যাবে।

দেড় বছর বাড়ার পর রেমিট্যান্সের প্রবাহ আগের বছরের তুলনায় কিছুটা কমলেও গত কয়েক মাসে আবার গতি ঊর্ধ্বমুখী।

রপ্তানি আয়ের তুলনা

করোনা মহামারি ও রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধের মধ্যেও বাংলাদেশ রপ্তানি আয়ে চমক দেখিয়ে চলেছে। গত অর্থবছরে ১৭ শতাংশের বেশি প্রবৃদ্ধি হয়েছিল। চলতি অর্থবছরের ৯ মাসে (জুলাই-মার্চ) প্রবৃদ্ধি হয়েছে তারও দ্বিগুণ ৩৩ দশমিক ৪১ শতাংশ। প্রবাসীদের পাঠানো রেমিট্যান্স গত অর্থবছরের চেয়ে কমলেও আগের বছরগুলোর চেয়ে বেশি এসেছে। শ্রীলঙ্কায় রপ্তানি আয় তলানিতে নেমেছে। রেমিট্যান্সের অবস্থাও করুণ।

মার্চ মাসের রপ্তানি আয়ের তথ্য প্রকাশ করেছে বাংলাদেশের রপ্তানি উন্নয়ন ব্যুরো (ইপিবি)। তাতে দেখা যায়, এই মাসে পণ্য রপ্তানি থেকে ৪ দশমিক ৭৬ বিলিয়ন ডলার আয় করেছে বাংলাদেশ।

জানুয়ারিতে শ্রীলঙ্কা পণ্য রপ্তানি থেকে আয় করেছে ১ দশমিক ১ বিলিয়ন ডলার।

করোনার প্রথম ২০২০-২১ অর্থবছরে পণ্য রপ্তানি থেকে ৩৮ দশমিক ৭৫ বিলিয়ন ডলারের বিদেশি মুদ্রা এসেছিল দেশে। চলতি ২০২১-২২ অর্থবছরের ৯ মাসে অর্থাৎ জুলাই-মার্চ সময়েই এসেছে গত অর্থবছরের পুরো সময়ের (১২ মাস, জুলাই-জুন) প্রায় সমান ৩৮ দশমিক ৬০ শতাংশ।

২০২১ সালে পণ্য রপ্তানি থেকে শ্রীলঙ্কা আয় করেছিল সাড়ে ৮ বিলিয়ন ডলার।

অর্থাৎ করোনা শ্রীলঙ্কার রপ্তানি আয়ে ধস নামালেও বাংলাদেশের ক্ষেত্রে ঘটেছে উল্টো। করোনা পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আসার পর এই আয় এখন আরও বাড়ছে।

শ্রীলঙ্কার রিজার্ভ বনাম বাংলাদেশের রিজার্ভ

বাংলাদেশের সর্বশেষ রিজার্ভ ৪৪ দশমিক ৪০ বিলিয়ন ডলার। আর শ্রীলঙ্কার রিজার্ভ ২ বিলিয়ন ডলারেরও কম। গত জানুয়ারি মাস শেষে শ্রীলঙ্কার রিজার্ভ ছিল ২ দশমিক ৩৬ বিলিয়ন ডলার। ডিসেম্বর শেষে ছিল ৩ দশমিক ১ বিলিয়ন ডলার।

গত বছরের এপ্রিলে শ্রীলঙ্কার রিজার্ভ ছিল ৪ দশমিক ৪৭ বিলিয়ন ডলার। ওই সময় বাংলাদেশের রিজার্ভ ছিল আরও বেশি, ৪৬ বিলিয়ন ডলারের ওপরে।

করোনা আঘাত হানার আগে ২০১৯ সালের ডিসেম্বরে দেশটির রিজার্ভ ছিল ৭ দশমিক ৬০ বিলিয়ন ডলার। তখন বাংলাদেশের রিজার্ভ ৪০ বিলিয়ন ডলারের বেশিই ছিল।

অর্থাৎ করোনার ধাক্কা শ্রীলঙ্কার রিজার্ভকে তলানিতে নিয়ে এলেও বাংলাদেশে তেমনটা হয়নি। সেটি বেড়েছে বহুলাংশে। মাঝে একবার ৪৮ বিলিয়ন ডলার ছাড়িয়েছিল। পরে আমদানি বৃদ্ধি ও জ্বালানি তেলের বর্ধিত মূল্যের কারণে কিছুটা কমেছে।

অন্যদিকে করোনা মহামারি আসার পর থেকেই রিজার্ভ সংকটে ভুগছে শ্রীলঙ্কা। রিজার্ভ বাড়াতে গত বছরের মে মাসে সোয়াপ কারেন্সির মাধ্যমে বাংলাদেশের কাছে ২৫ কোটি ডলার ঋণ চেয়েছিল শ্রীলঙ্কা। বাংলাদেশ তা দিয়েছে। ওই ঋণ এখনও শোধ করেনি দেশটি। এরই মধ্যে আরও ২৫ কোটি ডলার চেয়েছে।

অর্থনীতিবিদ এ বি মির্জ্জা আজিজুল ইসলাম বলেন, ‘আমদানি অনেক বাড়ার পরও বাংলাদেশের বিদেশি মুদ্রার সঞ্চয়ন বা রিজার্ভ এখন ৪৪ বিলিয়ন ডলারের বেশি। এই রিজার্ভ দিয়ে ছয় মাসের আমদানি ব্যয় মেটানো সম্ভব। অথচ শ্রীলঙ্কার রিজার্ভ দুই বিলিয়ন ডলারেরও কম; এক সপ্তাহের আমদানি ব্যয় মেটানোর রিজার্ভ নেই দেশটির। সেই দেশের সঙ্গে বাংলাদেশের তুলনা করে অযথা আতঙ্ক ছড়ানোর কোনো কারণ নেই বলে আমি মনে করি।’

কৃষিতে ব্যর্থতা বনাম সাফল্য

২০১৯ সালে চালের উৎপাদন কমে যায় ২০ শতাংশ পর্যন্ত। চাল উৎপাদনে স্বয়ংসম্পূর্ণ শ্রীলঙ্কা তখন প্রায় অর্ধ বিলিয়ন ডলারের চাল আমদানি করতে বাধ্য হয়। এর প্রভাবে ব্যাপকভাবে বেড়ে যায় পণ্যটির দাম।

অর্গানিক কৃষির নেতিবাচক প্রভাব পড়ে দেশটির চা উৎপাদনেও। এই পণ্যটি রপ্তানিতেও দেখা দেয় নেতিবাচক প্রভাব।

অন্যদিকে বাংলাদেশ চাল উৎপাদনে স্বয়ংসম্পূর্ণ এবং উৎপাদন বছর বছর বাড়ছেই। এর মধ্যেও সরকার বেসরকারি পর্যায়ে চাল আমদানির অনুমতি দেয়ার পর এই মুহূর্তে খাদ্যের মজুত ইতিহাসের সর্বোচ্চ পর্যায়ে।

২০২০-২১ অর্থবছরে জিডিপিতে কৃষি খাতের অবদান ১৩ দশমিক ৪৭ শতাংশ। ২০১৬-১৭ সালের শ্রমশক্তি জরিপ অনুযায়ী, শ্রমশক্তির ৪০ দশমিক ৬২ শতাংশ এখনও কৃষিতে নিয়োজিত, মানে কৃষি এখনও নিয়োগের বড় ক্ষেত্র।

বর্তমানে বাংলাদেশে ফসলের নিবিড়তা ২১৬ শতাংশ, যা ২০০৬ সালে ছিল ১৬০ শতাংশ।

২০২০-২১ অর্থবছরে করোনার মধ্যে কৃষিতে প্রবৃদ্ধি হয়েছে ৫ দশমিক ৪৭ শতাংশ।

একই অর্থবছরে ধানের প্রধান মৌসুমে বোরো ধান উৎপাদিত হয়েছে ২ কোটি টনের বেশি, যা দেশের ইতিহাসে সর্বোচ্চ।

একই সময়ে মোট চাল উৎপাদন হয়েছে ৩ কোটি ৮৬ লাখ টন, গম ১২ লাখ টন, ভুট্টা প্রায় ৫৭ লাখ টন, আলু ১ কোটি ৬ লাখ টন, শাক-সবজি ১ কোটি ৯৭ লাখ টন, তেলজাতীয় ফসল ১২ লাখ টন ও ডালজাতীয় ফসল ৯ লাখ টন।

করোনার আগের বছরের চেয়ে করোনার বছরে খাদ্য উৎপাদন বেড়েছে ৭ লাখ টন।

বাংলাদেশ উন্নয়ন গবেষণা প্রতিষ্ঠানের (বিআইডিএস) জ্যেষ্ঠ পরিচালক মঞ্জুর হোসেন বলেন, ‘সবচেয়ে স্বস্তির জায়গা হচ্ছে, বাংলাদেশে প্রচুর খাদ্য মজুত আছে। সরকারি গুদামগুলোতে মজুত অতীতের যেকোনো সময়ের চেয়ে বেশি, ২০ লাখ টনের মতো। কয়েক বছর বাম্পার ফলন হওয়ায় মানুষের কাছেও প্রচুর ধান-চাল মজুত আছে। তাই খাদ্য নিয়ে এক-দুই বছর বাংলাদেশকে ভাবতে হচ্ছে না। মূল্যস্ফীতি শ্রীলঙ্কার মতো ২০ শতাংশে ওঠার কোনো কারণ নেই।’

বাংলাদেশের অর্থনীতির শক্তির ভর কেন্দ্র মজবুত

মির্জ্জা আজিজুল ইসলাম বলেন, ‘শ্রীলঙ্কা পর্যটননির্ভর অর্থনীতির দেশ। করোনার কারণে গত দুই বছর দেশটিতে কোনো পর্যটক যায়নি। ধ্বংস হয়ে গেছে এই খাত। দুই বছর একটি দেশের অর্থনীতির প্রধান খাত বন্ধ, সে দেশের অর্থনীতি সংকটে পড়াটাই স্বাভাবিক।

‘কিন্তু বাংলাদেশে অনেক ক্ষেত্রেই ঘটেছে তার উল্টোটা। করোনার সময়ে রপ্তানি আয় ও রেমিট্যান্স বেড়েছে। কোনো খাতই বন্ধ ছিল না। কৃষি খাতে বাম্পার ফলন হয়েছে। সব মিলিয়ে বলা যায়, বাংলাদেশে করোনা মোকাবিলা করেছে। সে কারণেই কিন্তু বাংলাদেশের অর্থনীতির শক্ত ভিত্তির ওপর দাঁড়িয়ে আছে। অল্প সময়ের মধ্যেই করোনার ধাক্কা সামলে ঘুরে দাঁড়িয়েছে।’

বাংলাদেশ উন্নয়ন গবেষণা প্রতিষ্ঠানের (বিআইডিএস) জ্যেষ্ঠ পরিচালক মঞ্জুর হোসেন বলেন, ‘অযথাই কেউ কেউ নেগেটিভ চিন্তাভাবনা করছেন। এসব চিন্তার কোনো যুক্তি নেই। শ্রীলঙ্কার মতো হওয়ার একটি কারণও নেই বাংলাদেশের।’


সর্বশেষ - জাতীয় সংবাদ