1. অন্যরকম
  2. অপরাধ বার্তা
  3. অভিমত
  4. আন্তর্জাতিক সংবাদ
  5. ইতিহাস
  6. এডিটরস' পিক
  7. খেলাধুলা
  8. জাতীয় সংবাদ
  9. টেকসই উন্নয়ন
  10. তথ্য প্রযুক্তি
  11. নির্বাচন বার্তা
  12. প্রতিবেদন
  13. প্রবাস বার্তা
  14. ফিচার
  15. বাণিজ্য ও অর্থনীতি

ভুট্টা উৎপাদনে এগিয়ে চলছে বাংলাদেশ

বাণিজ্য প্রতিবেদক : ইবার্তা টুয়েন্টিফোর ডটকম
রবিবার, ১০ এপ্রিল, ২০২২

বর্তমানে বিশ্বের বিভিন্ন দেশে ভুট্টার চাষ হচ্ছে। এশিয়ার দেশগুলোর মধ্যে চীন, ইন্দোনেশিয়া, ফিলিপাইন উল্লেখযোগ্য। বাংলাদেশে কমবেশি প্রায় সব জেলায়ই ভুট্টার চাষ হয়। মাছ বা অন্য প্রাণীজ খাদ্যের পাশাপাশি ভুট্টা খাবারের টেবিলেও জায়গা করে নিচ্ছে। বহুবিধ ব্যবহার বাড়ছে দানাদার এ শস্যের। সম্প্রতি বছরগুলোতে দেশে চাহিদা বৃদ্ধি পাওয়ায় উৎপাদনও বেড়েছে। ভুট্টা থেকে শিশু খাদ্য, বার্লি ও তেল হয়। ভুট্টার আটা-ময়দায় বিস্কুট ও পাউরুটি হয় সুস্বাদু। কাঁচাভুট্টা পুড়িয়ে খাওয়া যায়। তৈরি হয় খৈ। ভুট্টার পপকর্ন শহরাঞ্চলে বেশ জনপ্রিয়
ভুট্টা উৎপাদনে এগিয়ে চলছে বাংলাদেশ। ভুট্টা উৎপাদনের দিক দিয়ে যুক্তরাষ্ট্রের পরেই বিশ্বের মধ্যে দ্বিতীয় অবস্থানটি বাংলাদেশের। বিশ্ব খাদ্য ও কৃষি সংস্থার তথ্যমতে, বিশ্বে হেক্টরপ্রতি ভুট্টায় গড় উৎপাদন ৫ দশমিক ১২ টন। বাংলাদেশে এই হার ৬ দশমিক ৯৮ টন। ভুট্টা উৎপাদনে বিশ্বে দ্বিতীয় স্থান বাংলাদেশের। ধান ও গমের পরে অত্যন্ত জনপ্রিয় খাবার ভুট্টা। এটি কর্ন নামেও পরিচিত। নানা রকম খাদ্য তৈরিতে ব্যবহৃত হয়।
 
বাংলাদেশে ভুট্টার উৎপাদন ক্রমেই বাড়ছে। বর্তমানে ধানের পরই দেশের দ্বিতীয় শীর্ষ আবাদকৃত শস্য ভুট্টা। দেশে ভুট্টা চাষের অপার সম্ভাবনা রয়েছে। উন্নতজাত উদ্ভাবন হয়েছে, অনুকূল কৃষি জলবায়ু রয়েছে ও কৃষকদের আধুনিক প্রযুক্তিগত সহায়তা প্রদান করা হচ্ছে- যার ফলে ভুট্টার উৎপাদন বহুগুণে বাড়ানো সম্ভব। অন্যদিকে, দেশে-বিদেশে ভুট্টার প্রচুর চাহিদা রয়েছে। দেশে মৎস্য ও প্রাণিসম্পদের খাদ্য হিসেবে ভুট্টা ব্যাপকভাবে ব্যবহার হচ্ছে। সেজন্য ভুট্টার উৎপাদন আরও বাড়াতে উদ্যোগ গ্রহণ করা হয়েছে। আগামী ৫ বছরের মধ্যে ভুট্টার উৎপাদন বছরে ১ কোটি টনে উন্নীত করতে কাজ চলছে। আর এটি করতে পারলে ভুট্টা উৎপাদনে শুধু স্বয়ংসম্পূর্ণতা অর্জনই শুধু নয়, বিদেশে রপ্তানি করেও প্রচুর বৈদেশিক মুদ্রা অর্জন করা সম্ভব হবে। বাংলাদেশ গম ও ভুট্টা গবেষণা ইনস্টিটিউটের হিসাব অনুযায়ী দেশে ভুট্টার উৎপাদন ২০০৯ সালে ছিল সাত লাখ ৫০ হাজার মেট্রিক টন, ২০২০ সালে যা বেড়ে হয়েছে ৫৪ লাখ টন। অন্যদিকে, ভুট্টার চাহিদা বছরে ৬৫-৭০ লাখ টন। আর দেশে ২০২০ সালে গম উৎপাদন হয়েছে ১২ লাখ ৫০ হাজার টন।
 
বর্তমানে বিশ্বের বিভিন্ন দেশে ভুট্টার চাষ হচ্ছে। এশিয়ার দেশগুলোর মধ্যে চীন, ইন্দোনেশিয়া, ফিলিপাইন উলেস্নখযোগ্য। বাংলাদেশে কমবেশি প্রায় সব জেলায়ই ভুট্টার চাষ হয়। মাছ বা অন্য প্রাণীজ খাদ্যের পাশাপাশি ভুট্টা খাবারের টেবিলেও জায়গা করে নিচ্ছে। বহুবিধ ব্যবহার বাড়ছে দানাদার এ শস্যের। সম্প্রতি বছরগুলোতে দেশে চাহিদা বৃদ্ধি পাওয়ায় উৎপাদনও বেড়েছে। ভুট্টা থেকে শিশু খাদ্য, বার্লি ও তেল হয়। ভুট্টার আটা-ময়দায় বিস্কুট ও পাউরুটি হয় সুস্বাদু। কাঁচাভুট্টা পুড়িয়ে খাওয়া যায়। তৈরি হয় খৈ। ভুট্টার পপকর্ন শহরাঞ্চলে বেশ জনপ্রিয়। মানুষের জন্য নানা রকমের খাবার তৈরি করা যায় ভুট্টা থেকে। রুটি, আটা বা গোল আলুর সঙ্গে মিশিয়ে রুটি, পুরি, ভুট্টার প্যানকেক, ভুট্টার বিস্কুট, ভুট্টার খিচুড়ি, ভুট্টা-চাল খিচুরি, ভুট্টা পোলাও, সবুজ ভুট্টার দানা সিদ্ধ বা পুড়িয়ে অনেকভাবেই ভুট্টাকে খাদ্য হিসেবে গ্রহণ করা যায়।
 
বাংলাদেশে মূলত হাঁস-মুরগির ও গোখাদ্য হিসেবে ভুট্টার দানা ব্যবহার করা হয়। মৎস্য খাদ্যেরও একটি অন্যতম উপকরণ হলো ভুট্টা দানার গুঁড়া। চিকিৎসকদের মতে, ধান ও গমের তুলনায় ভুট্টার পুষ্টিমান বেশি। ভুট্টা শরীর থেকে ক্ষতিকর টক্সিন বের করতে সাহায্য করে। এতে থাকা অ্যান্টি-অক্সিডেন্ট ক্যানসারের ঝুঁকি কমায়। ভুট্টায় বিদ্যমান ভিটামিন-এ এবং সি ত্বক ভালো রাখতে সাহায্য করে। ভুট্টা শরীরে খারাপ কোলেস্টেরলের মাত্রা কমায়, এতে হৃদরোগের ঝুঁকিও কমে। এটি ডায়াবেটিস ও উচ্চ রক্তচাপ কমাতে সাহায্য করে। ভুট্টাতে থাকা বিটা ক্যারোটিন চোখের দৃষ্টি বাড়াতে সাহায্য করে। ভুট্টার বীজে তেলের পরিমাণ শতকরা ১০-১২ ভাগ। ভুট্টার তেল ভোজ্যতেল হিসেবে উত্তম। শিশু, গর্ভবতী মহিলা ও দুগ্ধপানকারী মায়ের জন্য ভুট্টার তেল উত্তম। তাছাড়া ভুট্টাতে ম্যাগনেসিয়াম, পটাশিয়াম এবং সালফার এসব গৌণ খনিজ উপাদান বেশ ভালোই রয়েছে।
 
যমুনা নদীর চরাঞ্চলে ভুট্টার বাম্পার ফলন হয়েছে। বাম্পার ফলনের পাশাপাশি দাম ভালো পাওয়ায় এবং ধানের দাম কম থাকায় ভুট্টা চাষে কৃষকের আগ্রহ বাড়ছে। ফলে অনেক এলাকায় ধান চাষের পরিবর্তে ভুট্টা চাষে আগ্রহ দেখাচ্ছেন কৃষকরা।
 
দেশের মাঠে ভুট্টা গাছ আর এর দানাসমৃদ্ধ হলদে মোচার দাপট দেখলে কে না বলবে যে, সুদূর মেক্সিকোতে এর জন্মস্থান। এ দেশের জল-হাওয়া-মৃত্তিকায় চমৎকার মানিয়ে নিয়েছে ভুট্টা। গত এক দশকে হাইব্রিড ভুট্টার আবাদি এলাকা, উৎপাদন ও হেক্টরপ্রতি ফলন উলেস্নখযোগ্য রকমভাবে বৃদ্ধি পেয়েছে। হেক্টরপ্রতি ফলনের দিক থেকে ভুট্টার স্থান দানাশস্যগুলোর মধ্যে প্রথম, কিন্তু আবাদি এলাকা ও মোট উৎপাদনের দিক থেকে এটি ধান ও গমের পর এখন তৃতীয় স্থানে রয়েছে। ভুট্টা আবাদের জন্য হেক্টরপ্রতি খরচ বেশ কম অথচ লাভ এতে বেশি। এক হিসাবে দেখা গেছে যে, এক কেজি ভুট্টা আবাদ করতে খরচ হয় ৪.১২ টাকা অথচ এক কেজি ভুট্টা বিক্রি করে পাওয়া যায় ৭.৮০ টাকা। কোনো বছর তাপমাত্রার বৃদ্ধি ঘটলে গমের আবাদ ক্ষতিগ্রস্ত হয় অথচ তাপমাত্রা বৃদ্ধিতে ভুট্টা চাষ খুব একটা ক্ষতিগ্রস্ত হয় না। ভুট্টা চাষের বড় সুবিধা হলো রোগবালাইয়ের আক্রমণ কম ঘটে এবং কীটপতঙ্গের আক্রমণের ফলে ক্ষতি কম হয়। ভুট্টা আবাদ করতে কম সেচের প্রয়োজন হয় কিন্তু অধিক সারের প্রয়োজন হয়, যা বাজার থেকে কিনে নিয়ে প্রয়োগ করা সম্ভব। বাজারে ভুট্টার চাহিদা অধিক হওয়ায় ভুট্টা বিক্রি করে কৃষকের হাতে নগদ অর্থ আসে এবং কৃষক সরাসরি লাভবান হয়। দেশে প্রায় রবি ও খরিফ মৌসুম মিলে ১৫ লাখ একর জমিতে ভুট্টা চাষ হয় এবং সারা বাংলাদেশে দিন দিন ভুট্টার চাষ বাড়ছে।


সর্বশেষ - জাতীয় সংবাদ