1. অন্যরকম
  2. অপরাধ বার্তা
  3. অভিমত
  4. আন্তর্জাতিক সংবাদ
  5. ইতিহাস
  6. এডিটরস' পিক
  7. খেলাধুলা
  8. জাতীয় সংবাদ
  9. টেকসই উন্নয়ন
  10. তথ্য প্রযুক্তি
  11. নির্বাচন বার্তা
  12. প্রতিবেদন
  13. প্রবাস বার্তা
  14. ফিচার
  15. বাণিজ্য ও অর্থনীতি

রপ্তানি খাতকে শক্তিশালী অবস্থানে ধরে রাখতে সরকারের বিশেষ পরিকল্পনা

বানিজ্য প্রতিবেদক : ইবার্তা টুয়েন্টিফোর ডটকম
শনিবার, ১৬ এপ্রিল, ২০২২

মহামারী করোনা এবং ইউক্রেন-রাশিয়ার যুদ্ধের মধ্যেও শক্তিশালী অবস্থানে রয়েছে দেশের রপ্তানি খাত। সরকারও এ খাতের শক্তিশালী অবস্থান ধরে রাখতে চায়। রপ্তানি বাণিজ্যে উৎসাহ দিতে রপ্তানির বিপরীতে ভর্তুকি বা নগদ সহায়তা দিয়েছে সরকার। চলতি অর্থবছরের রপ্তানি খাতের নগদ সহায়তার চতুর্থ কিস্তির ২ হাজার ৩০০ কোটি টাকা ছাড় করা হয়েছে। অর্থ মন্ত্রণালয় থেকে দেওয়া হয়েছে ছাড়ের নির্দেশনা। মহানিয়ন্ত্রকের ডেবিট অথরিটি জারিসহ সরকারের অন্য দাপ্তরিক আনুষ্ঠানিকতা শেষে এ সুবিধা নিতে পারবেন রপ্তানিকারকরা।

অর্থ মন্ত্রণালয়ের অর্থ বিভাগ থেকে গত মঙ্গলবার ভর্তুকির অর্থ ছাড়ের নির্দেশনা জারি করা হয়। এতে রপ্তানিমুখী দেশি বস্ত্র, হিমায়িত চিংড়ি ও মাছ, চামড়াজাত দ্রব্য, পাট ও পাটজাত দ্রব্যসহ অনুমোদিত অন্য খাতে রপ্তানির বিপরীতে দেওয়া নগদ সহায়তা বা ভর্তুকি পরিশোধে বাংলাদেশ ব্যাংকের অনুকূলে অর্থছাড়ের কথা বলা হয়েছে।

সংশ্লিষ্টরা জানিয়েছেন, ভর্তুকি সহায়তার ফলে রপ্তানি খাতের উন্নয়নে বড় ধরনের ভূমিকা রাখবে। প্রধান হিসাবরক্ষণ কর্মকর্তাকে পাঠানো চিঠিতে অর্থ বিভাগ বলছে, রপ্তানিমুখী দেশীয় বস্ত্র, হিমায়িত চিংড়ি ও অন্য মাছ, চামড়াজাত দ্রব্য, পাট ও পাটজাত দ্রব্যসহ অনুমোদিত অন্য খাতের রপ্তানির বিপরীতে নগদ সহায়তার জন্য এ অর্থছাড় করা হয়েছে।

ছাড় করা অর্থের ভিত্তিতে মহাহিসাব নিয়ন্ত্রক (সিএজি) ডেবিট অথরিটি জারি করবে। সে অনুযায়ী বাংলাদেশ ব্যাংক সময় সময় বাণিজ্যিক ব্যাংক থেকে ভর্তুকি দাবির বিপরীতে সরকারি হিসাব ডেবিট করে রপ্তানি প্রণোদনার অর্থ পরিশোধ করতে পারবে। তবে দাবি পরিশোধের পর নিরীক্ষায় প্রাপ্য অর্থের চেয়ে বেশি পরিশোধ হওয়ার কোনো প্রমাণ পাওয়া গেলে সংশ্লিষ্ট গ্রহীতাদের বিরুদ্ধে আইনগত ব্যবস্থা নেওয়া হবে।

অর্থ মন্ত্রণালয় বলেছে, রপ্তানিমুখী দেশি বস্ত্র, হিমায়িত চিংড়ি, অন্যান্য মাছ, চামড়াজাত পণ্যসহ অনুমোদিত অন্য খাতে রপ্তানির বিপরীতে নগদ সহায়তা এবং পোশাক রপ্তানির বিপরীতে ১ শতাংশ হারে বিশেষ নগদ সহায়তায় চতুর্থ কিস্তির ২ হাজার ৩০০ কোটি টাকা ছাড় করা হয়েছে। এর মধ্যে পাটজাত দ্রব্য রপ্তানি প্রণোদনার ৩০০ কোটি টাকা ছাড় করা হয়েছে। এক্সপোর্টার্স অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশের (ইএবি) সহসভাপতি মোহাম্মদ হাতেম বলেন, অর্থ মন্ত্রণালয় নগদ সহায়তা ছাড়ের নির্দেশনাটি ইতিবাচক ভূমিকা পালন করবে।

সূত্র জানিয়েছে, পাটজাত পণ্য রপ্তানিকারকদের ভর্তুকির অর্থ উত্তোলনে নিজ নিজ ব্যাংকে যোগাযোগের জন্য সদস্য মিলগুলোকে চিঠি দিয়েছে বাংলাদেশ জুট মিলস অ্যাসোসিয়েশন (বিজেএমএ)। অ্যাসোসিয়েশনের সচিব আবদুল বারিক খান গতকাল সদস্য মিলগুলোকে চিঠি পাঠিয়েছেন। চিঠিতে বলা হয়, পাটপণ্যের রপ্তানির ভর্তুকি বাবদ ২০২১-২২ অর্থবছরে চতুর্থ কিস্তির (এপ্রিল থেকে জুন, ২০২২) ৩০০ কোটি টাকা ছাড় করা হয়েছে। সদস্য মিলগুলোকে পাটপণ্যের রপ্তানি ভর্তুকি আদায়ে নিজ নিজ ব্যাংকে যোগাযোগ করতে বলা হয়।

জানা গেছে, রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধের মধ্যেও রপ্তানি আয় বৃদ্ধির ইতিবাচক ধারা অব্যাহত রয়েছে। চলতি বছরের মার্চে বিভিন্ন পণ্য রপ্তানি করে ৪৭৬ কোটি ২২ লাখ (৪.৭৬ বিলিয়ন) ডলার বিদেশি মুদ্রা এনেছেন রপ্তানিকারকরা। বর্তমান বিনিময় হার (৮৬ টাকা ২০ পয়সা) হিসেবে টাকার অঙ্কে এই অর্থের পরিমাণ ৪১ হাজার কোটি টাকার বেশি। গত বছরের মার্চের চেয়ে ৫৫ শতাংশ বেশি রপ্তানি আয় দেশে এসেছে। এই মাসে লক্ষ্যমাত্রার চেয়ে আয় বেশি এসেছে ৩৪ দশমিক ২২ শতাংশ।

অর্থবছরের হিসাবে ৯ মাসে অর্থাৎ জুলাই-মার্চ সময়ে ৩৮ দশমিক ৬০ বিলিয়ন ডলার আয় করেছেন রপ্তানিকারকরা। এই অঙ্ক গত অর্থবছরের পুরো সময়ের প্রায় সমান। যুদ্ধের মাসেও রপ্তানি আয়ে এই বড় উল্লম্ফনে খুবই খুশি রপ্তানিকারকরা। অর্থবছরের বাকি তিন মাসেও এই ইতিবাচক ধারা অব্যাহত থাকবে বলে আশা করছেন তারা। তাতে অর্থবছর শেষে এবার রপ্তানি আয় ৫০ বিলিয়ন ডলারের মাইলফলক অতিক্রম করে রপ্তানি বাণিজ্যে ইতিহাস সৃষ্টি করবে বাংলাদেশ। একক মাসের হিসাবে বাংলাদেশের ইতিহাসে মার্চ মাসের এই আয় তৃতীয় সর্বোচ্চ; সবচেয়ে বেশি এসেছিল গত বছরের শেষ মাস ডিসেম্বরে ৪৯০ কোটি ৭৭ লাখ (৪.৯০ বিলিয়ন) ডলার। দ্বিতীয় সর্বোচ্চ আসে চলতি বছরের প্রথম মাস জানুয়ারিতে ৪৮৫ কোটি ৩ লাখ ৭০ হাজার (৪.৮৫ বিলিয়ন) ডলার। দ্বিতীয় মাস ফেব্রুয়ারিতে আয় হয় ৪২৯ কোটি ৪৫ লাখ (৪.২৯ বিলিয়ন) ডলার। এই মাসে রপ্তানির লক্ষ্যমাত্রা ধরা ছিল ৩৫৪ কোটি ৮০ লাখ ডলার। গত বছরের মার্চ মাসে পণ্য রপ্তানি থেকে ৩০৭ কোটি ৬০ লাখ ডলার আয় হয়েছিল। শুধু তৈরি পোশাক নয়, প্রায় সব খাতেই রপ্তানি আয় বেড়েছে। সব মিলিয়ে চলতি ২০২১-২২ অর্থবছরের প্রথম ৯ মাসের (জুলাই-মার্চ) হিসাবে ৩৮ দশমিক ৬০ বিলিয়ন (৩ হাজার ৮৬০ কোটি ৫৬ লাখ) ডলার রপ্তানি আয় দেশে এসেছে। এই আয় গত অর্থবছরের পুরো সময়ের (১২ মাস, ২০২০ সালের জুলাই থেকে ২০২১ সালের জুন) প্রায় সমান। ২০২০-২১ অর্থবছরের এই ৯ মাসে পণ্য রপ্তানি থেকে ৩৮ দশমিক ৭৫ বিলিয়ন ডলার আয় করে বাংলাদেশ। চলতি অর্থবছরের জুলাই-মার্চ সময়ে গত বছরের একই সময়ের চেয়ে ৩৩ দশমিক ৪১ শতাংশ বেশি আয় দেশে এসেছে। রপ্তানি আয় প্রায় প্রতি বছরই বাড়ে। তবে লক্ষ্যমাত্রা ছুঁতে পারে কমই। কিন্তু এবারের পরিস্থিতি ভিন্ন। করোনার মধ্যেও দারুণ প্রবৃদ্ধির পাশাপাশি যতটা লক্ষ্য নির্ধারণ করা হয়েছে, তার চেয়ে বেশি হারে আয় করছে বাংলাদেশ। ৯ মাসের রপ্তানি আয় এবার নির্ধারিত লক্ষ্যমাত্রার চেয়ে ১৮ দশমিক ৪৩ শতাংশ বেশি।

রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধ পরিস্থিতি স্বাভাবিক হয়ে আসছে। করোনার আতঙ্ক চলে গেছে। বড় ধরনের আর কোনো সংকট না দেখা দিলে আগামী কয়েক বছর রপ্তানি আয়ের এই উল্লম্ফন অব্যাহত থাকবে বলে আশা কথা শুনিয়েছেন দেশের রপ্তানি আয়ের প্রধান তৈরি পোশাক শিল্পমালিকরা।

বিকেএমইএ নির্বাহী সভাপতি মোহাম্মদ হাতেম বলেন, ‘আমরা খুশি। এত দ্রুত করোনা মহামারীর ধাক্কা সামলে আমরা ঘুরে দাঁড়াব, ভাবতে পারিনি। করোনার ভয় এখন আর নেই। শঙ্কিত ছিলাম রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধ নিয়ে। সেটাও কেটে গেছে। সব মিলিয়ে আমাদের রপ্তানি বাণিজ্যের বর্তমান ইতিবাচক ধারা আগামী দিনগুলোতেও অব্যাহত থাকবে। একটা ভালো প্রবৃদ্ধি নিয়ে নতুন বছর শুরু করেছিলাম। সেটা অব্যাহত আছে। প্রচুর অর্ডার আছে; নতুন অর্ডার আসছে। দামও ভালো পাচ্ছি। ২০২২ সালটা উল্লম্ফনের মধ্য দিয়েই যাবে বলে আশা করছি।’

চলতি ২০২১-২২ অর্থবছরে পণ্য ও সেবা মিলিয়ে মোট ৫১ বিলিয়ন ডলার রপ্তানি আয়ের লক্ষ্য ধরেছে সরকার। এর মধ্যে পণ্য রপ্তানি থেকে আয় ধরা হয় সাড়ে ৪৩ বিলিয়ন ডলার।


সর্বশেষ - জাতীয় সংবাদ