1. অন্যরকম
  2. অপরাধ বার্তা
  3. অভিমত
  4. আন্তর্জাতিক সংবাদ
  5. ইতিহাস
  6. এডিটরস' পিক
  7. খেলাধুলা
  8. জাতীয় সংবাদ
  9. টেকসই উন্নয়ন
  10. তথ্য প্রযুক্তি
  11. নির্বাচন বার্তা
  12. প্রতিবেদন
  13. প্রবাস বার্তা
  14. ফিচার
  15. বাণিজ্য ও অর্থনীতি

বাস্তবতায় অটিজমবান্ধব বাংলাদেশ

ম. মাহবুবুর রহমান ভূঁইয়া : ইবার্তা টুয়েন্টিফোর ডটকম
সোমবার, ৩ এপ্রিল, ২০২৩

অটিজম একটি স্নায়ুবিকাশজনিত সমস্যা, যা শিশুর তিন বছরের মধ্যে প্রকাশ পায়। কোনো ক্ষেত্রে তা ১৮ মাস, এমনকি এক বছর বা তারও কম বয়সে প্রকাশ পেতে পারে। তবে এর ব্যতিক্রমও রয়েছে। যেমন—জন্মের পর থেকে যে শিশুকে স্বাভাবিকভাবেই বেড়ে উঠছে বলে মনে হয়, এমন শিশুর মধ্যেও পরে অটিজমের লক্ষণ প্রকাশ পেতে দেখা যায়। যে শিশু খুব মিশুক ও আধো আধো স্লো উচ্চারণ করতে শিখেছে, সেই শিশুও হঠাৎ করেই কথা বলা বন্ধ করে দিতে পারে, কারো সঙ্গে মিশতে না পারে, খুব নির্লিপ্ত ও উদাসীন আচরণ কিংবা আত্মমগ্ন হয়ে থাকতে পারে। তবে বেশির ভাগ ক্ষেত্রেই সমস্যাটি ধরা পড়ে তখনই যখন দেখা যায় শিশুটির বিকাশ তার সমবয়সীদের তুলনায় অনেক ধীরে হচ্ছে। এই রোগের সঠিক কারণ এখনো উদঘাটন করা সম্ভব হয়নি। তবে তা বংশগত কারণে হতে পারে বলে কেউ মনে করলেও তা প্রমাণিত সত্য নয়। সাধারণত শিশুর মা-বাবাই প্রথমে এ রোগের লক্ষণ বুঝতে পারেন। এরপরই বিশেষত গ্রামীণ সমাজে মা-বাবা শিশুটির প্রথাগত চিকিৎসা দিতে শুরু করেন, যা এই জটিলতাকে অনেকাংশে আরো বাড়িয়ে দেয়। তবে প্রাথমিক পর্যায়ে সঠিক চিকিৎসা করা গেলে তা কিছুটা সহনশীল মাত্রায় রাখা সম্ভব হয়, কিন্তু তা পুরোমাত্রায় নয়। কারণ এসব শিশুর বিকাশ ক্ষেত্রের প্রায় সব কটিতেই কমবেশি সমস্যা দেখা যায়। যে কারণে এসব শিশুর ক্ষেত্রে অটিজম স্পেকট্রাম ডিস-অর্ডার (এএসডি) বলা হয়ে থাকে। ১৯১২ সালে বিশ্বে সর্বপ্রথম পল ইউজেন ব্লু লার নামের একজন চিকিৎসক এ সমস্যায় আক্রান্ত শিশুদের রোগের নামকরণ করেন ‘অটিজম’।

প্রতিবছর ২ এপ্রিল বিশ্ব অটিজম সচেতনতা দিবস দেশব্যাপী যথাযোগ্য মর্যাদায় উদযাপন করা হয়ে থাকে। সরকারি অফিস ও অটিজম ব্যক্তিদের বাড়িতে দুই দিনব্যাপী নীল বাতি প্রজ্বালন ছিল এ বছরের মূল কার্যক্রমের একটি গুরুত্বপূর্ণ অংশ। নীল রং হচ্ছে অটিজম ব্যক্তিদের রং এবং অটিজম শিশু বিষয়ে সচেতনতার প্রতীক। কারণ অটিস্টিক ব্যক্তির জগৎ আমাদের চেয়ে ভিন্ন। এই জগতে কেউ প্রবেশ করতে পারে না। তাই এই জগেক বিশেষজ্ঞরা নাম দিয়েছেন অটিজমের ‘নীলজগৎ’।

দেশে ‘অটিজম’ শব্দটা পরিচিত করার পেছনে প্রধানমন্ত্রীর সুযোগ্য কন্যা মনোবিজ্ঞানী সায়মা ওয়াজেদ পুতুলের নাম অগ্রগণ্য। বর্তমান সরকার এরই মধ্যে যেসব উদ্যোগ গ্রহণ করেছে—এর যথাযথ বাস্তবায়ন সম্ভব হলে বাংলাদেশ হবে বিশ্বের উন্নত দেশের মতো প্রতিবন্ধীবান্ধব বাংলাদেশ। দেশে অটিজমসহ প্রতিবন্ধী মানুষের জীবনমান পরিবর্তনের অভিযাত্রায় সবার জন্য অন্তর্ভুক্তিমূলক সমাজ গঠনে সরকার যেসব উদ্যোগ গ্রহণ করেছে, এর মধ্যে দুটি যুগান্তকারী পদক্ষেপ হলো—‘প্রতিবন্ধী ব্যক্তির অধিকার ও সুরক্ষা আইন-২০১৩’ এবং ‘নিউরো-ডেভেলপমেন্টাল সুরক্ষা ট্রাস্ট আইন-২০১৩’। আইনের অধিকারভিত্তিক বিভিন্ন ধারা বাস্তবায়নে সরকার অটিজমসহ এনডিডি (সিপি, বুদ্ধি ও ডাউন্স) ব্যক্তিদের জন্য গঠন করে ‘নিউরো-ডেভেলপমেন্টাল প্রতিবন্ধী সুরক্ষা ট্রাস্ট’। এর আওতায় স্বাস্থ্য ও জীবন ঝুঁকি হ্রাসকল্পে জীবন বীমা প্রকল্প গ্রহণ, প্রতি জেলায় অটিজম ও এনডিডি ব্যক্তিদের সেবা প্রদানে ‘প্রতিবন্ধীসেবা ও সাহায্যকেন্দ্র’ স্থাপন, প্রতিটি জেলা হাসপাতালে ওয়ান স্টপ স্বাস্থ্যসেবা চালু, এনডিডি ব্যক্তিদের পুনবার্সনকেন্দ্র, এনডিডি শিশুর অভিভাবকদের কেয়ারগিভার প্রশিক্ষণ প্রদান, অটিজম ও এনডিডি ব্যক্তিদের সম্পর্কে সম্যক ধারণা ও সচেতনতা সৃষ্টির লক্ষ্যে সমাজের বিভিন্ন স্তরের ব্যক্তিদের যেমন—সংসদ সদস্য, সরকারি কর্মকর্তা, উপজেলা ও ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান, স্কুলের প্রধান শিক্ষক ও ধর্মীয় নেতাদের জন্য যোগাযোগে আচরণ পরিবর্তন (বিসিসি) উপকরণ তৈরি।

অটিজমসহ প্রতিবন্ধী শিশু শিক্ষার হার বৃদ্ধিকল্পে সরকার অসচ্ছল প্রতিবন্ধী শিশুভাতা, প্রতিবন্ধী শিশু শিক্ষা উপবৃত্তি প্রদান করে আসছে। ‘প্রতিবন্ধিতা সম্পর্কিত সমন্বিত বিশেষ শিক্ষা নীতিমালা-২০১৯’ প্রণয়ন করে এর আলোকে সরকারি-বেসরকারি উদ্যোগে দেশের প্রতিটি জেলা ও উপজেলা পর্যায়ে অটিজমসহ এনডিডি শিশুদের জন্য বিশেষায়িত বিদ্যালয় স্থাপনের উদ্যোগ গ্রহণ করা হয়েছে। এরই ধারাবাহিকতায় দেশে এরই মধ্যে প্রায় এক হাজার ২০০-এর অধিক বিশেষ স্কুল প্রতিষ্ঠা পেয়েছে। এনডিডি শিক্ষার্থীদের উপযোগী শিক্ষা প্রদানের লক্ষ্যে ট্রাস্টের ব্যবস্থাপনা পরিচালক মো. শাহ আলমের তত্ত্বাবধানে বিশেষ কারিকুলাম প্রণয়নের কাজ পুরোমাত্রায় এগিয়ে চলছে। এরই মধ্যে এর গাইডলাইন প্রস্তুতকরণ সম্পন্ন হয়েছে। এত কিছুর পরও বাস্তবতায় প্রায়ই এর ভিন্ন চিত্র পরিলক্ষিত হয়। সাম্প্রতিক সময়ে বিবিএসের জরিপে দেখা যায়, দেশে প্রতিবন্ধী শিশুদের অর্ধেকেরও বেশি কোনো আনুষ্ঠানিক শিক্ষা বা স্কুলে যায় না। যারা স্কুলে যায় তারা তাদের বয়স অনুপাতে শিক্ষাগতভাবে গড়ে দুই বছরের বেশি পিছিয়ে আছে। জরিপে দেখা যায়, প্রতিবন্ধী শিশুদের (৫-১৭ বছর বয়সী) মধ্যে মাত্র ৬৫ শতাংশ শিশু প্রাথমিক বিদ্যালয়ে এবং মাত্র ৩৫ শতাংশ শিশু মাধ্যমিক বিদ্যালয়ে নথিভুক্ত আছে। মোট ৬০ শতাংশ প্রতিবন্ধী শিশু আনুষ্ঠানিক শিক্ষার বাইরে। বর্তমানে সরকারি নিবন্ধিত প্রতিবন্ধী মানুষের সংখ্যা ২৯ লাখ ৯৪ হাজার ৭৩ জন। এর মধ্যে অটিজমসহ এনডিডি ব্যক্তিদের সংখ্যা তিন লাখ ৯৯ হাজার ৬৮৬ জন। দেশে শুধু অটিজম ব্যক্তির সংখ্যা ৭০ হাজার ১২৪ জন। কিন্তু বিবিএসের জরিপ মোতাবেক, দেশের মোট জনসংখ্যার ১.৭ শতাংশ প্রতিবন্ধী রয়েছে। এতে দেখা যায়, দেশে মোট প্রতিবন্ধী মানুষের মধ্যে ৬৫ শতাংশ এখনো অনিবন্ধিত রয়ে গেছে। দেশে ৬০ শতাংশ প্রতিবন্ধী শিশু স্কুলের বাইরে থাকলেও তাদের জন্য সরকারি সুযোগ-সুবিধাপ্রাপ্ত মাত্র ৭৪ স্কুল রয়েছে। যদিও দেশে এরই মধ্যে এক হাজার ২০০-এর অধিক বিশেষ স্কুল রয়েছে, তথাপি দীর্ঘ ১০ বছরেও এই স্কুলগুলোর সরকারি স্বীকৃতি ও এমপিওভুক্তি—এর কোনোটাই হয়নি। আশঙ্কা করা হচ্ছে, দেশের বিশেষায়িত এই এক হাজার ২০০ স্কুল যদি সরকারি স্বীকৃতি ও বেতন-ভাতার অভাবে একসময় বন্ধ হয়ে যায়, তাহলে স্কুলের বাইরে থাকা প্রতিবন্ধী শিশুর সংখ্যা আগামী দিনে আরো বাড়বে। তাই যথাসম্ভব স্কুলগুলো স্বীকৃতি ও শিক্ষকদের বেতন-ভাতা নিশ্চিত করা আজ সময়ের দাবি। শিক্ষাই প্রতিবন্ধী মানুষের মুক্তির একমাত্র পথ।

লেখক: ম. মাহবুবুর রহমান ভূঁইয়া – প্রতিবন্ধিতাবিষয়ক গবেষক ও প্রশিক্ষক।


সর্বশেষ - জাতীয় সংবাদ