1. অন্যরকম
  2. অপরাধ বার্তা
  3. অভিমত
  4. আন্তর্জাতিক সংবাদ
  5. ইতিহাস
  6. এডিটরস' পিক
  7. খেলাধুলা
  8. জাতীয় সংবাদ
  9. টেকসই উন্নয়ন
  10. তথ্য প্রযুক্তি
  11. নির্বাচন বার্তা
  12. প্রতিবেদন
  13. প্রবাস বার্তা
  14. ফিচার
  15. বাণিজ্য ও অর্থনীতি

যে কারণে অপরিহার্য শেখ হাসিনা

আলী হাবিব : ইবার্তা টুয়েন্টিফোর ডটকম
রবিবার, ১৬ এপ্রিল, ২০২৩

শুধু সাহস বললে ভুল হবে, দুঃসাহসী তিনি। সাহসিকতার পরিচয় রেখেছিলেন ১৯৮১ সালে, সামরিক শাসকের রক্তচক্ষু উপেক্ষা করে যেদিন পা রেখেছিলেন দেশের মাটিতে, সেদিনই। তারপর এই চার দশকেরও বেশি সময়ের পথচলায় বহুবার মৃত্যুর মুখে পড়েছেন। তাঁকে হত্যা করার চেষ্টা করা হয়েছে, কিন্তু পিছিয়ে যাননি তিনি। দেশসেবার ব্রতে রাজনীতিকে সত্য মেনেছেন। এই সত্য থেকে বিচ্যুত হননি তিনি। সত্যভাষণে কখনো পিছপা হননি। সম্প্রতি জাতীয় সংসদের সুবর্ণ জয়ন্তী উপলক্ষে আয়োজিত বিশেষ অধিবেশনের সমাপনী দিবসের বক্তব্যে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা উচ্চারণ করলেন এমন কিছু সত্য, যা অনেককেই বিস্মিত করেছে। তাঁর এই সাহসী বক্তব্যের পর রাজনৈতিক পর্যবেক্ষক মহলে আলোচনা চলছে। অনেকে বলছেন, উত্তরাধিকার সূত্রেই তিনি এই সাহস পেয়েছেন। তিনি তো বঙ্গবন্ধুর কন্যা। এমন সাহস তিনি দেখাতেই পারেন।

জাতীয় সংসদে দেওয়া ভাষণে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের পৃষ্ঠপোষকতায় চলা এ দেশের কিছু মহলকে ইঙ্গিত করে প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘তারা গণতন্ত্রকে বাদ দিয়ে এখানে এমন একটা সরকার আনতে চাচ্ছে, যার ফলে গণতন্ত্রের কোনো অস্তিত্ব থাকবে না। আমাদের কিছু বুদ্ধিজীবী সামান্য কিছু পয়সার লোভে এদের তাঁবেদারি করে, পদলেহন করে।’ যুক্তরাষ্ট্র সফরে একটি বৈঠকের প্রসঙ্গ তুলে ধরে সরকারপ্রধান বলেন, ‘আমেরিকায় যখন প্রথমবার যাই, সেখানকার আন্ডার সেক্রেটারির সঙ্গে আমার মিটিং হয়েছিল। বলেছিলাম, আমি একটি মনুমেন্ট দেখে এসেছি। সেখানে লেখা আছে, গভর্নমেন্ট অব দ্য পিপল, ফর দ্য পিপল, বাই দ্য পিপল। আমি এমন একটি দেশ থেকে এসেছি, সে দেশটি হচ্ছে, গভর্নমেন্ট অব দ্য আর্মি, বাই দ্য আর্মি, ফর দ্য জেনারেল। বলেছিলাম, আমেরিকা গণতন্ত্র চর্চা করে তাদের আটলান্টিকের পার পর্যন্ত। এটা যখন পার হয়ে যায়, তখন কি আপনাদের গণতন্ত্রের সংজ্ঞাটা বদলে যায়? কেন আপনারা একটা মিলিটারি ডিক্টেটরকে সমর্থন দিচ্ছেন?’

মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের সমালোচনা এর আগেও করেছেন তিনি। ২০১৮ সালের ৭ মার্চ রাজধানীর সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে ঐতিহাসিক ৭ মার্চের ভাষণের বিশ্বস্বীকৃতি উদযাপন উপলক্ষে আয়োজিত আওয়ামী লীগের জনসভায় সমাপনী বক্তব্যে তিনি বলেন, ‘…আমরা ২০০১ সালে সরকারে আসতে পারলাম না। তখন দেশের গ্যাস উত্তোলন করার প্রক্রিয়া চলছিল। আমেরিকান কম্পানি সেই গ্যাস তুলে বিক্রি করবে। কিন্তু আমরা বললাম, গ্যাসের মালিক জনগণ। আমাদের জনগণের জন্য ৫০ বছরের রিজার্ভ নিশ্চিত করতে হবে, তারপর গ্যাস বিক্রির সিদ্ধান্ত হবে। দেশের জনগণের এই স্বার্থ দেখেছিলাম বলে আমাদের বিরুদ্ধে গভীর চক্রান্ত হলো, ষড়যন্ত্র হলো। আওয়ামী লীগ ভোট বেশি পেয়েছিল, কিন্তু আমরা ক্ষমতায় আসতে পারলাম না। দেশের মানুষের স্বার্থ দেখার কারণে আমাদের ক্ষমতায় আসতে দেওয়া হলো না।’

এবারও নির্বাচনের আগে জাতীয় সংসদে তাঁর এ ধরনের বক্তব্য অনেককেই বিস্মিত করেছে। জাতীয় সংসদে প্রধানমন্ত্রীর এই বক্তব্যের পর রাজনৈতিক পর্যবেক্ষকমহলের দৃষ্টি ছিল ওয়াশিংটনে বাংলাদেশ ও যুক্তরাষ্ট্রের বৈঠকের দিকে। দেখা গেল, প্রধানমন্ত্রীর বক্তব্যের কোনো প্রভাব সেই বৈঠকে পড়েনি। মার্কিন পররাষ্ট্র দপ্তরে ব্লিনকেন-মোমেন বৈঠকের সময় অন্য একটি কক্ষে ব্রিফিংয়ে দপ্তরের মুখ্য উপমুখপাত্র বেদান্ত প্যাটেল সাংবাদিকদের জানালেন, বাংলাদেশ ও বিশ্বজুড়ে অবাধ ও সুষ্ঠু নির্বাচনের নীতিকে সমর্থন করে যুক্তরাষ্ট্র। তারা বাংলাদেশের সঙ্গে আমাদের সম্পর্ক জোরদার করতে চায় এবং জোরদার করার চেষ্টা করছে। এ কারণে পররাষ্ট্রমন্ত্রী ব্লিনকেন বাংলাদেশের পররাষ্ট্রমন্ত্রীর সঙ্গে বৈঠক করছেন। যুক্তরাষ্ট্র যে বাংলাদেশের সঙ্গে সার্বিকভাবে সম্পর্ক জোরদার করার অপেক্ষায় আছে, সে কথাও উচ্চারণ করেন তিনি।

সাম্প্রতিক ঘটনাবলির দিকে দৃষ্টি দিলে দেখা যাবে, আরেকটি নির্বাচন দরজায় কড়া নাড়ছে। ঠিক এই সময়ে একটি প্রতিক্রিয়াশীল শক্তি আবার মাঠে নেমেছে। সমমনা কিছু রাজনৈতিক দলকে সঙ্গে নিয়ে মাঠে নেমেছে বিএনপি। নেপথ্যে আছে বাংলাদেশবিরোধী জামায়াত। গত অক্টোবর থেকেই বিএনপির সব রাজনৈতিক কর্মকাণ্ড আবর্তিত হতে থাকে ১০ ডিসেম্বর ঘিরে। ১০ ডিসেম্বর দেশে একটি মহাপ্রলয় ঘটতে যাচ্ছে, এমন একটি ভুল বার্তা দেশের মানুষের কাছে দিতে চায় বিএনপি। সেই মহাপ্রলয় ঘটেনি। বিএনপি বলেছিল, ‘১০ ডিসেম্বর থেকে বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়ার নির্দেশে দেশ চলবে।’ তেমনটি ঘটেনি।

কিন্তু ষড়যন্ত্র কি থেমে আছে? এটি স্পষ্ট যে নির্বাচনের এক বছর আগে আবারও একটি নোংরা চক্রান্ত শুরু হয়ে গেছে। দেশের ভেতরে যেমন, তেমনি দেশের বাইরেও কুশীলবরা সক্রিয়। সেই ষড়যন্ত্র থেকে সাবধান থাকতে দলীয় নেতাকর্মীদেরও সতর্ক করেছেন আওয়ামী লীগ সভাপতি ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। বলেছেন, আগামী নির্বাচন সামনে রেখে দেশের ভেতরে এবং আন্তর্জাতিকভাবে ‘ষড়যন্ত্র’ চলছে।

প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা স্পষ্ট করেই বলেছেন, প্রভাবশালী কোনো দেশ আসতে চাইছে রেফারির ভূমিকায়? বিতর্কিত কাউকে সামনে নিয়ে আসার চেষ্টা করা হচ্ছে। লাভ কী তাতে? আর বিএনপি এত উত্ফুল্ল হচ্ছে কেন? ২০০৮ সালের নির্বাচনে দলটি ২৯টি আসন পেয়েছিল। ২০১৪ সালে তারা নির্বাচন করেনি। ২০১৯ সালের নির্বাচনে ছয়টি আসন পায় তারা। তাহলে ওদের এত উৎসাহিত হওয়ার কারণ কী? আওয়ামী লীগ যদি ক্ষমতা থেকে চলে যায়, সেটিই হবে ওদের জন্য আনন্দের বিষয়। আর কিছুু নয়। কিন্তু এটি তো সত্য যে অনির্বাচিত সরকার এলে জনগণের পবিত্র আমানত সংবিধান শুদ্ধতা হারায়। সংবিধান সমুন্নত না থাকলে মানুষের মৌলিক অধিকার থাকে না। রুদ্ধ হয় বাকস্বাধীনতা। জনগণের গণতান্ত্রিক অধিকার ক্ষুণ্ন হয়।

২০০৯ থেকে ২০২২, গত ১৪ বছরে অভূতপূর্ব আর্থ-সামাজিক উন্নয়নের কারণে বাংলাদেশ বিশ্বের দৃষ্টি কেড়েছে। বাংলাদেশ এখন সারা বিশ্বে একটি উন্নয়নের রোল মডেল। কভিড পরিস্থিতি মোকাবেলার পর রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধের কারণে সৃষ্ট বৈশ্বিক মন্দাও কাটিয়ে উঠতে চলেছে। আর এই অর্জনের পেছনে অনুঘটক হিসেবে কাজ করেছে বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের নেতৃত্বে গঠিত সরকার। আওয়ামী লীগ সরকারের গত ১৪ বছরে বাংলাদেশ বিশ্বের বুকে একটি আত্মমর্যাদাশীল দেশ হিসেবে প্রতিষ্ঠা পেয়েছে। আর্থ-সামাজিক এবং অবকাঠামো খাতে বাংলাদেশ বিস্ময়কর উন্নয়ন করেছে। অষ্টম পঞ্চবার্ষিক পরিকল্পনা বাস্তবায়ন শেষে দারিদ্র্যের হার ১৫.৬ শতাংশে এবং চরম দারিদ্র্যের হার ৭.৪ শতাংশে নেমে আসবে। শেষ বছর ২০২৫ সালে জিডিপি প্রবৃদ্ধির হার দাঁড়াবে ৮.৫১ শতাংশে। আন্তর্জাতিক মুদ্রা তহবিল বলছে, চলতি অর্থবছরে বাংলাদেশের জিডিপি প্রবৃদ্ধি হবে ৫.৫ শতাংশ। আইএমএফের প্রবৃদ্ধির এই পূর্বাভাস সরকারের লক্ষ্যের চেয়ে অনেক কম হলেও বিশ্বব্যাংক ও এশীয় উন্নয়ন ব্যাংকের পূর্বাভাসের চেয়ে সামান্য বেশি। ওদিকে বাংলাদেশ পরিসংখ্যান ব্যুরোর ‘খানার আয়-ব্যয় জরিপ ২০২২’ বলছে, ছয় বছর পর দেশে প্রতি পরিবারে খরচ বেড়ে দ্বিগুণ হলেও দারিদ্র্যের হার কমেছে। দারিদ্র্যের বর্তমান হার ১৮.৭ শতাংশ, ছয় বছর আগে যা ছিল ২৪.৩ শতাংশ। অর্থাৎ ইতিবাচক পথেই আছে দেশ। সরকারের সুনির্দিষ্ট পরিকল্পনা ও পদক্ষেপের কারণে দেশে দারিদ্র্যের হার কমেছে।

এখন নতুন করে কিছু সমীকরণ মেলাতে হবে। গত ১০ এপ্রিল ছিল স্বাধীনতার ঘোষণাপত্র দিবস। স্বাধীনতার ঘোষণাপত্র তো বাংলাদেশের জন্ম সনদ। ১৯৭১ সালের এই দিনে গঠিত হয়েছিল বাংলাদেশ সরকার। আগামীকাল যথাযোগ্য মর্যাদায় পালিত হবে মুজিবনগর দিবস। ১৯৭১ সালের ১৭ এপ্রিল ঐতিহাসিক মুজিবনগরে শপথ নিয়েছিল গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশ সরকার। আজ যারা সরকারের বিরুদ্ধে আন্দোলন গড়ে তুলতে চাইছে, তারা কি সেই সরকারকে মানে? তারা কি স্বাধীনতার ঘোষণাপত্র বিশ্বাস করে? তারা কি ১৯৭২ সালে রচিত সংবিধানে বিশ্বাস করে? যদি না করে, তাহলে প্রশ্ন, যে রাজনৈতিক দল বাংলাদেশের সংবিধানে বিশ্বাস করে না, দেশের স্বাধীনতা ও মুক্তিযুদ্ধে বিশ্বাস করে না—সেই দলের কি বাংলাদেশে রাজনীতি করার কোনো অধিকার আছে?

বাংলাদেশে এখন নানা ধরনের চক্রান্ত চলছে। আওয়ামী লীগকে একাই তা মোকাবেলা করতে হচ্ছে। তবে এ ক্ষেত্রে সবচেয়ে ইতিবাচক দিকটি হচ্ছে দল ও সরকারের নেতৃত্বে আছেন একজন শেখ হাসিনা। অনেকেই বলে থাকেন, দেশে প্রকৃত গণতন্ত্র নেই। যা আছে, তা হচ্ছে কর্তৃত্ববাদী গণতন্ত্র। বাস্তবতা হচ্ছে, দেশকে সন্ত্রাসমুক্ত করে গণতন্ত্রের পথে টিকিয়ে রাখতে বাংলাদেশের মানুষ তাঁর শাসন মেনে নিয়েছে। এই সময়ে একজন শেখ হাসিনাকেই সবচেয়ে বেশি প্রয়োজন।

লেখক: আলী হাবিব – সাংবাদিক ও ছড়াকার।


সর্বশেষ - জাতীয় সংবাদ