1. অন্যরকম
  2. অপরাধ বার্তা
  3. অভিমত
  4. আন্তর্জাতিক সংবাদ
  5. ইতিহাস
  6. এডিটরস' পিক
  7. খেলাধুলা
  8. জাতীয় সংবাদ
  9. টেকসই উন্নয়ন
  10. তথ্য প্রযুক্তি
  11. নির্বাচন বার্তা
  12. প্রতিবেদন
  13. প্রবাস বার্তা
  14. ফিচার
  15. বাণিজ্য ও অর্থনীতি

রোহিঙ্গা প্রত্যাবাসন ও আমাদের আশাবাদ

ড. ফরিদুল আলম : ইবার্তা টুয়েন্টিফোর ডটকম
শনিবার, ২৯ এপ্রিল, ২০২৩

চলতি মাসের শুরুতে অনেকটা নীরবে বাংলাদেশ সফর করে গেলেন চীন সরকারের বিশেষ দূত দেং সি জুন। তাঁর এই সফরের পর থেকেই বাংলাদেশে অবস্থানরত ১০ লক্ষাধিক রোহিঙ্গার মিয়ানমারে ফেরত পাঠানোর প্রক্রিয়ার বিষয়টি আবার আলোচনায় এসেছে। এ বিষয়ে বাংলাদেশের পররাষ্ট্রমন্ত্রীর মন্তব্য জানতে চাওয়া হলে তিনি যে ভাষায় প্রতিক্রিয়া জানিয়েছেন, সেটা থেকে ধারণা করা যায় বাংলাদেশ এখনই এ নিয়ে খুব একটা আশাবাদের কথা বলতে চাইছে না। এর কারণ হিসেবে মন্ত্রী নিজেই জানিয়েছেন যে এ ধরনের প্রচেষ্টা এর আগে দুবার ভেস্তে গেছে। চীনের উদ্যোগের কিছুদিন আগে মিয়ানমার সরকারের কয়েকজন কর্মকর্তা বাংলাদেশের রোহিঙ্গা শরণার্থী শিবিরগুলো ঘুরে গিয়ে এক হাজার রোহিঙ্গাকে ফেরত নেওয়ার অংশ হিসেবে ৭০০ জনের এক সংক্ষিপ্ত তালিকা তৈরি করেছেন বলে জানা গেছে। চীনের সমর্থনে মিয়ানমারের এই ফেরত নেওয়ার তৎপরতা এবং এ ক্ষেত্রে বাংলাদেশের প্রতিক্রিয়া থেকে যা সহজে অনুমান করা যায়, তা হলো খুব একটা আশাবাদের কিছু আপাতত নেই।

এর পেছনে আমরা সবচেয়ে বড় যে কারণটি অনুমান করতে পারি তা হচ্ছে, এই তৎপরতা নেওয়া হয়েছে এককভাবে চীনের তরফ থেকে। এখানে আসিয়ান, জাতিসংঘ বা অপরাপর পক্ষগুলোর সঙ্গে সমন্বয়ের দিকটি মাথায় রাখা হয়নি। এখানে আরেকটি বিষয় বলা হয়েছে তা হলো, স্বেচ্ছায় ফেরত যেতে চায় এমন রোহিঙ্গাদের এই ফেরত নেওয়ার তালিকায় অগ্রাধিকার দেওয়া হয়েছে। মজার বিষয় হচ্ছে, এ ধরনের একটি ক্ষুদ্র সংখ্যার রোহিঙ্গা ফেরত নিয়ে পুনর্বাসন করা হয়তো সম্ভব, কিন্তু ধীরে হলেও এ ধরনের প্রক্রিয়ায় আসলে কত বছরের মধ্যে এই প্রক্রিয়াটি সম্পন্ন হবে এবং এর ফলে কতজন আসলে স্বেচ্ছায় ফেরত যেতে চাইবে সেটা কিন্তু এক বড় প্রশ্নবোধক চিহ্নের মধ্যে থাকবে। আরেকটি বিষয় হলো, যেখানে মিয়ানমারের বিভিন্ন জায়গায় এখন পর্যন্ত জান্তা সরকারের সঙ্গে বিভিন্ন গোষ্ঠীর দাঙ্গা চলছে এবং সাধারণ মানুষের জীবনের কোনো নিরাপত্তা নেই, সেখানে রোহিঙ্গাদের ফেরত পাঠানোর মতো সহায়ক পরিবেশ রয়েছে কি না এমনটি না ভেবেই চীন কেন সহসা অনেক দিনের নীরবতা ভেঙে এ ধরনের প্রচেষ্টায় জোর দিচ্ছে সেটা গভীর ভাবনার বিষয়।

বাংলাদেশের দিক দিয়ে ব্যাপকভাবে রোহিঙ্গাদের প্রত্যাবাসনের বিষয় নিয়ে বিগত বছরগুলোতে আন্তর্জাতিক প্রচেষ্টার কোনো ঘাটতি রাখা হয়নি। অপ্রিয় হলেও বলতে হয়, বাংলাদেশ নিজে এ ক্ষেত্রে এই মুহূর্তে খুব আশাবাদী হওয়ার মতো কিছুই দেখছে না। পাইলট প্রকল্পের আওতায় যে এক হাজার রোহিঙ্গাকে ফেরত নেওয়ার কথা বলা হচ্ছে, এটা এ দেশে বসবাসরতদের তুলনায় খুবই ক্ষুদ্র অংশ। এর মধ্য দিয়ে চীন যে আমাদের খুব একটা বিপদমুক্ত করতে তাদের উদারতা নিয়ে হাজির হয়েছে, এটাও ভাবার কোনো সুযোগ নেই। তারা বরং এর মধ্য দিয়ে বাংলাদেশের কাঁধে ভর দিয়ে পরিবর্তিত পরিস্থিতিতে তাদের নিজেদের শক্তির সক্ষমতাকে পরখ করে নিতে চাইছে। কী সেই সক্ষমতার পরীক্ষা এটা জানতে গেলে আমাদের কিছুটা আলোকপাত করতে হবে মিয়ানমারকে নিয়ে ভূ-রাজনৈতিক সমীক্ষা বনাম চীনের বিদ্যমান প্রভাবের দিকটি।

আমরা বরাবরই জানি যে মিয়ানমারের জান্তা সরকার চীনের সমর্থন নিয়ে ক্ষমতায় রয়েছে এবং সর্বশেষ সামরিক অভ্যুত্থানের পেছনেও চীনের সমর্থন রয়েছে। সাম্প্রতিক সময়ে আমরা দেখছি দেশটিতে জান্তাবিরোধী বেসামরিক প্রতিবাদ অতীতের সব রেকর্ডকে ভেঙে জান্তা সরকারের ক্ষমতায় টিকে থাকার জন্য এক চ্যালেঞ্জ সৃষ্টি করেছে। এরই মধ্যে ক্ষমতাচ্যুত ন্যাশনাল লীগ ফর ডেমোক্রেসিসহ (এনএলডি) অপরাপর বিরোধী পক্ষগুলো মিলে বিকল্প প্রবাসী সরকার ও ন্যাশনাল ইউনিটি গভর্নমেন্ট (এনইউজি) গঠন করেছে। যুক্তরাষ্ট্রসহ পশ্চিমা দেশগুলোর সমর্থন রয়েছে এই এনইউজির প্রতি। এদের সহায়তায় গঠিত হয়েছে পিপলস ডিফেন্স ফোর্স (পিডিএফ)। এই পিডিএফ দেশের বিভিন্ন এলাকায় সরকারি বাহিনীর সঙ্গে বিদ্রোহীদের সঙ্গে সমর্থনে সহায়তা দিয়ে যাচ্ছে এবং বহু এলাকা এখন পিডিএফের নিয়ন্ত্রণে চলে গেছে। রাখাইন অঞ্চলে আরাকান আর্মি এ ধরনের একটি বিদ্রোহী গ্রুপ, যার রয়েছে ৩০ হাজার সশস্ত্র সদস্য। এতদিন ধরে ধারণা করা হতো এই আরাকান আর্মি চীনের সহায়তা পেয়ে আসছে। এখন বলা হচ্ছে, তারা পশ্চিমাদের দিকে ঝুঁকেছে এবং এনইউজি দ্বারা নিয়ন্ত্রিত। বিষয়টি নিঃসন্দেহে চীনের জন্য অস্বস্তির। এই জায়গাটিতে এসে চীন রোহিঙ্গা প্রত্যাবাসনের নামে এ ধরনের একটি পাইলট প্রকল্পের নামে নিজেদের সক্ষমতার দিকটি দেখতে চাইছে। এ ক্ষেত্রে বাংলাদেশের ভূমিকাকে বিভিন্নভাবে দেখা হলেও আমি নিজে মনে করি এ ক্ষেত্রে আমাদের অর্জনের খুব বেশি কিছু না থাকলেও হারানোরও কিছু নেই। বরং স্বল্প পরিসরে হলেও এই প্রত্যাবাসন প্রক্রিয়াটি যদি সফল হয়, তাহলে এটি চলমান রাখার ক্ষেত্রে কিছুটা আশার সঞ্চার হতে পারে।

চীনের দিক থেকে এই প্রত্যাবাসন প্রক্রিয়ার উদ্যোগের মধ্যে আমরা সম্প্রতি দেখলাম জাতিসংঘের সাবেক মহাসচিব বান কি মুন মিয়ানমারে এক ঝটিকা সফর করেছেন। ধারণ করা যায় যে তাঁর সফরের সঙ্গে সঙ্গে এই উদ্যোগের সম্পর্ক থাকতে পারে। তবে এ নিয়ে আনুষ্ঠানিকভাবে কিছুই জানানো হয়নি। এখানে এই প্রত্যাবাসন বিষয়টির বাইরে রোহিঙ্গাদের নিয়ে বিভিন্ন সেক্টরের ভিন্ন ভিন্ন দৃষ্টিভঙ্গি একটি সুষ্ঠু প্রত্যাবাসন প্রক্রিয়ার বড় অন্তরায়। যেসব সংস্থা রোহিঙ্গাদের নিয়ে কাজ করে, তারা দেখছে তাদের স্বার্থের বিষয়টি, যেমন ফান্ড, কর্মীদের চাকরির ভবিষ্যৎ, সুযোগ-সুবিধা ইত্যাদি। তাদের কাছে আশ্রয়দাতা রাষ্ট্র হিসেবে বাংলাদেশের চেয়ে এই আশ্রয়প্রার্থীদের বিষয়টিই বড় হয়ে দাঁড়িয়েছে। আরো স্পষ্ট করে বলতে গেলে এদের নিয়ে তাদের কাজগুলো তারা আরো কিভাবে স্বাচ্ছন্দ্যে সম্পাদন করতে পারে সেটাই অধিক গুরুত্বপূর্ণ। তবে প্রত্যাবাসন শুরু হোক বা না হোক, সফল হোক বা না হোক, রোহিঙ্গাদের নিয়ে আমাদের নিজেদের অবস্থান নিয়ে ভাবনার বিষয়টিও গুরুত্বপূর্ণ। রোহিঙ্গা জনগোষ্ঠী আমাদের সমাজে জেঁকে বসছে। এরই মধ্যে অনেকে আমাদের মূলধারার সঙ্গে সম্পৃক্ত হতে শুরু করেছে। এসব খুবই উদ্বেগের। সরকারের শৈথিল্যের কোনো সুযোগ নেই। আর তাই রাজনৈতিক প্রক্রিয়া ভেদ করে এই জনগোষ্ঠী যেন কোনো অযাচিত সুযোগ নিতে না পারে সে বিষয়ে সচেতন থাকা জরুরি।

 

লেখক: ড. ফরিদুল আলম – অধ্যাপক, আন্তর্জাতিক সম্পর্ক বিভাগ চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়।


সর্বশেষ - জাতীয় সংবাদ