1. অন্যরকম
  2. অপরাধ বার্তা
  3. অভিমত
  4. আন্তর্জাতিক সংবাদ
  5. ইতিহাস
  6. এডিটরস' পিক
  7. খেলাধুলা
  8. জাতীয় সংবাদ
  9. টেকসই উন্নয়ন
  10. তথ্য প্রযুক্তি
  11. নির্বাচন বার্তা
  12. প্রতিবেদন
  13. প্রবাস বার্তা
  14. ফিচার
  15. বাণিজ্য ও অর্থনীতি

ঐতিহাসিক মুজিবনগর সরকার প্রসঙ্গে

নিউজ এডিটর : ইবার্তা টুয়েন্টিফোর ডটকম
বুধবার, ১৭ এপ্রিল, ২০২৪

স্বাধীন সার্বভৌম বাংলাদেশের অভ্যুদয়ের ঐতিহাসিক পর্যবেক্ষণে এবং বিশ্লেষণে স্বল্প পরিসরে তিনটি অধ্যায়ে উল্লেখ করা যায় : প্রথম অধ্যায়ে মুক্তিযুদ্ধপূর্ব বাঙালির স্বাধিকার থেকে স্বাধীনতাসংগ্রামের প্রস্তুতিপর্ব। দ্বিতীয় অধ্যায়ে মহান মুক্তিযুদ্ধ ও স্বাধীনতা অর্জন। তৃতীয় অধ্যায়ে স্বাধীনতা-পরবর্তী বর্তমান ৫৩ বছরে মুক্তিযুদ্ধপূর্ব এবং মুক্তিযুদ্ধকালীন পূর্বাপর ঐতিহাসিক ঘটনাপ্রবাহের সঠিক তথ্য সঞ্চালনকেন্দ্রিক বর্তমান অবস্থা। উল্লিখিত বিষয়সমূহের পর্যায়ক্রমিক বিশ্লেষণে উল্লেখ করা প্রয়োজন যে, জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান ১৯৭১ সালের ২৬ মার্চ প্রথম প্রহরে স্বাধীনতা ঘোষণা, ১০ এপ্রিল স্বাধীনতার ঘোষণাপত্র প্রকাশ এবং ১৭ এপ্রিল মুজিবনগর সরকার তথা স্বাধীন বাংলাদেশ সরকারের আনুষ্ঠানিক শপথ গ্রহণ ও প্রকাশের ঐতিহাসিক গুরুত্ব; অন্যদিকে স্বাধীনতাপূর্ব তত্কালীন পূর্ব পাকিস্তানের আপামর বাঙালির স্বাধিকার থেকে স্বাধীনতার উদ্বুদ্ধকরণ এবং বর্তমানে সার্বিক এই ইতিহাস উপস্থাপন অত্যন্ত গুরুত্ববহ।

মহান মুক্তিযুদ্ধপূর্ব স্বাধিকার আন্দোলনের ইতিহাসের ধারাবাহিকতায় ১৯৫২ সালের ভাষা আন্দোলন থেকে ১৯৬৬ সালের ৬-দফা আন্দোলন, যা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের ‘ব্রেইন চাইল্ড’। এই ৬-দফা আন্দোলনেই বাঙালিকে স্বাধিকার থেকে স্বাধীনতায় উদ্বুদ্ধ করেছিল, যে ইতিহাসে এর ঐতিহাসিক গুরুত্ব রয়েছে আজকের এই স্বাধীন সার্বভৌম বাংলাদেশে। মূলত বঙ্গবন্ধুর ৬-দফা আন্দোলনের মধ্য দিয়ে সমগ্র বাঙালি জাতিকে উদ্বুদ্ধ করেছিল স্বাধিকার থেকে স্বাধীনতায় আর নেতৃত্ব ও জনগণের ওপর পারস্পরিক আস্থায়। যার প্রমাণ পাওয়া যায় ’৬৯-এর গণ-অভ্যুত্থানে, ’৭০-এর নির্বাচনে এবং ’৭১-এর ৭ই মার্চের বঙ্গবন্ধুর ঐতিহাসিক ভাষণে। আর ’৭০-এর নির্বাচনে বঙ্গবন্ধুর দল আওয়ামী লীগের নিরঙ্কুশ সংখ্যাগরিষ্ঠতা প্রাপ্তি ও আপামর বাঙালির অকুণ্ঠ সমর্থন। আর তাই ১৯৭১ সালের ৭ই মার্চ বঙ্গবন্ধু ‘রাজনৈতিক স্বাধীনতা ঘোষণা’ করেছিলেন—‘এবারের সংগ্রাম স্বাধীনতার সংগ্রাম’ উচ্চারণের মধ্য দিয়ে।

এই ধারাবাহিকতায় ২৬ মার্চ বঙ্গবন্ধুর ‘প্রশাসনিক স্বাধীনতা ঘোষণা’ এবং ১০ এপ্রিল স্বাধীনতার ঘোষণাপত্র প্রকাশ ও ১৭ এপ্রিল স্বাধীন বাংলাদেশের প্রথম সরকার অর্থাত্ মুজিবনগর সরকার শপথ নেয়। ঐতিহাসিক এই ঘটনাপ্রবাহে আরো কিছু গুরুত্বপূর্ণ ইতিহাস রয়েছে, যা স্বল্পপরিসরে অনুল্লেখ রয়ে গেল। কিন্তু ঐতিহাসিক গুরুত্বে প্রতিটি বিষয়ই অত্যন্ত গুরুত্ববহ। তেমনিভাবে দ্বিতীয় অধ্যায়ের ইতিহাস বিশ্লেষণে দেখা যায়—বঙ্গবন্ধুর আহ্বানে আপামর জনগণ মহান মুক্তিযুদ্ধে অংশ নিয়ে স্বাধীনতাসংগ্রাম চালিয়ে যায়। প্রসঙ্গত, ১৯৭১ সালের ২৬ মার্চ বঙ্গবন্ধু কর্তৃক স্বাধীনতা ঘোষণার ওপর ভিত্তি করে ১৯৭১ সালের ১০ এপ্রিল স্বাধীনতার যে ঘোষণাপত্র প্রণয়ন করা হয়, তা মূলত বাংলাদেশের প্রথম সংবিধান হিসেবে বিবেচিত এবং স্বাধীনতাসংগ্রামে বঙ্গবন্ধুর নেতৃত্বের ঐতিহাসিক দলিল।

কেননা এই স্বাধীনতার ঘোষণাপত্রে বঙ্গবন্ধু কর্তৃক স্বাধীনতা ঘোষণা এবং মহান মুক্তিযুদ্ধের যৌক্তিকতা তুলে ধরে তার যথার্থতা সন্নিবেশিত করা হয়। এছাড়াও স্বাধীনতার ঘোষণাপত্রে উল্লেখ আছে যে, সংখ্যাগরিষ্ঠ জনপ্রতিনিধিদের সিদ্ধান্তে এবং সে মোতাবেক প্রস্তুতকৃত এই ঐতিহাসিক দলিলে গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশের বঙ্গবন্ধু কর্তৃক স্বাধীনতা ঘোষণা এবং সরকার গঠন এবং বঙ্গবন্ধুকে সরকারের রাষ্ট্রপতি, সৈয়দ নজরুল ইসলামকে উপরাষ্ট্রপতি, তাজউদ্দীন আহমদকে প্রধানমন্ত্রী করে মন্ত্রীবর্গ নিয়োগ এবং যুদ্ধকালীন সরকার গঠন ও পরিচালনার শাসনতান্ত্রিক এক্তিয়ারের বিষয়টি। সুতরাং দ্বিতীয় অধ্যায়ে উল্লিখিত ঐতিহাসিক ঘটনাপ্রবাহ একদিকে বঙ্গবন্ধুর নেতৃত্বে জনগণের মুক্তিযুদ্ধে অংশগ্রহণ এবং শাসনতান্ত্রিক স্বীকৃতির যথার্থতা ইতিহাসে গুরুত্ববহ।

প্রাসঙ্গিক এই আলোচনায় উল্লিখিত তৃতীয় অধ্যায়ের বিষয়টি অত্যন্ত প্রয়োজনীয়। স্বাধীনতা-পরবর্তী বর্তমান বাংলাদেশে মহান মুক্তিযুদ্ধের ইতিহাস বিকৃতি ঘটেছে এবং ঘটছে প্রতিনিয়ত। ১৯৭৫ সালের ১৫ আগস্টের নির্মম হত্যাকাণ্ডের পর ষড়যন্ত্রকারীরা মুক্তিযুদ্ধের প্রকৃত ইতিহাস বিকৃত করার চেষ্টা অবিরত রেখেছে। বিশেষ করে, মহান মুক্তিযুদ্ধের নেতৃত্ব, স্বাধীনতার ঘোষণা, মুক্তিযুদ্ধের চেতনাসহ নানা ক্ষেত্রে ইতিহাসকে বিকৃত করার চেষ্টা করেছে। ফলে প্রজন্মের পর প্রজন্ম বিভ্রান্তির শিকার হয়েছে। সেই বিভ্রান্তির প্রভাব দেশপ্রেম, মন ও মননে নেতিবাচক অবস্থার সৃষ্টি করেছে। এক্ষেত্রে মুক্তিযুদ্ধবিরোধী শক্তি ও ষড়যন্ত্রকারীরা কিছুটা সফলও হয়েছে। যার প্রমাণ পাওয়া যায় স্বাধীনতার ৫৩ বছরে এসে এখনো কিছু রাজনৈতিক দল ও প্রতিক্রিয়াশীল গোষ্ঠী বর্তমান প্রজন্মকে বিভ্রান্তিতে ফেলার চেষ্টা করে যাচ্ছে। বর্তমান সময়ে স্বাধীনতাসংগ্রামের নেতৃত্বদানকারী দল আওয়ামী লীগ।

বর্তমান বাংলাদেশ এগিয়ে যাচ্ছে অর্থনৈতিক, সামাজিক, তথা সামগ্রিক উন্নয়ন অগ্রগতিতে। কিন্তু এই উন্নয়ন অগ্রগতিকে আরো ত্বরান্বিত করতে যে দেশপ্রেমিক প্রজন্ম দরকার, তা তৈরিতে ফারাক থেকে যাচ্ছে। কারণ যে প্রজন্ম দেশপ্রেমিক হিসেবে তৈরি হবে সেই প্রজন্মকে বিভ্রান্তির মধ্যে ফেলে দিতে সচেষ্ট ষড়যন্ত্রকারী স্বাধীনতাবিরোধীরা। আর সেখানেই মুক্তিযুদ্ধের ঐতিহাসিক বিষয়গুলো গুরুত্বপূর্ণ। সেই সঙ্গে এই গুরুত্ব অনুধাবন করে ইতিহাসের সঠিক তথ্য সঞ্চালনই এখন খুব প্রয়োজন। বাংলাদেশের অভ্যুদয়ে মুজিবনগর সরকারের ঐতিহাসিক গুরুত্ব বর্তমান ও আগামী প্রজন্মের কাছে সঞ্চালনের সঙ্গে সঙ্গে আরো কিছু উদ্যোগ নিতে হবে। এই উদ্যোগগুলোর মধ্যে ১৯৭১ সালের ১০ এপ্রিলের স্বাধীনতার ঘোষণাপত্র ও ১৭ এপ্রিলে মুজিবনগর সরকারের শপথ অনুষ্ঠানের ঐতিহাসিক তথ্য ও ঘটনাপ্রবাহ শিক্ষা পাঠ্যক্রম এবং স্থানীয় পর্যায়ে সামাজিক, সাংস্কৃতিক সংগঠনসহ সরকারি ও বেসরকারি প্রশাসনিক দপ্তরেও অন্তর্ভুক্ত করে ঐতিহাসিক গুরুত্বে উদ্যাপন করতে হবে। আর এর জন্য প্রয়োজন প্রাতিষ্ঠানিক উদ্যোগ।

লেখক: অধ্যাপক ড. মো. ছাদেকুল আরেফিন – সমাজকর্ম বিভাগ, রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয় ও সাবেক উপাচার্য, বরিশাল বিশ্ববিদ্যালয়


সর্বশেষ - জাতীয় সংবাদ