1. অন্যরকম
  2. অপরাধ বার্তা
  3. অভিমত
  4. আন্তর্জাতিক সংবাদ
  5. ইতিহাস
  6. এডিটরস' পিক
  7. খেলাধুলা
  8. জাতীয় সংবাদ
  9. টেকসই উন্নয়ন
  10. তথ্য প্রযুক্তি
  11. নির্বাচন বার্তা
  12. প্রতিবেদন
  13. প্রবাস বার্তা
  14. ফিচার
  15. বাণিজ্য ও অর্থনীতি

মিয়ানমার ইস্যু সমাধানে প্রয়োজন তিন দেশের ঐক্যবদ্ধ প্রয়াস

ডেস্ক রিপোর্ট : ইবার্তা টুয়েন্টিফোর ডটকম
বৃহস্পতিবার, ২৫ এপ্রিল, ২০২৪

আধুনিক রাষ্ট্র বলতে যা বুঝি, মিয়ানমার সে ধরনের আধুনিক রাষ্ট্র নয়। মিয়ানমারে সব মিলিয়ে মোট ১৩৫টি জাতিগোষ্ঠী রয়েছে। তার মধ্যে আট-দশটা কিন্তু বড় আকারের ক্ষমতাধর জাতিগোষ্ঠী। তাদের নিজেদের সেনাবাহিনী আছে। এমনকি রাজস্ব আদায়ের ব্যাপারেও তারা একটা খবরদারি করে থাকে। সে অর্থে বিভক্ত সার্বভৌমত্ব কিন্তু সামরিক বাহিনী বেশ কাজে লাগিয়েছে। কারণ কোনো সময় একসঙ্গে কখনো লড়াই করতে হয়নি। যদি কেউ অমান্য করে তাদের সঙ্গে লড়াই করেছে বা অন্যদের সঙ্গে সমঝোতা করেছে, এভাবে করেই মিয়ানমারে সামরিক বাহিনী শক্তি সঞ্চয় করেছে সব সময়। সে হিসেবে কোনো সময় গণতান্ত্রিক কাঠামো গড়ে ওঠেনি, বরং সামরিক বাহিনী বড় আকারের ভয় দেখিয়েছে সার্বভৌমত্ব খণ্ড হয়ে যাবে, বৌদ্ধধর্ম হুমকির মুখে পড়বে।

এবার যেটা হয়েছে সেটা হলো অং সান সু চির যে দল। যাদের ক্ষমতা থেকে সরিয়ে দেওয়া হয়। তারা পরে ন্যাশনাল ইউনিটি গভর্নমেন্ট (এনইউজি) গঠন করে এবং তাদের আবার সশস্ত্র কাঠামো তৈরি করে, যেটাকে পিপলস ডিফেন্স ফোর্স (পিডিএফ) বলে। এনইউজি পিডিএফ হওয়ার ফলে মূল মিয়ানমারের বার্মার জনগোষ্ঠীর মধ্যে ভাঙন দেখা দিয়েছে। পিডিএফের কারণে আরও জটিলতা বেড়েছে। কারণ এদের পেছনে পশ্চিমা দেশ জড়িত এবং তার মধ্যে বড় শক্তিগুলোর মধ্যে পেছনে আছে যুক্তরাষ্ট্র। যেহেতু একটা গৃহযুদ্ধ শুরু হয়েছে, কেন্দ্রীয় সরকারের সঙ্গে। বিভিন্ন জনগোষ্ঠী তাদের সুদৃঢ় করার সুযোগটা নিয়েছে। সুযোগটা নিয়ে তাদের খবরদারিটা বাড়াচ্ছে। এবং এক সময় আমরা দেখলাম যে, তারা দুই-তিনজন আবার একসঙ্গে কাজ করা শুরু করেছে। তার মধ্যে অন্যতম নাম হলো থ্রি ব্রাদারহুড-অ্যালায়েন্স যেখানে তাং ন্যাশনাল লিবারেশন আর্মি আছে, সেখানে আরাকান আর্মি আছে। আরেকটি হলো মিয়ানমার ন্যাশনাল ডেমোক্রেটিক অ্যালায়েন্স আর্মি (এমএনডিএএ) ।

বার্মা অ্যাক্টে স্পষ্টত দুটি জিনিস আছে, একটা হলো এই যে গণতন্ত্র থেকে মিয়ানমার সরে গেল, সেটা নিয়ে সমালোচনা আছে। স্পষ্ট বলছে যে, এনইউজি পিডিএফকে তারা সহায়তা করবে। আবার ঠিক একইভাবে আরেকটা জিনিস বিভিন্ন সংখ্যালঘু সংগঠনগুলো বা সংখ্যালঘু জনগোষ্ঠীর সঙ্গে আমেরিকা থাকবে। অন্য কথায়, বার্মা অ্যাক্টের মাধ্যমে আমেরিকা বোঝাতে চাচ্ছে যে, মিয়ানমার নিয়ে তাদের মনোযোগ বাড়বে এবং বার্মা অ্যাক্টেও রোহিঙ্গাদের বিষয়ে লেখা আছে। খুব সম্ভব বার্মা অ্যাক্টে পাঁচটি ধারায় রোহিঙ্গাদের বিষয়ে আলোচনা আছে, এমনকি রোহিঙ্গাদের ওপর জেনোসাইড হয়েছে, সেটাও উল্লেখ করা আছে। এই নতুন পরিস্থিতির কাঠামোর প্রভাব বাংলাদেশের ওপর পড়েছে। কারণ আমরা দেখলাম যে, বাংলাদেশেও মিয়ানমানের ভেতরের সংঘর্ষের কারণে ৩০০-এর বেশি কেন্দ্রীয় সরকারের প্যারা মিলিটারি এবং পুলিশের সদস্য আশ্রয় নিয়েছে। যদিও এটা ব্যতিক্রম নয়, কারণ গত বছরের নভেম্বর-ডিসেম্বর মাসে ঠিক এর চেয়ে বড় সংখ্যা ৬৩৬ জন ভারতে আশ্রয় নিয়েছে। এর আগে চীন-মিয়ানমার বর্ডারে কিন্তু একাধিকবার এমন হয়েছে। ওপারে চলে গেছে কিন্তু চীন এবং ভারত তারা কিন্তু তাড়াতাড়ি ফেরত পাঠানোর ব্যবস্থা করেছে।

এখন প্রশ্ন হচ্ছে যে, বার্মা অ্যাক্টের মাধ্যমে মোটামুটি পরিষ্কার যে এনইউজি- পিডিএফকে সহায়তা করার মাধ্যমে মিয়ানমারে পশ্চিমা দেশ বিশেষ করে যুক্তরাষ্ট্রের মনোযোগ বাড়ল, সেটা ভারত বা চীন কীভাবে দেখবে? এই প্রশ্নটা স্বাভাবিকভাবেই চলে আসে। যেটা বোঝা যাচ্ছে সেটা হলো অবস্থা জটিল থেকে জটিলতর হচ্ছে। সে জায়গায় আমরা দেখতে পাচ্ছি ভারতও চিন্তিত এবং চীন তো চাইবে না আমেরিকা এনইউজি পিডিএফের মাধ্যমে মিয়ানমারে তার ক্ষমতা বাড়ুক। চীন এরই মধ্যে বিভিন্ন জনগোষ্ঠীকে সমর্থন করছে। এ রকম খবর আমরা পাচ্ছি। ঠিক একইভাবে আবার সামরিক বাহিনীকেও সমর্থন দিচ্ছে।

এই সমর্থন দেওয়ার কারণ হলো ক্ষমতায় যেই আসুক না কেন, চীনের একটা কাঠামো থাকবে, এটা পরিষ্কার। যদি এনইউজি ক্ষমতায় আসে কোনো এক সময় তা হলে তাদের আরাকান আর্মি বা অন্য গোষ্ঠীর সঙ্গে একটা সমঝোতায় আসতে হবে। সেই জায়গায় আমাদের প্রশ্ন হচ্ছে বাংলাদেশ কী করবে। এখানে বাংলাদেশ, চীন এমনকি ভারত সবার জন্যই একটা বড় আকারে সমস্যা তৈরি হচ্ছে। এই তিন দেশের যে একটা ভূমিকা থাকতে পারে এটা মোটামুটি স্পষ্ট। ভারত স্বাভাবিকভাবে চাইবে না যে, এখানে একটা দেশ এই আঞ্চলের অনেক দূরে, যুক্তরাষ্ট্রের কথাই বলি, এখানে এসে তার এজেন্ডা বাস্তবায়ন করবে, সেটা হলে ভারতও একটা হুমকির মুখে পড়বে। চীনও হুমকির মুখে পড়বে। বলা হয়, প্রতিটি সংকট একটি সুযোগ তৈরি করে দেয়। একটা সুযোগ তৈরি হচ্ছে আমার মনে হয়, কারণ এখানে বোঝাই যাচ্ছে, বার্মা অ্যাক্টের মাধ্যমে যুক্তরাষ্ট্রের মিয়ানমারের ওপর যে মনোযোগ তাতে ভারতও শঙ্কিত, চীনও শঙ্কিত। অন্য কথায়, ভারত আর চীন বড় আকারে যদি এই সমস্যা সমাধান করতে চায় তা হলে দুই দেশের এখন প্রয়োজন হলো একসঙ্গে কাজ করা এবং মিয়ানমারের ওপর একটা চাপ প্রয়োগ করা। মিয়ানমারে চীন কখনো চাইবে না এখানে আমেরিকার ঘাঁটি তৈরি হোক। সে হিসেবে ভারতও চাইবে না।

এখন আমাদের কী করণীয়। কয়েকটা জিনিস একটা হলো, মিয়ানমারের অভ্যন্তরীণ বিষয়ে কোনোভাবেই জড়িত না হওয়া। কারণ আমাদের পররাষ্ট্রনীতি হলো সবার সঙ্গে বন্ধুত্ব রাখা, তার চেয়ে বড় কথা হলো আমরা নিজেরা চাই না আমাদের অভ্যন্তরীণ ব্যাপারে কেউ এসে জড়িত হোক। এটা খুবই পরিষ্কার হয়েছে আমাদের দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের সময়। সেই বাংলাদেশ কেন আবার অন্য দেশের অভ্যন্তরীণ ব্যাপারে ভূমিকা পালন করবে। এই যে বিভিন্ন সশস্ত্র গোষ্ঠী আন্দোলন করছে। তারা কিন্তু কেউ নতুন দেশ তৈরি করতে চাচ্ছে না। তারা মূলত আরও বেশি সার্বভৌমত্বের জন্য লড়াই করছে। অনেকেই বুঝতে পারছে না সশস্ত্র গোষ্ঠী কিন্তু আলাদা দেশ চাচ্ছে না। সেখানে আমাদের উচিত হবে মিয়ানমারের সঙ্গেই কথা বলা এবং কে ক্ষমতায় আছে, সে বিষয়ে পর্যবেক্ষণ করা ভালো। মিয়ানমারের অভ্যন্তরীণ বিষয়ে জড়িত হওয়া ঠিক নয়।

দ্বিতীয় হলো ৩০০-এর বেশি নিরাপত্তা সদস্য, তাদের যত তাড়াতাড়ি ফেরত পাঠানো যায় সেটা ঠিক করা। ফেরত পাঠানোর মধ্যে বেশ কয়েকটা জিনিস পরিষ্কার হবে। একটা হলো মিয়ানমারও বুঝতে পারবে বাংলাদেশ যথেষ্ট পেশাদারিত্ব রাখে। বাংলাদেশও ভালোভাবে দেখাশোনা করেছে, যেটা ভারত করেছে, চীন করেছে। আমরা যদি দেরি করি বা অন্য রাজনীতি করি তা হলে সন্দেহ আরও বাড়বে। কিন্তু আমাদের অন্য কোনো উদ্দেশ্য নেই। আমরা চাই যেন রোহিঙ্গারা ফেরত যায়। তাতে আস্থা বাড়ার সুযোগ তৈরি করবে। এখনই সুযোগ এসেছে মিয়ানমারকে বাংলাদেশের অন্যভাবে দেখার। যেহেতু পেশাদারিত্বের মাধ্যমে ইতোমধ্যে কথাবার্তা হয়েছে। একটা অংশকে টেকনাফে আনা হয়েছে এবং জাহাজের মাধ্যমে পাঠানো হবে। সেখানে তারাও দেখছে বাংলাদেশের পেশাদারিত্ব। বাংলাদেশের সামরিক কাঠামোর পেশাদারিত্ব তারা লক্ষ করছে। তাদের হাসপাতালে রাখা, খাওয়া-দাওয়াসহ সব বিষয়ে যথেষ্ট দৃষ্টি দেওয়া হয়েছে। তারা নিজের দেশে ফিরে বাংলাদেশের প্রতি পজিটিভ একটা ধারণা প্রকাশ করবে। যত তাড়াতাড়ি তাদের ফেরত দেওয়া যায় ততই ভালো।

তৃতীয়ত, ভারত ও চীনের সঙ্গে আলোচনা করা। ইতোমধ্যে আমাদের পররাষ্ট্রমন্ত্রী ভারতের সঙ্গে আলোচনা করেছেন। এমনকি তাদের ন্যাশনাল সিকিউরিটি অ্যাডভাইজার একটা ঝটিকা সফরে বাংলাদেশে এসেছিলেন, প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে কথা হয়েছে। আমাদের পররাষ্ট্রমন্ত্রী ভারতে গিয়েছেন, সেখানেও আলোচনা হয়েছে। এজেন্ডা ছিল না, পরে অন্তর্ভুক্ত হয়েছে। আমার মনে হয় বাংলাদেশ সঠিক পথে এগিয়ে যাচ্ছে ভারতের সঙ্গে। ঠিক একইভাবে চীনের সঙ্গেও আলোচনা করা প্রয়োজন।

প্রধানমন্ত্রী ২০১৭ সালে জাতিসংঘে গিয়ে বলেছিলেন, এই সমস্যা সমাধান না করলে কিন্তু ভবিষ্যতে আরও বাড়বে। তার কথা আজ সত্যি প্রমাণ হলো। প্রধানমন্ত্রীর চিন্তা ঠিক ছিল। দিন দিন আরও জটিল হচ্ছে। বার্মা অ্যাক্টে বলা আছে আমেরিকার প্রেসিডেন্টকে ক্ষমতা দেওয়া হয়েছে। যদি তিনি মনে করেন, তা হলে তিনি কিন্তু লজিস্টিক সাপোর্ট দিতে পারেন। অন্যথায় অস্ত্রের আনাগোনা বাড়বে। ইতোমধ্যে বেড়েছে এমন খবর পাওয়া যাচ্ছে। অস্ত্রের আনাগোনা যখন বাড়ে তখন কিন্তু এটা একটা ভূখণ্ডে থাকে না। ওটা যেখানে চাহিদা আছে, সেখানে চলে যাবে। সেজন্য ভারতের বড় একটা স্বার্থ থাকবে এখানে তৃতীয় দেশ যেন ঢুকে না পড়ে, সমস্যা যেন না বাড়ে। একইভাবে চীনও চাইবে না তার এলাকায় তৃতীয় একটি দেশ এসে একটা কাঠামো তৈরি করুক।

চতুর্থত, চীনের সঙ্গে আলোচনায় বসা। ভারত-চীন-বাংলাদেশ একসঙ্গে বসে সমস্যার সমাধান যেন করতে পারে। সেই নিয়ে আলোচনায় বসা। যদিও অনেকেই বলে ভারত-চীন একসঙ্গে কাজ করবে কী করে। কিন্তু ইতিপূর্বে তারা একসঙ্গে অনেক কাজ করেছে। যেমন ব্রিকসে, রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধের বাণিজ্য বিধিনিষেধের বিরুদ্ধে একসঙ্গে কাজ করেছে। এখন মিয়ানমার ইস্যুতে তাদের কাজ করার সুযোগ এসেছে।

যেহেতু সমস্যা জটিল হয়ে যাচ্ছে, রোহিঙ্গাদের ছয় বছর হয়ে যাচ্ছে। তার পর অভ্যন্তরীণ সমস্যা হচ্ছে। এখানে নিরাপত্তার সদস্যরা আশ্রয় নিচ্ছে। এর পুরোটা যদি দেখি তা হলে আমাদের দিক থেকে একটা কাঠামো তৈরি করা দরকার সার্বক্ষণিক মনোযোগ দেওয়ার জন্য। একজন বিশেষ দূতের নেত্বত্বে একটি টিম তৈরি করা যেতে পারে। তা হলে রোহিঙ্গা সমস্যার সমাধানে বাংলাদেশ যে কাজ করছে, তা মিয়ানমারসহ অন্য দেশও বুঝতে পারবে। তবেই রোহিঙ্গা সমস্যার সমাধানের ক্ষেত্রে অগ্রসর হওয়া যাবে।

লেখক: ড. ইমতিয়াজ আহমেদ – অধ্যাপক, আন্তর্জাতিক সম্পর্ক বিভাগ, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়।


সর্বশেষ - জাতীয় সংবাদ