1. অন্যরকম
  2. অপরাধ বার্তা
  3. অভিমত
  4. আন্তর্জাতিক সংবাদ
  5. ইতিহাস
  6. এডিটরস' পিক
  7. খেলাধুলা
  8. জাতীয় সংবাদ
  9. টেকসই উন্নয়ন
  10. তথ্য প্রযুক্তি
  11. নির্বাচন বার্তা
  12. প্রতিবেদন
  13. প্রবাস বার্তা
  14. ফিচার
  15. বাণিজ্য ও অর্থনীতি

বিএনপির আরও অনেক পরীক্ষা বাকি

বিভুরঞ্জন সরকার : ইবার্তা টুয়েন্টিফোর ডটকম
বুধবার, ৪ মে, ২০২২
বিভুরঞ্জন সরকার

বড় ধরনের কোনো অঘটন ছাড়াই এবার ঈদ পালন সম্ভব হয়েছে। মানুষের মধ্যে তেমন দুঃখের কিছু ঘটেনি। তবে দেশে আওয়ামী লীগের প্রধান প্রতিপক্ষ দল বিএনপি মনে করে ঈদের আনন্দ থেকে মানুষ বঞ্চিত। দলের জ্যেষ্ঠ যুগ্ম মহাসচিব রুহুল কবির রিজভী বলেছেন, ঈদের ঘরমুখী মানুষদের দুর্ভোগ পোহাতে হয়েছে। অত্যন্ত কষ্টে তাদের ঈদ পালন করতে হচ্ছে। এমনিতেই তো নিত্যপ্রয়োজনীয় জিনিসপত্রের যে অভিঘাত সেই অভিঘাতে ক্ষত-বিক্ষত এ দেশের সাধারণ মানুষ। তার ওপরে ঈদে মানুষ কেনাকাটা করে, সন্তানসন্ততিসহ আত্মীয়স্বজনদের নতুন জামাকাপড় দেয়, সেই জামাকাপড় কেনার উপায় ছিল না নিম্নমধ্য ও স্বল্প আয়ের মানুষের শ্রমজীবী মানুষের কীভাবে ঈদ হচ্ছে আমরা জানি না। তাদের সন্তান বা স্বজনদের ঈদ উপহার দিতে পেরেছেন কি না এটা আমার জানা নেই।
 
আসলে দেশের অবস্থা, দেশের মানুষের অবস্থা বিএনপি নেতাদের জানা নেই, সম্ভবত জানার আগ্রহও নেই। তারা সবকিছু দেখেন নিজেদের চোখে, পরিস্থিতি ব্যাখ্যা ও মূল্যায়ন করেন নিজেদের মতো করে। সেজন্য রিজভী সাহেবের মনে হয়েছে ‘ঈদের ঘরমুখী মানুষদের দুর্ভোগ পোহাতে হয়েছে’। প্রকৃতপক্ষে এবার ঘটেছে উল্টোটা। আনুমানিক সোয়া কোটি মানুষ ঈদ উপলক্ষে এবার ঢাকা ছেড়েছেন। দুচারদিনের মধ্যে এই বিপুলসংখ্যক মানুষের চলাচলের ভার বহনের ক্ষমতা আমাদের পরিবহন ও যোগাযোগ ব্যবস্থার নেই। পৃথিবীর কোনো দেশেই কোনো উৎসব উপলক্ষে এত মানুষের স্থানান্তর হয় না। ফলে আমাদের দেশে সব সময়ই ঈদের আগে-পরে সড়ক-মহাসড়কে মানুষের ভোগান্তি এক সাধারণ দৃশ্য হয়েই আছে। এটা কখন, কোন সরকার ক্ষমতায় থাকে তার ওপর নির্ভর করে না। বিএনপি যখন ক্ষমতায় ছিল তখন কি মানুষের ঈদ-যাত্রা স্বস্তিদায়ক ছিল।
 
বৃহস্পতিবার ভোর ৬টা থেকে সোমবার ভোর ৬টা পর্যন্ত যমুনা সেতুতে যানবাহন পারাপার হয়েছে ১ লাখ ৫৩ হাজার ৩২৭টি। টোল আদায় হয়েছে পৌনে ১২ কোটি টাকা। সাধারণ সময় থেকে যা কয়েকগুণ বেশি। এসব তথ্য কী প্রমাণ করে? দুই বছর পর এবার উৎসব মুখর ঈদ উদযাপনই হয়েছে।
 
সেজন্য একটি ঢালাও মন্তব্য করে বিএনপি নেতা রিজভী তার লন্ডনপ্রবাসী নেতার মনতুষ্টি ঘটাতে পারলেও দেশের মানুষের প্রশংসা পাবেন বলে মনে হয় না। দুই বছর পর এবার কিছুটা স্বাভাবিক পরিস্থিতিতে ঈদ হওয়ায় মানুষের ঢাকা ছাড়ার সংখ্যা বেড়েছে। এবার বরং ঈদ-যাত্রা বিড়ম্বনার কারণ হবে বলে আশংকা করা হয়েছিল। ভাবা হয়েছিল, সড়ক-মহাসড়কগুলোতে থাকবে উপচেপড়া ভিড়। দীর্ঘ যানজটে মানুষকে দুঃসহ ভোগান্তি পোহাতে হবে। কিন্তু হয়েছে উল্টোটা। যারা ঘরে ফিরেছেন তারা প্রায় সবাই নির্দিষ্ট সময়েই যাত্রা শেষ করতে পেরেছেন। কেউ কেউ বলেছেন, ‘এবার সড়কের অবস্থা নরমালের চেয়েও ভালো’। কীভাবে পরিস্থিতি স্বাভাবিক থাকলো, তা না জানলেও ধারণা করা যায়, এবার রোড ম্যানেজমেন্ট ভালো ছিল। আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী দায়িত্ব পালনে যত্নবান ছিল। সবার আন্তরিক চেষ্টা থাকলে যে রাস্তাঘাট নির্ঝঞ্ঝাট রাখা অসম্ভব নয়, এবার কি তা প্রমাণ হলো না?
রিজভী সাহেব বলেছেন, অত্যন্ত কষ্টে মানুষকে ঈদ পালন করতে হচ্ছে। নতুন জামাকাপড় কেনা হয়তো অনেকের পক্ষে সম্ভব হয়নি। হ্যাঁ, এটা হয়তো অসত্য নয়। আমাদের দেশের রাজনৈতিক-অর্থনৈতিক অবস্থাই বৈষম্যমূলক। এখানে তীব্র শ্রেণি বিভাজন আছে। সব মানুষের আয়-উপার্জন এক রকম নয়। সবার জীবনযাপনও এক নয়। কারো অনেক আছে। কারো কম আছে। কারো একেবারেই নেই। সবাই নিজের মতো করেই চলেন। তবে একেবারে না খেয়ে না, কাপড়জামাহীন মানুষ খুবই কম এখন। সব মানুষের জন্য সমান সুযোগ সৃষ্টির রাজনীতি কি বিএনপি করে?
 
সরকারের বিরুদ্ধে আন্দোলনের ডাক দিয়ে যে বিএনপি মানুষের সাড়া পায় না তার একটি বড় কারণ সম্ভবত এই যে, বিএনপি মানুষের নাড়ির খবর জানে না। গৎবাঁধা পথে হেঁটে রাজনীতির আসর জমানোর দিন আর আছে বলে মনে হয় না। সরকারের বিরুদ্ধে মানুষের ক্ষোভ নেই তা নয়। মানুষ অনেক কিছু নিয়েই সরকারের ওপর বিরক্ত। তারপরও বিএনপি কেন আন্দোলন জমাতে পারে না, তার কারণ অনুসন্ধানের কোনো চেষ্টা কী বিএনপি করেছে? বিএনপি যেসব ইস্যু নিয়ে আন্দোলন করতে চায় সেগুলো মানুষের ইস্যু নয়। বিএনপির ইস্যু। খালেদা জিয়া ও তারেক রহমানের মামলা প্রত্যাহার করা না-করা নিয়ে সাধারণ মানুষের কী আসে যায়! আওয়ামী লীগ বিএনপি নেতাদের মামলা হামলা দিয়ে চাপের মুখে রেখেছে, এটা নতুন কোনো বিষয় নয়। বিএনপি ক্ষমতায় থাকতে কি আওয়ামী লীগের জন্য ‘জামাই আদরের’ ব্যবস্থা করেছিল? আওয়ামী লীগের কত নেতাকে হত্যা করা হয়েছে। মুনতাসীর মামুন, শাহরিয়ার কবিরসহ কত নিরীহ মানুষকে মিথ্যা মামলায় ফাঁসানো হয়েছে, শেখ হাসিনার সভায় গ্রেনেড হামলার মতো চরম নৃশংসতা চালানোর কথা বিএনপি ভুলে গেলেও দেশের মানুষ ঠিকই তা মনে রেখেছে।
বিএনপি ক্ষমতায় এলে পরিস্থিতির পরিবর্তন ঘটবে, সেটা মানুষ মনে করে না। বিএনপি ক্ষমতায় থাকতে যেসব ভুলভ্রান্তি করেছে তার জন্য দলটির কোনো তাপ-অনুতাপ নেই। তারা কখনো নিজেদের শাসনকাল নিয়ে পর্যালোচনা-মূল্যায়ন করেনি। ক্ষমতার পালাবদল ঘটলে অতীতের ভুল থেকে শিক্ষা নিয়ে তারা নতুন কিছু করবে, এমন কোনো আলামত বিএনপির রাজনীতিতে নেই।
 
আওয়ামী লীগ ক্ষমতাচ্যুত হলে কিংবা বিএনপি যদি আবার শাসন ক্ষমতা পায় তাহলে তারা রাজনীতিতে প্রতিহিংসাপরায়ণতার চর্চা করবে না, তার কোনো নিশ্চয়তা কি দলটির পক্ষ থেকে দেওয়া সম্ভব? বিএনপির নেতারা বরং উন্মুখ হয়ে আছেন কখন ক্ষমতায় যাবেন আর কখন আওয়ামী লীগের বিরুদ্ধে প্রতিশোধ গ্রহণ শুরু করবেন! হিংসার রাজনীতির বিস্তারের আশংকা মানুষের মন থেকে দূর করার কোনো উদ্যোগ বিএনপির আছে বলে মনে হয় না।
 
তাছাড়া আওয়ামী লীগের চেয়ে উন্নত শাসন যে বিএনপি মানুষকে উপহার দেবে তা-ই বা কীভাবে? এই যে ঢাকা শহরটা অচল শহরে পরিণত হচ্ছে, বিশ্বের অন্যতম একটি দূষণের শহর ঢাকা- এই ঢাকা কীভাবে মানুষের বাসোপযোগী হবে তার কোনো পরিকল্পনা বিএনপির আছে? আওয়ামী লীগ সরকারের ব্যর্থতা চিহ্নিত করা সহজ কিন্তু ওই ব্যর্থতার বিপরীতে বিএনপি কীভাবে সফল হবে, তাদের সুনির্দিষ্ট পরিকল্পনা কী, তা বিএনপি কখনো দেশের মানুষের সামনে তুলে ধরেছে? বিএনপি ক্ষমতায় গেলে দেশে আর দু্র্নীতি হবে না, স্বজনপ্রীতি হবে না, দক্ষতা ও যোগ্যতা হবে নিয়োগ-বদলির মাপকাঠি – সে নিশ্চয়তা কী বিএনপি দিতে পারবে? দেশের মানুষের অভিজ্ঞতা কম হয়নি। অনেক পরিবর্তন তারা সংঘটিত করেছে। কিন্তু তার ফল কী হয়েছে? তাই মানুষ হুট করে আর পরিবর্তনের কথা ভাবে না। কেন পরিবর্তন, কিসের পরিবর্তন, কাদের দিয়ে এবং কাদের জন্য পরিবর্তন – এগুলো না বুঝে ‘উঠ ছেরি তোর বিয়ে’ বললেই সেজেগুজে আসরে বসার অবস্থা মানুষের আর নেই।
 
আওয়ামী লীগের মাথার ওপর তবু একজন শেখ হাসিনা আছেন। তার ওপর যে আস্থা রাখা যায়, তিনি যে বিশ্বাসের মর্যাদা রাখতে জানেন, সেটা মানুষ বুঝেছে নিজেদের অভিজ্ঞতা থেকে। শেখ হাসিনা যা বলেন, তা করেন। অনেক ঘটনা থেকেই তার প্রমাণ পাওয়া গেছে। কিন্তু বিএনপিতে তেমন আস্থাভাজন নেতা বা নেত্রী কে? খালেদা জিয়ার বয়স হয়েছে, তিনি অসুস্থ ফলে তিনি আর দলে নেতৃত্ব দেওয়ার কিংবা দেশের শাসনভার পরিচালনার অবস্থায় নেই। ‘ভবিষ্যৎ কাণ্ডারি’ হিসেবে যাকে হাজির করা হয়েছে সেই তারেক রহমানকে নিয়ে বিএনপির মধ্যেই অস্বস্তি আছে। দেশে-বিদেশে তার গ্রহণযোগ্যতা নিয়ে প্রশ্ন আছে। রাজনীতির মাঠের অনেক পরীক্ষায় তারেকের অংশগ্রহণই নেই বা ছিল না। তাই শুধু কথার লড়াইয়ে বাজিমাত করা চলবে না, রাজনীতির মাঠের নিয়ন্ত্রণ বিএনপি নিতে চাইলে তার আগে দলের ভেতরের অনেক অস্পষ্টতা দূর করতে হবে।


সর্বশেষ - জাতীয় সংবাদ