1. অন্যরকম
  2. অপরাধ বার্তা
  3. অভিমত
  4. আন্তর্জাতিক সংবাদ
  5. ইতিহাস
  6. এডিটরস' পিক
  7. খেলাধুলা
  8. জাতীয় সংবাদ
  9. টেকসই উন্নয়ন
  10. তথ্য প্রযুক্তি
  11. নির্বাচন বার্তা
  12. প্রতিবেদন
  13. প্রবাস বার্তা
  14. ফিচার
  15. বাণিজ্য ও অর্থনীতি

শাপলা চত্বরে হেফাজত তাণ্ডবের ৯ বছর

ইবার্তা ডেস্ক : ইবার্তা টুয়েন্টিফোর ডটকম
বৃহস্পতিবার, ৫ মে, ২০২২

আজ ৫ মে। দেশের রাজনীতিতে একটি গুরুত্বপূর্ণ ঘটনায় পরিণত হওয়া হেফাজতের সেই তাণ্ডবের নয় বছর পূর্ণ হলো আজ। ২০১৩ সালে মুক্তিযুদ্ধে মানবতাবিরোধী অপরাধে অভিযুক্তদের সর্বোচ্চ শাস্তির দাবিতে তখন শাহবাগ উত্তাল। গণজাগরণ মঞ্চের আন্দোলনে লাখ লাখ মানুষ। ওই বছরের ৫ মে তথাকথিত ব্লগার, নাস্তিক-মুরতাদ ও ইসলাম বিদ্বেষীদের অপতৎপরতা ও প্রচারণা বন্ধ এবং তাদের শাস্তির দাবি নিয়ে হঠাৎ আলোচনায় আসে কওমি মাদরাসাভিত্তিক হেফাজতে ইসলাম নামের অরাজনৈতিক দাবি করা একটি সংগঠন।

ওই বছরের আজকের দিন, অর্থাৎ ৫ মে তারা রাজধানী ঢাকার ছয়টি প্রবেশপথ অবরোধ করে। মতিঝিলের শাপলা চত্বরে বিশাল এক সমাবেশও করে। দিনভর অবস্থানের পাশাপাশি চলে ভাঙচুর, শত শত স্থাপনায় করা হয় অগ্নিসংযোগ। দিনব্যাপী দফায় দফায় পুলিশের সঙ্গে সংঘর্ষের পর রাতে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর বিশেষ অভিযানের মধ্য দিয়ে শেষ হয় হেফাজতের সেদিনের তাণ্ডব। দেশের রাজনীতিতে একটি গুরুত্বপূর্ণ ঘটনায় পরিণত হওয়া হেফাজতের সেই তাণ্ডবের আট বছর পূর্ণ হচ্ছে আজ।

২০১৩ সালে শাপলা চত্বরের সেই সমাবেশ থেকেই হেফাজতে ইসলাম সারাদেশে আলোচিত। সংগঠনটির প্রতিষ্ঠাতা প্রয়াত শাহ আহমদ শফী নিজেই নানা সময়ে নানা বিবৃতি-বক্তব্য দিয়ে এসেছেন সমালোচনায়। জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের ভাস্কর্য নির্মাণ এবং স্বাধীনতার সুবর্ণজয়ন্তী ও জাতির জনকের জন্মশতবর্ষের অনুষ্ঠানে ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদির আগমনের বিরোধিতা করে তাণ্ডব চালিয়ে এর পরপরই নারায়ণগঞ্জের সোনারগাঁয়ের রয়েল রিসোর্টে মামুনুল কাণ্ডের মাধ্যমে সর্বশেষ দেশের আলোচনার কেন্দ্রবিন্দুতে এই সংগঠনটি। এসব বিরোধিতার জের ধরে পরিচালিত বিক্ষোভ-সহিংস কর্মকাণ্ডে পুলিশের সঙ্গে সংঘর্ষে কমপক্ষে ১৭ জনের প্রাণহানি ঘটেছে।

এসব সহিংসতার অন্যতম উসকানিদাতা ছিলেন হেফাজতের কেন্দ্রীয় নেতা মামুনুল হক। তিনিসহ হেফাজতের শীর্ষ নেতারা ইতোমধ্যেই কারাগারে। কারানাশকতার ঘটনায় দায়ের করা মামলার পাশাপাশি তাদের বেশিরভাগই ২০১৩ সালের শাপলা চত্বরের সেই তাণ্ডবের ঘটনায় দায়ের করা অর্ধশত মামলারও অনেকগুলোরই আসামি। নয় বছর আগের ওই মামলাতেও জিজ্ঞাসাবাদ করা হচ্ছে তাদের। বলা যায়, আট-নয় বছর পর এসে শাপলা চত্বরকাণ্ডের ঘটনায় দায়ের করা মামলাগুলো গতি পেয়েছে।

এদিকে, শাপলা চত্বর কাণ্ডের দিন বিএনপি, জাতীয় পার্টিসহ অন্যান্য বেশকিছু রাজনৈতিক দলকেই হেফাজতে ইসলামের প্রতি অনুকূল মনোভাব পোষণ করতে দেখা যায়।

৮ বছর আগের ওই ঘটনায় ৭০টি মামলা হয়েছে। সাম্প্রতিক সময়ে গ্রেফতার হেফাজত নেতাকর্মীদের জিজ্ঞাসাবাদে গুরুত্বপূর্ণ তথ্য বেরিয়ে এসেছে এবং আসছে। ফলে খুব শিগগিরই পুলিশ উল্লেখযোগ্যসংখ্যক মামলায় অভিযোগপত্র দিতে পারবে।

কী ঘটেছিল ২০১৩’র ৫ মে

নয় বছর আগের এই দিনে পূর্বঘোষিত ‘ঢাকা অবরোধ’ কর্মসূচি পালন করতে ভোর ৫টা থেকেই ঢাকার প্রবেশপথগুলো দখলে নেন হেফাজতে ইসলামের নেতাকর্মীরা। গাবতলী বাস টার্মিনাল, টঙ্গী, কাঁচপুর ব্রিজসহ রাজধানীকে ঘিরে ছয়টি প্রবেশমুখে অবরোধ তৈরি করেন তারা। ওই সময় থেকেই সারাদেশের বিভিন্ন কাওমি মাদরাসার ছাত্র ও শিক্ষকরা রাজধানীর শাপলা চত্বরে এসে জড়ো হতে থাকেন। একপর্যায়ে শাপলা চত্বর এলাকার পুরোটা দখলে নিয়ে নেন তারা।

তবে কেবল সমবেত হওয়ার মধ্যেই সেদিন সীমাবদ্ধ থাকেননি হেফাজতের নেতাকর্মীরা। জিপিও, বায়তুল মোকাররম মার্কেট, ট্রাফিক পুলিশের কার্যালয়, হাউজ বিল্ডিং ভবন, জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ের পরিবহন পুল, মুক্তি ভবনসহ অনেক প্রতিষ্ঠান ও ফুটপাথের দোকানপাটে অংগ্নিসংযোগ ও ভাঙচুর চালায় তারা।

দিনভর হেফাজতের নেতারা তাদের বক্তৃতায় সরকারকে আল্টিমেটাম দিতে থাকেন। ওই দিন বিকেলে তৎকালীন আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক সৈয়দ আশরাফুল ইসলাম ধানমন্ডিতে দলীয় সভানেত্রীর কার্যালয়ে এক সংবাদ সম্মেলন করেন। সে সংবাদ সম্মেলনে হেফজতে ইসলামকে বিকেল ৫টার মধ্যে কর্মসূচি শেষ করে ঢাকা ছাড়ার পাল্টা আল্টিমেটাম দেন। হেফাজত নেতাদের হুঁশিয়ারি দিয়ে সৈয়দ আশরাফ বলেন, ‘আমাদের সরলতাকে দুর্বলতা ভাববেন না। রাতের মধ্যেই আপনারা ঘরে ফিরে যাবেন এবং ভবিষ্যতে আপনাদের আর ঘর থেকে বের হতে দেওয়া হবে না।’

সৈয়দ আশরাফের বক্তব্যের পরপরই শাপলা চত্বরে হেফাজতের সমাবেশ থেকে পাল্টা হুঁশিয়ারি দেন হেফাজতের নেতারা। এক নেতা বলেন, ‘আমাদের সন্ধ্যার মধ্যে ঢাকা ছাড়তে বলেছেন, আপনাদেরই ঢাকা ছাড়তে হবে।’ সন্ধ্যা গড়িয়ে রাত নামতে থাকলেও শাপলা চত্বরে অবস্থান অব্যাহত রাখে হেফাজতে ইসলাম। রাত সাড়ে ১০টার দিকে হেফাজতের তৎকালীন আমির শাহ আহমদ শফী লালবাগ মাদরাসা থেকে শাপলা চত্বরের দিকে রওনা দেন। তবে পথে অসুস্থ বোধ করায় ও নিরাপত্তাহীনতার অভিযোগ তুলে তিনি ফিরে যান।

এর মধ্যে দিবাগত রাত ১টার দিকে অবস্থানরত হেফাজত নেতাকর্মীদের সরাতে অভিযান চালানোর সিদ্ধান্ত নেয় আইনশৃঙ্খলা বাহিনী। বাংলাদেশ ব্যাংকের সামনে কমলাপুর স্টেশনে যাওয়ার রাস্তা ও বঙ্গভবনের দিকে যাওয়ার রাস্তা খোলা রেখে দৈনিক বাংলা মোড়, দিলকুশা, ফকিরাপুল ও নটরডেম কলেজের সামনে অবস্থান নেন পুলিশ, র‍্যাব ও বিজিবি সদস্যরা। তারা হেফাজতের নেতাকর্মীদের শাপলা চত্বর ছেড়ে চলে যাওয়ার আহ্বান জানান। কিন্তু সে কথায় কর্ণপাত করেননি হেফাজতের নেতাকর্মীরা। রাত পৌনে ৩টার দিকে শুরু হয় মূল অভিযান। আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্যরা ফাঁকা গুলি ও টিয়ার গ্যাস ছুঁড়তে ছুঁড়তে হেফাজতের তৈরি মঞ্চের দিকে এগিয়ে যেতে থাকেন। এরপর আর হেফাজতের পক্ষ থেকে কোনো প্রতিরোধ দেখা যায়নি। তারা যে যার মতো শাপলা চত্বরের সমাবেশস্থল ছেড়ে চলে যান। তাৎক্ষণিকভাবে তাদের অনেকেই মতিঝিল এলাকায় বিভিন্ন ভবনে আশ্রয় নেন। পরে পুলিশই তাদের সেসব ভবন থেকে বের করে চলে যাওয়ার সুযোগ করে দেয় বলে জানিয়েছেন প্রত্যক্ষদর্শীদের অনেকেই। হেফাজতের অনেক নেতাকর্মীই সেদিন প্রকাশ্যে কানে ধরে শাপলা চত্বর ত্যাগ করেছিলো। ৫টা নাগাদ হেফাজতের নেতৃত্বে আগের ২৪ ঘণ্টায় চালানো তাণ্ডবের চিহ্ন নিয়ে সুনসান হয়ে পড়ে শাপলা চত্বর।

কোণঠাসা হেফাজত

সাম্প্রতিক ঘটনাবলির চাপে অবশ্য হেফাজতে ইসলাম কোণঠাসা হয়ে পড়েছে। স্বাধীনতার সুবর্ণজয়ন্তীতে ভারতের নরেন্দ্র মোদিকে আমন্ত্রণ জানানোকে কেন্দ্র করে যে সহিংস পরিস্থিতি তৈরি করে হেফাজত, তাতে ফের তাদের বিরুদ্ধে সারাদেশে শতাধিক মামলা হয়েছে। গত মাসখানেক সময়ে যুগ্ম মহাসচিব মামুনুল হকসহ সংগঠনের কেন্দ্রীয় নেতারা গ্রেফতার হলে সংগঠনটি বিপাকে পড়ে।

এর মধ্যে, গত বছরের ২৫ এপ্রিল রাতে আচমকা সংগঠনটির কেন্দ্রীয় কমিটি বিলুপ্ত ঘোষণা করেন আমিরের দায়িত্বে থাকা জুনায়েদ বাবুনগরী। ঘণ্টা চারেকের ব্যবধানে অবশ্য হেফাজতের নতুন আহ্বায়ক কমিটিও গঠন করা হয়। সাম্প্রতিক এসব পরিস্থিতিতে সরকারের সঙ্গেও আলোচনা চালিয়ে যাওয়ার চেষ্টা করছেন সংগঠনের নেতারা। কিন্তু সেই আগ্রাসী ও ভয়ংকর হেফাজতে ইসলাম এখন শুধুই অতীত।


সর্বশেষ - জাতীয় সংবাদ