1. অন্যরকম
  2. অপরাধ বার্তা
  3. অভিমত
  4. আন্তর্জাতিক সংবাদ
  5. ইতিহাস
  6. এডিটরস' পিক
  7. খেলাধুলা
  8. জাতীয় সংবাদ
  9. টেকসই উন্নয়ন
  10. তথ্য প্রযুক্তি
  11. নির্বাচন বার্তা
  12. প্রতিবেদন
  13. প্রবাস বার্তা
  14. ফিচার
  15. বাণিজ্য ও অর্থনীতি

বাংলাদেশের এগিয়ে যাওয়া ও বিশ্বব্যাংক

আব্দুল বায়েস : ইবার্তা টুয়েন্টিফোর ডটকম
বৃহস্পতিবার, ৪ মে, ২০২৩

১৯৭২ সালের আগস্ট মাসে বাংলাদেশ বিশ্বব্যাংক (বিআরডি এবং আইডিএ) এবং আইএমএফের সদস্য পদ লাভ করে। ওই সময় বিশ্বব্যাংকের প্রেসিডেন্ট রবার্ট ম্যাকনামারা বাংলাদেশে এসে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের সঙ্গে সাক্ষাৎ করেন। এর কিছুদিন পর বিশ্বব্যাংকের পিটার কার্গিল বঙ্গবন্ধুকে বললেন, পাকিস্তানের সঙ্গে দেনা-পাওনা মেটানো এবং অন্যান্য ঋণের দায় না নিলে বাংলাদেশ বিপদে পড়তে পারে। বঙ্গবন্ধু পিটার কার্গিলকে তৎকালীন গণভবনের সবুজ ঘাসের লন দেখিয়ে বলেছিলেন, ‘প্রয়োজনে আমার দেশের মানুষ ঘাস খেয়ে থাকবে, তবু কারো শর্ত মেনে নেবে না।’

দুই.

বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা এখন ওয়াশিংটন সফর শেষে লন্ডনে অবস্থান করছেন। গত ১ মে বাংলাদেশ ও বিশ্বব্যাংকের উন্নয়ন অংশীদারির ৫০ বছর পূর্তি উৎসবে যোগ দিয়েছিলেন তিনি। বিশ্বব্যাংকের প্রেসিডেন্ট মাননীয় প্রধানমন্ত্রীকে আমন্ত্রণ জানিয়েছিলেন স্মারক অনুষ্ঠানে যোগ দিতে এবং প্রধানমন্ত্রী তাতে সদয় সম্মতি জ্ঞাপন করেন। ৫০ বছরের উন্নয়ন অংশীদারির এই উৎসবের প্রতি আমাদের প্রাণঢালা অভিনন্দন।

প্রসঙ্গত বলে রাখা দরকার যে ১৯৭২ সাল থেকে শুরু করে এই সংস্থাটি বাংলাদেশকে ৩৯ বিলিয়ন ডলার দেওয়ার জন্য প্রতিশ্রুতিবদ্ধ, যার মধ্যে আছে গ্রান্ট, সুদমুক্ত এবং ছাড়যুক্ত ঋণ। বলার অপেক্ষা রাখে না যে এই অর্থায়নের উদ্দেশ্য দেশটির উন্নয়ন চ্যালেঞ্জ মোকাবেলা করার জন্য। সন্দেহ নেই যে বিশ্বব্যাংকের সহায়তায় বাংলাদেশে বেশ কিছু আর্থ-সামাজিক প্রকল্প চলছে, যার প্রতিফলন আয়বহির্ভূত উন্নয়ন নির্দেশিকায় লক্ষ করা যায়, যদিও একটা বড় অভিযোগ আছে যে বিভিন্ন শর্তের জালে ফেলে এসব ঋণ দেওয়া হয়েছিল। তবে শর্ত আরোপিত ঋণের সুফল ও কুফল নিয়ে একসময় বাংলাদেশের বিদগ্ধ মহলে বিতর্ক বেশ জমে উঠত; আজকাল তেমনটি শোনা যায় না।

যা-ই হোক, শুরু থেকে বাংলাদেশ ও বিশ্বব্যাংকের মধ্যে সুসম্পর্ক থাকলেও সম্পর্কে খানিকটা চিড় ধরে পদ্মা সেতু নির্মাণকে কেন্দ্র করে। বিশ্বব্যাংক সেতুটির অর্থায়নের প্রতিশ্রুতি দিলেও এক পর্যায়ে দুর্নীতির অভিযোগ তুলে এই উন্নয়ন প্রকল্প থেকে হাত গুটিয়ে নেয়। বিশ্বব্যাংক দুর্নীতি প্রমাণ করতে পারেনি। কিন্তু শেখ হাসিনার দৃঢ় অঙ্গীকারে বাংলাদেশের নিজস্ব অর্থায়নে শেষ পর্যন্ত সেতুটি সুসম্পন্ন হয়। তবে স্বীকার্য যে পদ্মা সেতু প্রকল্প থেকে সরে গেলেও বিশ্বব্যাংক অন্যান্য খাতে তার প্রতিশ্রুত ঋণ অব্যাহত রাখে, বিশেষত করোনাকালে।

বাংলাদেশের উন্নয়নকে বলা হয় উন্নয়ন ধাঁধা বা ডেভেলপমেন্ট প্যারাডক্স। বিগত দশকগুলোতে চোখ-ধাঁধানো উন্নয়ন না হয়ে থাকলেও যতটুকু অর্জিত হয়েছে, তা চোখে ধাঁধা লাগানোর মতোই বলা যেতে পারে। কার কাছে? নিঃসন্দেহে আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের কাছে, যারা জেনে বা না জেনে বাংলাদেশের সম্ভাবনা নিয়ে শঙ্কিত ছিল; তারা ভাবতেও পারেনি, কোনো এক সময় বাংলাদেশের অর্থনৈতিক উন্নয়ন পৃথিবীতে ‘খবর’ হয়ে উঠবে, সাড়া জাগাবে।

প্রসঙ্গত মনে পড়ে গেল মার্কিন পররাষ্ট্রসচিব হেনরি কিসিঞ্জারের কথা। তিনি স্বাধীনতার শুরুতে বাংলাদেশে এসে দেশটিকে ‘তলাবিহীন ঝুড়ি’ তকমা এঁটে দিয়েছিলেন; সম্ভবত তিনি পরোক্ষভাবে এই কথাটি বোঝাতে চেয়েছিলেন যে বাংলাদেশের জন্য সুড়ঙ্গের শেষ প্রান্তে বাতি নেই। সেই কিসিঞ্জারের অনুসারীরা বাংলাদেশের এখনকার উন্নয়ন দেখে ভ্রু কুঁচকাবে না তো কী করবে! এটিই স্বাভাবিক। কিংবা উন্নয়ন গবেষক ইউসট ফাল্যান্ড ও জে পারকিনসনের কাছেও আমাদের উন্নয়ন এক প্রকার ধাঁধা হিসেবে থাকবে। কেননা পঁচাত্তর সালে প্রকাশিত এক বইয়ে ওই দুজন প্রক্ষেপণ করে বলেছিলেন, বাংলাদেশ হচ্ছে উন্নয়নের টেস্ট কেস। অর্থাৎ সন্দেহের অবকাশ নেই যে এখানে উন্নয়ন সফল হলে অন্য কোথাও তা ব্যর্থ হবে না। অবশ্য তাঁরা ২০০৭ সালে বাংলাদেশে এসে তাঁদের ভবিষ্যদ্বাণীর ভুল স্বীকার করে এটিও বলে গেছেন যে টেকসই উন্নয়ন বাংলাদেশের হাতের নাগালে, যদিও নিশ্চিত নয়।

যা হোক, উন্নয়নসংক্রান্ত গোলকধাঁধায় আমরাও যে কিছুটা পড়িনি, তা বোধ হয় হলফ করে বলা যাবে না। কেউই আশাই করতে পারিনি যে অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধির হার ৪-এর নিচ থেকে ৮ শতাংশ ছুঁই ছুঁই করবে; খাদ্য উৎপাদন তিন গুণ বাড়িয়ে দেশটি ‘সরব দুর্ভিক্ষ’ ঠেকাতে সক্ষম হবে; সম্প্রসারিত টিকাদান কর্মসূচি এবং ওরাল স্যালাইন বিপ্লব শিশুমৃত্যুর হার ব্যাপক নামিয়ে আনবে; জনসংখ্যার বার্ষিক বৃদ্ধির হার অর্ধেকেরও বেশি নেমে আসবে এবং মোট প্রজনন হার ছয় থেকে দুইয়ে দাঁড়াবে; স্কুলে মেয়েদের অন্তর্ভুক্তির হার প্রায় ১০০ ভাগ এবং ছেলেদের চেয়ে বেশি; আয়-দারিদ্র্যের প্রকোপ ৬০ থেকে ২৫ শতাংশে পৌঁছাবে, ঘরে ঘরে মোবাইল সেট ইত্যাদি ইতিবাচক উন্নতি হবে। তা ছাড়া নোবেলজয়ী অমর্ত্য সেনের মতে, বাংলাদেশের অন্যতম অর্জন হচ্ছে কিছু আর্থ-সামাজিক নির্দেশকে বাংলাদেশ ভারতকে পেছনে ফেলে এগিয়ে যাচ্ছে, যদিও বা মাথাপিছু আয়ের নিরিখে দেশটি ভারতের পেছনে রয়েছে। একসময় ভারতের গড়পড়তা প্রত্যাশিত আয়ু বাংলাদেশের চেয়ে বেশি ছিল, আর এখন বাংলাদেশের মানুষ ভারতবাসীর চেয়ে পাঁচ বছর বেশি বাঁচে।

বিশেষত গত এক থেকে দেড় দশকে প্রবৃদ্ধি ত্বরান্বিতকরণে এবং বেশ কিছু মেগাপ্রকল্প হাতে নিয়ে, যার মধ্যে নিজস্ব অর্থায়নে পদ্মা সেতু নির্মাণ অন্যতম—বাংলাদেশ চারদিকে চমক সৃষ্টি করতে সক্ষম হয়েছে। প্রবৃদ্ধির হারের দিক থেকে বাংলাদেশ এখন শীর্ষে থাকা গুটিকয়েক দেশের অন্যতম। বিশ্বব্যাংক বলছে,   ‘Bangladesh is one of the poorest and most densely-populated countries in the world, yet it has achieved impressive progress since its independence in 1971. With a vibrant economy that has grown at nearly 6 percent per year in the last decade, Bangladesh has seen the number of poor drop by one-third during the same period. In this remarkable journey, the World Bank has enjoyed a strong relationship with Bangladesh that spans four decades. It has supported government efforts in economic growth, power, infrastructure, disaster management, human development and poverty reduction.’

৫০ বছর পর বাংলাদেশ পৃথিবীর অন্যতম সেরা উন্নয়ন গল্প; বাংলাদেশ বিশ্বকে বলছে তার দারিদ্র্য হ্রাস এবং উন্নয়নের গল্প; বাংলাদেশ এখন উন্নয়নের রোল মডেল, এমনকি করোনাকালেও বিপর্যস্ত হয়ে পড়েনি। বিশেষত গত দেড় দশকে প্রবৃদ্ধি ও উন্নয়ন ত্বরান্বিত হওয়ার ফলে বাংলাদেশে এক অভূতপূর্ব রূপান্তর ঘটে, যার কারিগর বঙ্গবন্ধুকন্যা শেখ হাসিনা—আমাদের প্রধানমন্ত্রী। এবং এই রূপান্তরপ্রক্রিয়ায় বিশ্বব্যাংকের শলাপরামর্শ ও অর্থায়ন ইতিবাচক ভূমিকা রেখেছে।

যা হোক, মনে করার যথেষ্ট কারণ থাকতে পারে যে ওয়াশিংটনে বিশ্বব্যাংকের ওই স্মারক অনুষ্ঠানে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার উপস্থিতি এক ভিন্ন মাত্রা প্রদান করেছে। এবং সেটা বিদ্রোহী কবি নজরুলের কথায়,

বল বীর—

বল উন্নত মম শির!

শির নেহারি’ আমারি নত শির

ওই শিখর হিমাদ্রির!

 

লেখক: আব্দুল বায়েস – সাবেক উপাচার্য, জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়।


সর্বশেষ - জাতীয় সংবাদ