1. অন্যরকম
  2. অপরাধ বার্তা
  3. অভিমত
  4. আন্তর্জাতিক সংবাদ
  5. ইতিহাস
  6. এডিটরস' পিক
  7. খেলাধুলা
  8. জাতীয় সংবাদ
  9. টেকসই উন্নয়ন
  10. তথ্য প্রযুক্তি
  11. নির্বাচন বার্তা
  12. প্রতিবেদন
  13. প্রবাস বার্তা
  14. ফিচার
  15. বাণিজ্য ও অর্থনীতি

গণতন্ত্র ও ধর্মনিরপেক্ষতার লালিত স্বপ্ন

মেজর (অব.) সুধীর সাহা : ইবার্তা টুয়েন্টিফোর ডটকম
রবিবার, ৫ জুন, ২০২২

হাজার বছরের বাঙালির ইতিহাসে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানই প্রথম বাঙালি, যিনি বাঙালির জন্য ‘বাংলাদেশ’ নামে একটি স্বাধীন রাষ্ট্র গঠন করেন। বাঙালির জন্য একটি স্বাধীন দেশের বাঙালি হিসেবে তিনিই প্রথম রূপকার। প্রাচীন বাংলা এমনকি মধ্যযুগেও অনেকে এই ভূখণ্ডে স্বাধীন রাষ্ট্র সৃষ্টি করেছিলেন। তবে তাঁরা কেউ বাঙালি ছিলেন না। বাঙালিদের স্বাধীন ভূমি এনে দেওয়ার প্রয়াস ছিল অনেক বাঙালি নেতার। মাস্টারদা সূর্য সেন, দেশবন্ধু চিত্তরঞ্জন দাশ, নেতাজি সুভাষচন্দ্র বসু, এ কে ফজলুল হক, হোসেন শহীদ সোহরাওয়ার্দী প্রমুখের অবদান বাঙালি সমাজে চিরস্মরণীয়। এর পাশাপাশি বিশ্বকবি রবীন্দ্রনাথ ও বিদ্রোহী কবি নজরুল ইসলামও বাঙালিকে জাগিয়েছেন; উজ্জীবিত করেছেন বাঙালি সত্তার বিকাশে ও স্বাধীন রাষ্ট্রের স্বপ্ন দেখাতে। বঙ্গবন্ধু হাজার বছরের সব মনীষীর চেতনাকে ধারণ করে নিজেকে গড়ে তুলেছেন। বাঙালির হাজার বছরের সংস্কৃতির অসাম্প্রদায়িক ধারাকে লালন করে ধর্মনিরপেক্ষ রাষ্ট্রের রূপরেখায় তিনি বাংলাদেশকে গড়ে তুলতে সচেষ্ট হয়েছেন। বঙ্গবন্ধুকে বাদ দিয়ে বাংলাদেশের ইতিহাস লেখা যায় না; জয় বাংলাকে বাদ দিয়ে বাঙালির কোনো স্লোগানের ইতিহাস লেখা যায় না। কেননা, তা-ই ছিল ‘৭১-এর ভাষা, বাঙালির মুক্তিযুদ্ধের স্লোগান।

বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধে ইন্দিরা গান্ধী এই ভূখণ্ডের মানুষের জন্য সহমর্মিতার হাত বাড়িয়েছেন। বঙ্গবন্ধু তখন পাকিস্তানের জেলখানায়। কিন্তু বঙ্গবন্ধুর অনুপস্থিতিতেও মুক্তিবাহিনী ঐক্যবদ্ধ হয়েছিল। তাদের সব রকম সাহায্য করে গেল ভারত। অনেক মুক্তিযোদ্ধা তখন পাকিস্তানি সেনাদের তাড়া খেয়ে ওপারে চলে যেতেন। ক’দিন থেকে কিছু রসদ সংগ্রহ করে আবার এপারে যুদ্ধে শামিল হতেন। পাড়ার ছেলেরা মুক্তিযোদ্ধাদের নিয়ে গিয়ে বাড়ির উঠানে দাঁড়িয়ে মাকে-মাসিমাকে ডেকে মৃদু স্বরে বলতেন- ‘যদি সামান্য কিছু খাবার থাকে…!’ মাসিমা কিংবা মা বলতেন- ‘রুটি আখের গুড় আছেই। দেখি একটু আলু ভাজি করে দিই।’ আশ্রয় পাওয়া যুবকরা হইহই করে উঠতেন- রুটি-গুড় হলেই হবে কাকিমা। একদিন এসে গেল ‘৭১-এর ১৬ ডিসেম্বর। সবার সে কী উচ্ছ্বাস! মাটিতে গড়াগড়ি, মাথায় মাটির ছোঁয়া, কেউ পকেটে মাটি ভরছে বাড়িতে নিয়ে যাবে বলে। সবার চোখে জল। দেশের মাটি এমনই প্রিয়! ১৯৭২-এর ৬ ফেব্রুয়ারি বঙ্গবন্ধু কলকাতায় গিয়েছিলেন। ব্রিগেড প্যারেড গ্রাউন্ডে ইন্দিরা ও মুজিবের ঐতিহাসিক সভা। পশ্চিমবঙ্গজুড়ে সাজ সাজ রব। ভিড় এড়াতে আশপাশের লোকজন দু’দিন আগেই কলকাতায় চলে এলো। সব রাস্তা দিয়েই মিছিল যাচ্ছে ময়দানে। চারদিক জনস্রোতে ঠাসা। বঙ্গবন্ধু মঞ্চে উঠতেই সাত সাগরের সম্মিলিত গর্জন- ‘এ বাংলা হারতে জানে না।’ বঙ্গবন্ধু বলেছিলেন, গণতন্ত্র, ধর্মনিরপেক্ষতা ভারতের মতো তাঁর দেশেরও আদর্শ। মঞ্চে বেজে উঠেছিল দেশাত্মবোধক, রবীন্দ্র-নজরুল-অতুল প্রসাদের গান।

সংগ্রাম যেখানে শেষ, যুদ্ধ সেখানে শুরু। বাংলাদেশের স্বাধীনতা সংগ্রামের ইতিহাস এমনই। সবকিছু যেন একটি ধারায় প্রবাহিত। ৪৮, ৫২, ৬২, ৬৬, ৬৯, ৭০ এবং বাঙালির স্বাধিকার আন্দোলনের মাইলফলকের চূড়ান্ত পর্যায় ছিল ৭১-এর সশস্ত্র স্বাধীনতা আন্দোলন। বাংলার সাড়ে ৭ কোটি মানুষ মুক্তির লক্ষ্যে ভোট দিয়েছিল বঙ্গবন্ধুর দলকে। তার আগে ‘৬৬ এবং ‘৬৯-এর আন্দোলনে ধ্বনিত হয়েছিল- ‘তোমার আমার ঠিকানা/ পদ্মা, মেঘনা, যমুনা’; ‘পিন্ডি না ঢাকা/ ঢাকা-ঢাকা’; ‘বীর বাঙালি অস্ত্র ধরো/ বাংলাদেশ স্বাধীন করো’। সেই থেকে স্বায়ত্তশাসন এবং স্বাধীনতার চেতনা পাশাপাশি অবস্থান নিয়ে একসঙ্গে এগিয়ে চলতে থাকে। ১৯৭০-এ এসে বাঙালির ম্যান্ডেট পেয়ে সেই ভাষাভিত্তিক একটি জনগোষ্ঠী স্বশাসন বিষয়ে চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত গ্রহণ করার মতো শক্তি অর্জন করে। এরই পরিপ্রেক্ষিতে ৭ মার্চ ১৯৭১-এ বাংলার ইতিহাসের নতুন অধ্যায় রচিত হয়। ঢাকার রেসকোর্স ময়দানে বঙ্গবন্ধু ঘোষণা দিলেন- ‘এবারের সংগ্রাম আমাদের মুক্তির সংগ্রাম, এবারের সংগ্রাম স্বাধীনতার সংগ্রাম।’

‘৪৮ থেকে ‘৭১- একটি দীর্ঘ পথ। ধাপে ধাপে গড়ে ওঠা স্বায়ত্তশাসনের অধিকারের আন্দোলন পরিবর্তিত হয়ে রূপ নেয় মুক্তিযুদ্ধে। বাঙালি তার পরিচয় খুঁজে পায় পদ্মা-মেঘনা-যমুনায়। সেই পরিচয়কেই বিশ্বসমাজের সামনে আনেন বঙ্গবন্ধু। ধর্ম-বর্ণ-গোত্র, নারী-পুরুষ, ধনী-দরিদ্র নির্বিশেষে সব বাঙালির জন্য এক স্বাধীন দেশ ‘বাংলাদেশ’। সেই কবে ১৯৬৯ সালের ৫ ডিসেম্বর এক জনসভায় বঙ্গবন্ধু পূর্ব বাংলার নামকরণ করেন ‘বাংলাদেশ’। তিনি সেদিন দৃঢ়কণ্ঠে বলেছিলেন, “আজ হতে পাকিস্তানের পূর্বাঞ্চলীয় প্রদেশটির নাম ‘পূর্ব পাকিস্তান’-এর পরিবর্তে শুধুমাত্র ‘বাংলাদেশ’।” তাঁর সেই স্বপ্নের বাংলাদেশ একদিন বাস্তবতা পেয়েছিল তাঁর হাত ধরেই। সেই স্থপতিকে অস্বীকার করার বাস্তবতা ইতিহাসে নেই। কারণ এ যে বঙ্গবন্ধুর বাংলাদেশ; জয় বাংলার বাংলাদেশ; পদ্মা-মেঘনা-যমুনার বাংলাদেশ। এ যে ৯ মাসব্যাপী রক্তক্ষয়ী মুক্তিযুদ্ধের ফসল বাংলাদেশ। এ যে হাজার বছরের বাঙালির লালিত স্বপ্নের বাংলাদেশ। এ যে ধর্মনিরপেক্ষতা আর গণতন্ত্রের ধারক বাংলাদেশ।

লেখক : মেজর (অব.) সুধীর সাহা – কলাম লেখক। ceo@ilcb.net


সর্বশেষ - জাতীয় সংবাদ