1. অন্যরকম
  2. অপরাধ বার্তা
  3. অভিমত
  4. আন্তর্জাতিক সংবাদ
  5. ইতিহাস
  6. এডিটরস' পিক
  7. খেলাধুলা
  8. জাতীয় সংবাদ
  9. টেকসই উন্নয়ন
  10. তথ্য প্রযুক্তি
  11. নির্বাচন বার্তা
  12. প্রতিবেদন
  13. প্রবাস বার্তা
  14. ফিচার
  15. বাণিজ্য ও অর্থনীতি

বাংলাদেশে হচ্ছে রাইস ব্রান অয়েলের বাণিজ্যিক উৎপাদন

ই-বার্তা প্রতিবেদক : ইবার্তা টুয়েন্টিফোর ডটকম
সোমবার, ৬ জুন, ২০২২

রাইস ব্রান অয়েল সয়াবিন তেলের মতোই একটি ভোজ্য তেল যাতে ক্ষতিকর কোলেস্টেরল নেই। পাবনার ঈশ্বরদীতে ২০১১ সালে রশিদ অয়েল মিলস লিমিটেড হোয়াইট গোল্ড ব্র্যান্ড নামে রাইস ব্রান অয়েলের উৎপাদন শুরু করে। বর্তমানে সিলেটের ইমেরাল ওয়েল ইন্ডাস্টিজ লিঃ, শেরপুরের এমারাল্ড অয়েল ইন্ডাস্ট্রিজ লিঃ, ঢাকার ধামরাই-এ কেবিসি এগ্রো প্রোডাক্টস প্রাঃ লিঃসহ বিভিন্ন শিল্প প্রতিষ্ঠান বাংলাদেশে এই তেল বাণিজ্যিকভাবে উৎপাদন করছে। বাংলাদেশে ১৫টি রাইস ব্রান অয়েল মিলের মধ্যে বর্তমানে চালু রয়েছে ১৩টি। এগুলোর উৎপাদন ক্ষমতা ২ লাখ ৫৮ হাজার মেট্রিক টন হলেও বতর্মানে উৎপাদন হচ্ছে প্রায় ১ লাখ মেট্রিক টন রাইস ব্রান অয়েল। একটি সূত্রে জানা গেছে, ভারত ও পাকিস্তানে এই তেলের চাহিদা জনপ্রতি বছরে ১৪ কেজি। দেশে সয়াবিন তেলের বার্ষিক চাহিদা জনপ্রতি ৯.৭০ কেজি। এ হিসাবে বাংলাদেশে ১৬ কোটি ৯০ লাখ মানুষের জনপ্রতি বছরে সয়াবিন তেলের চাহিদা ১৬ লাখ ৪০ হাজার মেট্রিক টন। কিন্তু বাংলাদেশে কোন সয়াবিন তেল উৎপাদন হয় না। তবে স্থানীয়ভাবে বাংলাদেশে প্রায় ২ লাখ মেট্রিক টন সরিষা, বাদাম, তিল, পাম জাতীয় তেল উৎপাদন হচ্ছে। বাকি প্রায় ১৪ লাখ মেট্রিক টন অপরিশোধিত তেল আমদানি করতে হয় প্রচুর বৈদেশিক মুদ্রা ব্যয় করে এবং বাংলাদেশে এনে অপরিশোধিত তেল পরিশোধন করতে হয়। এজন্য আছে ১০টির অধিক অয়েল রিফাইনারি।

বাংলাদেশে প্রতি বছর ধান উৎপাদন হয় প্রায় ৫ কোটি ৭৫ লাখ মেট্রিক টন। চাল কলে ধান থেকে চাল তৈরি করলে ৭ থেকে ৮ শতাংশ ব্রান পাওয়া যায়। এ থেকে চাল পাওয়া যায় ৬৭% অর্থাৎ ৩৭৬ লাখ মেট্রিক টন। এ ৩৭৬ লাখ মেট্রিক টন চাল থেকে ব্রান পাওয়া যায় প্রায় ৩৬ লাখ মেট্রিক টন। এই ৩৬ লাখ মেট্রিক টন রাইস ব্রান থেকে অপরিশোধিত তেল পাওয়া যাবে ৮ লাখ মেট্রিক টন এবং অপরিশোধিত তেল পরিশোধন করার পর কমে গিয়ে দাঁড়াবে মাত্র ৭.১৬ মেট্রিক টনে। বর্তমানে রাইস ব্রান অয়েল উৎপাদন খাতে কর্মসংস্থান হয়েছে প্রায় আড়াই হাজার মানুষের। বিনিয়োগ হয়েছে আনুমানিক ৫০০ কোটি টাকা। ভোজ্যতেলের মোট চাহিদায় ব্রান অয়েলের অবদান প্রায় ২.৫ শতাংশ।

সয়াবিন, সরিষা, সূর্যমুখী ও পাম অয়েলসহ এখন পর্যন্ত যত রকমের ভোজ্যতেল ব্যবহার হচ্ছে, তার কোনটির কাঁচামালেই স্বয়ংসম্পূর্ণ নয় বাংলাদেশ। ফলে চাহিদা অনুযায়ী ভোজ্যতেলের সরবরাহ সচল রাখতে এসব তেলের কাঁচামাল অথবা ক্রুড বিদেশ থেকে আনতে হয়। এর বিপরীতে রাইস ব্রান অয়েলের কাঁচামাল অভ্যন্তরীণ উৎস থেকেই পুরোপুরি জোগান পাওয়া যায়। দেশের ধানকলগুলোয় উপজাত হিসেবে এটি তৈরি হয়। রাইস ব্রান তেল উৎপাদনের সম্ভাবনা ও সীমাবন্ধতা নিয়ে দেশের বিখ্যাত হেলথকেয়ার রাইস ব্রান অয়েল প্রস্তুতকারী প্রতিষ্ঠান কেবিসি এগ্রো. প্রডাক্টস লিমিটেডের ব্যবস্থাপনা পরিচালক সুধীর চৌধুরীর জানান, মূলত রাইস ব্রান অয়েলের উৎপাদন চালের কুড়া দিয়ে।

বাংলাদেশে উৎপন্ন ধান থেকে বার্ষিক কুড়া উৎপাদন হয় প্রায় ৪০ লাখ মেট্রিক টন, যা পর্যাপ্ত নয়। তারপরও কুড়া রফতানি হয় এবং পোল্ট্রি ও ফিস ফিড হিসেবে ব্যবহার হয়। তাছাড়া ২০% হলার মেশিন থেকে উৎপন্ন কুড়া ও ৫% আতপ চালের কুড়া এবং ২৫% পোল্ট্রি ও ফিশ ফিডে ব্যবহৃত কুড়া অর্থাৎ মোট উৎপাদিত কুড়ার অর্ধেক রাইস ব্রান অয়েল উৎপাদনে ব্যবহার করা যাচ্ছে না। এ সীমাবদ্ধতা কাটিয়ে উঠে রাইস ব্রান তেলের পর্যাপ্ততা নিশ্চিত করতে কুড়া রফতানি বন্ধ, পোল্ট্রি ফিড ও ফিশ ফিডে রাইস ব্রানের পরিবর্তে অন্য উপাদান ব্যবহার নিশ্চিত, এঙ্গেল বার হলার রাইস মিলগুলোকে রাবার রোল হলার মিল (সেমি. অটোরাইস মিল) অথবা পূর্ণাঙ্গ অটো রাইস মিলে রূপান্তর করা জরুরী। এঙ্গেল বার রাইস মিল (ম্যানুয়েল) এর কুড়াও রাইস ব্রান তেল তৈরির অনুপযোগী। উৎপাদন বৃদ্ধিতে রাইস ব্রান অয়েল মিলগুলোতে গ্যাস সংযোগ জরুরী প্রয়োজন। তাছাড়া রাইস ব্রান অয়েল মিলে রাইস ব্রান অয়েল ছাড়াও বাৎসরিক ১২ লাখ ৬০ হাজর মেট্রিক টন ফিড উৎপাদন হচ্ছে যা দেশের পোল্ট্রি ও ফিশ ফিডের চাহিদা মিটিয়ে অবশিষ্টগুলো বিদেশে রফতানি করার নতুন বাজার সৃষ্টি সম্ভব হবে। তবে ব্যাপকভাবে রাইস ব্রান অয়েল মিল নির্মাণের অনুমতি দেয়ার আগে কাঁচামাল অর্থাৎ কুড়া প্রাপ্তির নিশ্চয়তার কথা ভাবতে হবে সরকারকে। চালের কুড়ার অভাবে মিলগুলো যেন বন্ধ না থাকে। জাতীয় স্বার্থে এ শিল্পের প্রসারে সরকারকে উদ্যোগী হতে হবে এবং একই সঙ্গে রাইস ব্রান অয়েলের মান ঠিক রাখতে হবে।

এমারাল্ড অয়েল ইন্ডাস্ট্রিজ লিঃ এর ব্যবস্থাপনা পরিচালক সৈয়দ হাসিবুল গণি বলেন, ধান উৎপাদনকারী দেশ হিসেবে বিশ্বে বাংলাদেশের অবস্থান তৃতীয়। সে জন্য দেশে যে পরিমাণ ব্রান উৎপাদন হয় তার সঠিক ব্যবহার করতে পারলে ভবিষ্যতে বিদেশ থেকে হয়তো আর ভোজ্যতেল আমদানি করতে হবে না। তেল উৎপাদনকারী প্রতিষ্ঠানগুলো বলছে, কুড়া বা ব্রান থেকে ২০ থেকে ২৮ শতাংশ পর্যন্ত অপরিশোধিত তেল পাওয়া যায়। সেটাকে পরিশোধনের পর বোতলজাত করে বিপণন করা হয়। সাড়ে ছয় কেজি কুঁড়ায় এক লিটার তেল হয়। জানা গেছে ব্রান অয়েলের সম্ভাবনার কারণেই বর্তমান উৎপাদনক্ষমতা দ্বিগুণ করছে এমারেল্ড অয়েল লিমিটেড (স্পন্দন ব্র্যান্ড)। বর্তমানে প্রতিষ্ঠানটির প্রতিদিনকার উৎপাদনক্ষমতা প্রায় ৪০টন।

দেশে ব্রান তেল উৎপাদনকারী প্রথম প্রতিষ্ঠান রশিদ অয়েল মিলের বিপণন ও বিক্রয় বিভাগের প্রধান বলেন, ‘দেশে প্রতিবছর ৫ থেকে ১০ শতাংশ হারে এ তেলের বাজার বাড়ছে। এটি অনেক বেশি বাড়তে পারত যদি আমরা আরও বেশি উৎপাদন এবং প্রচারণা চালাতে পারতাম।

মজুমদার প্রডাক্টস (স্বর্ণা ব্র্যান্ড) প্রতিদিন তেল উৎপাদন করে ৯০ থেকে ১০০ টন। প্রতিষ্ঠানটির কারখানা বগুড়ার শেরপুরে। প্রতিষ্ঠানের সহকারী মহাব্যবস্থাপক রহমতুল্লা বলেন, চাহিদা বাড়ায় আরও ১৫০ টন (প্রতিদিন) তেল উৎপাদনের জন্য প্রয়োজনীয় যন্ত্রপাতি স্থাপন করা হয়েছে।


সর্বশেষ - জাতীয় সংবাদ