1. অন্যরকম
  2. অপরাধ বার্তা
  3. অভিমত
  4. আন্তর্জাতিক সংবাদ
  5. ইতিহাস
  6. এডিটরস' পিক
  7. খেলাধুলা
  8. জাতীয় সংবাদ
  9. টেকসই উন্নয়ন
  10. তথ্য প্রযুক্তি
  11. নির্বাচন বার্তা
  12. প্রতিবেদন
  13. প্রবাস বার্তা
  14. ফিচার
  15. বাণিজ্য ও অর্থনীতি

তারুণ্য হোক অধূমপায়ী

বিপ্লব হোসেন : ইবার্তা টুয়েন্টিফোর ডটকম
রবিবার, ১২ জুন, ২০২২

আজকাল বাইরে বের হলেই দেখা যায় প্রাপ্তবয়স্ক-অপ্রাপ্তবয়স্ক সবারই ধূমপানে আসক্তি অত্যন্ত সাধারণ একটি দৃশ্য হয়ে দাঁড়িয়েছে। তামাককে একটি ক্ষতিকারক দ্রব্য হিসেবে আমরা চিনি। সিগারেট, বিড়ি, হুঁকো, চুরুট যেভাবেই ধূমপান করা হোক না কেন, তা স্বাস্থ্যের ক্ষতি করে। যারা ধূমপান করে তারা এটা জেনেও তা গ্রহণ করে। জেনেশুনে এই বিষ গ্রহণ করার ফলে ধূমপায়ী নিজর ক্ষতি তো করছেই, সাথে আশপাশের মানুষকেও ক্ষতিগ্রস্ত করছে। এবং প্রতিনিয়তই এর সংস্পর্শে আসা মানুষের সংখ্যা দিন দিন বৃদ্ধি পাচ্ছে। এর একটা বড় অংশ হলো তরুণ প্রজন্ম।

আমাদের দেশে তামাক গ্রহণের সবচেয়ে বড় মাধ্যম সিগারেট। বিশেষ করে তরুণ বয়সে ধূমপানের প্রবণতা দিনদিন বাড়ছে। ধূমপানে আসক্ত এসব শিশু-কিশোরদের বেশিরভাগের বয়স ১৩ থেকে ১৭ বছরের মাঝামাঝি। স্কুল ও কলেজের শিক্ষার্থীরা টিফিনের টাকা দিয়ে সিগারেট কিনে আনে। এরপর ক্লাস ফাঁকি দিয়ে নির্জন স্থানে বন্ধুদের সাথে ধূমপান করে। এসব শিক্ষার্থীদেরকে আজকাল বিভিন্ন আড্ডা স্থল, পার্ক ও দর্শনীয় স্থানগুলোতে দেখা যায়। কাঁধে স্কুল বা কলেজের ব্যাগ ঝুলিয়ে ঘুরে বেড়ায় তারা। অনেক শিশু-কিশোর ভবিষ্যত চিন্তা না করেই এর মরণফাঁদে পা দিয়ে ফেলে। ধূমপানে একবার আসক্তি জন্মে গেলে তা ছেড়ে দেয়া খুবই কঠিন। বরং দিনে দিনে তা গভীর নেশায় পরিণত হয়। তখন দেখা যায় এই ধূমপান বা তামাকই অন্যান্য নেশার দিকে তাদেরকে ঠেলে দিচ্ছে। এমন অনেকেই আছেন যারা প্রায়ই ধূমপান ছাড়ার সংকল্প করেন, কিন্তু সামনে কাউকে ধূমপান করতে দেখলেই সেই সংকল্প ধরে রাখতে পারেন না। ইচ্ছে থাকলেও তখন আর এখান থেকে সহজে বের হয়ে আসা যায় না। আবার অনেক অনেক ক্ষেত্রে দেখা যায় তরুণদের ধারণা ধূমপান করলে টেনশন কমে।

কিন্তু প্রকৃত অর্থে ব্যাপারটি ঠিক নয়। ধূমপানের কারণে দৈহিক ও মানসিক বিকাশ বাধাগ্রস্ত হয়, অর্থের অপচয় হয়। একজন ধূমপায়ী যখন সিগারেটে একটি টান দেন তখন সেই টানে তিন হাজারেরও অধিক রকম রাসায়নিক পদার্থ ঢুকে যায় তার শরীরে। এর মধ্যে অন্যতম হলো নিকোটিন। এই নিকোটিনই মূলত ধূমপানে আসক্তির মূল কারণ। বিড়ি-সিগারেটে ৬৫ রকমের বেশি ক্যান্সার সৃষ্টিকারী পদার্থ থাকে। তামাক সেবনের কারণে ক্যান্সার, হƒদরোগ, রক্তনালী সংকোচন, শ্বাসতন্ত্রের সমস্যাসহ বিভিন্ন রোগে মানুষ আক্রান্ত হয়। খোলা জায়গাতে ধূমপানের কারণে আশপাশের মানুষের জীবনও হুমকির মুখে পড়ে। আমাদের দেশে প্রতিবছর তামাকের ভয়ানক ছোবলে প্রায় এক লাখ ২৬ হাজার মানুষ মৃত্যুবরণ করে।

অসৎ সঙ্গের কারণেই হোক কিংবা কৌতূহলবশত, যারা ধূমপান করে বেশিরভাগ মানুষেরই ধূমপানের অভ্যাসটি গড়ে ওঠে তরুণ বয়সে। বয়স বাড়ার সাথে সাথে ধূমপানের হাত ধরেই তাদের মধ্যে আবার গাঁজা, ইয়াবা ও হেরোইনে আসক্তি সঞ্চারিত হয়। এজন্য আমরা যদি তরুণ প্রজন্মকে ধূমপান থেকে দূরে রাখতে সক্ষম হই তাহলে আমাদের দেশে ধূমপায়ীর সংখ্যা দিন দিন কমতে শুরু করবে। এর জন্য কঠোর পদক্ষেপ গ্রহণের বিকল্প নেই। আইন আছে, কিন্তু তার বাস্তবায়ন নেই। শিশুদের কাছে তামাকজাত দ্রব্য বিক্রয় আইনত নিষিদ্ধ হলেও আমরা বিক্রেতাদের এই বিষয়টি মানতে দেখি না। প্রকাশ্যে ধূমপানও ধূমপানের একটি বিজ্ঞাপন যা দেখে ছোটরা ধূমপানে উৎসাহী হয়। ধূমপানের সহজলভ্যতাই তরুণদেরকে ধূমপানের দিকে আকৃষ্ট করে। আমাদের দেশে অনেক পরিবারের প্রাপ্তবয়স্ক সদস্যরা শিশুদের সামনে ধূমপান করে। আর অনুকরণপ্রিয় বৈশিষ্ট্যেতার কারণে অনেক শিশু না বুঝেই সিগারেটের পড়ে থাকা অংশ নিয়ে তাদের অনুকরণ করে এবং একসময় ধূমপানে আসক্ত হয়ে যায় । মানুষের মাঝে ধূমপানে আসক্তি যত বেশি বাড়বে রোগ ও মৃত্যুর কারণ তত বেশি প্রসারিত হবে। তাই ধূমপান মুক্ত তরুণ প্রজন্ম গড়তে সবার আগে প্রয়োজন সুপরিকল্পিত পদক্ষেপ গ্রহণ করা।

তরুণদেরকে ধূমপান থেকে দূরে রাখতে তাদের কাছে এগুলোর বিক্রয় বন্ধ করতে হবে। পাশাপাশি অন্যদেরকেও ধূমপানে নিরুৎসাহিত করতে তামাকের উপর নিয়ন্ত্রণের ব্যবস্থা করতে হবে। আইনে ধূমপানে যে শাস্তির বিধান রাখা হয়েছে তা কার্যকর করতে হবে। জনসচেতনতামূলক কর্মসূচির মাধ্যমে স্কুল-কলেজ, হাট-বাজার এবং পাড়া-মহল্লায় তামাকের ক্ষতিকর প্রভাব সম্পর্কে জনসাধারণকে জানাতে হবে। সেই সাথে দায়িত্বশীল আচরণ করতে হবে পরিবার ও সমাজকেও। ছোটদের সামনে ধূমপান থেকে বিরত থাকতে হবে। পরিবারের কোনো সদস্য তামাকের প্রতি আসক্ত হলে তাকে ভালো করার জন্য তার পাশে থেকে সহযোগিতা করে যেতে হবে। ৩০ লাখ শহিদের বিনিময়ে আমরা একটি সোনার দেশ পেয়েছি। সেই দেশের মানুষগুলোকে সোনার মানুষ হিসেবে গড়তে তরুণ প্রজন্মকে ধূমপান ও সকল প্রকার মাদক থেকে দূরে রাখতে হবে। তবেই গড়ে উঠবে স্বপ্নের বাংলাদেশ।

লেখক : বিপ্লব হোসেন – শিক্ষার্থী, যশোর সরকারি সিটি কলেজ।


সর্বশেষ - জাতীয় সংবাদ