1. অন্যরকম
  2. অপরাধ বার্তা
  3. অভিমত
  4. আন্তর্জাতিক সংবাদ
  5. ইতিহাস
  6. এডিটরস' পিক
  7. খেলাধুলা
  8. জাতীয় সংবাদ
  9. টেকসই উন্নয়ন
  10. তথ্য প্রযুক্তি
  11. নির্বাচন বার্তা
  12. প্রতিবেদন
  13. প্রবাস বার্তা
  14. ফিচার
  15. বাণিজ্য ও অর্থনীতি

উন্নয়নে লক্ষ্যমাত্রা অর্জনের রোল মডেল বাংলাদেশ

শেখ সায়মন পারভেজ : ইবার্তা টুয়েন্টিফোর ডটকম
বৃহস্পতিবার, ১৬ জুন, ২০২২

বাংলাদেশ জাতিসংঘ ঘোষিত সহস্রাব্দ উন্নয়ন লক্ষ্য অর্জনে যথেষ্ট সফলতা দেখিয়েছে। এই সফলতার প্রেক্ষিতে দেশ ও জাতির ভাবমূর্তি বিশ্ববাসীর সামনে যথেষ্ট দায়িত্বশীলতার সাথে প্রকাশ পেয়েছে। সে সাথে বাস্তবিক অর্থে আমাদের দেশের মানুষের জীবন যাত্রার মান উন্নত হয়েছে। ডিজিটাল বাংলাদেশ বিনির্মাণের দ্বার উন্মোচন হয়েছে। আর বাংলাদেশকে বলা হচ্ছে সহস্রাব্দ উন্নয়ন লক্ষ্যমাত্রা অর্জনের রোল মডেল। এই লক্ষ্যমাত্রা অর্জনের সময়সীমা ২০০১ থেকে ২০১৫ সাল পর্যন্ত ছিল। এই লক্ষ্যসীমা মেয়াদ শেষ হওয়ার পর জাতিসংঘ নতুন লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করে দিয়েছে। আর এই লক্ষ্যমাত্রাটি হল ‘টেকসই উন্নয়ন অভীষ্ট’ যাকে সংক্ষেপে এসডিজি বলা হয়। আর এই লক্ষ্য অর্জনের দায়িত্ব বাংলাদেশসহ জাতিসংঘের সকল দেশের ওপর ন্যস্ত হয়েছে।

যাই হোক, এখন আজকের বিষয়ে আলোচনা করার আগে আমাদের জানতে হবে অংশীদারিত্ব কি জিনিস। সহজ কথায় যেকোনো উন্নয়নের সুফল ভোগকারী গোষ্ঠীই হল অংশীজন। তা হতে পারে কোনো একটি নির্দিষ্ট সমাজ কিংবা কোন একটি নির্দিষ্ট জাতি কিংবা গোটা বিশ্ব। আর এই অংশীজনরা যদি কোন উন্নয়নের সুফল ভোগ করতে চায় তাহলে তাদের কিছু দায়িত্ব ও কর্তব্য থাকে। আর এই দায়িত্ব ও কর্তব্য সঠিকভাবে পালন করতে হয়। অংশীজনের এই দায়িত্ব ও কর্তব্যকে অংশীদারিত্ব বলে। তাহলে আমরা বুঝতে পারছি যে যেকোনো লক্ষ্যমাত্রা অর্জনে কিংবা যেকোন উন্নয়নে অংশীদারিত্বের গুরুত্ব অপরিসীম। অতএব টেকসই উন্নয়ন অভীষ্ট অর্জনে জনদের অংশীদারিত্ব মুখ্য ভূমিকা পালন করে। একটি উদাহরণ দেই, মনে করি একটি গ্রামে মানুষদের বিনামূল্যে ওষুধ বিতরণ করা হলো। সেইসাথে বলা হলো যে ডাক্তার যেভাবে খেতে বলেছে ওইভাবে ওষুধ খেতে হবে। এখন ওই গ্রামের মানুষ যদি বিনামূল্যে ওষুধ মনে করে ইচ্ছামতো প্রতিযোগিতা করে, কে বেশি খেতে পারে বা বেশি ওষুধ খাওয়া মানে রোগ ভালো হওয়া এরূপ মনে করে। অর্থাৎ ওষুধের সুষ্ঠু ব্যবহার না করে। তাহলে উপকারের চেয়ে অপকারই বেশি হবে। অতএব যেকোনো উন্নয়নের ক্ষেত্রে জনগণের সক্রিয়তা ও সচেতনতা বেশি জরুরি। জনগণের এই দায়িত্ব ও কর্তব্যকে অংশীদারিত্ব বলে।

এখন আসি বাংলাদেশের প্রেক্ষাপটে। বাংলাদেশের জন্য এই লক্ষ্যগুলো অর্জনের ক্ষেত্রে অনেক রকম চ্যালেঞ্জের সম্মুখীন হতে হবে। কেননা আমাদের দেশের জনগণ নিজেদের ব্যাপারে তেমন সচেতন নয়। আর এই অসচেতনতায় হলো আমাদের টেকসই উন্নয়নের প্রধান প্রতিবন্ধক। উদাহরণ হিসেবে টেকসই উন্নয়ন অভীষ্ট এর ছয় নম্বর লক্ষমাত্রা ‘নিরাপদ পানি ও পয়ঃনিষ্কাশন’ এর কথাই ধরি। আমাদের দেশের বিভিন্ন মানুষ যে পরিমাণ পানির অপচয় করে তা পৃথিবীর অন্যান্য অঞ্চলে তেমন দেখা যায় না। আবার আমাদের দেশে কিছু কিছু অঞ্চলে পানির অনেক ঘাটতি পরিলক্ষিত হয়। ঢাকা শহরের কথাই ধরি। একবার বিশ্ববিদ্যালয় ভর্তি পরীক্ষা দেওয়ার সুবাদে এক নিম্নমধ্যবিত্ত আত্মীয়ের বাসায় গিয়েছিলাম। গ্রামে বেড়ে হওয়ার প্রেক্ষিতে এটাই আমার জীবনের প্রথম ঢাকা যাওয়া।

তখন দেখলাম কখনো ট্যাপে পানি থাকে আবার কখনো থাকে না। পানি কেমন জানি বৈচিত্র্যময়। মনে মনে ভাবলাম এসব পানি তো আমাদের গ্রামে গরুকেও খেতে দেওয়া হয় না। কি করবে শহরবাসী বেচারারা, পানি তো খেতে হবে। তখনই বুঝলাম পানির ঘাটতি কি জিনিস। এটাই আমার প্রথম অভিজ্ঞতা। এক্ষেত্রে বলা চলে আমাদের যথেষ্ট অসচেতনতার কারণে সৃষ্টি হয়েছে পানির ঘাটতি। আমরা যেভাবে বুড়িগঙ্গা দূষিত করছি বা খাল বিল ভরাট করে বসতি স্থাপন করছি তা আমাদের জন্য অশনিসংকেত বটে। এখন আসি পয়ঃনিষ্কাশনের ব্যাপারে। শহরাঞ্চলে যেভাবে অপরিকল্পিতভাবে বসতি স্থাপন করা হচ্ছে তার ফলাফল তো আমরা হাড়ে হাড়ে টের পাচ্ছি। আংশিক বৃষ্টি হলে যে জলাবদ্ধতার সৃষ্টি হয় তা আমরা স্বচক্ষে বা গণমাধ্যমে প্রায়শই দেখি। এমন জলবদ্ধতা অভিজ্ঞতা মোটামুটি সবারই আছে। আমি যখন ময়মনসিংহ শহরে আনন্দমোহন কলেজে পড়াশোনা করি তখন মনে আছে একবার জলাবদ্ধতার কারণে গুলকিবাড়ি গলির ছোট রাস্তাটি আমার বুক সমান পানি জমেছিল।

এটা সত্য যে শহরের প্রতিটি গলির অবস্থা এমন। আর এখানেও তো মানুষ বসবাস বা চলাচল করে। এখন বুঝা যাচ্ছে তাদের জীবনযাত্রার মান। সেই সাথে এটা স্বীকার করতে হবে যে এই সমস্যা সৃষ্টির পেছনে আমরাই দায়ী। আর আমাদের জীবনযাত্রার মান উন্নয়ন করতে জাতিসংঘ ঘোষিত ষষ্ঠ নম্বর লক্ষ্যটি হলো নিরাপদ পানি ও পয়ঃনিষ্কাশন। সরকার আমাদেরকে নির্দেশনা বা পরিকল্পনা বা প্ল্যাটফর্মের সুযোগ করে দিতে পারে। আর এসব নির্দেশনা মেনে চলা ও বিভিন্ন সম্পদের সংরক্ষণ করার দায়িত্ব আমাদেরই ওপর ন্যস্ত। শুধুমাত্র ব্যক্তি লাভের কথা চিন্তা না করে সামগ্রিকভাবে সমষ্টিগত উপকারিতা কিভাবে আসবে সেটাও চিন্তা করাও এক ধরনের অংশীদারিত্বের পর্যায়ে পড়ে। কেননা ব্যক্তির স্বার্থ যেখানে দেখা হয় সেখানে সামগ্রিক স্বার্থ অর্জন করা অসম্ভব। আর এসব ক্ষুদ্র ক্ষুদ্র ব্যক্তির স্বার্থ অর্জনের লক্ষ্যই আমাদের সকল প্রতিবন্ধকতা ফুল।

এটা মনে রাখতে হবে যে রাষ্ট্রের সকল নির্দেশনা ও সম্পদ কোন ব্যক্তির একার ওপর ন্যস্ত নয়। এটা সামগ্রিকভাবে প্রতিটি জনগণের উপরেই ন্যস্ত। আমরা একটু সক্রিয় হলেই টেকসই উন্নয়ন অভীষ্ট অতি সহজে বাস্তবায়ন করতে পারব। কেননা সহস্রাব্দ উন্নয়ন অভীষ্ট বাস্তবায়ন ইতিমধ্যে আমরা যথেষ্ট অগ্রগতি প্রদর্শন করেছি। বিশ্ববাসীর সামনে আমাদের সক্রিয়তা যথেষ্ট প্রকাশ পেয়েছে। গণমাধ্যমে প্রকাশিত এক প্রতিবেদনে বলা হয়, বাংলাদেশের প্রতিবেশী দেশগুলোর মধ্যে এবারের সূচকে ভুটানের অবস্থা সবচেয়ে ভালো। ৬৯.৯৮ স্কোর নিয়ে হিমালয়ের এ দেশটির অবস্থান সূচকের ৭৫ নম্বরে। এছাড়া ৬৯.২৭ স্কোর নিয়ে মালদ্বীপ ৭৯তম, ৬৮.১০ স্কোর নিয়ে শ্রীলঙ্কা ৮৭তম, ৬৬.৫২ স্কোর নিয়ে নেপাল ৯৬তম, ৬৪.৯৫ স্কোর নিয়ে মিয়ানমার ১০১তম অবস্থানে আছে। সার্কভুক্ত দেশগুলোর মধ্যে বাংলাদেশের চেয়ে পিছিয়ে আছে তিন দেশ। ৬০.০৭ স্কোর নিয়ে ভারত সূচকের ১২০তম, ৫৭.৭২ স্কোর নিয়ে পাকিস্তান ১২৯তম এবং ৫৩.৯৩ স্কোর নিয়ে আফগানিস্তান ১৩৭তম অবস্থানে রয়েছে।

অতএব আমরাও পারব এমডিজির মতো এসডিজি বা টেকসই উন্নয়ন অভীষ্ট বাস্তবায়ন করতে। এক্ষেত্রে সরকারি খাতে পাশাপাশি বেসরকারি খাতকে এগিয়ে আসতে হবে। আবার শুধুমাত্র বেসরকারি খাতের সক্রিয়তা কিংবা সরকারি খাতে সক্রিয়তা থাকলেই চলবে না তৃণমূল পর্যায় থেকে সকল ব্যক্তি গোষ্ঠী সকলের সম্মিলিত প্রচেষ্টা কাজে লাগাতে হবে। দেশের অভ্যন্তরীণ পারস্পরিক সাহায্য সম্পর্কের পাশাপাশি আন্তর্জাতিক পারস্পরিক সহযোগিতা আবশ্যক। কেননা আন্তর্জাতিক অংশীদারিত্ব খুবই গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে টেকসই উন্নয়ন অভীষ্ট অর্জনে।

তাছাড়া একটি দেশ তার লক্ষ্যমাত্র কিভাবে অর্জন করছে তা পর্যবেক্ষণে রাখতে পারি, এ বিষয়ে থেকে শিক্ষা নিতে পারি এবং এই অভিজ্ঞতা আমাদের দেশ কাজে লাগাতে পারে। তার পাশাপাশি কি কি পদক্ষেপের কারণে কোন দেশ লক্ষ্য অর্জনে ব্যর্থ হয়েছে এই বিষয়ে থেকেও আমরা শিক্ষা নিতে পারি। মূলত এককথায় এক দেশ আরেক দেশের সাথে অর্থাৎ আন্তর্জাতিক সংযোগ স্থাপন করতে হবে। এটা মনে রাখতে হবে যে, আমরা যদি কোনো গোষ্ঠী বা সমাজকে এগিয়ে নিতে চাই অর্থাৎ টেকসই উন্নয়ন ঘটাতে চাই। তাহলে অন্য গোষ্ঠী বা সমাজকে যথেষ্ট সুযোগ দিতে হবে। কারণ অন্যদের সুযোগ না দিয়ে কোনেক্রমেই জাতীয় টেকসই উন্নয়ন সম্ভব নয়। তদ্রুপভাবে আমরা যদি উন্নত দেশগুলোর টেকসই উন্নয়ন করি এবং অন্যান্য দেশগুলোকে সহযোগিতা না করি বা সহযোগিতার সুযোগ সৃষ্টি করে না দেয়, তাহলে দেখা যাবে যে জাতীয় উন্নয়ন হবে কিন্তু বৈশ্বিক টেকসই উন্নয়ন হবে না। আর জাতিসংঘের মূল লক্ষ্যই বৈশ্বিক টেকসই উন্নয়ন।

পৃথিবীর সকল মানুষ যেন এই বৈশ্বিক টেকসই উন্নয়নের অংশীদারিত্ব হিসেবে কাজ করতে হবে। আমাদের মূল লক্ষ্য হতে হবে জাতীয় টেকসই উন্নয়নের পাশাপাশি বৈশ্বিক টেকসই উন্নয়ন দরকার। সরকারের যুগান্তকারী পদক্ষেপ ও দিকনির্দেশনা এ ক্ষেত্রে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করবে। বাজেটে নির্ধারিত অর্থ যেন যথাযথভাবে প্রয়োগ হয় এ ক্ষেত্রে স্বচ্ছতা জবাবদিহিতা ও দুর্নীতি মুক্ত হতে হবে। আর অংশীদারিত্বের মূল ভূমিকা পালন করতে হবে জনগণের। প্রতিটি জনগণের সক্রিয়তা ও সচেতনতা সৃষ্টি করতে পারে টেকসই উন্নয়ন। এভাবে প্রতিটি মানুষের জীবন যাত্রার মান যখন উন্নত হবে। তখন একটি সমাজ উন্নতি হবে। যখন সমাজের উন্নতি ঘটবে তখন একটি দেশের উন্নতি ঘটবে। যার ফল জাতীয় টেকসই উন্নয়ন। যখন প্রতিটি দেশের উন্নয়ন হবে তখন স্বয়ংক্রিয়ভাবে বৈশ্বিকভাবে টেকসই উন্নয়ন হবে। আর জাতিসংঘের ঘোষিত টেকসই উন্নয়ন অভীষ্ট অর্জিত হবে। পৃথিবী হয়ে উঠবে ক্ষুধামুক্ত দারিদ্র্যমুক্ত আদর্শ পৃথিবী।

লেখক: শেখ সায়মন পারভেজ – শিক্ষার্থী, মাওলানা ভাসানী বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়।


সর্বশেষ - জাতীয় সংবাদ