1. অন্যরকম
  2. অপরাধ বার্তা
  3. অভিমত
  4. আন্তর্জাতিক সংবাদ
  5. ইতিহাস
  6. এডিটরস' পিক
  7. খেলাধুলা
  8. জাতীয় সংবাদ
  9. টেকসই উন্নয়ন
  10. তথ্য প্রযুক্তি
  11. নির্বাচন বার্তা
  12. প্রতিবেদন
  13. প্রবাস বার্তা
  14. ফিচার
  15. বাণিজ্য ও অর্থনীতি

বিএনপির নেতৃত্বে আস্থা রাখছে না জোটের দলগুলো

ডেস্ক রিপোর্ট : ইবার্তা টুয়েন্টিফোর ডটকম
শুক্রবার, ২৪ নভেম্বর, ২০২৩

ঘোষিত তফসিল অনুসারে ৭ জানুয়ারি দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন হওয়ার কথা। বিএনপিসহ যুগপৎ আন্দোলনকারী কয়েকটি দল নির্বাচনে অংশ না নেওয়ার ঘোষণা দিয়ে হরতাল-অবরোধের মাধ্যমে সহিংস ঘটনা ঘটাচ্ছে। তাদের এক দফা দাবি, বর্তমান সরকারের অধীন নয়; নির্দলীয় তত্ত্বাবধায়ক সরকার হলেই তারা নির্বাচনে যাবে। যদিও ২৮ অক্টোবরের সন্ত্রাসী ঘটনার পর বিএনপির রাজনৈতিক কর্মধারা অন্য কথা বলে। দলটির শীর্ষনেতারা অনেকেই কারারুদ্ধ। আবার সন্ত্রাসী কর্মকাণ্ডের সঙ্গে জড়িত থাকার অভিযোগে অনেকেই আটক হচ্ছেন। বিএনপির সিনিয়র যুগ্ম মহাসচিব প্রতিদিন কোথাও না কোথাও আচমকা কয়েকজন কর্মীসহ বেরিয়ে হরতাল-অবরোধের পক্ষে স্লোগান দিয়ে আবার কেটে পড়েন। বিএনপির ডাকা অবরোধ-হরতালে প্রতিদিনই গাড়ি ভাঙচুর, আগুনে পুড়ছে।

ঢাকার বাইরেও কোথাও কোথাও জামায়াত-শিবির ও বিএনপি নেতাকর্মীরা হরতাল-অবরোধের পক্ষে ঝটিকা মিছিল করছেন। কিন্তু তাদের ডাকা হরতাল বা অবরোধ খুব একটা পালিত হয় বলে দাবি করা যাবে না। শহরগুলোয় যানবাহন চলে। শুধু দূরপাল্লার যাত্রীবাহী বাস ও ট্রাক-লরি খুব একটা বের হয় না। মূলত অগ্নিসংযোগ, পেট্রোলবোমা, ককটেল নিক্ষেপ ইত্যাদির কারণে যাত্রীসাধারণ দূরপাল্লার বাসে উঠতে সাহস পাচ্ছেন না। এ ছাড়া বাকি সব যানবাহনই শহরে-গ্রামে সর্বত্র চলছে। বিএনপির তৃণমূল নেতাকর্মীরা এত দিন আশায় আশায় ছিলেন, যুগপৎ আন্দোলনকারীরা যেভাবে দাবি করছিলেন সরকারের পতন ঘটবেই, তত্ত্বাবধায়ক সরকারের অধীন নির্বাচন হবেই তা যেন ক্রমেই ফিকে হচ্ছে। কিন্তু ২৮ অক্টোবরের সন্ত্রাসী কর্মকাণ্ড গোটা পরিস্থিতিই পাল্টে দিয়েছে। বিএনপি সেদিন সরকার পতনে সন্ত্রাসীদের ওপর নির্ভরশীল ছিল। একইভাবে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের ওপরও আস্থাশীল ছিল। ২৮ অক্টোবর মিয়া আরেফিকে জো বাইডেনের ভুয়া উপদেষ্টা হিসেবে মহাসমাবেশে বক্তৃতা দেওয়ার জন্য আনা হয়েছিল। সবকিছুই পরে পণ্ড হয়ে গেছে। এখন যুগপৎ আন্দোলনকারীদের কয়েকটি ছোট ছোট দলের নেতা জাতীয় প্রেস ক্লাব ও বিজয়নগর রোডে প্রতিদিন মিছিল-সমাবেশ করে সরকারের পতন ঘটানোর হুংকার দিচ্ছেন।
আবার বিএনপির যুগপৎ আন্দোলনের শরিক অনেকে ইতোমধ্যে নির্বাচনে অংশ নেওয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছে এবং এই তালিকা সহসাই আরও দীর্ঘ হবে এমন গুঞ্জনও আছে।

আওয়ামী লীগ, জাতীয় পার্টি এবং আরও কিছু রাজনৈতিক দল নির্বাচনে নিজ নিজ দল বা জোটের প্রার্থী মনোনয়নদানের চূড়ান্ত পর্বে রয়েছে। এমন অবস্থায়ও বিএনপি ও যুগপৎ আন্দোলনকারী দলগুলো হরতাল-অবরোধ ডেকেই যাচ্ছে। মূলত রাতের আঁধারে কিছু যানবাহনে অগ্নিসংযোগ ছাড়া তেমন কিছু তারা করতে পারছে না। এ অবস্থায়ও নির্বাচন কমিশনার রাশেদা সুলতানা বিএনপিসহ অন্যান্য দলকে নির্বাচনে অংশ নেওয়ার জন্য আহ্বান জানিয়েছেন। দলগুলো অংশ নিলে সংবিধানের মধ্যে থেকে তফসিল পুনর্নির্ধারণ, লেভেল প্লেয়িং ফিল্ড নিশ্চিত করার কথাও তিনি জানান।
এরপর ২৩ নভেম্বর কুমিল্লায় ইসি আনিসুর রহমান বলেছেন, ‘বিএনপি নির্বাচনে এলে সংবিধান অনুযায়ী তফসিল পেছানোর সুযোগ আছে।’ আওয়ামী লীগের কেউ কেউ তাদের এমন বক্তব্যে মৌন সায় দিয়েছেন এমন আভাসও মিলছে। তবে নির্বাচন কমিশনের তরফে এই আহ্বানে বিএনপি আদৌ সাড়া দেবে কি না সন্দেহ আছে। যদি সাড়া দেয় তাহলে আবহ পুরোপুরি বদলে যাবে। কদিন আগে ডোনাল্ড লু বিএনপি, আওয়ামী লীগ ও জাতীয় পার্টিকে শর্তহীন আলোচনা করতে চিঠি দিয়েছিলেন। এমনটি বিলম্বিত উদ্যোগ বলে আওয়ামী লীগ জানিয়ে দিয়েছিল, অন্যদিকে বিএনপি তাদের এক দফার কথাই উচ্চারণ করে। কিন্তু এর মধ্যে প্রেক্ষাপট আরও বদলে গেছে এবং যাচ্ছে। তবে বিএনপির নেতারা একথাও বলছেন, তারা অসহযোগ আন্দোলনের কর্মসূচি নিয়ে ভাবছেন। কিন্তু অসহযোগ আন্দোলন করার মতো পরিস্থিতি তৈরি হয়নি, হওয়ার লক্ষণও দেখা যাচ্ছে না।

বিএনপি ধারণা করেছিল, নামসর্বস্ব বেশকিছু রাজনৈতিক দলকে সঙ্গে নিয়ে এক দফার যে আন্দোলন তারা শুরু করেছে, এর ফলে সরকার একঘরে হয়ে গেছে। কিন্তু বাস্তবে তা তো ঘটেনি। জাতীয় পার্টি, তৃণমূল বিএনপি, যুক্তফ্রন্ট, ইসলামী কয়েকটি দল এবং স্বতন্ত্র প্রার্থী হয়ে অনেকেই নির্বাচনে অংশ নেওয়ার প্রস্তুতি নিচ্ছে এবং এ তালিকাক্রমেই দীর্ঘ হচ্ছে। ফলে আওয়ামী লীগের বিপক্ষে বড় দল বিএনপি অংশ না নিলেও অনেকেই মাঠে তৎপর হয়ে উঠেছে। বিএনপি কি তাদের দাবি পূরণ না হওয়ার জন্য নির্বাচনে অংশ নিচ্ছে না, নাকি দলের শীর্ষ নেতৃত্ব যেহেতু দণ্ডপ্রাপ্ত ও দেশের বাইরে অবস্থান করছেন, তাই নির্বাচনে অংশ নিতে না পারার কারণ থেকেই নির্বাচন বাদ দিয়ে সরকার উৎখাতের আন্দোলনে ভরসা করছে। তা ছাড়া ৭ জানুয়ারির নির্বাচনকে বিতর্কিত নির্বাচনের তালিকায় ফেলারও উদ্দেশ্য থাকতে পারে। কিন্তু নির্বাচন যদি শেষ পর্যন্ত অবাধ, সুষ্ঠু এবং বিতর্কহীনভাবে অনুষ্ঠিত হয়, উল্লেখযোগ্য ভোটার যদি ভোটদানে অংশগ্রহণ করেন তাহলে নির্বাচন বিতর্কিত করা বা বলার সুযোগ থাকবে না। আবার যদি অতি উৎসাহীরা নির্বাচনে কোনোভাবে কোথাও হস্তক্ষেপ করলে বিএনপির অভিযোগ সত্য বলে প্রমাণিত হবে। নির্বাচন কমিশন ও তাদের সহযোগী শক্তি সরকার ৭ জানুয়ারির নির্বাচন সুষ্ঠু করতে যে প্রতিশ্রুতিবদ্ধ, তা তাদের প্রমাণ করতে হবে কাজের মধ্য দিয়ে। তারা যদি নির্বাচন প্রশ্নমুক্ত করতে পারে এবং ভোটারের অংশগ্রহণ সন্তোষজনক হয় তাহলে ভবিষ্যৎ রাজনীতির চিত্রও হবে ভিন্ন। গণতন্ত্র আরও বিকশিত হোক যথাযথ অনুশীলনে এটাই আমাদের প্রত্যাশা।

তাছাড়া নির্বাচনে যদি অন্য কিংবা স্বতন্ত্র ব্যানারে বিএনপি নেতাদের অনেকেই অংশগ্রহণ করেন তাহলে পরিবেশ প্রতিযোগিতামূলক হয়ে উঠবে। এটি নির্ভর করবে বিএনপির কতসংখ্যক নেতা নির্বাচনে স্বতন্ত্র কিংবা কোনো না কোনো দলের প্রার্থী হয়ে অংশ নেবেন তার ওপর। ২০০৬ সাল থেকে বিএনপির অনেক নেতাই রাজনীতিতে নিষ্ক্রিয়। ২০১৪ সালের নির্বাচন বয়কট করার সিদ্ধান্ত বিএনপির ভুল ছিল বলে স্বীকার করছেন তাদের অনেক নেতা। ধারণা ছিল জামায়াত ও বিএনপি নেতাকর্মীরা নির্বাচন শুধু পণ্ডই নয়, সরকারও উৎখাত করতে সক্ষম হবেন। কিন্তু তা সফল হয়নি। তা ছাড়া তখন অগ্নিসন্ত্রাস করে অনেককে পুড়িয়ে মারা হয়, যানবাহন পোড়ানো হয়, অসংখ্য মানুষ অগ্নিদগ্ধ হয়ে বিপন্ন জীবন কাটান। তাতে জামায়াত-বিএনপির ভাবমূর্তি ক্ষুণ্ন হয়। ২০১৫ সালেও ৯৩ দিন অবরোধ ডেকে সরকারের পতন ঘটানো যায়নি। অগ্নিসন্ত্রাস বিএনপির রাজনীতির জন্য বড় ধরনের কালিমা লেপন করে।

২০১৮ সালের নির্বাচন নিয়ে বিএনপি নেতৃত্বের সংকটে পড়েছিল। নির্বাচনে বিএনপি যথাযথভাবে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করতে পারেনি। আওয়ামী লীগের প্রার্থীরা প্রভাব বিস্তার করেন। বিদ্যমান পরিস্থিতি বলছে, নির্বাচনের পরিবেশ থাকলে পছন্দের প্রার্থীদের ভোট দিতে ভোটাররা কেন্দ্রে যাবেন এতে কোনো সন্দেহ নেই। বিএনপি হরতাল-অবরোধ দিয়ে নির্বাচনের পথ রুদ্ধ করতে পারবে কিনা তা নিয়ে সন্দেহ আছে। ২০১৪ সালে যা সম্ভব হয়েছিল ২০২৩ সালে তা হওয়ার সম্ভাবনা কম। নির্বাচন ভালোয় ভালোয় হয়ে গেলে গত এক-দেড় বছর যাবৎ দেশে নির্বাচন নিয়ে যে উত্তেজনা সৃষ্টি হয়েছিল এর নিরসন হবে। পরবর্তী পাঁচ বছরের জন্য তাদের যুগপৎ ছেড়ে নিজেদের রাস্তাই মাপতে হবে।

নির্বাচন সুষ্ঠু হলে এবং উল্লেখযোগ্যসংখ্যক ভোটারের উপস্থিতি ঘটলে সরকার গঠন নিয়ে প্রশ্ন তোলার অবকাশও থাকবে না। বিএনপি ও যুগপৎ আন্দোলনকারী দলগুলো এবার নিয়মতান্ত্রিক আন্দোলন ও কর্মসূচি পালনের মধ্য দিয়ে নেতাকর্মীদের যেটুকু উজ্জীবিত করেছিল, ২৮ অক্টোবর সরকার উৎখাতের নীলনকশার পথে অগ্রসর না হলে তারা কমিশনের ওপর আস্থা রেখে নির্বাচনে অংশ নিতে পারত। এবারের নির্বাচনের দিকে দেশি-বিদেশি সব মহলেরই দৃষ্টি থাকবে এবং এর ফলে নির্বাচন প্রশ্নমুক্ত হবে তা-ই মনে হয়। অনুকূল পরিবেশ থাকা সত্ত্বেও বিএনপি কোন বিবেচনা থেকে ২৮ অক্টোবর ঘিরে নীলনকশা করেছিল তা অনেকের কাছেই বোধগম্য নয়। বোঝাই যাচ্ছে বিএনপির অভ্যন্তরে সিদ্ধান্তগ্রহণ নিয়ে নানা ধরনের টানাপড়েন রয়েছে। দলীয় সিদ্ধান্ত দলের কোনো পর্ষদে বসে নিতে দেখা যাচ্ছে না। গুঞ্জন আছে, ‘লন্ডন ওহি’ দলের সিদ্ধান্তগ্রহণে সবচেয়ে বেশি গুরুত্ব পায়। এ কারণেই বিএনপির এবারের আন্দোলন মাঝে মাঝেই পথ হারাচ্ছে। নির্বাচন কমিশনের তরফে সর্বশেষ আহ্বানটি তাদের সামনে সর্বশেষ সুযোগ বলে মনে হয়। এ সুযোগ হাতছাড়া করলে বিএনপিকে অনেক রাজনৈতিক মূল্য দিতে হতে পারে।

লেখক: ড. মমতাজউদ্দীন পাটোয়ারী – শিক্ষাবিদ ও রাজনীতি-বিশ্লেষক, অবসরপ্রাপ্ত অধ্যাপক, বাংলাদেশ উন্মুক্ত বিশ্ববিদ্যালয়।


সর্বশেষ - জাতীয় সংবাদ