1. অন্যরকম
  2. অপরাধ বার্তা
  3. অভিমত
  4. আন্তর্জাতিক সংবাদ
  5. ইতিহাস
  6. এডিটরস' পিক
  7. খেলাধুলা
  8. জাতীয় সংবাদ
  9. টেকসই উন্নয়ন
  10. তথ্য প্রযুক্তি
  11. নির্বাচন বার্তা
  12. প্রতিবেদন
  13. প্রবাস বার্তা
  14. ফিচার
  15. বাণিজ্য ও অর্থনীতি

বাংলাদেশের অভূতপূর্ব উন্নয়নে লজ্জিত পাকিস্তানের প্রধানমন্ত্রী

নিউজ এডিটর : ইবার্তা টুয়েন্টিফোর ডটকম
বৃহস্পতিবার, ২ মে, ২০২৪

হেনরি কিসিঞ্জারের ‘তলাবিহীন ঝুড়ি’ আজ গোটা দুনিয়ার অর্থনৈতিক বিস্ময়। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নেতৃত্বে গোটা দেশ আজ অর্থনৈতিক বিভিন্ন সূচকে প্রতিবেশীদের টেক্কা দিচ্ছে। তাই ‘স্বল্পোন্নত দেশ’ থেকে বাংলাদেশ আজ ‘উন্নয়নশীল দেশে উন্নিত’। আর ‘স্মার্ট বাংলাদেশের’ হাত ধরে জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের ‘সোনার বাংলার’ স্বপ্নও সার্থক হতে চলেছে। ইতিমধ্যেই বাস্তব চেহারা পেয়েছে প্রধানমন্ত্রীর ‘ডিজিটাল বাংলাদেশ’। বাংলাদেশের উন্নয়ন দেখে ‘লজ্জিত’ পাকিস্তানের প্রধানমন্ত্রী শাহবাজ শরিফ। তিনি নিজেই সেকথা স্বীকার করেছেন।

একাত্তরে স্বাধীনতা অর্জনের আগে, সাবেক পূর্ব পাকিস্তানকে ‘বোঝা’ বলে মনে করতেন পশ্চিম পাকিস্তানের মানুষ। শাহবাজ নিজেও সেকথা স্বীকার করেছেন। সেইসঙ্গে বাংলাদেশের আজকের উন্নয়নে তিনি বিস্ময় প্রকাশ করেন। না করে অবশ্য উপায়ও নেই। শেখ হাসিনার নেতৃত্বে বাংলাদেশ আজ উন্নয়নের সমস্ত সূচকেই পাকিস্তানকে টেক্কা দিচ্ছে। স্বাধীনতার পরবর্তীতে কম ঝক্কি সামলাতে হয়নি দেশটিকে। জাতিরপিতাকে নৃশংসভাবে হত্যা করে, ৩০ লাখ শহীদের রক্তের বিনিময়ে অর্জিত স্বাধীনতাকে হরণ করার চেষ্টা হয়েছিল। সামরিক অভ্যুত্থানের মাধ্যমে বারবার লুন্ঠন করা হয়েছে মানুষের গণতান্ত্রিক অধিকার। প্রহসনের নির্বাচনের মাধ্যমেও ক্ষমতা দখল করে জঙ্গিবাদের আঁতুর ঘরে পরিণত করা হয় গোটা দেশকে। কিন্তু সমস্ত ষরযন্ত্রকে ব্যর্থ করে দিয়ে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নেতৃত্বে আওয়ামী লীগের নৌকায় আজ সুরক্ষিত গোটা দেশ দুর্বার গতিতে এগিয়ে চলেছে।

পাকিস্তানে সিন্ধুর বর্তমান মুখ্যমন্ত্রী সৈয়দ মুরাদ আলি শাহের বাসভবনে সম্প্রতি শিল্পপতিদের সঙ্গে মতবিনিময়ে অংশ নিয়েছিলেন সে দেশের প্রধানমন্ত্রী। সেখানেই তিনি বাংলাদেশের শিল্পায়ণের ভূয়সী প্রশংসা করেন। সেইসঙ্গে পাকিস্তানের দুর্দশার কথাও শোনা যায় তাঁর মুখে। বিভিন্ন ক্ষেত্রে তিনি বাংলাদেশের অগ্রগতির উল্লেখ করেন। সেইসঙ্গে পাকিস্তানের উন্নয়ণে দেশের শিল্পপতিদের অগ্রণী ভূমিকা নিতেও আহ্বান জানান। জবাবে পাকিস্তানি শিল্পপতিরা প্রধানমন্ত্রীকে ভারতের সঙ্গে বাণিজ্যিক সুসম্পর্ক গড়ে তোলার অনুরোধ করেন। তাদের মতে, ভারতের সঙ্গে বাণিজ্যিক সম্পর্কের উন্নয়ন পাকিস্তানের সার্বিক উন্নয়নের সবচেয়ে বড় পথ। প্রতিবেশীর সঙ্গে ঝগড়া করে দেশের উন্নয়ন যে সম্ভব নয় সেকথাও তাঁরা বলেন। বৈঠকে পাকিস্তানে জঙ্গিবাদী ততপরতা বৃদ্ধি নিয়েও ব্যবসায়ীরা তাদের উদ্বেগের কথা তুলে ধরেন। প্রধানমন্ত্রীকে দেশের স্থিতিশীলতা অর্জনে কারাবন্দী তেহরিক–ই–ইনসাফের (পিটিআই) নেতা ইমরান খানের সঙ্গে আলোচনায় বসারও প্রস্তাব দেওয়া হয় শাহবাজ শরিফকে।

আন্তর্জাতিক খ্যাতিসম্পন্ন অর্থনীতিবিদ ও গবেষকদের মতে, বাংলাদেশের তুলনায় পাকিস্তানের অর্থনৈতিক অবস্থা খুবই খারাপ। সামরিক বাহিনীর দাদাগিরি আর অস্থির রাজনৈতিক পরিস্থিতির কারণে শ্রীলঙ্কার মতোই দেউলিয়া হতে চলেছে দেশটি। অতিরিক্ত চীন নির্ভরতা তাদের বিপদ আরও বাড়িয়ে দিয়েছে বলেও অর্থনীতিবিদদের অনুমান। দেশটির বিদেশি মুদ্রা ভান্ডার তলানিতে এসে ঠেকেছে। সর্বশেষ হিসাবে অনুযায়ী গত ফেব্রুয়ারি শেষে পাকিস্তানের বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভ কমে দাঁড়িয়েছে ৫৪৫ কোটি মার্কিন ডলারে। অন্যদিকে বাংলাদেশের পাকিস্তানের চেয়ে প্রায় পৌনে ছয় গুণ বেশি রিজার্ভ আছে।বর্তমানে রিজার্ভের পরিমাণ ৩ হাজার ১০০ কোটি মার্কিন ডলার। বছর খানেক আগেও বাংলাদেশের রিজার্ভ ৪ হাজার ৮০০ কোটি ডলার ছিল। ফলে পাকিস্তানে বিদেশি মুদ্রা সঙ্কট প্রকট হয়ে উঠেছে। সেই তুলনায় কিছুটা হলেও আমরা স্বস্তিতে আছি।

বাংলাদেশের অর্থনীতি আজ যথেষ্ট মজবুত। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নেতৃত্বে গোটা দেশের রপ্তানি আয় পাকিস্তানের চেয়ে ৬০ শতাংশ বেশি। মূল্যস্ফিতির হারও পাকিস্তানের তুলনায় অনেকটাই নিয়ন্ত্রিত। পাকিস্তানে মূল্যস্ফীতির হার এখন ২৭ শতাংশ ছাড়িয়ে গিয়েছে। বাংলাদেশে পৌনে ৯ শতাংশ। বাংলাদেশ সরকার মূল্যস্ফিতি রোধে নিয়মিত ব্যবস্থা নিচ্ছে। বিদেশি মুদ্রা খরচেও বিশেষ সাবধানী পদক্ষেপ নেওয়া হচ্ছে। মন্ত্রী-আমলাদের বিদেশ সফরে লাগাম টানা হয়েছে বহু আগেই। অযথা সরকারি অর্থ অপচয় বন্ধে বিশেষ নজরদারি চালাচ্ছে আওয়ামী লীগ সরকার। তারই হাত ধরে উন্নয়ন প্রক্রিয়া অব্যহত।

বাংলাদেশের এই উন্নতি অবশ্য সহজে হয়নি। নয় মাস রক্তক্ষয়ী যুদ্ধের পর স্বাধীনতা অর্জিত হলেও দেশের আর্থিক অবস্থা ছিল খুবই খারাপ। পাকিস্তান আমলে কোনও উন্নতিই হয়নি। ফলে জাতীয় আয় প্রায় তলানিতে এসে ঠেকেছিল। ১৯৭২-৭৩ অর্থবছরে বাংলাদেশে গড় মাথাপিছু আয় ছিল বছরে মাত্র ৫৮০ টাকা। সেই সময় মার্কিন ডলারে হিসাব করলে জাতীয় আয় ছিল মাত্র ৯৪ ডলার। এখন বাংলাদেশের মাথাপিছু জাতীয় আয় দাঁড়িয়েছে ২ হাজার ৭৯৩ মার্কিন ডলার। বিপরীতে পাকিস্তানের মাথাপিছু জাতীয় ১ হাজার ৫৪৩ ডলার। মানুষের আয় রাতারাতি বাড়ানো সম্ভব নয়। বাংলাদেশে অবশ্য সময়টা একটু বেশিই লেগেছে। রাজনৈতিক অস্থিরতাই এরজন্য দায়ী। মাথাপিছু জাতীয় আয় ৫০০ ডলার ছাড়াতেই লেগে যায় ৩১ বছর। ২০০৩-০৪ অর্থবছরে মাথাপিছু আয় ছিল ৫১০ ডলার। ২০১২-১৩ অর্থবছরে মাথাপিছু গড় আয় দাঁড়ায় ১ হাজার ৫৪ ডলার। কিন্তু তার পরবর্তীতে দ্রুতগতিতে বাড়তে থাকে মাথাপিছু জাতীয় আয়। আওয়ামী লীগ সরকারের বিভিন্ন উন্নয়নমূলক কর্মসূচির হাত ধরে দ্রুত গতিতে এগিয়ে চলেছে বাংলাদেশ। আর উল্টোদিকে, রাজনৈতিক ও সামরিক অস্থিরতায় দিন দিন পিছিয়ে পড়ছে পাকিস্তানের অর্থনীতি।

অর্থনীতির প্রায় সব সূচকেই পাকিস্তানের থেকে এগিয়ে বাংলাদেশ। স্বাধীনতার ৫০ বছরেই ইসলামাবাদের ‘বোঝা’আজ তাদের টেক্কা দিচ্ছে। বাংলাদেশে মোট দেশীয় উতপাদন বা জিডিপির বহর হচ্ছে ৪৬০ বিলিয়ন মার্কিন ডলার। সেখানে পাকিস্তানের জিডিপি মাত্র ৩৪৮ মার্কিন ডলার। বছরে জাতীয় গড় আয় আগেই উল্লেখ করা হয়েছে, পাকিস্তান ১ হাজার ৫৪৩ এবং বাংলাদেশে ২ হাজার ৭৯৩ মার্কিন ডলার। রপ্তানি থেকে বাংলাদেশের আয় ৫ হাজার ২০৮ কোটি মার্কিন ডলার। পাকিস্তানের সেখানে আয় মাত্র ৩ হাজার ২৫০ মার্কিন ডলার। বাংলাদেশে ডলারের দাম ১০৫ টাকা হলেও পাকিস্তানে প্রতি ডলারের দাম ২৫৯ রুপি। অর্থাৎ বাংলাদেশের থেকে পাকিস্তানের মুদ্রার দাম অনেক কম। অর্থনৈতিক সূচকের হাত ধরে পাকিস্তানের সামাজিক সূচকেও অনেক ঘাটতি চোখে পড়ে। বাংলাদেশে সাক্ষরতার হার ৭৫ দশমিক ২ শতাংশ হলেও পাকিস্তান পড়ে রয়েছে ৫৮ শতাংশে। পাকিস্তানের ৬৭ দশমিক ৮ বছর গড় আয়ুর বিপরীতে বাংলাদেশের গড় আয়ু দাঁড়িয়েছে ৭২ দশমিক ৮ বছর। সবচেয়ে বড় কথা, বাংলাদেশে মুল্যস্ফিতির হার ৮ দশমিক ৭৯ শতাংশের বিপরীতে পাকিস্তানের ২৭ শতাংশ। দু-মুঠো ভাতের জন্য সেখানে মানুষ হাহাকার করছেন।

বাংলাদেশের তুলনায় শিক্ষা, স্বাস্থ্য, কৃষি থেকে শুরু করে বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ ক্ষেত্রে দিন দিন পিছিয়ে চলেছে পাকিস্তান। গণতান্ত্রিক পরিকাঠামোকে আগলে ধরে বাংলাদেশ দ্রুতগতিতে এগিয়ে চলছে, আর পাকিস্তান পিছিয়ে পড়ছে সর্বক্ষেত্রেই। এটা ভালোই বুঝতে পারছেন পাকিস্তানি প্রধানমন্ত্রী শাহবাজ শরিফ। কিন্তু পাকিস্তানি সেনাবাহিনীর হাতের পুতুল সরকার নিয়ে আপাদমস্তক দুর্নীতিগ্রস্থ সরকারের প্রধান হিসাবে তাঁর কিছুই করার নেই। বরং অতিরিক্ত চীন-নির্ভরতা দেশটিকে আরও পিছিয়ে নিয়ে যাচ্ছে। উল্টোদিকে বাংলাদেশ শেখ হাসিনার নেতৃত্বে এগিয়ে চলেছে সোনালি ভবিষ্যতের দিকে। সেটাই শাহবাজ শরিফের জন্য লজ্জার। কারণ একাত্তরে গণহত্যার মাধ্যমে বাঙালি জাতিকেই শেষ করতে চেয়েছিলেন তারা। এখন তারা নিজেরাই ধুঁকছেন।

লেখক: সিয়াম সারোয়ার জামিল, সাংবাদিক


সর্বশেষ - জাতীয় সংবাদ