1. অন্যরকম
  2. অপরাধ বার্তা
  3. অভিমত
  4. আন্তর্জাতিক সংবাদ
  5. ইতিহাস
  6. এডিটরস' পিক
  7. খেলাধুলা
  8. জাতীয় সংবাদ
  9. টেকসই উন্নয়ন
  10. তথ্য প্রযুক্তি
  11. নির্বাচন বার্তা
  12. প্রতিবেদন
  13. প্রবাস বার্তা
  14. ফিচার
  15. বাণিজ্য ও অর্থনীতি

সংকট মোকাবিলায় দুর্বার শেখ হাসিনা

মোহাম্মদ নাজবত আলী : ইবার্তা টুয়েন্টিফোর ডটকম
শুক্রবার, ২১ জুলাই, ২০২৩

১৯৭১ সালে এক রক্তক্ষয়ী মহান মুক্তিযুদ্ধের মধ্য দিয়ে বাংলাদেশ স্বাধীনতা অর্জন করে। বাহাত্তর সালের ৪ নভেম্বর একটি প্রগতিশীল, উন্নত, অসাম্প্রদায়িক, সমতাভিত্তিক উন্নয়ন সর্বোপরি একটি গণতান্ত্রিক সংবিধান কার্যকর হয়। সেই সংবিধানের আলোকে ১৯৭৩ সালে সদ্য স্বাধীন রাষ্ট্রে ১ম জাতীয় সংসদ নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয়। সেই হিসাবে বর্তমান সংসদ ইতোমধ্যে ৫০ বছর অতিক্রম করছে। জাতীয় সংসদের ৫০ বছর পূর্তিতে প্রধানমন্ত্রী একটি রাষ্ট্রের কঠোর সমালোচনা করেন।

প্রধানমন্ত্রী টানা তিন মেয়াদে রাষ্ট্রের প্রধানমন্ত্রী হিসেবে দায়িত্ব পালন করছেন। দীর্ঘ মেয়াদে দেশ শাসনে তার যে, ত্রুটি বিচ্যুতি নেই এমনটি বলা যাবে না। তবে তিনি অনেক ক্ষেত্রেই সফল। যেসব ক্ষেত্রে সাধারণ জনগণের সমালোচনার সম্মুখীন হয়েছেন তার মধ্যে অন্যতম হচ্ছে দ্রব্যমূল্য, দুর্নীতি, কৃষি উপকরণের মূল্যবৃদ্ধি বিশেষ করে সম্প্রতি সারের মূল্যবৃদ্ধি। টানা চৌদ্দ বছরে অধিকাংশ সময় দ্রব্যমূল্য ঊর্ধ্বগতি, দুর্নীতি এ বিষয়গুলো নিয়ে রাজনৈতিক অঙ্গনে ব্যাপক আলোচনা, সমালোচনা হয়েছে। কখনো চাল, চিনি, ডাল, আবার কখনো ভোজ্যতেলসহ নিত্যপণ্যের অসহনীয় মূল্যবৃদ্ধিতে জনগণের নাভিশ্বাস উঠেছে। আবার কখনো সার। এ দেশের জনগণ রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধের প্রভাব, আন্তর্জাতিক বাজার নিয়ে মাথাব্যথা নেই। মাথাব্যথা নেই ডলারের মূল্যবৃদ্ধি, গ্যাস ও জ্বালানি তেলের সংকট, মূল্যস্ফীতি নিয়েও। তারা শুধু চায় দৈনন্দিন জীবনযাপনে নিত্যপণ্যসহ প্রয়োজনীয় দ্রব্যাদির মূল্য যেন তাদের ক্রয়ক্ষমতার মধ্যে থাকে। প্রতি কেজি সারের দাম ৫ টাকা বাড়ানো হলো কেন এসব প্রশ্নের যৌক্তিক উত্তর তাদের জানা নেই। আওয়ামী লীগ দেশের জন্য অনেক ভালো কাজ করেছে, তাদের সাফল্যের অনেক গল্প রয়েছে- যা দৃশ্যমান। কিন্তু অপ্রিয় হলেও সত্য যে, ভালো কাজ ও সরকারের সাফল্যগুলো জনগণের সামনে তুলে ধরতে দলীয় নেতকর্মীরা ততটা আগ্রহী নয়। অধিকাংশ নেতাকর্মীই নিজেদের নিয়ে ব্যস্ত। এ ব্যর্থতার মাঝেও জনগণের খবর নিতে হয় এটাই রাজনীতি। কারণ, রাজনীতি তো জনগণকেই নিয়ে। জনগণের কল্যাণের জন্যই তো রাজনীতি। এ কারণেই তৃতীয় বিশ্বের আধুনিক রাষ্ট্রগুলো জনকল্যাণকর। শুধু অবকাঠামোর উন্নয়নই নয়, এর সঙ্গে জনগণের জীবনমান, আয়ের সঙ্গতিও দেখতে হয়। কিন্তু বর্তমান আয়ের চেয়ে ব্যয় বেড়েছে। জনগণ খুব যে, শান্তি, সস্তিতে রয়েছে এমনটি বলা যায় কিনা তা দ্রব্যমূল্যের ঊর্ধ্বগতি, জ্বালানি সংকট, বৈদেশিক মুদ্রাসহ নানাবিধ কারণে অর্থনীতির এক নাজুক অবস্থা তৈরি হয়েছে। রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধের প্রভাব আরও এ সমস্যাকে আরও জটিল করে তুলেছে।

একাত্তরের মহান মুক্তিযুদ্ধের মাধ্যমে বাংলাদেশ এখন বিভিন্ন সমস্যা ও সংকটের মধ্য দিয়ে হলেও এগিয়ে যাচ্ছে এ কথা অস্বীকার করা যাবে না। আগামী নির্বাচনকে কেন্দ্র করে বাংলাদেশকে অস্থিতিশীল করে তোলার ষড়যন্ত্রও থেমে নেই। বিভিন্ন রাজনৈতিক দলগুলোর মধ্যে চলছে ক্ষমতা দখলের লড়াই। আবার ধর্মকে ব্যবহার করে চলছে বিভিন্ন ধর্মভিত্তিক রাজনৈতিক দলের অশুভ তৎপরতা ও গুজব। দেশে আগামী জাতীয় সংসদ নির্বাচন নিয়েও এক ধরনের সংকট তৈরি হয়েছে। এ সংকটের সমাধান এখনো হয়নি। আগামী জাতীয় নির্বাচন কোন পদ্ধতিতে বা কার অধীনে হবে তা নিয়ে রাজনৈতিক অঙ্গনে চলছে নানা আলাপ-আলোচনা। বিএনপিসহ সমমনা রাজনৈতিক দলগুলো নিরপেক্ষ তত্ত্বাবধায়ক সরকারের অধীনে নির্বাচনের দাবিতে তারা অনড়। ইতোমধ্যে তারা আন্দোলন সংগ্রামের নানা কৌশলও আঁকছে। অন্যদিকে, শাসকদল স্পষ্টভাবে তারা বলেই দিচ্ছেন, সংবিধান মোতাবেক নির্বাচন হবে। সংবিধানের বাহিরে যাওয়ার কোনো সুযোগ নেই বলে বিভিন্ন রাজনৈতিক কর্মসূচি পালন করছে। একদল তত্ত্বাবধায়ক সরকারে পক্ষে আরেক দল বিপক্ষে অর্থাৎ উভয়দল তাদের নিজ নিজ অস্থানে অনড় থাকার কারণে আমাদের সংকট যে, আরও ঘনীভূত হবে এতে কোনো সন্দেহ নেই।

বিগত ২০০৮ সালের নির্বাচনে বিজয়ের পর প্রধানমন্ত্রী প্রতিটি ক্ষেত্রে শক্ত অবস্থানে থেকেছেন। একজন নিষ্ঠাবান রাজনৈতিক নেতা হিসেবে তার রাজনৈতিক প্রজ্ঞা, দূরদর্শিতা, কঠিন সময়ে সঠিক সিদ্ধান্ত গ্রহণে মৃতু্য ভয়হীন একজন সাহসী প্রধানমন্ত্রী হিসেবে বিশ্ব রাজনীতিতে পরিচিতি অর্জন করেছেন। দেশ ও জনগণের স্বার্থে বিশ্বের প্রভাবশালী ও শক্তিধর রাষ্ট্রের সমালোচনা করতেও তিনি কণ্ঠিত হননি। সম্প্রতি আমাদের জাতীয় সংসদের ৫০ বছর পূর্তিতে তিনি গুরুত্বপূর্ণ ও সাহসী বক্তব্য প্রদান করেন। বিশেষ করে যুক্তরাষ্ট্রের তিনি কঠিন সমালোচনা করেন। আগেও তিনি যুক্তরাষ্ট্রের সমালোচনা করেছেন। সাম্প্রতিককালে যুক্তরাষ্ট্র র‍্যাবের কয়েকজন কর্মকর্তার কর্মকান্ডের ওপর নিষেধাজ্ঞা আরোপ করলে তিনি উল্টো আমেরিকার মানবাধিকার পরিস্থিতি ও গণতন্ত্র নিয়ে প্রশ্ন তোলেন। বর্তমান বিশ্বের সবচেয়ে শক্তিধর রাষ্ট্র আমেরিকা। বাংলাদেশের মতো একটি উন্নয়নশীল রাষ্ট্রের প্রধানমন্ত্রী হিসেবে যুক্তরাষ্ট্রের সমালোচনা করে তিনি সাহসিকতার পরিচয় দিয়েছেন। এতে তিনি বাহবা বা ধন্যবাদ পেতে পারেন। কিন্তু বেশি দুঃসাহস দেখানো কী ঠিক? আগেই উলেস্নখ করা হয়েছে, তার দেশপ্রেম, সততা ও সাহস রয়েছে।

একজন নেতা সৎ, সাহসী, নির্লোভ না হলে আকেরিকার মতো রাষ্ট্রের সমালোচনা করতে পারেন না। কিন্তু বক্তব্যের এমন এক অংশে যা বলেছেন- তা আবার তার সংশয় প্রকাশ পায়। তিনি বলেছেন, ‘যুক্তরাষ্ট্র চাইলে যে কোনো ক্ষমতা উল্টাতে-পাল্টাতে পারেন। গণতন্ত্রকে বাদ দিয়ে তারা এমন এক সরকার আনতে চাচ্ছে, যেখানে গণতন্ত্রের কোনো অস্তিত্ব থাকবে না।’ তার এ বক্তব্য বিশ্লেষণ করলে কয়েকটি বিষয় দেখা যায়। এক, তিনি স্বীকার করেন যুক্তরাষ্ট্র চাইলে যে কোনো দেশের রাষ্ট্র ক্ষমতা পরিবর্তন হতে পারে। অতীতে তিনি এ ধরনের কথা বলেছিলেন জাতীয় নির্বাচনে পরাজয়ের পর। তিনি সে সময় যুক্তরাষ্ট্রকে উদ্দেশ্য করে বলেছিলেন, এক দেশকে গ্যাস দিতে রাজি না হওয়ায় তার দলের হার হয়েছে। তাহলে কি আমরা ধরে নিতে পারি যে, যুক্তরাষ্ট্রের ইচ্ছা অনিচ্ছায় রাষ্ট্র ক্ষমতা পরিবর্তন হয়। তাহলে সরকার পরিবর্তনে জনগণের ভোটের কি দরকার? তত্ত্বাবধায়ক সরকারের আমলে নির্বাচনগুলো যুক্ত রাষ্ট্রের ইচ্ছায় সরকার পরিবর্তনের নিয়ামক হিসেবে কাজ করেছে। আওয়ামী লীগ-বিএনপি উভয় দলই ক্ষমতায় এসেছে যুক্তরাষ্ট্রের ইচ্ছায়। এক্ষেত্রে জনগণের ভোট নামকাওয়াস্তে। অথচ যে গণতন্ত্র ও ভোটের জন্য এত লড়াই সংগ্রাম হয়েছে আমদের দেশে।

যুক্তরাষ্ট্রের ইচ্ছা অনিচ্ছায় যদি সবকিছু হয় তাহলে চৌদ্দ বছরে দেশের অগ্রগতি উন্নয়ন প্রধানমন্ত্রীর জনপ্রিয়তার কোনো মূল্যায়ন হবে না। তিনি বলেছেন, যুক্তরাষ্ট্র গণতন্ত্রকে বাদ দিয়ে এমন একটা সরকার আনতে চাচ্ছে যেখানে গণতন্ত্রের কোনো অস্তিত্ব থাকবে না। এটা কিসের ইঙ্গিত বহন করে। গণতন্ত্রের অস্তিত্ব থাকে না সেনাশাসনে। অথচ তার দলের শীর্ষ পর্যায়ের নেতারা বারবার বলে আসছেন, এ দেশে আর কোনো দিন সেনাশাসন আসবে না। আমাদের অনেক দুর্বলতা রয়েছে, সংকট রয়েছে, গণতন্ত্র, ভোট, বিনাভোটে জনপ্রতিনিধি নির্বাচনের বদনাম থাকতে পারে। আমরা এখনো গণতন্ত্রকে প্রাতিষ্ঠানিক রূপ দিতে পারিনি। ভোটে ভোটারের উপস্থিতি বাড়াতে পারিনি। ভোটের প্রতি জনগণের আগ্রহ কমে গেছে। তবুও যে গণতন্ত্র রয়েছে তাতে দেশের অগ্রগতি ও উন্নয়ন হচ্ছে। এটা অনেকটা নাই মামার চেয়ে কানা মামা ভালো। আগামী নির্বাচনের আগে প্রধানমন্ত্রীর এ ধরনের ইঙ্গিত বা সংশয় দেশের জন্য শুভ নয়।

প্রধানমন্ত্রীর দীর্ঘ রাজনৈতিক তিক্ত অভিজ্ঞতা রয়েছে। তাই তিনি কাউকে ছেড়ে কথা বলেন না। এটা হতে পারে তার স্বভাবসুলভ বৈশিষ্ট। ১৫ ও ২১ আগস্ট হামলায় যারা জড়িত তাদের বিচার করতে তিনি কণ্ঠিত হননি। এ দুটি ঘটনা দেশের ইতিহাসে অত্যন্ত ভয়াবহ ও একই সঙ্গে নৃশংস বর্বরতা। মানবতাবিরোধী অপরাধের মধ্যেও পড়ে। ১৫ আগস্টের ঘটনা দেশে এক কলঙ্কজনক অধ্যায়ের সূচনা করে। ১৫ ও ২১ আগস্ট একই সূত্রে গাঁথা। আওয়ামী লীগকে নেতৃত্বশূন্য করা। সে সব ঘাতকদের বিচারের মুখোমুখি দাঁড় করিয়েছে। দেশে অনেক জাতীয় পত্রিকা রয়েছে। সবই যে, সরকারের সমর্থক হবে তা ভাবার অবকাশ নেই। বাংলাদেশের বহুল প্রচারিত ও প্রকাশিত একটি জাতীয় দৈনিক প্রথম আলো। আমরা মনে করি, গণতন্ত্রে সবার কথা বলার যেমন অধিকার, স্বাধীনতা রয়েছে তেমনি স্বাধীনতা মানে স্বেচ্ছাচারিতা নয়, এ বিষয়টিও মনে রাখা দরকার। এমন কোনো কথা বলা বা সংবাদ পরিবেশন করা ঠিক হবে না যাতে সরকারের ভাবমূর্তি ক্ষুণ্ন হয়। আগামী নির্বাচনকে সামনে রেখে সরকারের উচিত হবে আগবাড়িয়ে কিছু না বলা। সব দলের মধ্যেই চাটুকারিতার কোনো অভাব নেই। আর আওয়ামী লীগ দীর্ঘ চৌদ্দ বছর ক্ষমতায় থাকায় দলের মধ্যে চাটুকার বেড়েছে। ত্যাগী নেতাদের মূল্যায়ন নেই বললেই চলে। এসব চাটুকারের কথায় কান না দেয়ায় ভালো।

প্রধানমন্ত্রী আগামী নির্বাচন ও যুক্তরাষ্ট্রের ইচ্ছা অনিচ্ছা নিয়ে যে বক্তব্য দিয়েছেন এবং তাতে যে, সংশয় ও সংকট তৈরি হওয়ার আশঙ্কা রয়েছে এতে কি তিনি চাপে রয়েছেন? তারা কোনো হস্তক্ষেপ করবে না। তবে আমরা আশা করব, সীমিত গণতন্ত্র হলেও সেই গণতন্ত্রের যাত্রা অব্যাহত রাখতে এবং সংকট মোকাবিলায় তিনি সফল হবেন এমনটিই আশা করা যায়।

লেখক: মোহাম্মদ নাজবত আলী – শিক্ষক ও কলাম লেখক।


সর্বশেষ - জাতীয় সংবাদ