1. অন্যরকম
  2. অপরাধ বার্তা
  3. অভিমত
  4. আন্তর্জাতিক সংবাদ
  5. ইতিহাস
  6. এডিটরস' পিক
  7. খেলাধুলা
  8. জাতীয় সংবাদ
  9. টেকসই উন্নয়ন
  10. তথ্য প্রযুক্তি
  11. নির্বাচন বার্তা
  12. প্রতিবেদন
  13. প্রবাস বার্তা
  14. ফিচার
  15. বাণিজ্য ও অর্থনীতি

প্রবাসীদের জন্য সরকারের ‘ওয়েজ আর্নার্স কল্যাণ বোর্ড’

আরিফুল ইসলাম : ইবার্তা টুয়েন্টিফোর ডটকম
রবিবার, ১৮ জুন, ২০২৩

১৯৭৬ সাল। বাংলাদেশ থেকে জনশক্তি রপ্তানি শুরুর বছর। তারপর থেকে পেছনে ফিরে তাকাতে হয়নি দক্ষিণ এশিয়ার ‘ইকোনোমিক টাইগার’ খ্যাত বিশাল জনসম্পদের এ দেশটিকে। সবুজে কভারে মোড়া পাসপোর্টধারীরা ছড়িয়ে পড়ে বিশ্বের ১৭৬টি দেশে। প্রায় ১ কোটিরও বেশি প্রবাসী মাথার ঘাম পায়ে ফেলে দারিদ্র্য বিমোচন, মানুষের জীবনমান উন্নয়ন এবং দেশের অর্থনীতির চাকা ঈর্ষণীয়ভাবে সচল রাখতে ভূমিকা এককথায় অসাধারণ।

বিশ্বব্যাংকের তথ্যমতে, রেমিট্যান্স আয়ের প্রায় ৬৩ শতাংশ ব্যয় হয় দৈনন্দিন খরচের খাতে। রেমিট্যান্স পাওয়ার পরে একটি পরিবারের আয় আগের তুলনায় ৮২ শতাংশ বাড়ে। তাছাড়া প্রবাসীদের পরিবারের সদস্যদের অধিকাংশ গ্রামে বসবাস করেন। প্রবাসীদের পাঠানো রেমিট্যান্সের মাধ্যমে গ্রামীণ জনগোষ্ঠীর আয় ও সঞ্চয় বেড়ে যায়। এতে গ্রামীণ অর্থনীতিতে গতি আসে।

প্রবাসী কর্মীদের এ অবদানের বিষয়টি বিবেচনা করে তৎকালীন সরকার ইমিগ্র্যাশন অর্ডিন্যাস-১৯৮২-এর ১৯(১) ধারার ক্ষমতাবলে ১৯৯০ সালে ‘ওয়েজ আর্নার্স কল্যাণ তহবিল’ গঠন করে। ফলে ‘ওয়েজ আর্নার্স কল্যাণ বোর্ড আইন, ২০১৮’ এর মাধ্যমে ‘ওয়েজ আর্নার্স কল্যাণ বোর্ড’ একটি সংবিধিবদ্ধ সংস্থা হিসেবে প্রতিষ্ঠা লাভ করে।

এখন প্রশ্ন হচ্ছে, প্রবাসীরা দেশের অর্থনীতির চাকা ক্রমবর্ধমান সচল রাখছে, দেশ তাদের কী দিচ্ছে? এর উত্তরে ওয়েজ আর্নার্স কল্যাণ বোর্ডের ওয়েবসাইটে দেওয়া তথ্য নিচে দেওয়া হলো।

ওয়েজ আর্নার্স কল্যাণ বোর্ডের সদস্য পদ গ্রহণকারী প্রবাসীরা তাদের মেধাবী সন্তানদের জন্য প্রতিবছর বোর্ড থেকে শিক্ষাবৃত্তি পাচ্ছেন।
প্রবাসীদের সন্তানরা বাংলাদেশের বিভিন্ন শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে প্রবাসী কোটায় ভর্তির সুযোগ পাচ্ছেন।
প্রবাসে মৃত্যু হলে মরদেহ দেশে পৌঁছানোর জন্য প্রয়োজনীয় সহযোগিতা পাচ্ছেন।

মরদেহ স্বজনদের কাছে হস্তান্তরের সময় বিমানবন্দরে মরদেহ পরিবহন ও দাফন খরচ বাবদ ৩৫ হাজার টাকা আর্থিক সাহায্য পাচ্ছেন।
প্রবাসে মৃত্যু হলে মৃত কর্মীর নমিনি বা পরিবারকে তিন লাখ টাকা আর্থিক অনুদান, পুনর্বাসন ঋণসহ আরও কিছু সুযোগ-সুবিধা পাচ্ছেন।

এ ছাড়া প্রবাসী কর্মী এবং তাদের পরিবারের সুরক্ষা ও মানসম্পন্ন সেবা দেওয়া, তাদের আস্থা অর্জন, কর্মীদের মরদেহ দেশে আনা, ব্যয় নির্বাহ এবং এ সংক্রান্ত কাজের জবাবদিহিতা নিশ্চিত করতে ২০১৮ সালের ৯ জুলাই ‘ওয়েজ আর্নার্স কল্যাণ বোর্ড বিল ২০১৮’ আইন পাস করা হয়।

ওয়েজ আর্নার্স কল্যাণ বোর্ডের ওয়েবসাইট থেকে জানা যায়, ২০১০ থেকে ২০২৩ পর্যন্ত মোট ১ হাজার ৫১০ জন আহত ও অসুস্থ প্রবাসীকে দেশে ফেরত আনা ও চিকিৎসার জন্য আর্থিক সহায়তা দেওয়া হয়েছে ১৪ কোটি ৪০ লাখ টাকা। ১৯৭৭ থেকে ২০২৩ পর্যন্ত মোট ২২ হাজার ২৯০ জন প্রবাসীদের মৃত্যু জনিত ক্ষতিপূরণ, বীমা সার্ভিস বেনিফিটি ইত্যাদি বাবদ টাকা বিতরণ করা হয়েছে ৮৪ কোটি ১৫ লাখ টাকা। ২০২১-২০২২ পর্যন্ত প্রবাসীর মোট ৭৩০ জন বিশেষ সন্তানদের ভাতা দেওয়া হয়েছে ৮ কোটি ৭ লাখ টাকা।

১৯৯৬ থেকে ২০২৩ পর্যন্ত মোট ৪৮ হাজার ৩১১ জন মৃত প্রবাসীকর্মীর পরিবারকে ৩ লাখ টাকা করে আর্থিক অনুদান দেওয়া হয়েছে মোট ১৩১ কোটি ১৩ লাখ টাকা। এ ছাড়া ১৯৯৩ থেকে ২০২৩ পর্যন্ত মোট ৪৭ হাজার ৮০২ জন মৃত কর্মীকে প্রবাসে পরিবহন ও দাফন খরচ বাবদ ৩৫ হাজার টাকার চেক বিতরণ করা হয়েছে ১৫১৯.৯৩ মিলিয়ন টাকা। এরই মধ্যে ২০১২ থেকে ২০২৩ পর্যন্ত মোট ২৩ হাজার ৮৪৭ জন প্রবাসী সন্তানদের শিক্ষাবৃত্তি দেওয়া হয়েছে ৩৯৮.৪৪ মিলিয়ন টাকা। এদিক বিবেচনা করে এ কথা বলা যায়, ওয়েজ আর্নার্স কল্যাণ বোর্ড দিনে দিনে প্রবাসী ‘সুরক্ষা কেন্দ্র’ হয়ে উঠছে।

তবে এখন পর্যন্ত ওয়েজ আর্নার্স কল্যাণ বোর্ডের সদস্য হওয়া এবং এ বোর্ডের প্রয়োজনীয়তা সম্পর্কে অধিকাংশ প্রবাসীর ধারণা স্পষ্ট নয়। ধারণা নেই মালয়েশিয়ান সরকারের দেওয়া পার্কেসও’র আওতায় সুরক্ষা (বীমা) প্রদানের বিষয়টিও।

তথ্য ঘাটতি কাটিয়ে উঠতে হবে

২০১৫ সাল থেকে পড়াশোনার সূত্রে মালয়েশিয়ায় কর্মরত থাকলেও সরকারের আওতায় চমৎকার এ বিষয়টি আমার নিজেরও জানা ছিল না। বিষয়টি আমার নজরে আসে ২০১৯ সালের ফেব্রুয়ারির শেষের দিকে। আমি তখন ‘বাংলাদেশ প্রেসক্লাব অব মালয়েশিয়া’র তথ্য ও গবেষণা সম্পাদক, ওই বছরের ২৫ মার্চ দূতাবাসে সদস্য অন্তর্ভুক্তির উদ্বোধন করেন তৎকালীণ প্রবাসী কল্যাণ মন্ত্রী নূরুল ইসলাম। সেদিন চারজন মালয়েশিয়া প্রবাসী সর্ব প্রথম সরাসরি মন্ত্রীর হাতে তুলে দেন তাদের অন্তর্ভুক্তি আবেদন। এরপর থেকেই যেন খেই হারিয়ে যায় প্রবাসীদের ‘সুরক্ষা কেন্দ্রের’ বিষয়টি।

যদিও দূতাবাস প্রচারণা করেছে বেশ এবং বর্তমানে তা অব্যাহত আছে। কিন্তু ঘাটতি যেন কোথাও একটা থেকেই গেছে। তা না হলে মালয়েশিয়া থেকে সদস্যভুক্তির হার তুলনামূলক কম হওয়ার যুক্তিই খুঁজে পাই না। কারণ হিসেবে জানা গেছে, অধিকাংশ প্রবাসী স্বল্প শিক্ষিত হওয়ায় এবং অনেকে জানেন না কীভাবে এ বোর্ডের সদস্য হতে হয়। এ ছাড়া রয়েছে সরকারের তথ্যের ঘাটতি।

প্রয়োজন কার্যকরী উদ্যোগ

সরকার দেশকে এগিয়ে নিতে সব কিছুতেই ‘ডিজিটাল’ বলে দাবি করে। কিন্তু এই এক কোটিরও বেশি প্রবাসীর কত শতাংশ ওয়েজ আর্নার্স কল্যাণ বোর্ডের সদস্য, তার সঠিক হিসাব স্বয়ং প্রবাসীকল্যাণ ও বৈদেশিক কর্মসংস্থান মন্ত্রণালয়সহ সরকারের বিভিন্ন ওয়েবসাইটগুলো থেকে পাওয়া যায় না।

তাছাড়া মালয়েশিয়ায় বর্তমান প্রায় সাড়ে ৫ লাখ প্রবাসী বাংলাদেশি বৈধ হলেও কল্যাণ বোর্ডের সদস্য হতে তেমন সাড়া না পাওয়ার পেছনে অনলাইনে ফরম পূরণ করাকে অধিকাংশই জটিল ও ঝামেলা মনে করে। নানা ধরনের তথ্য, কোম্পানির তথ্য ইত্যাদি প্রদানে তাদের রয়েছে সংকোচ, দ্বীধা ও রাজনৈতিক ভীতি। এসব কাটিয়ে ওঠার জন্য বাংলাদেশ দূতাবাসের আরও কার্যকর ভূমিকা রাখা উচিত বলে মনে করছেন কমিউনিটির অনেকে।

মালয়েশিয়া প্রবাসী কমিউনিটি নেতা ও মালয়েশিয়া আওয়ামী লীগের আহ্বায়ক কমিটির যুগ্ম আহ্বায়ক রাশেদ বাদল বলেন, ‘প্রবাসীদের কল্যাণে বৰ্তমান সরকার যে আন্তরিক, ওয়েজ আর্নার্স কল্যাণ বোর্ডের সদস্য কার্যক্রম অন্যতম উদ্যোগ। বাংলাদেশ দূতাবাসের মাধ্যমে প্রবাসীদের জন্য বাংলাদেশ সরকারের এ কার্যক্রম ব্যাপকভাবে প্রচার করা হলে এবং এর অনলাইন প্রক্রিয়া আরও শর্ট ও সহজ করা হলে এর আবেদন আরও বাড়বে।’

এ বিষয়ে দূতাবাসের শ্রম শাখার প্রথম সচিব মো. হেদায়েতুল ইসলাম মণ্ডল বলেন, অনলাইনে ফরম পূরণকে জটিল মনে করলে দূতাবাসে আসার জন্য অনুরোধ করা হয়েছে। দূতাবাস সব সহযোগিতা প্রদান করছে। পাশাপাশি তিনি অন্যদের উদ্বুদ্ধ করতে এবং প্রয়োজনীয় সহযোগিতা দিয়ে প্রবাসীদের পাশে নিঃস্বার্থভাবে এগিয়ে আসার জন্য কমিউনিটিকে অনুরোধ জানান।

তাছাড়া প্রবাসী সুরক্ষার্থে এর আইনে রয়েছে, বিদেশে কর্মরত অভিবাসী কর্মী নির্যাতনের শিকার, দুর্ঘটনায় আহত, অসুস্থতা বা অন্য কোনো কারণে বিপদগ্রস্ত হলে তাকে উদ্ধার ও দেশে আনা, আইনগত ও চিকিৎসা সহায়তা দেওয়া, ক্ষতিপূরণ আদায়ের উদ্দেশে দেশে-বিদেশে হেল্প ডেস্ক ও সেফ হোম পরিচালনা করবে সংশ্লিট বোর্ড।

প্রবাসী বাংলাদেশিদেরকে ‘ওয়েজ আর্নার্স কল্যাণ বোর্ড’ এর সদস্যপদের জন্য ওয়েজ আর্নার্স কল্যাণ বোর্ডের ওয়েবসাইটে গিয়ে আবেদন ফরম পূরণ করে, ১৯০ রিংগিত ব্যাংক ড্রাফটসহ প্রয়োজনীয় কাগজপত্র বাংলাদেশ দূতাবাসে জমা প্রদান করতে হয়।

কাগজপত্রের মধ্যে রয়েছে, পাসপোর্ট ও ভিসার কপি এবং ২ কপি ছবি। আবেদন জমা দেওয়ার পর প্রয়োজনীয় যাচাই ও প্রক্রিয়া শেষে দূতাবাস ওয়েজ আর্নার্স কল্যাণ বোর্ডকে জানিয়ে দেয় আপনি এখন ওয়েজ আর্নার্স কল্যাণ বোর্ড বোর্ডের একজন সদস্য। এরপর কল্যাণ বোর্ড সদস্য সনদ প্রদান করে।

লেখক : আরিফুল ইসলাম – প্রবাসী সাংবাদিক, মালয়েশিয়া


সর্বশেষ - জাতীয় সংবাদ