1. অন্যরকম
  2. অপরাধ বার্তা
  3. অভিমত
  4. আন্তর্জাতিক সংবাদ
  5. ইতিহাস
  6. এডিটরস' পিক
  7. খেলাধুলা
  8. জাতীয় সংবাদ
  9. টেকসই উন্নয়ন
  10. তথ্য প্রযুক্তি
  11. নির্বাচন বার্তা
  12. প্রতিবেদন
  13. প্রবাস বার্তা
  14. ফিচার
  15. বাণিজ্য ও অর্থনীতি

টেকসই উন্নয়নের জন্যই সুশাসন

আলী হাবিব : ইবার্তা টুয়েন্টিফোর ডটকম
সোমবার, ১৯ জুন, ২০২৩

সংবাদপত্রের পাতা ওল্টানো মানেই মন খারাপ করা নেতিবাচক খবর নয়। ইতিবাচক অনেক খবর এখন আমাদের আশাবাদী করে তুলছে। বিশেষ করে সেই সংবাদটি যখন বাংলাদেশ নিয়ে পরিবেশিত হচ্ছে। আরেকটি জাতীয় সংসদ নির্বাচন দরজায় কড়া নাড়ছে।

নির্বাচন সামনে রেখে একটি প্রতিক্রিয়াশীল শক্তি আবার মাঠে নেমেছে। ঠিক এই সময়ে জঙ্গিবাদ সংক্রান্ত বিষয়াদি নিয়ে কাজ করে, অস্ট্রেলিয়ার এমন একটি প্রতিষ্ঠান, ‘ইনস্টিটিউট অব পিস অ্যান্ড জাস্টিস’ একটি ভালো খবর দিয়েছে। জঙ্গিবাদ ও উগ্রবাদের দিক থেকে বিভিন্ন দেশের তথ্য বিশ্লেষণ করে দেশগুলোকে পাঁচটি ক্যাটাগরি করে এই প্রতিষ্ঠানটি। ক্যাটাগরিগুলো হচ্ছে—ভেরি হাই রিস্ক, হাই রিস্ক, মিডিয়াম রিস্ক, রিস্ক ও লো রিস্ক ক্যাটাগরি।

তারা জানাচ্ছে, জঙ্গিবাদসংক্রান্ত ক্যাটাগরিতে বাংলাদেশের অবস্থান এখন ৪৩তম। বাংলাদেশ একটা সময় জঙ্গিবাদের বৈশ্বিক ইনডেক্সে হাই রিস্কের দেশ ছিল। হাই রিস্ক থেকে মিডিয়াম রিস্ক পেরিয়ে এ বছর লো রিস্ক ক্যাটাগরিতে জায়গা করে নিয়েছে বাংলাদেশ।

সাম্প্রতিক সময়ে আন্তর্জাতিক পরিসরে অর্থনৈতিক ক্ষেত্রে বাংলাদেশ নতুন পরিচয়ে পরিচিত হয়ে উঠেছে।

বৈশ্বিক বিভিন্ন সূচকে ঈর্ষণীয় অগ্রগতির কারণে বাংলাদেশকে বলা হচ্ছে উন্নয়নের রোল মডেল। বর্তমান বৈশ্বিক সংকটে বাংলাদেশে রাজনৈতিক স্থিতিশীলতা বজায় রেখে অর্থনৈতিক চ্যালেঞ্জ সামাল দেওয়া যে সহজ কোনো কাজ নয়, সেটা বুঝতে বড় গবেষক হওয়ার প্রয়োজন নেই।

২০২৩ সাল নিয়ে বিশ্বব্যাংকের সাম্প্রতিক বৈশ্বিক পূর্বাভাস প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, বিশ্ব প্রবৃদ্ধি শ্লথ হচ্ছে, রয়েছে বিপজ্জনকভাবে মন্দার কাছাকাছি। উচ্চ মূল্যস্ফীতি, সুদের হার বৃদ্ধি এবং ইউক্রেনে রাশিয়ার হামলার জেরে বিশ্বের জিডিপি প্রবৃদ্ধি কমবে। এর আগে আইএমএফ জানিয়েছিল, বিশ্বের এক-তৃতীয়াংশ দেশ এ বছর মন্দায় পড়বে।

অর্থাৎ গোটা বিশ্বব্যবস্থা একটি সংকটের মধ্যে পড়বে। ঠিক এই সময়ে এসে বিশ্বখ্যাত সংবাদ সংস্থা ব্লুমবার্গ বলছে, বিশ্বব্যাপী অর্থনৈতিক সংকটের মধ্যেও ‘সময়োচিত সংস্কার পদক্ষেপ’ গ্রহণের মাধ্যমে দেশের অর্থনৈতিক স্থিতিশীলতা বজায় রেখেছে বাংলাদেশ।

বাংলাদেশ পরিসংখ্যান ব্যুরোর ‘বাংলাদেশ স্যাম্পল ভাইটাল স্ট্যাটিসটিকস-২০২২’-এর প্রতিবেদনে উল্লেখ করা হয়েছে, ২০২২ সালে দেশের পুরুষের গড় আয়ু বেড়ে দাঁড়িয়েছে ৭০.৮ বছর, যা ২০২১ সালে ছিল ৭০.৬ বছর। ২০২১ সালে নারীদের গড় আয়ু ছিল ৭৪.১ বছর, ২০২২ সালে বেড়ে দাঁড়িয়েছে ৭৪.২ বছর। জরিপে আরো উল্লেখ করা হয়েছে, বর্তমানে বাংলাদেশের জনসংখ্যায় যুবকদের গড় হার ২৮ শতাংশ। এটা একটা ইতিবাচক দিক।

২০২৩-২৪ অর্থবছরের জন্য জাতীয় সংসদে অর্থমন্ত্রী যে বাজেট প্রস্তাব করেছেন, তাতে ৭.৫ শতাংশ প্রবৃদ্ধির লক্ষ্যমাত্রার কথা বলা হয়েছে। যদিও বিশ্বব্যাংক বাংলাদেশের জিডিপি প্রবৃদ্ধির পূর্বাভাস আগেরটিই অপরিবর্তিত রেখে বলেছে, নতুন অর্থবছর শেষে বাংলাদেশের মোট জিডিপি প্রবৃদ্ধি হবে ৬.২ শতাংশ। বিশ্বব্যাংক মনে করছে, সংস্কার কার্যক্রম বাস্তবায়ন, পরিবহন ও যোগাযোগ খাত এবং বিদ্যুৎ খাতের মেগাপ্রকল্পগুলো শেষ হওয়ার সুফল যোগ হলে নতুন অর্থবছরে বাংলাদেশের অর্থনীতি আগের চেয়ে গতিশীল হবে। এরই মধ্যে ‘হায়ার এডুকেশন এক্সিলারেশন অ্যান্ড ট্রান্সফরমেশন’ শীর্ষক একটি প্রকল্পের জন্য বাংলাদেশকে ১৯ কোটি ২০ লাখ ডলারের ঋণ সহায়তা দিচ্ছে বিশ্বব্যাংক। অন্যদিকে রাজস্ব আহরণ এবং সরকারি ব্যয়ের দক্ষতা বাড়ানোর মাধ্যমে অর্থনৈতিক পুনরুদ্ধারে সহযোগিতায় বাংলাদেশের জন্য ৪০ কোটি ডলার ঋণ অনুমোদন করেছে এশীয় উন্নয়ন ব্যাংক (এডিবি)।

গত ১৫ বছরে সরকার যেসব প্রকল্প বাস্তবায়ন করেছে, তাতে অর্থনৈতিক ক্ষেত্রে একের পর এক মাইলফলক রচিত হয়েছে। এক বছর আগে, গত বছর ২৫ জুন দেশের টাকায় নির্মিত পদ্মা সেতু উদ্বোধন করা হয়। যান চলাচল শুরু হওয়ার পর থেকে গত ৭ জুন পর্যন্ত এই সেতুতে ৭৫৮ কোটি আট লাখ ৭৫০ টাকা টোল আদায় হয়েছে। ঢাকার বুকে চলছে মেট্রো রেল। ওদিকে কর্ণফুলী টানেলও প্রায় প্রস্তুত। গত বছর উদ্বোধন করা হয় ১০০ সেতু এবং ১০০ সড়ক। চলছে এলিভেটেড এক্সপ্রেসওয়ের কাজ। অনেকেই বলেন, ২০২২ আক্ষরিক অর্থেই ছিল অবকাঠামো উন্নয়নের বছর। ওদিকে নির্মীয়মাণ বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান টানেল কর্ণফুলী নদীর দুই পারকে সংযুক্ত করতে যাচ্ছে। উন্নয়নের ছোঁয়া লেগেছে কর্ণফুলীর দুই পারে। নতুন বিনিয়োগ আর অর্থনৈতিক উন্নয়নের পথ দেখাবে এই টানেল। খুলবে পর্যটনশিল্পের নতুন দুয়ার। কর্ণফুলী নদীর দক্ষিণ পার থেকে কক্সবাজার পর্যন্ত বিশেষ অর্থনৈতিক অঞ্চল, গভীর সমুদ্রবন্দর, বিদ্যুকেন্দ্র নির্মাণের কাজ চলছে। প্রত্যন্ত অঞ্চল পর্যন্ত ডিজিটাল সেবা পৌঁছে গেছে।

স্বল্পোন্নত দেশের তালিকা থেকে বেরিয়ে দেশ এখন উন্নয়নশীল দেশের কাতারে। যুক্তরাষ্ট্রভিত্তিক গবেষণাপ্রতিষ্ঠান হেরিটেজ ফাউন্ডেশন সম্প্রতি অর্থনৈতিক স্বাধীনতা সূচক-২০২৩ প্রকাশ করেছে। তাতে এবার ১৪ ধাপ এগিয়েছে বাংলাদেশ। ৫৪.৪ পয়েন্ট স্কোর পেয়ে ১৭৬টি দেশের মধ্যে ১২৩তম অবস্থানে রয়েছে বাংলাদেশ, যা গত বছর ছিল ১৩৭তম। ২০২১ সালের সূচকে যে অবস্থান ছিল ১২০তম। দক্ষিণ এশিয়ার দেশগুলোর মধ্যে এ বছর বাংলাদেশের অবস্থান দ্বিতীয়। এশিয়া প্রশান্ত মহাসাগরীয় অঞ্চলের ৩৯টি দেশের মধ্যে বাংলাদেশের অবস্থান ২৬তম।

প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা সম্প্রতি এক ভাষণে বলেছেন, ‘আমরা ২০৪১ সালে বাংলাদেশকে উন্নত দেশ হিসেবে গড়ে তুলব। আর সেই বাংলাদেশ হবে স্মার্ট বাংলাদেশ। ডিজিটাল বাংলাদেশ থেকে স্মার্ট বাংলাদেশে আমরা চলে যাব।’ স্মার্ট সিটিজেন, স্মার্ট ইকোনমি, স্মার্ট গভর্নমেন্ট ও স্মার্ট সোসাইটি—এই চারটি ভিত্তি সরকারের ‘স্মার্ট বাংলাদেশ’ সফলভাবে বাস্তবায়ন করবে বলে জানিয়েছেন তিনি। স্মার্ট বাংলাদেশ গড়ে তুলতে স্মার্ট বিনিয়োগের পাশাপাশি উন্নয়নের ধারাবাহিকতা ধরে রাখতে হবে।

টেকসই উন্নয়ন নিশ্চিত করতে ভিত্তিটা আরো শক্ত করা দরকার। দেশের অর্থনীতিবিদ ও বিশিষ্টজনরা প্রায়ই বলে থাকেন, মানুষের মৌলিক অধিকার নিশ্চিত করা ছাড়া একটি দেশ শুধু উন্নয়ন দিয়ে চলতে পারে না। তাঁরা মনে করেন, ‘শুধুই অর্থনৈতিক উন্নয়ন’ নয়, সুশাসনের ওপর জোর দেওয়া উচিত। সুশাসন নিশ্চিত করা গেলে সরকারের প্রতি মানুষের আস্থা আরো বাড়বে। তৃণমূলের মানুষের মধ্যে সেবার প্রসার ঘটবে। সুশাসন নিশ্চিত করা গেলে আস্থার সংকট সম্পূর্ণ কেটে যাবে। মানুষের বিশ্বাসের ঘাটতি দূর হবে। দুর্নীতি ও দুষ্টচক্র নিয়ন্ত্রণে সঠিক দিকনির্দেশনা চায় দেশের মানুষ। সুশাসন নিশ্চিত করতে প্রয়োজন স্বচ্ছ ও জবাবদিহিনির্ভর কার্যকর পথরেখা।

রাজনৈতিক, সামাজিক, সেবা ও অর্থনৈতিক ক্ষেত্রে সুশাসন প্রতিষ্ঠা করা গেলে সেই পথরেখা নিশ্চিত করা সম্ভব হবে। সুশাসন নিশ্চিত করা গেলে শুধু অবকাঠামো নয়, যেকোনো ক্ষেত্রে উন্নয়ন টেকসই হবে। সুশাসন নিশ্চিত করতে শপথ নিতে হবে। একই সঙ্গে সিদ্ধান্তটি হতে হবে রাজনৈতিক।

সুশাসন নিশ্চিত করার দায়িত্ব সরকারের একার নয়, সব রাজনৈতিক দলের; নাগরিক সমাজেরও।

লেখক: আলী হাবিব – সাংবাদিক, ছড়াকার।


সর্বশেষ - জাতীয় সংবাদ