1. অন্যরকম
  2. অপরাধ বার্তা
  3. অভিমত
  4. আন্তর্জাতিক সংবাদ
  5. ইতিহাস
  6. এডিটরস' পিক
  7. খেলাধুলা
  8. জাতীয় সংবাদ
  9. টেকসই উন্নয়ন
  10. তথ্য প্রযুক্তি
  11. নির্বাচন বার্তা
  12. প্রতিবেদন
  13. প্রবাস বার্তা
  14. ফিচার
  15. বাণিজ্য ও অর্থনীতি

ষড়যন্ত্র হচ্ছে দেশের বিরুদ্ধে 

ড. মো. বদরুজ্জামান ভূঁইয়া : ইবার্তা টুয়েন্টিফোর ডটকম
মঙ্গলবার, ২০ জুন, ২০২৩

পৃথিবীর মানচিত্রে বছরের পর বছর মাথা উঁচু করে সফলতার সঙ্গে দাঁড়িয়ে আছে মাতৃভূমিতুল্য আমাদের বাংলাদেশ। শিক্ষা, স্বাস্থ্য, ব্যবসা-বাণিজ্য, শিল্প-সংস্কৃতি, আন্তর্জাতিক বাণিজ্য এবং সম্পর্ক সব ক্ষেত্রেই বাংলাদেশের সফল পদচারণা বর্তমান সময়ে জোরালোভাবে পরিলক্ষিত হচ্ছে। পৃথিবীর অন্যসব উন্নয়নশীল দেশের তুলনায় বাংলাদেশের অর্জন আন্তর্জাতিক পরিমণ্ডলে অনেক বেশি গর্বের; কিন্তু আমাদের জন্য দুর্ভাগ্য হলেও নিরেট সত্য এই যে, বাংলাদেশবিরোধী বিএনপি-জামায়াত চক্র, যারা বাংলাদেশের উন্নয়ন বাধাগ্রস্ত করতে চায়, বাংলাদেশকে আন্তর্জাতিকভাবে বিব্রত করতে চায়, পারস্পরিক বন্ধুত্বপূর্ণ সহযোগিতামূলক সম্পর্ক বাধাগ্রস্ত করতে চায়, তারাই আন্তর্জাতিক লবিস্টদের সহায়তায় ভুল, মিথ্যা ও বানোয়াট তথ্য সরবরাহ করে বাংলাদেশের প্রকৃত অবস্থা গোপন করে যুক্তরাষ্ট্র সরকারকে বিভিন্ন সময়ে বিভিন্ন সিদ্ধান্ত গ্রহণে প্রভাবিত করছে প্রতিনিয়ত। এটা অনেক বেশি দুঃখজনক যে, বাংলাদেশকে কোনো প্রকার আত্মপক্ষ সমর্থন করার সুযোগ না দিয়েই এমনসব অভিযোগ যেমন বাংলাদেশে গণতন্ত্র ও মানবাধিকারের লঙ্ঘনের দোহাই দিয়ে মার্কিন ভিসা নীতি, বাংলাদেশের শান্তিরক্ষী বাহিনী মানবাধিকার লঙ্ঘনের সঙ্গে জড়িত বলে তাদের ওপর নিষেধাজ্ঞা দেওয়ার আহ্বান জানিয়ে প্রেসিডেন্ট জো বাইডেনকে রিপাবলিকান মার্কিন ছয় কংগ্রেসম্যানের চিঠি এবং এখন ওই একই অভিযোগে মার্কিন ছয়জন ডেমোক্রেটিক কংগ্রেসম্যানের চিঠি দেওয়া মূলত স্বাধীন, সার্বভৌম এবং গণতান্ত্রিক বাংলাদেশ ঘিরে যুক্তরাষ্ট্র ও তার কংগ্রেস সদস্যদের দিয়ে বিএনপি-জামায়াত চক্রের ষড়যন্ত্রকেই নির্দেশ করছে। দেশকে নিয়ে ওই একই ধরনের ষড়যন্ত্র বিএনপি করেছে ইউরোপীয় ইউনিয়নের ছয়জন এমপিকে দিয়ে লবিং করে। তারাও যুক্তরাষ্ট্রের মতো একই ধরনের মিথ্যা এবং বানোয়াট অভিযোগ করে বাংলাদেশের শান্তিরক্ষী বাহিনীর সদস্যদের ওপর নিষেধাজ্ঞার আহ্বান জানিয়েছেন। আগের ছয়জন রিপাবলিকান কংগ্রেসম্যানের মতো আবারও বাংলাদেশে অবাধ ও সুষ্ঠু জাতীয় নির্বাচন অনুষ্ঠানে ভূমিকা চেয়ে যুক্তরাষ্ট্রের পররাষ্ট্রমন্ত্রী অ্যান্টনি ব্লিঙ্কেনের কাছে চিঠি লিখেছেন দেশটির ক্ষমতাসীন ডেমোক্রেটিক দলের ছয়জন কংগ্রেস সদস্য। তারা হলেন—উইলিয়াম আর কিটিং, জেমস পি ম্যাকগভার্ন, বারবারা লি, জিম কস্টা, ডিনা টাইটাস ও জেমি রাসকিন। কংগ্রেস সদস্য উইলিয়াম আর কিটিং গত মঙ্গলবার এক টুইটে বিষয়টি জানিয়েছেন। ৮ জুন দেওয়া ওই চিঠিতে কংগ্রেস সদস্যরা মিথ্যে অভিযোগ করে বলেছেন, বাংলাদেশে জাতীয় নির্বাচন এগিয়ে আসায় মানবাধিকার পরিস্থিতির আরও অবনতি ঘটছে। এটি নিয়ে তারা উদ্বিগ্ন। বাংলাদেশে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর গুরুতর মানবাধিকার লঙ্ঘনের ঘটনায় জবাবদিহি নিশ্চিতে ধারাবাহিকভাবে বাংলাদেশ সরকারের প্রতি আহ্বান জানানোর জন্য যুক্তরাষ্ট্রের পররাষ্ট্র দপ্তর ও অন্যান্য সংস্থার প্রতি অনুরোধ জানিয়েছেন তারা। বাংলাদেশের মতো একটি স্বাধীন, সার্বভৌম, গণতন্ত্র এবং মানবাধিকার প্রতিষ্ঠায় বিশ্বে প্রশংসনীয় দেশের বিরুদ্ধে একের পর এক মিথ্যে এবং বানোয়াট অভিযোগ নিঃসন্দেহে বিশ্ব রাজনীতির আদর্শের পরিপন্থি। বাংলাদেশসহ পুরো বিশ্বে শান্তি প্রতিষ্ঠায় বাংলাদেশের নিরাপত্তা বাহিনীর ভূমিকা এককথায় প্রশংসনীয়। প্রতিনিয়ত আমাদের গর্বের এ বাহিনী নিয়ে যুক্তরাষ্ট্র ও তার কংগ্রেস সদস্যদের এবং ইউরোপীয় ইউনিয়নের এমপিদের করা মানবাধিকার লঙ্ঘনের মতো এমন সব অভিযোগ একেবারেই অবান্তর এবং উদ্দেশ্যপ্রণোদিত।

বাংলাদেশে মানবাধিকার লঙ্ঘিত হচ্ছে নিরাপত্তা বাহিনীর দ্বারা—বারবার গলা ফাটিয়ে এমন সব অভিযোগ করা যুক্তরাষ্ট্রের মানবাধিকারের হালচাল দেখতে আমরা যদি একটু চোখ রাখি ২০২১ সালের করা হিউম্যান রাইটস ওয়াচের রিপোর্টে, তাহলে যুক্তরাষ্ট্রের করা এসব অভিযোগের আসল উদ্দেশ্য স্পষ্টভাবে ভেসে আসে আমাদের চোখে। যেমন ২০২১ সালের হিউম্যান রাইটস ওয়াচের রিপোর্ট অনুযায়ী, ২০১৯ সালে যুক্তরাষ্ট্র অধিকারের ক্ষেত্রে পিছিয়ে যেতে থাকে। অমানবিক অভিবাসন নীতি এবং প্রচারিত মিথ্যা আখ্যান যা বর্ণবাদ এবং বৈষম্য স্থায়ী করছে; গণবন্দিত্ব মোকাবিলা করার জন্য প্রায় যথেষ্ট কাজ করেনি; নারীর অধিকার খর্ব করেছে। পুলিশি সহিংসতার সরকারি ট্র্যাকিং অসম্পূর্ণ রয়ে গেছে। এ ছাড়া ওয়াশিংটন পোস্টের মতে, পুলিশ ২০১৯ সালে যুক্তরাষ্ট্রে ৭৮৩ জনকে গুলি করে হত্যা করেছে। নিহতদের মধ্যে ২০ শতাংশ কৃষ্ণাঙ্গ ছিল, যদিও কৃষ্ণাঙ্গরা জনসংখ্যার ১৩ শতাংশ। যুক্তরাষ্ট্র ইয়েমেন এবং সোমালিয়াসহ এসব দেশে সন্দেহভাজন সন্ত্রাসীরা হত্যা অব্যাহত রেখেছে, এর মধ্যে অনেক হয়েছে সশস্ত্র ড্রোন দিয়ে। অন্যদিকে ২০২১ সালে যুক্তরাষ্ট্রের এক প্রাক্তন সিনেটর রবার্ট রেইচ তার এক টুইটে বলেছিলেন, ২০২০ সালে যুক্তরাষ্ট্রে ৯৮৪টি বিচারবহির্ভূত হত্যাকাণ্ডের ঘটনা ঘটেছে। বিভিন্ন মার্কিন গণমাধ্যমের প্রতিবেদন অনুযায়ী, ২০১৫ সাল থেকে যুক্তরাষ্ট্রে আইনপ্রয়োগকারী সংস্থার দ্বারা কমপক্ষে ৬ হাজার ৭০০ জনকে বিচারবহির্ভূতভাবে হত্যা করা হয়েছে। এর মানে গড়ে এক হাজার বিনা বিচারে মৃত্যুবরণ করেছে। এর মধ্যে ৭ হাজার ৩০৩ জন পুরুষ এবং ২৯৪ জন মহিলা। আগ্নেয়াস্ত্রসহ ৩ হাজার ৬০৭ জন ছিল। ছুরিসহ ১ হাজার ১১৯ জন। গাড়িসহ ২১৬ জন। খেলনা পিস্তলসহ ২৪৪ জন। আর ৪২১ জন নিরস্ত্র। পক্ষান্তরে যুক্তরাষ্ট্র সরকারের করা ২০২১ সালের এক প্রতিবেদনে বাংলাদেশে সন্ত্রাস নিয়ন্ত্রণে র্যাবের ভূমিকাকে ইতিবাচকভাবে তুলে ধরা হয়েছিল। এতে বলা হয়েছিল যে, র্যাবের ভূমিকায় বাংলাদেশে সন্ত্রাস কমেছে। তা সত্ত্বেও তারা র্যাবের সাত শীর্ষ কর্মকর্তার ওপর নিষেধাজ্ঞা দিয়েছে অহেতুক। ওই প্রতিবেদনে বাংলাদেশ প্রসঙ্গে বলা হয়েছিল, ‘২০২০ সালে বাংলাদেশে সন্ত্রাস-সংশ্লিষ্ট ঘটনার তদন্ত ও গ্রেপ্তার বেড়েছে, কমেছে সন্ত্রাসী কর্মকাণ্ড।’ প্রতিবেদনের আরেকটি অংশে বলা হয়েছে, ‘২০২০ সালজুড়ে র্যাব এবং “কাউন্টার টেররিজম অ্যান্ড ট্রান্সন্যাশনাল ক্রাইম ইউনিট (সিটিটিসিইউ)” কমিউনিটি পুলিশি কার্যক্রম ও সন্দেহভাজন বিদেশি সন্ত্রাসী যোদ্ধাদের গ্রেপ্তারের পাশাপাশি উগ্রবাদ মোকাবিলা ও পুনর্বাসন কর্মসূচি চালু করে।’

বাংলাদেশ একটি স্বাধীন-সার্বভৌম গণতান্ত্রিক রাষ্ট্র। বাংলাদেশ একটি নিরপেক্ষ অবস্থানে থেকে নিজেদের মতো পথ চলতে চায়। আত্মমর্যাদায় বলীয়ান হয়ে বিশ্বসভায় মাথা উঁচু করে এগিয়ে যেতে চায়। নিজেদের সুবিধার্থে সকালে এক নীতি এবং বিকেলে আরেক নীতি অবলম্বনে যুক্তরাষ্ট্রের পুরোনো নীতি। আর এরই সুবাদে যুক্তরাষ্ট্র তাদের স্বার্থের কারণে বাংলাদেশ নিয়ে করে যাচ্ছে নতুন নতুন যড়যন্ত্র। আন্তর্জাতিক এসব ষড়যন্ত্রের পেছনে সরাসরি কলকাঠি নাড়ছে বাংলাদেশের স্বাধীনতাবিরোধী বিএনপি-জামায়াত চক্র। তারা দুর্নীতির মাধ্যমে অর্জিত দেশের মানুষের সম্পদ ব্যবহার করে আন্তর্জাতিক পরিমণ্ডলে এসব লবিস্ট নিয়োগ করে বাংলাদেশ এবং বাংলাদেশের মানুষের বিরুদ্ধে করে যাচ্ছে বিভিন্ন ধরনের ষড়যন্ত্র। জনসমর্থনহীন বিএনপি-জামায়াত চক্র আন্তর্জাতিক যড়যন্ত্রের মাধ্যমে পেছনের দরজা দিয়ে ক্ষমতায় এসে যুক্তরাষ্ট্রের কর্তৃত্ববাদী এজেন্ডা বাস্তবায়নে সব ধরনের অপপ্রচেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছে। অন্যদিকে যুক্তরাষ্ট্র ও মানবাধিকার প্রতিষ্ঠায় বিশ্বে প্রশংসনীয় বাংলাদেশের বিরুদ্ধে গণতন্ত্র এবং মানবাধিকারের নামে একের পর এক ষড়যন্ত্র করে যাচ্ছে বাংলাদেশের ওপর নিজেদের কর্তৃত্ববাদী প্রভাব সৃষ্টির করার জন্য। মানবাধিকার এবং গণতন্ত্র শুধু একটা মাধ্যম হিসেবে কাজ করছে মূলত। তবে যুক্তরাষ্ট্র ও বিএনপি-জামায়াত চক্রকে বাংলাদেশের ইতিহাসের দিকে নজর দেওয়া দরকার। তাহলে তারা পরিষ্কারভাবে বুঝতে পারবে যে, বাঙালিরা এসব মিথ্যা অভিযোগে ও ষড়যন্ত্রে ভয় করে না। স্বাধীনতা যুদ্ধে এবং যুক্তরাষ্ট্র ও পাকিস্তানের দোসর জামায়াত বিভিন্ন ধরনের ষড়যন্ত্র করেছিল কিন্তু হাজার বছরের শ্রেষ্ঠ বাঙালি জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের আদর্শিক নেতৃত্বের ফলে সব ধরনের ষড়যন্ত্র নস্যাৎ করে দিয়ে বাঙালি অর্জন করেছে নিজেদের স্বাধীনতা। প্রধানমন্ত্রী জননেত্রী শেখ হাসিনা দেশ এবং দেশের মানুষকে নিয়ে করা সব ধরনের ষড়যন্ত্র এবং চক্রান্ত নস্যাৎ করে দিয়ে এ দেশের মানুষের কল্যাণ নিশ্চিত করতে সদা আপসহীন।

লেখক : ড. মো. বদরুজ্জামান ভূঁইয়া, ট্রেজারার, বরিশাল বিশ্ববিদ্যালয়


সর্বশেষ - জাতীয় সংবাদ