1. অন্যরকম
  2. অপরাধ বার্তা
  3. অভিমত
  4. আন্তর্জাতিক সংবাদ
  5. ইতিহাস
  6. এডিটরস' পিক
  7. খেলাধুলা
  8. জাতীয় সংবাদ
  9. টেকসই উন্নয়ন
  10. তথ্য প্রযুক্তি
  11. নির্বাচন বার্তা
  12. প্রতিবেদন
  13. প্রবাস বার্তা
  14. ফিচার
  15. বাণিজ্য ও অর্থনীতি

রোহিঙ্গা সংকট সমাধানে সুফল পাবে বাংলাদেশ

জ্যৈষ্ঠ প্রতিবেদক : ইবার্তা টুয়েন্টিফোর ডটকম
রবিবার, ২৪ জুলাই, ২০২২

আন্তর্জাতিক চাপ এবং ঢাকা-নেপিদোর ওয়ার্কিং গ্রুপের কয়েক দফা বৈঠকের পরও গত পাঁচ বছরে রোহিঙ্গা প্রত্যাবাসন শুরু হয়নি। ২০১৭ সালের আগস্টে মিয়ানমার থেকে জোরপূর্বক বাস্তুচ্যুত হয়ে ১১ লাখের বেশি রোহিঙ্গা পালিয়ে বাংলাদেশে আশ্রয় নেয়। এ নিয়ে জাতিসংঘসহ আন্তর্জাতিক চাপ এবং মিয়ানমারের সামরিক বাহিনীর বিরুদ্বে রোহিঙ্গা গণহত্যার অভিযোগের বিষয়টিও অস্বীকার করেছে দেশটির পক্ষ থেকে।

এই পরিস্থিতিতে এই নৃশংসতাকে গণহত্যা বলে ২০১৯ সালের ১১ নভেম্বর গাম্বিয়া অর্গানাইজেশন অব ইসলামিক কো-অপারেশনের (ওআইসি) ছায়া হয়ে জাতিসংঘের সর্বোচ্চ বিচারিক সংস্থা ইন্টারন্যাশনাল কোর্ট অব জাস্টিস বা আন্তর্জাতিক বিচার আদালতে (আইসিজে) মামলা করে গাম্বিয়া। আফ্রিকার মুসলমান সংখ্যাগরিষ্ঠ দেশ গাম্বিয়ার এই মামলাটি নিয়েও নেপিদো আপত্তি জানায়। ফলে দুই বছর চলার পর মামলাটি চলবে কিনা তা নিয়ে শুনানির অপেক্ষা করতে হয়।

রোহিঙ্গাদের ওপর মিয়ানমারের গণহত্যার অভিযোগে গাম্বিয়ার মামলার বিরুদ্ধে যে আপত্তি তুলেছিল মিয়ানমার, সেটি গত শুক্রবার খারিজ করে দিয়ে মামলা চলার পক্ষে রায় দেয় আইসিজে। এ রায়ের ফলে মামলা চলতে বাধা কেটে যায়।

এদিকে নেপিদোর এই আপত্তির সঙ্গে বাংলাদেশ থেকে রোহিঙ্গা প্রত্যাবাসনের কোনো সম্পর্ক না থাকলেও পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়, পররাষ্ট্রমন্ত্রী এবং কূটনৈতিক বিশ্লেষকরা মনে করছেন এটি পরোক্ষভাবে বাংলাদেশের জন্য একটি ভালো খবর। কারণ এতদিন ধরে মিয়ানমার সরকার রোহিঙ্গা জনগোষ্ঠীর ওপর চালানো নিপীড়ন, নির্যাতন এবং গণহত্যাকে অস্বীকার করে আসছিল। রোহিঙ্গারা তাদের নাগরিক নয় বলেও দেশটি আন্তর্জাতিক মহলে দাবি করে আসছিল। আবার চীনসহ মিয়ানমারের কয়েকটি মিত্র দেশ জাতিসংঘের নিরাপত্তা পরিষদের বৈঠকে নেপিদোর পক্ষে জোরালো অবস্থানে রয়েছে। ফলে রোহিঙ্গা প্রত্যাবাসন এখনো সংকটেই রয়েছে।

বিশেষজ্ঞরা বলছেন, আইসিজের এই রায়ে প্রত্যাবাসন যুক্ত না থাকলেও মিয়ানমারকে এই ইস্যুতে সমর্থনকারী দেশ বিশেষ করে চীন, রাশিয়াসহ দেশগুলো তাদের অবস্থান নতুন করে চিন্তা করবে। মিয়ানমারের ওপর গণহত্যার মতো ঘটনা ঘটানোর একটা চাপ তৈরি হবে।

চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের আইন বিভাগের অধ্যাপক জাকির হোসেন বলেন, প্রথম যখন মিয়ানমারের বিরুদ্ধে গাম্বিয়া রোহিঙ্গাদের ওপর গণহত্যা চালানো হয়েছে এই মামলা করে মিয়ানমার বিষয়টি অস্বীকার করেছে। তারা বলেছে, এই ধরনের কোনো ঘটনা সংঘটিত হয়নি। এখন তাদের আপত্তির শুনানিতে এই দাবিটিকে আইসিজের নাকচ করে দেওয়ার অর্থ হচ্ছে সেখানে গণহত্যা হয়েছে। প্রাথমিক তথ্য-প্রমাণ আদালতের কাছে রয়েছে। নেপিদোর আপত্তির পর আদালতের দুই-একজন সদস্য বলেছে, এই আপত্তি মীংমাসার আগে মামলা চলবে না। কারণ আমাদের তো আইন অনুযায়ী আন্তর্জাতিক মামলা পরিচালনা করা হয়। আইন পরিচালনার ক্ষেত্রে বিভিন্ন বাধা-বিপত্তির কথা তারা উল্লেখ করার ফলে মামলার কাজ বন্ধ থাকে। যেহেতু মিয়ানমার নিজেই আন্তর্জাতিক গণহত্যা চুক্তির একটা পক্ষ এবং গাম্বিয়াও একটি পক্ষ তাই এই সিদ্ধান্ত নেয় আদালত। কিন্তু মিয়ানমারের আপত্তি খারিজ হওয়ায় আবার মামলা সচল হলো। এখন গণহত্যার বিষয়ে আদালত চলবে। এখন আদালত দেখবে গণহত্যার হওয়ার পেছনের কারণ। এর মধ্যে যেসব সংজ্ঞা থাকে সেগুলোর মধ্যে হলো কোনো একটা গোষ্ঠীকে নিশ্চিহ্ন করার উদ্দেশ্যে একাধিক মানুষকে হত্যা করা হয় এই উদ্দেশ্য নিয়ে এবং তাদের সন্তান জন্মদানে বাধা দেওয়া তাহলে এই রকম নানা উদ্দেশ্যকে গণহত্যা বলে। তাহলে দেখা যাচ্ছে রোহিঙ্গাদের প্রতি এমন আচরণ করা হয়েছে। তাদের নিশ্চিহ্ন করতে চেয়েছে। এখন আদালত খুঁজতে যাবে কেন রোহিঙ্গাদের নিশ্চিহ্ন করতে চেয়েছে কারণটা কী? সে ক্ষেত্রে আমি ব্যক্তিগতভাবে মনে করি আদালত যখন এই জায়গায় অগ্রসর হবে তখন আন্তর্জাতিক সম্প্রদায় স্বভাবতই মিয়ানমারের দাবিকে নাকচ করে দিয়ে রোহিঙ্গাদের সেখানে ফেরত যাওয়া এবং তাদের নাগরিকত্ব ফিরে পাওয়ার পথ সৃষ্টি হয়েছে বলে আমার কাছে মনে হয়েছে।

সাবেক পররাষ্ট্র সচিব তৌহিদ হাসান বলেন, তারা যে গণহত্যা করেছে গাম্বিয়ার রিপ্রেজেনটিভ তার প্রমাণ দাখিল করেছে। এর ওপরই শুক্রবার শুনানি হলো। এই শুনানিতে মিয়ানমার যে আপত্তি দিয়েছে তাতে তারা হেরে গেছে। তার মানে কোর্ট এখন মূল মামলা চালাবে। কোর্ট যদি মনে করে তাদের কাছে সবরকম প্রমাণ আছে, মিয়ানমার সেনারা সেখানে গণহত্যা করেছে। তাহলে এটা আমাদের জন্য বড় একটি সাফল্য। তার মানে আইসিজে স্বীকৃতি দিয়েছে সেখানে এসব ঘটনা হয়েছিল। কিন্তু মিয়ানমার বলেছিল সেখানে এসব কিছু হয়নি। তবে এই রায়ের মাধ্যমে প্রমাণ হলো সব। তারা হেরে গেছে।

তিনি আরও বলেন, এটা প্রত্যাবাসনে চাপ হবে বলে আমার কাছে মনে হয় না। তবে বিভিন্ন মাধ্যমে তারা জানতে পারবে এবং দেখতে পারবে তারা এখনো যে অন্যায় করছে মিয়ানমারে ভেতরে। এখনো যে একটা জঙ্গিবাদ হচ্ছে, মারামারি হচ্ছে, মিয়ানমারের মিলিটারিরা এখন সব দিক থেকে খারাপ অবস্থায় থাকবে। তবে এর মানে এই নয় কালকেই তারা বলবে আমরা হেরে গেছি। তারা যতদিন পারবে রোহিঙ্গাদের ওপর নির্যাতন চালাবে। যতদিন না চীন অস্ত্র দেওয়া বন্ধ না করবে ততদিন এই যুদ্ধ তারা চালিয়ে যাবে।

সাবেক পররাষ্ট্র সচিব ও কূটনৈতিক বিশ্লেষক ওয়ালি উর রহমান বলেন, এই সিদ্ধান্তটি প্রত্যাশিত ছিল। সেখানে চায়নিজ জজ ছাড়া সবাই রায় দিয়েছেন পক্ষে। কারণ সেখানে চীনের যে রাজনৈতিক অবস্থান মিয়ানমারের পক্ষে তারই প্রতিফলন ঘটিয়েছেন। তবে এখনো বিচার চলমান। সেভাবে তো আর কিছু বলা যায় না। কিন্তু আইনগতভাবে দেখতে গেলে বোঝা যায় এখানে গণহত্যা হয়েছে। তবে সেটার বিচার করা যাবে না, এই যে একটা আবদার নেপিদোর, এটা কখনো গ্রহণযোগ্য হতে পারে না। জজরা তো তাদের দিক থেকে এই আপত্তির সম্পর্কে বুঝেছেন এই আপত্তি গ্রহণযোগ্য নয়। তার মানে এখন বিচারটি চলতে পারবে, কারণ তারা মিয়ানমারের আপত্তির কথা শুনেননি। এখন বাংলাদেশ প্রত্যাশা করছে বিচার হবে, তারা কী ঘটিয়েছে সেটা প্রমাণিত হবে। সেই প্রসেসে যে বাধা ছিল তার সমাধান হলো।

তিনি আরও বলেন, কোর্টের এখন এখতিয়ার তারা দেখবে তারা (মিয়ানমার) গণহত্যা ঘটিয়েছে কিনা। এখন রায় হতে কিন্তু সময় লাগবে। সেটা প্রথম থেকে বলে আসছি। এখন রায় যদি আসে গণহত্যা ঘটেছে তার পরও অন্য কোনো দেশ যদি তাদের সহযোগিতা করে তাহলে তো তাদের জন্য বিষয়টি বিব্রতকর হবে। এতটুকু লাভ হবে। এর মানে এই নয় যে, পরের দিন সব রোহিঙ্গা ফেরত যাবে। তাই আমাদের প্রত্যাবাসন প্রক্রিয়া যেগুলো আছে সেগুলো আলাদাভাবে চালিয়ে যেতে হবে। এতে রোহিঙ্গারা কিছুটা লাভবান হবে। সেটা হলে ইনডাইরেক্টলি বাংলাদেশও হবে। পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ও এই ঘটনাকে ইতিবাচক বলে বিবৃতি দিয়েছে।


সর্বশেষ - জাতীয় সংবাদ