1. অন্যরকম
  2. অপরাধ বার্তা
  3. অভিমত
  4. আন্তর্জাতিক সংবাদ
  5. ইতিহাস
  6. এডিটরস' পিক
  7. খেলাধুলা
  8. জাতীয় সংবাদ
  9. টেকসই উন্নয়ন
  10. তথ্য প্রযুক্তি
  11. নির্বাচন বার্তা
  12. প্রতিবেদন
  13. প্রবাস বার্তা
  14. ফিচার
  15. বাণিজ্য ও অর্থনীতি

রাশিয়া-ইউক্রেন শস্যচুক্তি কি যুদ্ধ বন্ধের পূর্বাভাস

নিরঞ্জন রায় : ইবার্তা টুয়েন্টিফোর ডটকম
সোমবার, ২৫ জুলাই, ২০২২

সম্প্রতি রাশিয়া ও ইউক্রেনের মধ্যে সম্পাদিত শস্যচুক্তি বিশ্বে এক ধরনের আশার সঞ্চার করেছে; যদিও খবরটি যেভাবে গুরুত্ব দিয়ে প্রচার করার কথা ছিল, সেভাবে হয়নি। এর পরও অনেকের মধ্যেই এক ধরনের আশা জাগিয়েছে যে রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধ বন্ধ হতে যাচ্ছে। জাতিসংঘ ও তুরস্কের মধ্যস্থতায় গত শুক্রবার ইস্তাম্বুলে এই চুক্তি সম্পাদিত হয়েছে। এই চুক্তি সম্পাদনের ফলে যুদ্ধের কারণে সৃষ্ট বিশ্বব্যাপী যে খাদ্যসংকট দেখা দিয়েছে, তা কিছুটা লাঘব হবে বলেই বিশেষজ্ঞরা প্রত্যাশা করছেন।

এ কারণেই জাতিসংঘ সন্তোষ প্রকাশ করেছে এবং মহাসচিব আন্তোনিও গুতেরেস রাশিয়া ও ইউক্রেনকে এই চুক্তির শর্ত মেনে চলার আহ্বান জানিয়েছেন; যদিও পশ্চিমা বিশ্ব এখনো আনুষ্ঠানিকভাবে এই চুক্তির জন্য কোনো রকম প্রশংসা বা সাধুবাদ জানায়নি। তবে তারা কোনো রকম সমালোচনাও করেনি, বরং নীরব থেকেছে এবং সে ক্ষেত্রে নীরবতা যে সম্মতির লক্ষণ, তা স্পষ্টই উপলব্ধি করা গেছে। এই শস্যচুক্তি সম্পাদনের ফলে বিশ্বব্যাপী সৃষ্ট খাদ্যসংকট কতটা লাঘব হবে, তা ভবিষ্যৎ বলতে পারবে। এই চুক্তির গুরুত্ব অন্যত্র এবং সেটি যুদ্ধ বন্ধের আলামত কি না, তা নিয়েই এখন চলছে বিচার-বিশ্লেষণ। রাশিয়া ও ইউক্রেন সরাসরি যুদ্ধে লিপ্ত এবং যুদ্ধরত দুটি দেশ যখন নিজেরাই কোনো একটি বিষয়ে সম্মত হয় এবং এ ব্যাপারে চুক্তি সম্পাদন করে, তখন তার গুরুত্ব অপরিসীম এবং সেই চুক্তি যে সুদূরপ্রসারী ইঙ্গিতবহ, তাতে কোনো সন্দেহ নেই।

রাশিয়া ও ইউক্রেনের মধ্যে শস্যচুক্তি সম্পাদনের আগে বেশ কিছু ঘটনা ঘটেছে, যা বিশ্লেষণ করলে তেমন ইঙ্গিতই পাওয়া যায়। যেমন—বেশ কিছুদিন থেকেই পশ্চিমা বিশ্বে রাশিয়ার বিরুদ্ধে প্রচার স্তিমিত হয়ে গেছে। রাশিয়াকে দেখে নেবে, পুতিনকে চরম মূল্য দিতে হবে—পশ্চিমা বিশ্বের এ রকম হুমকি-ধমকি থেমে গেছে। ইউক্রেনের প্রেসিডেন্ট জেলেনস্কির সকালে এক রকম বক্তব্য এবং বিকেলে আরেক রকম বক্তব্য দিয়ে হুংকার দেওয়ার মতো ঘটনাও এখন কমে গেছে। রাশিয়া থেকে ইউরোপে গ্যাস সরবরাহের পাইপলাইনের জন্য এক বিশেষ ধরনের টারবাইন সংগ্রহের কথা ছিল কানাডা থেকে। কানাডা সেই টারবাইন সরবরাহ বন্ধ রেখেছিল রাশিয়া ইউক্রেন আক্রমণ করেছে এমন অভিযোগে। যুদ্ধ শুরু হতে না হতেই কানাডা একের পর এক বাণিজ্যিক ও অর্থনৈতিক নিষেধাজ্ঞা আরোপ করে রাশিয়াকে কাবু করতে চেষ্টা করেছে। সেই কানাডাই রাশিয়াকে গ্যাস পাইপলাইনের জন্য প্রয়োজনীয় টারবাইন সরবরাহ করেছে। এ নিয়ে আমেরিকা, ইউরোপ বা অন্যান্য উন্নত দেশ টুঁ শব্দটিও করেনি। যুদ্ধের কারণে রাশিয়াকে শায়েস্তা করতে গিয়ে আমেরিকার নেতৃত্বে পশ্চিমা বিশ্ব ভ্রান্ত নীতি অনুসরণ করে বিশ্বব্যাপী জ্বালানিসংকট সৃষ্টি করে নিজেরাই এখন সেই সংকটে পড়ে বসে আছে। এই সংকট উত্তরণের উদ্দেশ্যে আমেরিকার প্রেসিডেন্ট জো বাইডেন ছুটে গিয়েছিলেন সৌদি যুবরাজের কাছে। কিন্তু সেখানেও খুব একটা সুবিধা করতে না পেরে হতাশ হয়ে ফিরে এসেছেন। উল্টো সৌদি যুবরাজ রাশিয়ার প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিনের সঙ্গে সরাসরি কথা বলেছেন।

এদিকে রাশিয়া ইউরোপে, বিশেষ করে জার্মানিতে গ্যাস সরবরাহ বন্ধ করার হুমকি দিয়েও সেখান থেকে সরে এসে গ্যাস সরবরাহ চালু করেছে। সাম্প্রতিক এসব ঘটনাপ্রবাহের পর যখন যুদ্ধে লিপ্ত দুটি দেশ কোনো একটি বিষয়ে সমঝোতায় পৌঁছে এবং আনুষ্ঠানিক চুক্তি সম্পাদন করে, তখন সেই চুক্তি যে যুদ্ধ বন্ধেরই ইঙ্গিত দেয়, তা খুব সহজেই অনুমেয়।

মূলত গত ছয় মাসের যুদ্ধে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে সবাই এবং হাঁপিয়ে উঠেছে। আমেরিকা, কানাডাসহ সবার হিসাব-নিকাশই ওলটপালট হয়ে গেছে এবং যুদ্ধের চরম খেসারত দিচ্ছে উন্নত ও অনুন্নত বিশ্বের সব দেশই। ইউক্রেন ভেবেছিল যে রাশিয়া তার দেশ আক্রমণ করলে আমেরিকার নেতৃত্বে সব পশ্চিমা দেশ ঝাঁপিয়ে পড়ে তাকে রক্ষা করবে এবং রাশিয়াকে শায়েস্তা করবে। এর কোনো কিছুই ঘটেনি। শুধু মৌখিক আশ্বাস এবং হুমকি-ধমকি ছাড়া আমেরিকা ও পশ্চিমা বিশ্ব ইউক্রেনের জন্য মূলত তেমন কিছুই করেনি। আমেরিকাসহ পশ্চিমা বিশ্ব ভেবেছিল, রাশিয়ার ওপর উপর্যুপরি অর্থনৈতিক ও বাণিজ্যিক নিষেধাজ্ঞা দিলেই রাশিয়া ভয় পেয়ে পশ্চিমা বিশ্বের সঙ্গে সমঝোতা করে যুদ্ধ বন্ধ করে দেবে। পশ্চিমা বিশ্বের এই হিসাবও কোনো কাজে আসেনি। শুধু নিষেধাজ্ঞা নয়, রাশিয়ার বৈদেশিক বা রিজার্ভের অর্থ জব্দ করা এবং সুইফট থেকে রাশিয়ার ব্যাংক বহিষ্কারের মতো ভয়ংকর সব সিদ্ধান্ত নিয়ে রাশিয়াকে বিন্দুমাত্র কাবু করতে পারেনি।

রাশিয়ার প্রেসিডেন্ট পুতিন যে এবার আটঘাট বেঁধেই মাঠে নেমেছেন, তা আমেরিকা ও পশ্চিমা বিশ্ব বুঝতে পারেনি। উল্টো ঢালাওভাবে রাশিয়ার বিরুদ্ধে আরোপ করা অর্থনৈতিক ও বাণিজ্য নিষেধাজ্ঞা এখন আমেরিকা, কানাডাসহ পশ্চিমা বিশ্বের জন্য বুমেরাং হয়ে দেখা দিয়েছে। এসব দেশে দ্রব্যমূল্যের আকাশচুম্বী ঊর্ধ্বগতিতে মানুষের নাভিশ্বাস অবস্থা। জ্বালানি তেলের মূল্য তো দ্বিগুণ হয়েছে এবং সেই সঙ্গে মূল্যস্ফীতি বিগত চার দশকের মধ্যে সর্বোচ্চ। পশ্চিমা অর্থনীতি যে মন্দার কবলে পড়ে গেছে, তা বেশ পরিষ্কার। পশ্চিমা বিশ্ব তাদের সুদের হার বাড়িয়ে পরিস্থিতি সামাল দেওয়ার চেষ্টা করছে ঠিকই; কিন্তু তাতে শেষ রক্ষা হবে কি না, তা ভবিষ্যৎ বলতে পারবে।

আমেরিকা ভেবেছিল যে ঠাণ্ডা যুদ্ধপরবর্তী সোভিয়েত ইউনিয়নকে ভেঙে তছনছ করে দেওয়া পরিবর্তিত বিশ্বে আমেরিকা রাশিয়াকে মোকাবেলা করার ক্ষেত্রে বিশ্বের বেশির ভাগ দেশকে তার পাশে পাবে, কিন্তু বাস্তবে তেমনটা হয়নি। যুদ্ধ যারা শুরু করেছে এবং যারা এই যুদ্ধে প্রত্যক্ষ ও পরোক্ষভাবে ইন্ধন জুগিয়েছে, তারা এরই মধ্যে হাঁপিয়ে উঠেছে। প্রকাশ্যে না হলেও সবাই এখন মনেপ্রাণে এই যুদ্ধের পরিসমাপ্তি আশা করছে। তারই প্রাথমিক সূচনা হচ্ছে রাশিয়া ও ইউক্রেনের মধ্যে শস্যচুক্তি।

একটি চুক্তি সম্পাদন বা সার্বিক পরিস্থিতি অনুকূলে এলেই যে রাতারাতি যুদ্ধ বন্ধ হয়ে যাবে তেমনটা ভাবার কোনো কারণ নেই। একটি যুদ্ধ শুরু হতেও যেমন দীর্ঘ সময়ের প্রস্তুতির প্রয়োজন হয়, ঠিক তেমনি সেই যুদ্ধ বন্ধ হতেও বেশ দীর্ঘ সময়ের প্রয়োজন পড়ে। বিশেষ করে যে যুদ্ধে বিশ্বের পরাশক্তিরা প্রত্যক্ষ ও পরোক্ষভাবে জড়িত থাকে, সেই যুদ্ধ বন্ধ হতে তো আরো বেশি সময়ের প্রয়োজন হয়। কারণ সবাই সম্মানজনক প্রস্থানের জন্য সুযোগের অপেক্ষায় থাকে। তবে যুদ্ধ এই মুহূর্তে বন্ধ না হলেও এর তীব্রতা অনেকটাই কমে আসবে। এর চেয়েও বড় কথা, এই যুদ্ধকে কেন্দ্র করে আমেরিকার নেতৃত্বে পশ্চিমা দেশগুলো বিশ্বব্যাপী যে অর্থনৈতিক ও বাণিজ্য যুদ্ধ শুরু করেছিল, সেটি অন্তত থেমে যেতে শুরু করবে। এই অর্থনৈতিক ও বাণিজ্য যুদ্ধ থামতে শুরু করলেও পরিস্থিতি স্বাভাবিক হতে বেশ সময় লাগবে। সে কারণেই আগামী ৯ মাস থেকে এক বছর সময় উন্নয়নশীল দেশের জন্য খুবই গুরুত্বপূর্ণ। কঠোর কৃচ্ছ্রসাধন এবং কিছু নিয়ন্ত্রণমূলক ব্যবস্থা গ্রহণের মাধ্যমে আগামী ৯ মাস থেকে এক বছর সময় পার করে দিতে পারলেই সংকট খুব সহজেই উতরে যাওয়া সম্ভব হবে।

বাংলাদেশকেও এই পথেই এগোতে হবে। আশার কথা এই যে আমাদের প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বিষয়টি যথার্থই উপলব্ধি করতে পেরেছেন এবং সে অনুযায়ী আগাম ব্যবস্থা গ্রহণও শুরু করেছেন।

লেখক : নিরঞ্জন রায় – সার্টিফায়েড অ্যান্টি মানি লন্ডারিং স্পেশালিস্ট ও ব্যাংকার, টরন্টো, কানাডা।


সর্বশেষ - জাতীয় সংবাদ