1. অন্যরকম
  2. অপরাধ বার্তা
  3. অভিমত
  4. আন্তর্জাতিক সংবাদ
  5. ইতিহাস
  6. এডিটরস' পিক
  7. খেলাধুলা
  8. জাতীয় সংবাদ
  9. টেকসই উন্নয়ন
  10. তথ্য প্রযুক্তি
  11. নির্বাচন বার্তা
  12. প্রতিবেদন
  13. প্রবাস বার্তা
  14. ফিচার
  15. বাণিজ্য ও অর্থনীতি

বিশ্ববাজারে বাড়ছে বাংলাদেশি ক্যাডেটদের চাহিদা

ডেস্ক রিপোর্ট : ইবার্তা টুয়েন্টিফোর ডটকম
শুক্রবার, ২৬ এপ্রিল, ২০২৪

শৈশবে খেলতে খেলতে অনেকেই হয়তো ভেবেছেন বড় হয়ে জাহাজ চালাবেন। উত্তাল সাগরে হবেন একজন সিন্দাবাদ, কলম্বাস কিংবা হালের ক্যাপ্টেন জ্যাক স্প্যারো। তবে সিন্দবাদ কিংবা কলম্বাস হতে না পারলেও রয়েছে নাবিক হয়ে সমুদ্র জয়ের সুযোগ।

উত্তাল জনশূন্য মহাসাগরের বুক চিরে প্রায় হাজার ফুট দৈর্ঘ্যের একেকটি জাহাজ চালিয়ে নেওয়া সহজ কথা নয়। এর উপরে আছে যুদ্ধরত দেশগুলোকে একপাশে রেখে চলা, দস্যুদের হাতে বন্দি হবার ঝুঁকি।

সব মিলিয়ে দূর সাগরে নাবিকের এ জীবন অনেক চ্যালেঞ্জিং। আকস্মিক সামুদ্রিক ঝড় কিংবা জলদস্যুর হানা। সম্প্রতি বাংলাদেশি জাহাজেও এমন বিপদ হানা দেয়। যা থেকে মুক্তিও মিলেছে। তবে চ্যালেঞ্জ যাদের নেশা আর পেশা তারা পিছু হটেন না সেখান থেকে। নাবিকের জীবন রোমাঞ্চকরও। বিনা ভিসায় আর কাজের মাঝেই বিশ্বভ্রমণ আর প্রকৃতি দেখার এমন সুযোগ আর কোন পেশায় আছে?

আচ্ছা ছোটবেলায় আপনারও কি সিন্দাবাদ, কলোম্বাস কিংবা জ্যাক স্প্যারো হতে ইচ্ছে করেছিল? তাহলে এবারের গল্পটি আপনার জন্যই।

নাবিক হওয়ার জন্য আমাদের দেশে ৯ টি মেরিন একাডেমি রয়েছে। এসব একাডেমিতে যে কেউ চাইলে ভর্তি হতে পারবেন। তবে ভর্তি হতে চাইলে শুরুতেই থাকতে হবে বিজ্ঞান বিভাগে ভালো ফলাফল, ভালো শারীরিক গঠনসহ সর্বপরি সমুদ্র জয়ের তীব্র আকাঙ্খা।

মেরিন একাডেমিতে ভর্তির জন্য এইচএসসি পাশ করে বসতে হবে মেরিন এন্ট্রিন্স পরীক্ষায়। পরে দুই বছরের প্রি সি কোর্স শেষে একজন ক্যাডেট সমুদ্রগামী জাহাজে ওঠে হাতে-কলমে কাজ শিখতে।

একজন মেরিন শিক্ষার্থী বলেন, ‘এতোদিন যা শিখলাম, যা দেখলাম, তা আসলে জাহাজে উঠে, জাহাজকে সরাসরি অবজারভ করে আমার কেমন এক্সপেরিয়েন্স হবে এই জিনিসটা ভাবতেই নিজের মধ্যে একটা রোমাঞ্চকর অনুভূতি কাজ করে।’

ইন্টার্নশিপ শেষ করে আরেকবার বছরখানেকের জন্য ক্যাডেটরা ফিরে আসেন একাডেমিতে। এক বছরের জন্য ফের বসতে হয় পড়ার টেবিলে। এরপর বিশ্ববিদ্যালয় থেকে নিতে হয় ডিগ্রি এবং নৌ-পরিবহন অধিদপ্তর থেকে ডেক অফিসারের সিওসি বা যোগ্যতা সনদ। শিক্ষাজীবনের এ পর্ব শেষ করেই বিদেশগামী দেশি-বিদেশি জাহাজগুলোতে চাকরি পাবার জন্য পুরোপুরি প্রস্তুত হয়ে যান স্নাতকরা।

ইন্টারন্যাশনাল মেরিটাইম একাডেমির কমাড্যান্ট ক্যাপ্টেন জাকি আহাদ বলেন, ‘একজন নাবিক পাস কনফিডেন্সি লাইসেন্স কোয়ালিফাই করে এবং সে থার্ড অফিসার বা অ্যাক্টিং থার্ড অফিসার হয় তখন তার বেতন প্রায় আড়াই থেকে ৩ হাজার ডলার হয়। যখন সে সেকেন্ড অফিসার হয় তারপরের ধাপে তখন সে তার বেতন এক্সপেক্ট করতে পারে সাড়ে ৪ থেকে ৫ হাজার ডলারের মতো। একজন ক্যাপ্টেনের স্যালারি ৮ হাজার ডলার। ম্যাক্সিমাম স্যালারি ১৫ থেকে ১৬ হাজার ডলারও হতে পারে।’

নাবিক হওয়ার এই স্বপ্ন যাত্রায় খরচের হিসাব মেলানো যাক এবার। দুই বছরের প্রি সি কোর্সের জন্য সরকারি মেরিন একাডেমিতে খরচ হয় প্রায় ১ লাখ টাকা আর বেসরকারিতে প্রায় ১৩ লাখ টাকার মতো। এক বছরের পেইড ইন্টার্নশিপে ক্যাডেটরা মাসে আয় করেন ৫০০ ডলারের মতো যা টাকার হিসেবে প্রায় ৫৫ হাজার। অপরদিকে সরকারিতে একাডেমিক বিএসসির খরচ হয় প্রায় ৫০ হাজার টাকা আর বেসরকারিতে প্রায় ৩ লাখ টাকা।

নৌ-পরিবহন অধিদপ্তরের তথ্য বলছে, বর্তমানে দেশে নিবন্ধিত নাবিকের সংখ্যা প্রায় সাত হাজার। আর নাবিক এবং অফিসার মিলে এই সংখ্যা দাঁড়ায় ১৯ হাজার। তাদের বার্ষিক আয় প্রায় ৪ হাজার কোটি টাকা।

নৌ-পরিবহন অধিদপ্তরের মহাপরিচালক কমডোর এম. মাকসুদ আলম বলেন, ‘নাবিক এবং অফিসার সব মিলে আমাদের আয় গত বছরের হিসেবে ছিল ৩ হাজার ৯৪৩ কোটি টাকা। ডলারে হিসাব করলে প্রায় ৪০০ মিলিয়নের কাছাকাছি। এটা দেশের অর্থনীতিতে সরাসরি ভূমিকা রাখছে।’

আন্তর্জাতিক বাজারে বাংলাদেশি ক্যাডেটদের চাহিদা বাড়ছে। তবে ভিসা জটিলতার কারণে নিয়োগ পেলেও বিশ্বের খ্যাতনামা শিপিং কোম্পানীর চাকরিতে যোগ দিতে পারছে না বাংলাদেশি নাবিকরা। তবে নৌ-পরিবহন অধিদপ্তর বলছে ভিসা জটিলতার নিরসনে কাজ করছে তারা।

নৌ-পরিবহন অধিদপ্তরের মহাপরিচালক বলেন, ‘বাংলাদেশের কাছাকাছি যে সমস্ত দেশ রয়েছে, সে দেশগুলোতে যদি অন এরাইবাল ভিসা আমাদের নাবিকরা পায় তাহলে তাদের এমপ্লয়মেন্ট সুযোগটা অনেক বাড়বে। এবং একইলক্ষ্যে পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় ও আমরা একসাথে কাজ করে যাচ্ছি।’

ইন্টারন্যাশনাল চেম্বার অফ শিপিংয়ের তথ্য অনুযায়ী, বর্তমানে সারা বিশ্বে প্রায় ১৯ লাখ নাবিক আছেন। এর মধ্যে সর্বাধিক নাবিক সরবরাহকারী দেশের তালিকার শীর্ষে আছে ফিলিপাইন, ইন্দোনেশিয়া, রাশিয়া এবং চীন। নাবিকের বড় বাজারে বাংলাদেশি নাবিকের সংখ্যা মাত্র ১ দশমিক ৫ শতাংশের মতো। কিন্তু এই বাজারে বাংলাদেশি ক্যাডেটদের যুক্ত হওয়ার অপার সম্ভাবনা রয়েছে।

এখন ক্যাডেট প্রশিক্ষণে সুযোগ সুবিধা বাড়ানো হলে বিশ্ববাজারে বাংলাদেশি ক্যাডেটদের অংশগ্রহণ আরও বাড়ানো সম্ভব বলে মনে করছেন সংশ্লিষ্টরা।


সর্বশেষ - জাতীয় সংবাদ