1. অন্যরকম
  2. অপরাধ বার্তা
  3. অভিমত
  4. আন্তর্জাতিক সংবাদ
  5. ইতিহাস
  6. এডিটরস' পিক
  7. খেলাধুলা
  8. জাতীয় সংবাদ
  9. টেকসই উন্নয়ন
  10. তথ্য প্রযুক্তি
  11. নির্বাচন বার্তা
  12. প্রতিবেদন
  13. প্রবাস বার্তা
  14. ফিচার
  15. বাণিজ্য ও অর্থনীতি

রংতুলিতে শাটল ট্রেনের বগি রাঙালেন জার্মানির লুকাস

চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিনিধি : ইবার্তা টুয়েন্টিফোর ডটকম
বৃহস্পতিবার, ২৮ জুলাই, ২০২২

প্রকৃতির অপরূপ সৌন্দর্যের লীলাভূমি চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয় (চবি)। ক্যাম্পাসের এই সৌন্দর্য মুগ্ধতা করবে যে কাউকে। পাহাড় ঘেরা ও সবুজের সমারোহে দুই হাজার একশ একরের ক্যাম্পাসে শিক্ষার্থীদের একমাত্র যাতায়াত বাহন শাটল ট্রেন। বর্তমান ও প্রাক্তন শিক্ষার্থীদের হাজারো স্মৃতির বাস্তব সাক্ষী শাটল। এই শাটলে যাতায়াতের মাধ্যমে এখানকার শিক্ষার্থীদের মাঝে গড়ে ওঠে বন্ধুত্ব। কখনো এটি গড়ায় প্রণয়ে। এখানেই ভাগাভাগি হয় জীবনের সংকটের কথা, হয় আড্ডা, খুনসুটি। যেগুলো এক সময় স্মৃতিতে জমা হয় শুধু। এবার সেই শাটল ট্রেনের বিবর্ণ বগিগুলোতে শিক্ষার্থীদের স্মৃতিগুলোকে আবারও বাস্তবে রঙিন করে তুলেছেন জার্মান শিল্পী লুকাস জিলিঞ্জার।

গত ২২জুলাই থেকে এই নান্দনিক শিল্পকর্ম শুরু করেন জার্মানির আরইউএসবি আর্ট গ্রুপের প্রধান শিল্পী লুকাস জিলিঞ্জার। নিজ অর্থায়নে এসব কাজ করেন তিনি। তাকে সহযোগিতা করেন স্ত্রী লিভিযা জিলিঞ্জার ও বিশ্ববিদ্যালয়ের নাট্যকলা বিভাগের শিক্ষক অরুপ বড়ুয়া। তাদের শিল্পকর্মে তুলে ধরা হয়েছে বাংলাদেশের নানা ঐতিহ্য ও গুরুত্বপূর্ণ স্থান। এগুলোর মধ্যে সুন্দরবনের রয়েল বেঙ্গল টাইগার, রেলওয়ে স্টেশন, সংসদ ভবন, সিআরবি, সূর্যাস্তের দৃশ্য, সমুদ্রসহ বেশকিছু নান্দনিক স্থান। তবে বিশ্ববিদ্যলয় শিক্ষার্থীদের ক্লাস চলাকালে চালু থাকে শাটল।

সে কারণে শাটল ট্রেন সব সময় এক স্টেশনে দাঁড়িয়ে থাকে না। যে স্টেশনে ট্রেন দাঁড়িয়ে থাকে সেখানে ছুটে যান জিলিঞ্জার। এভাবে ট্রেনে গ্রাফিতি কাজে ব্যস্ত থাকেন তিনি। এই চিত্রকর্ম সাড়া ফেলেছে পুরো ক্যাম্পাস জুড়ে। উচ্ছ্বাস দেখিয়েছে বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা। রঙিন শাটলের পাশে হাসিমুখে ছবি তুলছেন অনেকে। কেউবা মোবাইল ফোনে ছবি, ভিডিও ধারন করে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমেও শেয়ার করছেন। শাটলে নতুন এক মাত্রা যোগ করেছে, যা মুগ্ধ করবে সবাইকে।

মাস্টার্সের শিক্ষার্থী শারমিন আক্তার বর্ষা বলেন, ‘যদিও এর আগে শাটল ট্রেন বর্ণিল হওয়ার কথা শুনেছি। তবে সেটা গ্রাফিতিতে ছিল না। জার্মান শিল্পী লুকাসের গ্রাফিতিগুলো দেখে আসলেই মুগ্ধ হচ্ছি। শিল্পের প্রতি একটা ফ্যাসিনেশন আছে বলেই তিনি নিজ খরচে, পরিশ্রম দিয়ে এত সুন্দর কাজ আমাদের উপহার দিয়েছেন।’

তিনি আরও বলেন, ‘শুধুমাত্র বিশ্ববিদ্যালয়ের শাটল ট্রেন নয়, আমাদের চারুকলা বা যেসব শিক্ষার্থী শিল্পকর্মের ধারণা রাখে তাদের সবার উচিৎ বিশ্ববিদ্যালয় প্রাঙ্গণকে আরও বেশি বেশি করে রাঙিয়ে তোলা। এমন অনেক শিক্ষার্থী আছে যারা মনে মনে এই ইচ্ছেটুকু পোষণ করেন। কিন্তু সহযোগিতার অভাবে ইচ্ছে পূরণ করতে পারে না। ক্যাম্পাসের স্টেশনকে যেহেতু এখন নতুন রূপ দেওয়া হয়েছে। সেটাকেও রাঙিয়ে তোলা যায়। বিশ্ববিদ্যালয় প্রাঙ্গণ যেন শিক্ষার্থীদের শিল্পকর্ম চর্চার স্থান হয়ে ওঠে।’

ইসলামিক স্টাডিজ বিভাগের ২০১৭-১৮ শিক্ষাবর্ষের রুদ্র ফারাবি বলেন, ‘চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের নাম বললে সর্বপ্রথম শাটলের গল্প মনে পড়ে যায়। শাটল ট্রেনের প্রতিটি বগি, সিট ও পাটাতন শিক্ষার্থীদের গল্প-আড্ডা, খুনসুটি আর বন্ধুত্বের বেড়াজালে গানের প্রাণরসে পরিপূর্ণ। প্রতিদিন ক্লাস শেষে ক্লান্তির ঝাপসা গুমোট আবহকে পশ্চাতে ফেলে প্রত্যেক শিক্ষার্থীই আপন মনে গলা মেলায় এখানে সুরের মূর্ছনায়। অগ্রজ-অনুজ সম্পর্কের দূরত্ব ভুলে সৃষ্টি করে প্রাণবন্ত এক পরিবেশ। ট্রেনের ভেতরের এই আবেগ যদি বাইরে রঙের জাদুতে মূর্ত হয় তবে তা হবে অনন্য এক কাজ। জার্মান শিল্পীর রঙে শাটল ট্রেন পাক নতুন রঙ। তবে শুধু রঙ না করে শাটলের মানও বাড়ানো উচিত বলে মনে করছি।’

লুকাস জিলিঞ্জারকে সহায়তা করেছেন বিশ্ববিদ্যালয়ের নাট্যকলা বিভাগের শিক্ষক অরুপ বড়ুয়া। লুকাস দেশের উদ্দেশে ফিরে যাচ্ছেন বলেও জানান তিনি। ফলে জিলিঞ্জারের সঙ্গে কথা বলার সুযোগ হয়নি। বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক অরুপ বড়ুয়া বলেন, ‘উনি (লুকাস) আমাদের বিশ্ববিদ্যালয় সম্পর্কে আমার মাধ্যমে জানতে পারে। পরিচিত মাধ্যমে চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ে আমার কাছে একদিন এসেছে। উনিও আর্টিস্ট, আমিও আর্টিস্ট। আমাদের বন্ধুত্ব গড়ে ওঠে। সেই সুবাধে আমাদের বিশ্ববিদ্যালয় শাটলে রঙ করার আগ্রহ প্রকাশ করে।’

তিনি বলেন, ‘পরবর্তী সময়ে আমাদের দেশে একটা কাজ করে দেবেন। আমিও তার দেশে গিয়ে একটা কাজ করে দিয়ে আসব। মূলত আমাদের শাটলকে যেন আলাদাভাবে চেনা যায়, সে কারণে এই কাজটা করা। পৃথিবীজুড়ে উনি এসব কাজ করেন। আপাতত শাটলে কাজ  শেষ। উনি জার্মানে চলে যাবেন। তবে পরবর্তী সময়ে হয়তো আরেকটি কাজ আমরা করতে পারি।’

চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ে শাটল ট্রেনের যাত্রা শুরু হয় ১৯৮০ সালে। এরপর থেকেই এটি বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীদের একমাত্র যাতায়াতের মাধ্যম। প্রতিদিন সকালে শহরের বটতলী স্টেশন থেকে এক জোড়া শাটল ক্যাম্পাসে উদ্দেশে যাত্রা শুরু করে। সে সময় শাটল ট্রেনের প্রতিটি বগিতে আলাদা আলাদা নাম দেওয়া হয়। তবে এগুলো কোনো রেলওয়ে কর্তৃপক্ষ দেওয়া সোনার বাংলা, সুবর্ণ এক্সপ্রেস, মহানগর গোধূলী, উদয়ন এক্সপ্রেস, মেঘনা এক্সপ্রেস, তূর্ণা এক্সপ্রেস নয়।

এগুলো চবির বগিবাজ শিক্ষার্থীদের দেওয়া দোস্ত, ককপিট, অলওয়েজ, অক্টোপাস, সিক্সটি নাইন, একাকার, ফাইট ক্লাব, ফাটাফাটি, ভিএক্স, সিএফসি, উল্কা, এফিটাফ, বিজয় নামে এক সময় পরিচিতি লাভ করেছিল। আর এই বগিগুলো ছিল শিল্পের কারুকাজে রঙচঙা। এসব বগিভিত্তিক সংগঠন থেকেই উঠে আসতো ছাত্র রাজনীতি নতুন মুখ। ২০১৫ সালের দিকে চবিতে বগিভিত্তিক সংগঠনের রাজনীতি নিষিদ্ধ হওয়ার পরপরই এসব সংগঠন ক্যাম্পাসে থাকলেও শাটলের বগি থেকে প্রায় বিচ্ছিন্ন হয়ে যায়।


সর্বশেষ - জাতীয় সংবাদ