ফ্রান্সে পুলিশের গুলিতে এক কিশোর নিহত হওয়ার ঘটনায় গত চারদিন ধরে বিক্ষোভ অব্যাহত রয়েছে। হাজার হাজার পুলিশ মোতায়েন করেও ঠেকানো যাচ্ছে না বিক্ষুব্ধ জনতাকে। পুলিশ ও বিক্ষোভকারীদের মধ্যে দফায় দফায় সংঘর্ষ ও দাঙ্গার ঘটনা ঘটেছে। শত শত ভবন ও গাড়িতে আগুন দেয়া হয়েছে। আরও সহিংসতা ও দাঙ্গার আশঙ্কা করা হচ্ছে।
এদিকে এমন পরিস্থিতিতে পূর্ব নির্ধারিত জার্মানি সফর স্থগিত করার সিদ্ধান্ত নিয়েছেন ফরাসি প্রেসিডেন্ট ইমানুয়েল ম্যাক্রোঁ। বিবিসির প্রতিবেদন মতে, গত ২৩ বছরের মধ্যে প্রথম কোনো ফরাসি প্রেসিডেন্ট হিসেবে রোববার (২ জুলাই) তিনদিনের রাষ্ট্রীয় সফরে জার্মানিতে যাওয়ার কথা ছিল ম্যাক্রোঁর।
গত মঙ্গলবার (২৭ জুন) সকালে প্যারিসের পশ্চিমে ন্যান্টা এলাকায় গাড়ি চালিয়ে যাওয়ার সময় আরব বংশোদ্ভূত ১৭ বছর বয়সি কিশোর নাহেল এমকে গুলি করে হত্যা করে পুলিশ। খবরে বলা হয়েছে, সড়কে পুলিশের নির্দেশ অমান্য করায় ওই কিশোরকে গুলি করা হয়।
এ ঘটনায় ক্ষোভে ফুঁসে ওঠে পুরো ফ্রান্স। মঙ্গলবার রাতেই রাজধানী প্যারিসের বেশ কয়েকটি এলাকায় সহিংস বিক্ষোভ শুরু হয়। বেশ কিছু গাড়ি পুড়িয়ে দেয় বিক্ষোভকারীরা।
কয়েকটি ভবনেও আগুন দেয়া হয়। বিক্ষোভের মুখে কয়েক হাজার অতিরিক্ত পুলিশ মোতায়েন করা হয়। শুরু হয় ধরপাকড়। এখন পর্যন্ত এক হাজার ৩০০ বিক্ষোভকারীকে গ্রেফতার করা হয়েছে। আটক হওয়াদের এক তৃতীয়াংশই বয়সে কিশোর।
কিন্তু এরপরও এরপরও থামানো যাচ্ছে বিক্ষুব্ধ জনতাকে। চার দিনের বেশি সময় ধরে জ্বালাও-পোড়াও চলছে। পুলিশ ও বিক্ষোভকারীদের মধ্যে দফায় দফায় সংঘর্ষের ঘটনা ঘটেছে।
দাঙ্গায় এখন পর্যন্ত দুই হাজার ৫৬০টি জায়গায় আগুন লাগার ঘটনা ঘটেছে। অন্তত এক হাজার ৩৫০টি গাড়ি ভাঙচুর করা হয়েছে ও পুড়িয়ে দেয়া হয়েছে। এছাড়া থানা ও টাউনহলসহ ২৩৪টির বেশি ভবনে ভাঙচুরের ঘটনা ঘটেছে।
দাঙ্গা ঠেকাতে এরই মধ্যে ৪৫ হাজার পুলিশ মোতায়েন করেছে সরকার। এর পাশাপাশি সাঁজোয়া যান ও নামানো হয়েছে। এরই মধ্যে রোববার (১ জুলাই) পুলিশের হাতে নিহত কিশোর নায়েলের জানাজা সম্পন্ন হয়েছে। রাজধানী প্যারিসের কাছেই একটি মসজিদে জানাজা শেষে তার লাশ স্থানীয় কবরস্থানে নিয়ে যাওয়া হচ্ছে।
দাফনের পর রাজধানীর ন্যান্টাসহ অন্যান্য শহরে আরও দাঙ্গা হতে পারে বলে আশঙ্কা করা হচ্ছে। শনিবার (৩০ জুন) রাতে ন্যান্টা এলাকায় ভয়াবহ দাঙ্গা ও সেই সঙ্গে লুটপাটের ঘটনা ঘটেছে। ফলে পার্শ্ববর্তী মার্শেই শহরে অতিরিক্ত পুলিশ পাঠানো হয়েছে।
ফ্রান্সজুড়ে শনিবার রাতেই থানা ও টাউনহলসহ ২৩০টিরও বেশি ভবন ভাঙচুর করা হয়েছে এবং ১ হাজার ৩০০টি যানবাহন ধ্বংস হয়েছে। পুলিশ বিভাগের পক্ষ থেকে জানা হয়েছে, টানা চারদিন ও চার রাতের পাহারা দেয়ার পর পুলিশ সদস্যরা ক্লান্ত-শ্রান্ত হয়ে পড়েছে। এছাড়া টিয়ারগ্যাস ও সাউন্ড গ্রেনেডের মতো হালকা গোলাবারুদের মজুদও কমে আসছে।