1. অন্যরকম
  2. অপরাধ বার্তা
  3. অভিমত
  4. আন্তর্জাতিক সংবাদ
  5. ইতিহাস
  6. এডিটরস' পিক
  7. খেলাধুলা
  8. জাতীয় সংবাদ
  9. টেকসই উন্নয়ন
  10. তথ্য প্রযুক্তি
  11. নির্বাচন বার্তা
  12. প্রতিবেদন
  13. প্রবাস বার্তা
  14. ফিচার
  15. বাণিজ্য ও অর্থনীতি

বিএনপির বিদেশযাত্রা ও কিছু কথা

সুভাষ সিংহ রায় : ইবার্তা টুয়েন্টিফোর ডটকম
সোমবার, ৩ জুলাই, ২০২৩

মোহাম্মাদ জুয়েল হোসেন গাজী নামে ঢাকার মিরপুরের স্বেচ্ছাসেবক দলের কর্মী কানাডায় রাজনৈতিক আশ্রয়ের আবেদন করেন। আবেদন গ্রহণ করে ২০১৫ সালের ২৮ এপ্রিল তাকে স্থায়ী বাসিন্দা হিসেবে প্রথম পর্যায়ের অনুমোদন দেওয়া হয়। কিন্তু ২০১৬ সালের ১৬ মে তাকে কানাডায় প্রবেশের অযোগ্য হিসেবে ঘোষণা করা হয়। আবেদন নাকচ হওয়ার পর ফেডারেল কোর্টে জুডিশিয়াল রিভিউ আবেদন করেছিলেন জুয়েল হোসেন গাজী। বিএনপির সদস্য হওয়ায় তাকে কানাডায় প্রবেশের অনুপযুক্ত ঘোষণা করে বলা হয়, ‘বিএনপি সন্ত্রাসী কাজে লিপ্ত ছিল, লিপ্ত আছে বা লিপ্ত থাকবে—এটি বিশ্বাস করার যৌক্তিক কারণ আছে’। এ সিদ্ধান্তের পক্ষে যুক্তি দিতে গিয়ে কানাডার ক্রিমিনাল কোডের ধারা তুলে ধরে সংশ্লিষ্ট ইমিগ্রেশন কর্মকর্তা বলেন, ‘বিএনপির ডাকা হরতাল বাংলাদেশের অর্থনীতিতে ক্ষতিকর প্রভাব ফেলে। বিএনপি কর্মীদের হাতে মালামালের ক্ষয়ক্ষতি ছাড়াও মৃত্যু এবং আহত হওয়ার ঘটনা ঘটে। আমি লক্ষ করেছি, অতীতে কোনো কোনো ঘটনায় বিএনপির নেতৃত্ব নিজেদের সম্পৃক্ততা অস্বীকার করেছে এবং সন্ত্রাসী তৎপরতার নিন্দা করেছে। কিন্তু বিএনপির দাবি-দাওয়া সরকারকে মানতে বাধ্য করতে লাগাতার হরতালের কারণে সৃষ্ট সহিংসতা প্রমাণ করে, এটি নিয়মতান্ত্রিক উপায়ে শান্তিপূর্ণ প্রতিবাদের বাইরে চলে গেছে।’

বিএনপি যখন রাষ্ট্রক্ষমতায় থাকে তখন বিরোধী দল নিধনে যা যা করেছে তা পাঠক মাত্রই জেনে থাকবেন। ২০০৪ সালের ২১ আগস্ট গ্রেনেড হামলার মতো সন্ত্রাসী হামলা বিশ্ববাসীর জানা নেই। নৃশংস ওই হামলায় ২৪ জন নিহত হন এবং তৎকালীন বিরোধীদলীয় নেত্রী শেখ হাসিনাসহ প্রায় ৩০০ লোক আহত হন। হামলায় নিহতদের মধ্যে আওয়ামী লীগের শীর্ষস্থানীয় নারী নেত্রী আইভি রহমান অন্যতম, যিনি বাংলাদেশের ১৯তম রাষ্ট্রপতি জিল্লুর রহমানের স্ত্রী।

বিএনপির সন্ত্রাসের নজির আগেও দেখা গেছে। ১৯৯৬ সালের ১২ জুন আওয়ামী লীগ সরকার দেশ পরিচালনায় দায়িত্বে আসে। তার তিন মাসে আগেও ৭ মার্চ আওয়ামী লীগের বঙ্গবন্ধু অ্যাভিনিউর জনসভায় সন্ত্রাসী হামলা চালিয়েছিল। সে সময়কার সব দৈনিকে সেই সংবাদ ছাপা হয়েছিল। দৈনিক ইত্তেফাক পত্রিকার ভাষ্যমতে, ‘‘গতকাল বৃহস্পতিবার সন্ধ্যায় বঙ্গবন্ধু অ্যাভিনিউতে আওয়ামী লীগের সমাবেশে দলীয় সভানেত্রী শেখ হাসিনার বক্তৃতার পর অকস্মাৎ একটি মাইক্রোবাস হইতে সভামঞ্চ লক্ষ্য করিয়া গুলিবর্ষণ ও বোমা নিক্ষেপ করা হইলে অন্তত ২০ জন আহত হন। এদের মধ্যে তিনজনকে মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে। মাথায় গুলিবিদ্ধ অজ্ঞাতপরিচয় একজনের অবস্থা আশঙ্কাজনক। সমাবেশে সভানেত্রী শেখ হাসিনার বক্তৃতা শেষ হওয়ার সঙ্গে সঙ্গে এই হামলা চালানো হয়।’’ ওই দিনের হামলা শুধু বঙ্গবন্ধু অ্যাভিনিউতে সীমাবদ্ধ ছিল না। হামলার রেশ চলছিল ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় ও প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয়েও। সংবাদপত্র তথ্য অনুসারে, ‘‘একই মাইক্রোবাস থেকে প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয় ও টিএসসি এলাকায় গুলিবর্ষণ করা হয়।’’ ওই ঘটনার আকস্মিকতায় পুরো গুলিস্তান ও বিশ্ববিদ্যালয় এলাকা রণক্ষেত্রে পরিণত হয়। জনসভায় সভানেত্রী শেখ হাসিনার উপস্থিতি ও ভাষণ প্রদানকে কেন্দ্র করে তার জীবননাশের ষড়যন্ত্র রচিত হয়। দফায় দফায় সংঘর্ষ, গুলিবর্ষণ, অগ্নিসংযোগ ও পরিস্থিতি মোকাবিলায় পুলিশের কাঁদানে গ্যাস নিক্ষেপ সবকিছু মিলিয়ে এমন একটি ভীতিকর ও ধ্বংসাত্মক পরিস্থিতির সৃষ্টি করা হয় যা ছিল উদ্দেশ্যপ্রণোদিত ও ষড়যন্ত্রমূলক।

ঘটনা এখানেই শেষ হয়নি, আওয়ামী লীগ সভানেত্রী শেখ হাসিনার প্রাণনাশের চেষ্টার প্রতিবাদে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের বিক্ষুব্ধ ছাত্ররা ওইদিন সন্ধ্যা ৭টায় ছাত্রলীগের নেতৃত্বে একটি প্রতিবাদ মিছিল বের করে। ওই মিছিলে ছাত্রলীগের যুগ্ম সম্পাদক শাহজাহান আলম বক্তৃতা করেন। কিন্তু তার বক্তৃতা চলাকালীন পর পর কয়েকবার ফাঁকা গুলি বর্ষিত হয়। বিএনপি আমলের এই হামলা-মামলা, আরও পরিষ্কারভাবে বলতে গেলে রাজনৈতিক কর্মসূচিতে গুলি করার প্রবণতা শুধু যে এতটুকুতে শেষ হয়েছে, তা নয়। এর পরও পেট্রোল বোমা, হরতালের নামে মানুষ পুড়িয়ে মারাসহ সন্ত্রাসী কার্যকলাপের অগণিত উদাহরণ তারা স্থাপন করেছে।

দলটির বর্তমান ভারপ্রাপ্ত চেয়ারপারসন তারেক রহমান; যিনি বাংলাদেশ তো বটেই, আন্তর্জাতিকভাবেও একজন দুর্নীতিপরায়ণ ও সন্ত্রাসী হিসেবে চিহ্নিত। বিদগ্ধ পাঠক নিশ্চয়ই জেনে থাকবেন, ২০১১ সালের ৩০ আগস্ট বেগম খালেদা জিয়ার পুত্র তারেক রহমানের অপকর্ম উইকিলিকসে ফাঁস হয়; যেখানে তারেককে Symbol of violent politics বা ‘সহিংস রাজনীতির প্রতীক’ হিসেবে আখ্যায়িত করা হয়। যুক্তরাষ্ট্রের রাষ্ট্রদূত জেমস এফ মরিয়ারটি ২০০৮ সালের ৩ নভেম্বর ওয়াশিংটনে পাঠানো এক বার্তায় উল্লেখ করেন, দুর্নীতিগ্রস্ত ও উগ্র এমন এক সরকার যে তার নিজের দেশের জনগণ ও সম্পদ লুণ্ঠন করে—তার প্রতিনিধিত্ব করেন তারেক। এ তথ্যই পরে (২০১১ সালের ৩০ আগস্ট) উইকিলিকস ফাঁস করে। বার্তায় আরও বলা হয়, ‘তারেক রহমান সরকারি তহবিল থেকে মিলিয়ন মিলিয়ন ডলার চুরি করে যুক্তরাষ্ট্রের জন্য কৌশলগতভাবে গুরুত্বপূর্ণ মুসলমান সংখ্যাগরিষ্ঠ মধ্যমপন্থি (মডারেট) এই দেশটিতে স্থিতিশীল সরকার ব্যবস্থা বজায় রাখার প্রচেষ্টা নষ্ট করে দিচ্ছে।’ মরিয়ারটির সুপারিশ ছিল, দুর্নীতি ও সন্ত্রাসবাদের সঙ্গে যোগাযোগ থাকায় তারেক রহমানকে যুক্তরাষ্ট্রে প্রবেশে নিষেধাজ্ঞা দেওয়া উচিত। এর ছয় মাস পর যুক্তরাষ্ট্রের চার্জ দ্য অ্যাফেয়ার্স গীতা পাসির পাঠানো বার্তায় বলা হয়, তারেক রহমানের ভিসা বাতিলের কথা চিন্তা করছে যুক্তরাষ্ট্রের পররাষ্ট্র দপ্তর।

সবকিছু বুঝতে পেরেই চিকিৎসার নামে ২০০৮ সাল থেকে সপরিবারে যুক্তরাজ্যে অবস্থান করছেন তারেক রহমান। যিনি দুটি মামলা তথা জিয়া অরফানেজ ট্রাস্ট দুর্নীতি মামলা ও মুদ্রাপাচার মামলায় দণ্ডপ্রাপ্ত আসামি। পাঠকদের সামনে ২০১১ সালের ৯ সেপ্টেম্বর ইংরেজি দৈনিক ‘ডেইলি স্টার’ এর প্রকাশিত প্রতিবেদনের প্রতি দৃষ্টি আর্কষণ করব। শিরোনামের কথা আগেই উল্লেখ করেছি—‘ Tarique symbol of violent politics’ (Portraying Tarique Rahman as a symbol of “kleptocratic government and violent politics” in Bangladesh, the US embassy in Dhaka even recommended blocking his entry into the United States.

The embassy believed Tarique was “guilty of egregious political corruption that has had a serious adverse effect on US national interests”, namely the stability of democratic institutions and US foreign assistance goals, a leaked US embassy cable says.)

১৯৭৮ সালে বিএনপি যখন প্রথম দফায় ক্ষমতায় আসে তখন এর গঠন ও দর্শন নিয়ে পাকিস্তানের দি হেরাল্ড পত্রিকায় একটি লেখা প্রকাশিত হয়েছিল। যার ভাষ্য ছিল এমন, ‘বিএনপির জন্ম ছিল পাকিস্তানি গোয়েন্দা সংস্থার নীলনকশার ফলশ্রুতি।… এই দলের জন্য যে দর্শন নির্ধারণ করা হয়েছিল, তা হলো আওয়ামী লীগের দুর্বল স্থানে আঘাত করা এবং জনগণের মধ্যে ভারতবিরোধী মনোভাব জাগ্রত করা।’

বিএনপির বয়স একেবারে কম নয়; দেখতে দেখতে ৪৪ বছর হয়ে গেল। কিন্তু এ দল এখন পর্যন্ত কাণ্ডজ্ঞানসম্পন্ন হলো না। বিএনপির একজন যুগ্ম মহাসচিব দুর্নীতি দমন কমিশনের সচিবের কাছে দুর্নীতিবিষয়ক দুটো প্রমাণপত্র দিয়ে এসেছেন। এর মধ্যে একটি হচ্ছে আইনমন্ত্রী আনিসুল হকের সঙ্গে প্রধানমন্ত্রী বেসরকারি বিষয়ক উপদেষ্টা সালমান এফ রহমানে কথোপকথন। সেখানে অডিও তে সরকারের দুজন ব্যক্তি ‘ইনফোসরকার’ বিষয়ক কথা বলছিলেন এবং ‘এলটিএম’ বিষয়ক অগ্রগতি নিয়ে কথা হচ্ছিল। এটা নিয়ে দু-চারটি সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে বলা হয়েছিল ‘এলটিএম’ হচ্ছে প্রধানমন্ত্রী পুত্র সজীব ওয়াজেদ জয়ের কোম্পানি। এই হচ্ছে বিএনপির অবস্থা। ‘এলটিএম’ মানে হচ্ছে ‘লিমেটেড টেন্ডারিং মেথট’। বিএনপি বারবার ভ্রান্তির রাজনীতি করেছে ; দেশবাসীকে বিভ্রান্ত করার চেষ্টা করেছে।

দীর্ঘ সময়ের রাজনীতিতে বিএনপির এমন বহু অনিয়ম-অপকর্ম রয়েছে, যা বাংলাদেশের মানুষ বারবার বিশ্বাস করেছে, তাদের বিশ্বাস করতে হয়েছে। আর এ কারণেই তারা বারবার বাংলাদেশের রাজনীতিতে অপাঙক্তেয় হয়েছে। অনেকেরই মনে থাকবে বিএনপি ২০১৯ সালে একবার প্রধানমন্ত্রীর বাসভবন গণভবনের গেটে আরেকটি বিষয় নিয়ে হাজির হয়েছিল। বিষয়টা ছিল সরকার সংবিধানের ১৪৫ক ধারা লঙ্ঘন করেছে। এবার দেখা যাক সংবিধানের ১৪৫ ক ধারায় কী বলা হয়েছে। শিরোনাম হচ্ছে আন্তর্জাতিক চুক্তি।—“বিদেশের সহিত সম্পাদিত সকল চুক্তি রাষ্ট্রপতির নিকট পেশ করা হইবে, এবং রাষ্ট্রপতি তাহা সংসদে পেশ করিবার ব্যবস্থা করিবেন।’ বিএনপির অভিযোগপত্রে উল্লেখ করা হয়েছিল মাননীয় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ভারত সফরের সময়ে ফেনী নদীর পানিবণ্টন নিয়ে ভারতের সঙ্গে চুক্তি করেছেন। এবং তা সংসদে উপস্থাপিত হয়নি । অথচ সে সময়কার কথা সবারই মনে থাকার ভারতের সঙ্গে বাংলাদেশের কোনো পানি চুক্তি হয়নি। আন্তর্জাতিক চুক্তি আর সমঝোতা স্মারক এ দুয়ের পার্থক্য বুঝতে বিএনপির অনেক সময় লাগে। এখন তারা সবকিছু হারিয়ে বিদেশিদের দিকে তাকিয়ে আছে।

লেখক : সুভাষ সিংহ রায় – রাজনৈতিক বিশ্লেষক


সর্বশেষ - জাতীয় সংবাদ