1. অন্যরকম
  2. অপরাধ বার্তা
  3. অভিমত
  4. আন্তর্জাতিক সংবাদ
  5. ইতিহাস
  6. এডিটরস' পিক
  7. খেলাধুলা
  8. জাতীয় সংবাদ
  9. টেকসই উন্নয়ন
  10. তথ্য প্রযুক্তি
  11. নির্বাচন বার্তা
  12. প্রতিবেদন
  13. প্রবাস বার্তা
  14. ফিচার
  15. বাণিজ্য ও অর্থনীতি

যেভাবে পাল্টে গেছে ডেঙ্গু

অধ্যাপক ডা. মামুন আল মাহতাব : ইবার্তা টুয়েন্টিফোর ডটকম
শনিবার, ২৯ জুলাই, ২০২৩

ডেঙ্গু এই মুহূর্তে আলোচনায় হট কেক। সামনে জাতীয় নির্বাচনকে কেন্দ্র করে যতই তাতুক না কেন, আলোচনার টেবিল তারচেয়েও তেতে, ঢের বেশি তেতে আছে ডেঙ্গু জ্বর। এখনো ষড়ঋতুর বাংলাদেশে ডেঙ্গু মৌসুম শুরু হয়নি, তারপরও ভাঙছে একের পর এক রেকর্ড।

নব্বই দশকের শেষের দিকে এই দেশে ডেঙ্গুর পুনরুত্থানের পর, এতদিন পর ২০২৩ সালে, এর মধ্যে একদিনে সর্বোচ্চ সংখ্যক ডেঙ্গু রোগী থেকে শুরু করে একদিনে সর্বাধিক মৃত্যু—সবই আমাদের জানা-দেখা হয়ে গেছে। তার ওপর মড়ার উপর খাঁড়ার ঘায়ের মতো এসে হাজির হয়েছে উটকো আরেক ঝামেলা।

এই দেশে এডিস মশা তার সম্ভ্রান্ত পরিচয়টি হারিয়ে বসেছে। এক সময় যে এডিস মশা তিন থেকে চার দিনের বেশি জমে থাকা পানিতে ডিম পারতো না, সেই এডিসই এখন যত্রতত্র জমে থাকা নোংরা-ময়লা পানিতেও সমানে ডিম পেরে বংশবৃদ্ধির প্রতিযোগিতায় নেমেছে।

তাছাড়া ২০২৩ সালে এডিসের কেমন যেন একটা খাই-খাই ভাব! আগে তাও তো জানা ছিল যে এডিস বাড়বে ঘরের কোনো এক কোনায় জমে থাকা টলটলে পরিষ্কার, স্বচ্ছ পানিতে আর মানুষকে কামড়টা দেবে সাঁঝের বেলায় বা ইভিনিং ওয়াকে বেড়িয়ে।

এডিসের আগের সব গল্প আষাঢ়ে ঠেকেছে। এখন এডিস মশার কামড় খাওয়ার আর কোনো টাইম-টেবিল নেই। এডিস যেমন এখন বাড়তে পারে যেকোনো জায়গায়, তেমনি সেই কামড়টাও বসাতে পারে একদিনের চব্বিশটা ঘণ্টার যেকোনো সময়েই।

যত দিন গড়াচ্ছে ততই জটিল হচ্ছে ডেঙ্গু রোগ নির্ণয় আর পাশাপাশি বাড়ছে রোগের জটিলতাগুলোও। এতদিন জেনে-শিখে এসেছি একবার যদি ডেঙ্গু হয় তবে ডেঙ্গুর শক সিনড্রোমের ঝুঁকিটা থাকে পরের বছর কিংবা আরও পরে আবারও ডেঙ্গুর আক্রান্ত হলে।

সাম্প্রতিক প্রেক্ষাপট একেবারেই ভিন্ন। ইদানীং প্রথমবার ডেঙ্গুতে আক্রান্ত হওয়ার সপ্তাহখানেকের মধ্যেই দেখা দিচ্ছে এই প্রাণঘাতী সিনড্রোম। একই সাথে একাধিক স্ট্রেইনের ডেঙ্গু ভাইরাসের সংক্রমণই সম্ভবত এর জন্য দায়ী।

তাছাড়া একটা সময় ছিল যখন এই দেশে শুধুমাত্র ডেঙ্গুর ২ নম্বর সেরোটাইপটাই বেশিরভাগ মানুষের ডেঙ্গুর হওয়ার জন্য দায়ী ছিল। কিন্তু হালের পরিস্থিতি একেবারে ভিন্ন। এখন দেশে ডেঙ্গুর চারটি সেরোটাইপই পাওয়া যাচ্ছে আর একই ব্যক্তি একই সময় আক্রান্ত হচ্ছেন একাধিক সেরোটাইপ দিয়েও।

শুধু কি তাই? রোগ নির্ণয়ও ইদানীং যথেষ্ট কঠিন। আগে তো একদিন বা দুইদিন জ্বরের পর ডেঙ্গু এনএস১ অ্যান্টিজেন টেস্ট [Dengue Virus Antigen Detection (NS1)] করেই জেনে নেওয়া যেত ডেঙ্গু হয়েছে কি না, কিন্তু এখন একই ব্যক্তি একাধিক সেরোটাইপের ডেঙ্গু ভাইরাসে আক্রান্ত হচ্ছেন বলে রোগ-বালাইয়ের বিরুদ্ধে আমাদের শরীরের যে প্রাকৃতিক প্রতিরোধ বা ইমিউনিটি তা প্রায়শই বিভ্রান্ত হচ্ছে।

কাজেই ডেঙ্গু এনএস১ অ্যান্টিজেন টেস্টের ফলাফল নেগেটিভ মানেই যে ডেঙ্গু নেই, এই কথা এখন আর জোর গলায় বলা যাচ্ছে না। আর ডেঙ্গুর যে এখনো কোনো কার্যকর ওষুধ নেই, যেমন নেই ডেঙ্গু ভাইরাসের বিরুদ্ধে কার্যকর কোনো ভ্যাকসিনও, এসব কথাতো এখন বাচ্চা-কাচ্চাদেরও জানা।

তবে বেশি জানার সংকটও আছে। ডেঙ্গু নিয়ে ঘাঁটাঘাঁটি করতে গিয়ে এখন ডেঙ্গু আর প্লাটিলেট কাউন্ট শব্দদুটিকে আমরা প্রায়শই একে অপরের সমার্থক বানিয়ে ফেলছি। মানুষ নিজে নিজেই প্লাটিলেট কাউন্ট পরীক্ষা করাচ্ছেন, প্লাটিলেট কমতে শুরু করলে আতঙ্কিত হচ্ছেন, ছুটছেন হাসপাতালে আর প্লাটিলেট ভালো থাকলে ‘নো চিন্তা, ডু ফুর্তি’।

জ্বরটা কমে গেলেই আমরা হাঁফ ছেড়ে বাঁচছি। অথচ আমাদের মাথায় থাকছে না যে বিপদটা আসে জ্বরটা কমে গেলেই, জ্বর থাকতে নয়। তাছাড়া প্লাটিলেট কাউন্টের পাশাপাশি হেমাটোক্রিট (Hematocrit)-ও যে জরুরি সেটাও আমাদের জানা-বোঝার বাইরে। অথচ এই হেমাটোক্রিটে কমা আর বাড়া দুটোই ভয়ের।

হেমোরেজিক (Hemorrhagic) ডেঙ্গুতে যেমন হেমাটোক্রিট কমতে থাকে আর হেমাটোক্রিট বাড়ার মানেটা হচ্ছে ডেঙ্গু শক সিনড্রোমে ধরাশায়ী হওয়ার সময় অত্যাসন্ন। কাজেই নিজে নিজে ডাক্তারি করে নিজের বিপদ ডেকে না এনে যার কাজ তাকে, অর্থাৎ ডাক্তারকে করতে দেওয়াটাই বোধকরি বুদ্ধিমানের কাজ হবে।

ডেঙ্গুর চিকিৎসায় চিকিৎসকদের দক্ষতা বৃদ্ধিতে সরকার যথেষ্টই করছেন। তবে এটি মূলত সরকারি চিকিৎসকদের জন্য। একজন মেডিকেল প্র্যাক্টিশনার হিসেবে আমার মনে হয় এই বিষয়ে আরও কিছু করার সুযোগ আছে।

বিশেষ করে বেসরকারি হাসপাতালগুলোয় যে তরুণ চিকিৎসকরা ডেঙ্গুর ঢেউটা সামাল দিচ্ছেন তাদেরও এই প্রশিক্ষণের আওতায় নিয়ে আসাটাও জরুরি।

লেখক: অধ্যাপক ডা. মামুন আল মাহতাব (স্বপ্নীল) – ডিভিশন প্রধান, ইন্টারভেনশনাল হেপাটোলজি ডিভিশন, বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিক্যাল বিশ্ববিদ্যালয় ও সদস্য সচিব, সম্প্রীতি বাংলাদেশ।

 


সর্বশেষ - জাতীয় সংবাদ