1. অন্যরকম
  2. অপরাধ বার্তা
  3. অভিমত
  4. আন্তর্জাতিক সংবাদ
  5. ইতিহাস
  6. এডিটরস' পিক
  7. খেলাধুলা
  8. জাতীয় সংবাদ
  9. টেকসই উন্নয়ন
  10. তথ্য প্রযুক্তি
  11. নির্বাচন বার্তা
  12. প্রতিবেদন
  13. প্রবাস বার্তা
  14. ফিচার
  15. বাণিজ্য ও অর্থনীতি

ইমো’তে প্রতারণার ফাঁদে প্রবাসীরা

বিশেষ প্রতিবেদক : ইবার্তা টুয়েন্টিফোর ডটকম
সোমবার, ৩১ জুলাই, ২০২৩

বিদেশ থেকে পরিবারের সঙ্গে কথা বলতে এখন আর কোনও প্রবাসী সরাসরি ফোন কল করেন না। ইন্টারনেট ব্যবহার করে বিভিন্ন মোবাইল অ্যাপের মাধ্যমে প্রবাসীরা কথা বলেন, মেসেজ আদান প্রদান করেন। এসব মোবাইল অ্যাপলিকেশনের মধ্যে ‘ইমো’ সবচেয়ে বেশি ব্যবহার হয়। আর ইমো ব্যবহারকারী প্রবাসীরা সবচেয়ে বেশি প্রতারণার শিকার হচ্ছেন। প্রতারণার ফাঁদে ফেলে প্রবাসী ও তাদের স্বজনদের কাছ থেকে লাখ লাখ টাকা হাতিয়ে নিচ্ছে প্রতারক চক্র।

ইমো কী? কেন জনপ্রিয়?

মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র ভিত্তিক কোম্পানি পেজবাইটস ইনকরপোরেশনের মালিকানাধীন একটি কমিউনিকেশন প্ল্যাটফর্ম ইমো। এই অ্যাপ ব্যবহার করে ইন্টারনেটের মাধ্যমে বিশ্বের যে কোনও প্রান্তে অডিও-ভিডিও কল করা যায়। ইমোর জনপ্রিয়তার অন্যতম কারণ হলো ধীরগতির ইন্টারনেটেও নিরবচ্ছিন্ন কথা বলা যায়। ফলে ব্যবহারকারীদের ইন্টারনেট খরচ কম হয়। কল করার অন্যান্য অ্যাপের তুলনায় ইমো প্রায় ২০ থেকে ৩০ শতাংশ পর্যন্ত ডাটা সাশ্রয় করে থাকে। বিশ্বের দেড়শ’টিরও বেশি দেশে ৬২টি ভাষায় ২০ কোটিরও বেশি ব্যবহারকারী এটি ব্যবহার করেন।

প্রবাসীরা মোবাইলের ইন্টারনেট দিয়ে সহজে ইমো ব্যবহার করতে পারেন। অন্যদিকে দেশের প্রত্যন্ত এলাকায় প্রবাসীদের স্বজনরাও কম গতির ইন্টারনেট ব্যবহার করে ইমোর মাধ্যমে অডিও বা ভিডিও কলে যোগযোগ করতে পারছেন। একই সঙ্গে এই অ্যাপের মাধ্যমে ছবি, ভয়েস মেসেজ, লেখা, ভিডিও শেয়ার করা যায়। ফলে দুই প্রান্তেই উচ্চ গতির ইন্টারনেট সংযোগের প্রয়োজন না হওয়ায় ইমো জনপ্রিয়। অন্যদিকে মধ্যপ্রাচ্যের দেশগুলোতে হোয়াটসঅ্যাপে অডিও-ভিডিও কল করার সুযোগ না থাকায় ইমো’ই ভরসা।

টার্গেট প্রবাসী ও তাদের পরিবার

‘ইমো’ সবচেয়ে বেশি ব্যবহার করেন প্রবাসী ও তাদের পরিবার। তাই প্রতারক চক্রের টার্গেটও তারা। প্রবাসীরা তাদের পরিবার থেকে দূরে থাকেন, তাই পরিবার নিয়ে তাদের আবেগ অনুভূতিও বেশি। সে কারণে পরিবার কেন্দ্রিক যে কোনও ঘটনায় তারা যাচাই ছাড়াই সাড়া দেন। বিশ্বের এক প্রান্তে প্রবাসী আরেক প্রান্তে তার পরিবার। ফলে কোনও ঘটনা যাচাই-বাছাই করার আগেই প্রতারক চক্র তাদের প্রতারণা সেরে নিতে পারে।

রমিজ উদ্দিনের (ছদ্মনাম) আত্মীয় আজিজুল ব্যাপারি। ইতালিতে থাকেন রমিজ উদ্দিন। হঠাৎ একদিন আজিজুলের ইমো নম্বর থেকে রমিজ উদ্দিনের কাছে মেসেজ আসলো। আজিজুল লিখেছেন, তার একটু সাহায্য দরকার। ১২ হাজার টাকা ধার চাইলেন আজিজুল, দ্রুত ফেরত দেওয়ার আশ্বাস দিয়ে একটি বিকাশ নম্বর দিলেন। বিপদের কথা শুনে রমিজ উদ্দিন দ্রুত সেই নম্বরে ১২ হাজার টাকা পাঠালেন।

আজিজুল ব্যাপারির আরেক আত্মীয় জামাল মিয়ার (ছদ্মনাম) ইমো’তে মেসেজ আসলো। সেখানে আজিজুল লিখেছেন, মা অসুস্থ, হাসপাতালে নিতে হবে, দ্রুত টাকা দরকার। একটা বিকাশ নম্বর দিয়ে ৩০ হাজার টাকা চাইলেন আজিজুল। জামাল মিয়া দ্রুত ৩০ হাজার টাকা বিকাশ করলেন। এভাবে ইতালি আজিজুল ব্যাপারির আরও কয়েকজন আত্মীয়ের ইমো’তে টাকা চেয়ে মেসেজ গিয়েছে। তাদের মধ্যে অনেকেই টাকা দিয়েছেন।

লোভে পড়ে ফাঁদে পা দেন প্রবাসীরা

আজিজুল ব্যাপারি জানান, তার আত্মীয়দের কাউকেই তিনি টাকা চেয়ে মেসেজে দেননি। তার এক খালাতো ভাইয়ের কাছে মায়ের হাসপাতালের ভর্তি, আরেক খালাতো ভাইয়ের কাছে তার বাবা অসুস্থ হওয়ার কথা বলে টাকা চাওয়া হয়। তাতে তার দুই খালাতো ভাইয়ের সন্দেহ হলে তারা আজিজুলকে ঘটনা জানান। তখন আজিজুল বুঝতে পারেন তার ইমো অ্যাকাউন্ট তার নিয়ন্ত্রণে নেই, প্রতারক চক্রের নিয়ন্ত্রণে চলে গেছে।

আজিজুল বলেন, একদিন আমার কাছে অফার আসলো আমি লটারি জিতেছি। সেই লটারির পুরস্কার আমাকে দেওয়া হবে। এ জন্য আমার মোবাইলে একটি কোড তারা দিয়েছে, সেই কোডটি তাদের দিতে বলে। আমি কোডটি তাদের দেই। এরপর থেকেই আমার ইমো তাদের নিয়ন্ত্রণে চলে যায়।

ভুক্তভোগী প্রবাসী ও তাদের পরিবারের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, বেশিরভাগ ক্ষেত্রে লটারি পাওয়া, উপহার পাওয়া, দূতাবাস থেকে সহযোগিতা পাওয়াসহ নানান প্রলোভন দেখানো হয় প্রবাসীদের। উপহারের লোভে পড়ে প্রবাসীরা প্রতারকদের ফাঁদে পড়েন। প্রতারকরা প্রবাসীদের ইমো অ্যাকাউন্ট তাদের মোবাইল থেকে লগইন করতে পাসপাওয়ার্ড রিসেট দেয়, যার পিন কোড ব্যবহারকারীর মোবাইলে যায়। প্রবাসীরা সেই কোড নিজেই জানান প্রতারক চক্রকে। এরপর প্রতারক চক্র সেই ইমো অ্যাকাউন্টে থাকা যেসব নম্বরে বেশি যোগাযোগ হয় সেই অ্যাকাউন্টগুলোতে টাকা চেয়ে মেসেজ দিতে থাকে। কেউ ফোন করে যাচাই করতে চাইলে, প্রতারক চক্র কৌশল করে মেসেজ দেয়- বিপদে আছি, এখন কথা বলার মতো অবস্থায় নেই।

প্রতারণা থেকে বাঁচাতে পারে সচেতনতা

আমিরাত প্রবাসী রুনি আক্তারকে উপহার বিজয়ের কথা জানিয়ে ইমো’তে কোড পাঠানোর কথা বলেছিল প্রতারক চক্র। তবে প্রতারণার বিষয়ে সর্তক থাকায় তাদের কোনও কোড দেননি রুনি। তিনি বলেন, এসব বিষয়ে আমি আগে থেকেই খবরে দেখেছি। তাই কেউ কোনও কোড-পিন নম্বর চাইলে আমি দেই না।

কাতার প্রবাসী ইয়াসিন আরাফাত বলেন, প্রবাসীরা ইমো বেশি ব্যবহার করেন, এ কারণে প্রতারকদের টার্গেট ইমো ব্যবহারকারীদের ওপর। বিভিন্ন সময়ে নানান লোভ দেখিয়ে আমার কাছ থেকে পিন কোড চেয়েছিল প্রতারক চক্র। তবে আমি সতর্ক ছিলাম, তাদের কোনও কোড দেইনি, নিজেও নিরাপদ আছি।

সাইবার নিরাপত্তা সংশ্লিষ্টরা বলছেন, কোনোভাবেই মোবাইলের কোন অ্যাপ, ব্যাংকের পিন নম্বর, ব্যাংক কার্ডের পিন নম্বর অন্যকে দেওয়া যাবে না। যতই উপহারের কথা বলা হোক না কেন, মনে রাখতে হবে এসব প্রতারণার ফাঁদ।

ইমো’র নিরাপত্তা বিষয়ে জানতে বাংলাদেশে অ্যাপটির নির্মাতা প্রতিষ্ঠান পেজবাইটস ইনকরপোরেশনের জনসংযোগ প্রতিষ্ঠান ফোরথট পিআর লিমিটডের মাধ্যমে যোগাযোগ করা হয়। তবে তাদের পক্ষ থেকে কোনও জবাব পাওয়া যায়নি।

২৯ জুলাই ইমো প্রতারক চক্রের ৫ সদস্যকে গ্রেফতার করে চট্টগ্রাম মেট্রোপলিটন পুলিশের (সিএমপি) কাউন্টার টেরোরিজম ইউনিট। উপ-পুলিশ কমিশনার মোহাম্মদ লিয়াকত আলী খান সাংবাদিকদের বলেন, ভুক্তভোগী ব্যক্তির ইমো অ্যাকাউন্ট হ্যাক করে ওই অ্যাকাউন্টের কন্টাক্ট লিস্টে থাকা ব্যক্তিদের কাছ থেকে প্রতারণার মাধ্যমে বিকাশ এবং নগদ অ্যাকাউন্ট ব্যবহার করে মোটা অঙ্কের টাকা হাতিয়ে নেয় প্রতারক চক্র। ঘটনা বুঝতে পেরে ভুক্তভোগী গত ২৩ জুলাই চকবাজার থানায় ডিজিটাল নিরাপত্তা আইন মামলা দায়ের করেন। সেই মামলায় তাদের গ্রেফতার করা হয়েছে।


সর্বশেষ - জাতীয় সংবাদ