1. অন্যরকম
  2. অপরাধ বার্তা
  3. অভিমত
  4. আন্তর্জাতিক সংবাদ
  5. ইতিহাস
  6. এডিটরস' পিক
  7. খেলাধুলা
  8. জাতীয় সংবাদ
  9. টেকসই উন্নয়ন
  10. তথ্য প্রযুক্তি
  11. নির্বাচন বার্তা
  12. প্রতিবেদন
  13. প্রবাস বার্তা
  14. ফিচার
  15. বাণিজ্য ও অর্থনীতি

বঙ্গবন্ধু হত্যা: জিয়াউর রহমানের টেনিস-কোর্ট ষড়যন্ত্র

নিউজ এডিটর : ইবার্তা টুয়েন্টিফোর ডটকম
শনিবার, ১৪ আগস্ট, ২০২১

১৯৭৫ সাল। ঢাকা ক্যান্টনমেন্টে চেইন অব কমান্ডের প্রটোকলের বাইরেও কিছু কিছু ঘটনা ঘটতে থাকে। তৎকালীন উপসেনাপ্রধান জেনারেল জিয়াউর রহমানের কাছে ঘন ঘন আসতে থাকে চাকরিচ্যুত কিছু জুনিয়র সেনা কর্মকর্তা। আগস্ট মাসের শুরু থেকেই তাদের তৎপরতা আরো বেড়ে যায়। এমনকি অফিসাররা সন্ধ্যায় যেখানে লন টেনিস খেলতেন, সেখানেও নিয়মিত আসতে থাকে চাকরিচ্যুত মেজর নুর ও মেজর ডালিম। সিনিয়র অফিসারদের খেলার স্থানে চাকরিচ্যুত জুনিয়র অফিসারদের আড্ডা দেওয়ার ব্যাপারে আপত্তি জানান কয়েকজন। কিন্তু স্বয়ং উপসেনাপ্রধান জিয়াউর রহমান তাদের সেই অনুমতি দেওয়ায় চুপ থাকতে বাধ্য হন অন্যান্য সিনিয়র অফিসাররা।

সেই সময় ঢাকার স্টেশন কমান্ডার ছিলেন লে. কর্নেল ম. হামিদ। ১৯৭৫ সালের ১৪ আগস্ট বিষয়টি খেয়াল করেন তিনি। তার কাছে ডালিম ও নুরের গতিবিধি অস্বাভাবিক মনে হয়, কারণ তারা ছিল চাকরিচ্যুত অফিসার, তাদের এই অ্যাকসেস থাকার কথা না।

এমনকি এর আগেও, বিকালে খেলার সময় একদিন বিষয়টি নোটিশ করেছিলেন সেনাপ্রধান জেনারেল শফিউল্লাহ। তিনি স্টেশন কমান্ডার ম. হামিদকে বলেন, ‘এরা চাকরিচ্যুত জুনিয়র অফিসার। এরা কেনো এখানে টেনিস খেলতে আসে? এদের জানায়া দেবেন- এরা যেনো আর না আসে।’ খেলার পর ম. হামিদ মেজর নুরের কাছে জানতে চান, ‘তোমরা কার অনুমতি নিয়ে এখানে সিনিয়রদের মধ্যে খেলতে এসেছো?’ জবাবে মেজর নুর জানায়, তারা উপ-সেনাপ্রধান মেজর জেনারেল জিয়াউর রহমানের অনুমতি নিয়েই এসেছে। এই তথ্য পরবর্তীতে সেনাপ্রধানকে জানালে তিনি কিছুটা বিব্রত বোধ করেন এবং উপসেনাপ্রধানের এই কর্মে ক্ষোভ প্রকাশ করেন।

বঙ্গবন্ধু হত্যা মামলায় সাক্ষ্য দেওয়ার সময় ৯ নম্বর সাক্ষী লে. কর্নেল ম. হামিদ এসব তথ্য জানান। এমনকি আসামিরাও বিভিন্ন সময় এই কথার সত্যতা স্বীকার করেছে। এসব ব্যাপারে মেজর নুরের বক্তব্য থেকে জানা যায়, জিয়াউর রহমান তাদের বিশেষ স্নেহের দৃষ্টিতে দেখতেন। তারাও জিয়ার সঙ্গে ব্যক্তিগত সম্পর্ক রক্ষা করে চলতো এবং আগস্ট মাসে বঙ্গবন্ধুকে সরিয়ে দেওয়ার ব্যাপারে জিয়ার সঙ্গে পরামর্শ করতো। তবে জিয়া সরাসরি সামনে থেকে নেতৃত্ব দিতে থাকতে অপারগতা প্রকাশ করে, কিন্তু পেছনে থেকে তাদের জন্য সবরকম সুবিধা ও সুযোগ সৃষ্টি করে দেয়।

উল্লেখ্য যে, মেজর নুর একসময় মেজর জেনারেল জিয়াউর রহমানের ব্যক্তিগত স্টাফ অফিসার ছিল। তখন থেকেই জিয়াউর রহমানের একটা ব্যক্তিগত নিবিড় সম্পর্ক গড়ে ওঠে তার। পরবর্তীতে শৃঙ্খলাজনিত কারণে চাকরি হারানো ডালিম ও নুরকে বঙ্গবন্ধুকে হত্যার কাজে ইন্ধন দেয় জিয়া। এমনকি বঙ্গবন্ধুকে সপরিবারের নৃসংশভাবে হত্যার পর সেনাপ্রধান হয় জিয়া। এরপর ডালিম-নূরসহ বঙ্গবন্ধুর খুনিদের প্রমোশন দিয়ে চাকরিতে বহাল করে সে।

এদিকে বঙ্গবন্ধু হত্যার বিচার চলাকালে আসামি মেজর ফারুকের আইনজীবী খান সাইফুর রহমান আদালতে বারবার দাবি করে যে, এই হত্যাকাণ্ডের পেছনে আরেকটি তৃতীয় পক্ষ জড়িত। এমনকি বিদেশি গণমাধ্যমে দেওয়া একাধিক সাক্ষাৎকারে মেজর ফারুক নিজেও জানিয়েছিল যে, শুধু জুনিয়র অফিসারদের পক্ষে এই ঘটনা ঘটানো সম্ভব নয়। সেনাবাহিনীর উপ-প্রধান জেনারেল জিয়া এই হত্যাকাণ্ডের কথা আগেই জানত। তার সঙ্গে বেশ কয়েকজন অফিসারের পৃথক পৃথক আলোচনা হয়েছে এবিষয়ে।

উল্লেখ্য যে, পাকিস্তানি ভাবাদর্শে বিশ্বাসী মেজর ফারুক নিজে বাংলা বলতে ও লিখতে পারে না বলে নিজেই জানিয়েছে আদালতকে। ইংরেজিতে লিখিত বক্তব্যে সে জানায়, পশ্চিম পাকিস্তানে শিক্ষিত হওয়ার কারণে বাংলা শেখার সুযোগ তার হয়নি।

আরো একটি গুরুত্বপূর্ণ তথ্য জানা যায় বঙ্গবন্ধু হত্যার আরেক ষড়যন্ত্রী তাহের উদ্দীন ঠাকুরের জবানবন্দি থেকে। বঙ্গবন্ধু হত্যার মামলার বিচারের সময় দেওয়া লিখিত বক্তব্যে সে জানায়, ১৯৭৫ সালে কুমিল্লার পল্লী উন্নয়ন একাডেমিতে বিভাগীয় সম্মেলন চলাকালে খন্দকার মোশতাকের সঙ্গে দেখা করতে যায় কয়েকজন সেনা কর্মকর্তা। তারা হলো- মেজর রশীদ ও মেজর বজলুল হুদা। সারাদিন মোশতাদের সঙ্গে বৈঠক করে ওই দুই কর্মকর্তা।

তাহের উদ্দীন ঠাকুরের আরো জানায়, ‘আমি যখন খন্দকার মোশতাকের কাছে ওই কর্মকর্তাদের আসার কারণ জানতে চাই, সে কোনো উত্তর দেয় নাই। শুধু বলেছে যে, একজন সিনিয়র সেনাকর্মকর্তার হয়ে ওরা এসেছিল একটা বিষয়ে কথা বলতে। এরপর আর কিছু বলে নাই।’

তার সাক্ষ্য থেকে আরো জানা যায়, ৭৫ এর মে অথবা জুন মাসে গাজীপুরের শালনাতে আয়োজিত এক অনুষ্ঠানে মোশতাকের সঙ্গে কথা বলার জন্য কয়েকজন সেনা কর্মকর্তা হাজির হয়। তাদের মধ্যে মেজন নুর, মেজর শাহরিয়ার, মেজর ফারুকের নাম মনে আছে। সেসময় মোশতাক তাদের জিজ্ঞেস করেছিল যে, তোমাদের আন্দোলনের কী অবস্থা। জবাবে তারা জানিয়েছিল, বস (সিনিয়র সেনা অফিসার) সবকিছুর ব্যবস্থা নিচ্ছেন। আমরা শুধু তার প্রতিনিধি মাত্র। পরবর্তীতে খুনিদের সাক্ষাৎকার থেকেই জানা যায়, তাদের সেই বস এবং মোশতাকের সেই সিনিয়র কর্মকর্তাটি হলো তৎকালীন সেনাবাহিনীর উপপ্রধান মেজর জেনারেল জিয়াউর রহমান।

১৫ আগস্ট ধানমন্ডির ৩২ নম্বর রোডের বাড়িতে যখন এই জুনিয়র সেনারা নির্মম হত্যাযজ্ঞ চালাচ্ছিলো, ঠিক তখন, সেই শেষ রাতে নিজের বাসায় সামরিক পোশাক পরে সজ্জিত হয়ে শেভ করছিল জেনারেল জিয়া। বঙ্গবন্ধু হত্যার খবর পেয়ে যখন ৪৬ ব্রিগেডের কমান্ডার কর্নেল শাফায়েত জামিল হন্তদন্ত হয়ে তার বাসায় যান এবং বলেন, প্রেসিডেন্ট ইজ ডেড। জবাবে নির্ভারভাবে জিয়া বলেছিল- সো হোয়াট, ভাইস প্রেসিডেন্ট ইজ দেয়ার। অন্যান্য সিনিয়র সেনা কর্মকর্তারা যখন ঘুম ভাঙা মাত্রই বজ্রপাতের মতো বঙ্গবন্ধুকে হত্যার খবর শুনে বিস্ময়ে বিমূঢ় হয়ে গিয়েছিল, সেই সময় জিয়াকে পুরোপুরি সামরিক পোশাকে সজ্জিত দেখে অবাক হয়ে গিয়েছিলেন শাফায়েত জামিল।


সর্বশেষ - জাতীয় সংবাদ