1. অন্যরকম
  2. অপরাধ বার্তা
  3. অভিমত
  4. আন্তর্জাতিক সংবাদ
  5. ইতিহাস
  6. এডিটরস' পিক
  7. খেলাধুলা
  8. জাতীয় সংবাদ
  9. টেকসই উন্নয়ন
  10. তথ্য প্রযুক্তি
  11. নির্বাচন বার্তা
  12. প্রতিবেদন
  13. প্রবাস বার্তা
  14. ফিচার
  15. বাণিজ্য ও অর্থনীতি

এত ভক্ত সেদিন কোথায় ছিল

বিভুরঞ্জন সরকার : ইবার্তা টুয়েন্টিফোর ডটকম
বুধবার, ৩ আগস্ট, ২০২২

আগস্ট মাসকে বাঙালি শোকের মাস হিসেবে ঘোষণা দিয়েছে। কারণ এই মাসের ১৫ তারিখ রাজধানী ঢাকার ৩২ নম্বর বাড়িতে সংঘটিত হয়েছিল নৃশংস হত্যাকাণ্ড। স্বাধীন বাংলাদেশ রাষ্ট্রের স্থপতি জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানকে পরিবারের অধিকাংশ সদস্যসহ হত্যা করা হয়। বঙ্গবন্ধু ছিলেন অত্যন্ত জনপ্রিয় একজন নেতা। তাঁর আহ্বানে মানুষের মধ্যে যে ঐক্য ও উদ্দীপনা তৈরি হয়েছিল, তা-ই মূলত বাঙালিকে স্বাধীনতার পথে এগিয়ে নিয়েছে, রক্ত দেওয়ার জন্য উদ্বুদ্ধ হয়েছে। বাঙালিকে কেউ দাবায়ে রাখতে পারবে না, এই বিশ্বাস যিনি সত্যে পরিণত করেছেন, তাঁকেই স্বাভাবিক মৃত্যুর সুযোগ দেয়নি একদল অকৃতজ্ঞ বাঙালি। মৃত্যুর পর হয়নি প্রত্যাশিত প্রতিবাদ-প্রতিরোধ।

এখন সময় বদলেছে। এখন দেশে মুজিবভক্ত গুণে শেষ করা যাবে না। আওয়ামী লীগ ক্ষমতায় না থাকলেও কি ভক্ত সংখ্যা এত বিপুলই হতো? হওয়ারই কথা। কিন্তু বাস্তবে ক্ষমতা ও ক্ষমতার বাইরে থাকার তফাৎ অনেক। আওয়ামী লীগ টানা ক্ষমতায় থাকায় ১৫ আগস্ট জাতীয় শোক দিবস অসংখ্য অনুষ্ঠান, আয়োজন, প্রদর্শনের মধ্য দিয়ে পালন করা একটি রীতি হয়ে দাঁড়িয়েছে। রাজধানী ঢাকাসহ সারাদেশে আওয়ামী লীগ এবং সমর্থক লীগসমূহ নানা ধরনের অনুষ্ঠানের মধ্য দিয়ে জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের প্রতি শ্রদ্ধা নিবেদনের প্রতিযোগিতায় নেমে থাকে।

তবে দুই বছর ধরে করোনা মহামারির কারণে ১৫ আগস্ট পালন কিছুটা ‘সীমিত’ আয়োজনে হলেও দিনটি প্রচার মাধ্যমের কারণে হয়ে ওঠে মুজিবময়। বাংলাদেশ রাষ্ট্রের প্রতিষ্ঠাতাকে ১৯৭৫ সালের ১৫ আগস্ট সপরিবারে যেভাবে হত্যা করা হয়েছিল, তা ছিল ইতিহাসে বিরল এবং অপ্রত্যাশিত। বঙ্গবন্ধুকে হত্যা করে যারা ক্ষমতা দখল করেছিল তারা ধারাবাহিকভাবে ইতিহাস থেকে তাঁর নাম মুছে ফেলার অপচেষ্টা করেছে। কিন্তু তারা সফল হতে পারেনি। বঙ্গবন্ধুর রাজনৈতিক অবদান এতটাই প্রবল যে তা আড়াল করার মতো বিকল্প কিছু নেই।

বঙ্গবন্ধুকে স্মরণ করতে হবে, তাঁর প্রতি শ্রদ্ধা জানাতে হবে– এতে কোনো দ্বিধা-সংশয় থাকার কথা নয়। উচিতও নয়। তবে তাঁকে স্মরণের নামে বাড়াবাড়ি হয় কি না, সে দিকটাও ভেবে দেখা দরকার। গত কয়েক বছরে এমন প্রশ্ন উঠেছে যে, বঙ্গবন্ধুর প্রতি এই ভালোবাসা, আবেগ, শ্রদ্ধা কি অকৃত্রিম? এই প্রশ্নটি বঙ্গবন্ধুবিরোধী কেউ নয়, দরদিদের মধ্য থেকেও উঠছে। যারা প্রশ্ন তুলছেন, তাদের কথা- কোনো কিছু নিয়েই বাড়াবাড়ি ভালো নয়। এই যে দুদিন ধরে বঙ্গবন্ধুর ৭ মার্চের ভাষণ মাইকে বিরামহীনভাবে বাজানো- এটা কি মানুষের মনে কোনো ভালো প্রতিক্রিয়া তৈরি করে? না কি কান ঝালাপালা হয়ে যাওয়ায় সাধারণ মানুষ বিরক্তি প্রকাশ করে?

আমার মনে হয়, ১৫ আগস্ট এখন যেভাবে উদযাপিত হয়, তার মধ্যে বঙ্গবন্ধুর প্রতি শ্রদ্ধা জানানোর চেয়ে দেখানোর প্রবণতাটা বেশি। দেশে এত মুজিবভক্ত, তাহলে দেশে অন্যায়-অপকর্ম কারা করে? ঘুস-দুর্নীতি কেন কমে না? নিহত হওয়ার কয়েক মাস আগে ১১ জানুয়ারি ১৯৭৫ কুমিল্লার সামরিক একাডেমিতে এক অনুষ্ঠানে ভাষণ দিতে গিয়ে বঙ্গবন্ধু বলেছিলেন, ‘আমরা এত রক্ত দিয়ে স্বাধীনতা এনেছি, তবু অনেকের চরিত্র পরিবর্তন হয়নি।

ঘুসখোর, দুর্নীতিবাজ, চোরাকারবারি আর মুনাফাখোররা বাংলাদেশের মানুষের জীবন অতিষ্ঠ করে তুলেছে।… আমাকে বিদেশ থেকে ভিক্ষা করে সব জিনিস আনতে হয়। কিন্তু চোরের দল সব লুট করে খায়, দুঃখী মানুষের সর্বনাশ হয়।… আমি প্রতিজ্ঞা করেছি, বাংলাদেশের মাটি থেকে ঘুসখোর, দুর্নীতিবাজ, চোরাকারবারি আর মুনাফাখোরদের নির্মূল করব’। বঙ্গবন্ধুকে হত্যা করে তাঁর প্রতিজ্ঞা পূরণ করতে দেয়নি ঘাতক ও ষড়যন্ত্রকারীরা।

আজ রাষ্ট্রক্ষমতায় বঙ্গবন্ধুকন্যা শেখ হাসিনার নেতৃত্বে আওয়ামী লীগ। এখন দেশের অর্থনৈতিক উন্নয়ন বিশ্ববাসীর নজর কেড়েছে, প্রশংসিত হচ্ছে। কিন্তু বঙ্গবন্ধু যাদের গণশত্রু হিসেবে চিহ্নিত করে নির্মূল করতে চেয়েছিলেন তারা কি নির্মূল হয়েছে? তারা তো ‘দুঃখী মানুষের সর্বনাশ’ অব্যাহতই রেখেছে। উন্নয়নের সঙ্গে সঙ্গে দুর্নীতিও বাড়ছে। প্রবৃদ্ধি বাড়ার সঙ্গে প্রতিযোগিতা করে বৈষম্যও বাড়ছে।

সরকার নানা কৌশলে দেশে রাজনৈতিক স্থিতিশীলতা বজায় রাখতে সক্ষম হলেও সুশাসন এখনো অধরা। সামাজিক অস্থিরতার লক্ষণ স্পষ্ট হচ্ছে। ধর্মের নামে ধর্ম ব্যবসায়ীরা আস্কারা পাচ্ছে। অথচ বঙ্গবন্ধু ছিলেন লেবাসধারী ভণ্ড ধর্মাশ্রয়ীদের বিরুদ্ধে সোচ্চার কণ্ঠ। এখন একদিকে নারী শিক্ষাসহ কর্মক্ষেত্রে নারীর অংশগ্রহণ বাড়ছে, অন্যদিকে নারীর প্রতি সহিংসতাও বাড়ছে। গরিবের হক কেড়ে খেতেও সংকোচ বোধ করছে না। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার স্বপ্নের আশ্রয়ণ প্রকল্পেও দুর্নীতির ছোবল।

আমাদের কোনো কিছুতেই মাত্রাজ্ঞান নেই। শোক দিবস উপলক্ষে এই যে এত ভোজের আয়োজন, সেটা কি খুব প্রয়োজন? আগে কাঙালিভোজের আয়োজন হতো। এখন তো দেশে আর ‘কাঙাল’ নেই। এখন ভাতের কাঙাল কমেছে, ক্ষমতার কাঙাল বেড়েছে। ক্ষমতার কাঙালরা মোড়ে মোড়ে বড় বড় হাড়িপাতিল সাজিয়ে যেভাবে খাবার বিতরণের ব্যবস্থা করা হয় (এবারও হবে কি?) সেটা কি খুব মর্যাদার, সম্মানের?

বছর কয়েক আগে ১৫ আগস্ট একজন সংসদ সদস্য নাকি একাই দুই শতাধিক গরু জবাই দিয়েছিলেন! ভাবা যায়! এর নাম কি বঙ্গবন্ধুপ্রীতি? এই প্রীতি অব্যাহত থাকলে যে সাধারণ মানুষের মধ্যে অচিরেই ভীতি ছড়িয়ে পড়বে। বঙ্গবন্ধুর প্রতি মানুষের হৃদয়ের গভীরে লালন করা শ্রদ্ধা-ভালোবাসা অটুট রাখতে হলে অবিলম্বে বঙ্গবন্ধুর নামে সব ধরনের ব্যয়বহুল আয়োজন বন্ধ করতে হবে। লোক দেখানো আয়োজনের কোনো প্রয়োজন নেই।

এখন আওয়ামী লীগ ক্ষমতায়। বঙ্গবন্ধুকন্যা, জননেত্রী শেখ হাসিনা প্রধানমন্ত্রী। সময়টা অনুকূল। তাই এখন মুজিবপ্রেমিকের সংখ্যা অগণন। কিন্তু সময় তো সব সময় অনুকূল থাকে না। ‘সুসময়ের বন্ধু বটে অনেকেই হয়, অসময়ে হায়, কেউ কারো নয়’- প্রবাদটি মনে রাখা দরকার।

আমার কেন যেন এখন প্রায়ই পঁচাত্তরের কথা মনে পড়ে। বঙ্গবন্ধু দ্বিতীয় বিপ্লবের ডাক দিলেন। বাকশাল গঠিত হলো। গুমোট অবস্থা। তার মধ্যেই বাকশালে যোগদানের হিড়িক। সেনা কর্মকর্তা জিয়াউর রহমানও বাকশালে যোগ দেওয়ার জন্য তদবির করেছেন, বঙ্গবন্ধুর কাছেও ধরনা দিয়েছেন। দলে দলে বিভিন্ন শ্রেণি-পেশার মানুষ বাকশালে যোগ দিচ্ছে। স্লোগান উঠছে : ‘এক নেতা এক দেশ, বঙ্গবন্ধুর বাংলাদেশ’।

তারপর এলো সেই ভয়ঙ্কর ১৫ আগস্ট। বঙ্গবন্ধু সপরিবারে নিহত হলেন। স্লোগান রাতারাতি পাল্টে গেল : ‘এক নেতা এক দেশ, এক রাতে সব শেষ’।
কি নির্মম! কি নিষ্ঠুর!!

৩২ নম্বর বাড়ির সিঁড়িতে বঙ্গবন্ধুর রক্তাক্ত নিথর দেহ ফেলে রেখে তার সহযোগী ভক্তরা খুনিচক্রের সঙ্গে মিলে গেলেন। ঢাকা শহরে একটি প্রতিবাদ মিছিল হলো না। শেখ মুজিব রক্ত দিলেন। তাঁর জন্য রক্ত দিতে একজন সাহসী ভক্ত পাওয়া গেল না! আমরা বিস্মৃতিপ্রবণ জাতি। নিকট অতীতকেও আমরা ভুলে যাই। শত্রু-মিত্র চিনতেও ভুল করি। মিত্রকে দূরে ঠেলে শত্রুকে আলিঙ্গন করার খেসারত আমাদের অনেক দিতে হয়েছে। বঙ্গবন্ধু মোশতাক গংদের প্রশ্রয় দিয়েছেন। উদারতা দেখিয়েছেন। তিনি মহান। অধমেরা তার মহত্তের সুযোগ নিয়েছে।
আর ভুলের পুনরাবৃত্তি নয়।

এখন সময় এসেছে সতর্ক হওয়ার। মুজিবকোট পরা, পোশাকি মুজিবপ্রেমী নয়, এখন প্রয়োজন মুজিব আদর্শে বিশ্বাসীদের একাট্টা হওয়া। সুযোগসন্ধানী, চাটুকার এবং দুর্নীতিবাজরা তাদের স্বার্থ হাসিলে তৎপর। ওদের ব্যুহ ভাঙার কঠিন লড়াইয়ে শেখ হাসিনাকেই নেতৃত্ব দিতে হবে। কঠোর হতে হবে। কিছু কঠোরতা মানুষকে রুষ্ট করে, আবার কিছু কঠোরতা মানুষকে তুষ্টও করে। কাউকে গ্রেফতার করলে মানুষ খুশি হয়, আবার কারও গ্রেফতারে মানুষ বিরক্ত হয়।

আওয়ামী লীগে যারা মন না রাঙিয়ে বসন রাঙিয়ে মুজিবভক্ত সেজেছেন তাদের থেকে এখনই সাবধান হতে হবে। না হলে জনগণের দল আওয়ামী লীগের জনবিচ্ছিন্নতা বাড়বে। প্রশাসনিক শক্তি সাময়িক সুবিধা দিতে পারে, স্থায়ী সুবিধার নিশ্চয়তা দেবে মানুষের শক্তি, সাধারণ মানুষের ঐক্য ও ভালোবাসা। বঙ্গবন্ধু সাধারণ মানুষকেই ঐক্যবদ্ধ করেছিলেন, ভালোবেসেছিলেন।

তোষামোদ, প্রশংসা শুনতে ভালো লাগে। কিন্তু নিন্দা-সমালোচনা সঠিক পথ চেনায়। তাই কবিকণ্ঠে ধ্বনিত হয়েছে: নিন্দুকেরে বাসি আমি সবার চেয়ে ভালো, যুগ জনমের বন্ধু সে যে আঁধার ঘরের আলো।

লেখক: বিভুরঞ্জন সরকার – সিনিয়র সাংবাদিক, কলামিস্ট।


সর্বশেষ - জাতীয় সংবাদ

নির্বাচিত

আশুলিয়ায় বাস পোড়ানোর দায়ে অভিযুক্ত বিএনপির নেতাকর্মীরা

দেশের গণ্ডি পেরিয়ে ছয় দেশে রপ্তানি হচ্ছে বাঁধাকপি

গ্রীষ্মকালীন টমেটো চাষে লাভবান চাষিরা

গ্যাস বিপণন বিধিমালা সংশোধন, যোগ হয়েছে শাস্তির বিধান

চিলিতে হেলিকপ্টার বিধ্বস্ত, সাবেক প্রেসিডেন্ট সেবাস্তিয়ান পিনেরা নিহত

উচ্চমধ্যম আয়ের দেশে পৌঁছাতে বাংলাদেশের পাশে থাকবে বিশ্বব্যাংক

‘রোহিঙ্গা সমস্যার জন্য সরকার দায়ী’; ‘সুসম্পর্ক রক্ষায় রোহিঙ্গাদের আশ্রয় দিন’: খালেদা জিয়া

রাজশাহীতে ১ কোটি ২৫ লাখ টাকার মাছ ও ৬ হাজার ১৩২ হেক্টর জমির ফসল ভেসে গেছে

ছয় আসনে চলছে শান্তিপূর্ণভাবে ভোটগ্রহণ

বাংলাদেশের এগিয়ে যাওয়া ও বিশ্বব্যাংক