1. অন্যরকম
  2. অপরাধ বার্তা
  3. অভিমত
  4. আন্তর্জাতিক সংবাদ
  5. ইতিহাস
  6. এডিটরস' পিক
  7. খেলাধুলা
  8. জাতীয় সংবাদ
  9. টেকসই উন্নয়ন
  10. তথ্য প্রযুক্তি
  11. নির্বাচন বার্তা
  12. প্রতিবেদন
  13. প্রবাস বার্তা
  14. ফিচার
  15. বাণিজ্য ও অর্থনীতি

অর্থনীতির বিকল্প শক্তি ব্লু ইকোনমি

বাণিজ্য প্রতিবেদক : ইবার্তা টুয়েন্টিফোর ডটকম
রবিবার, ৭ আগস্ট, ২০২২

কক্সবাজার সদরেই শ্যামল কারকের বাংলা খাবারের জায়গা ‘খাজা হোটেল’। তার দোকানে সুলভ মূল্যে নানা ধরনের সামুদ্রিক মাছ পাওয়া যায়। সুরমা, কোরাল, পোয়া, ইলিশ, চিংড়ি প্রভৃতি মাছের তরকারির গন্ধে ম-ম করে দুপুরের সময়টা।

কক্সবাজারের বেশির ভাগ উচ্চমূল্যের খাবারের দোকানগুলোতে অর্থনৈতিক কারণে অনেকেই খান না। মধ্যম আয়ের মানুষ বা প্রিয়জনের সঙ্গে সমুদ্রের কাছে বেড়াতে আসেন বা যারা এখনো প্রাতিষ্ঠানিক শিক্ষার দৌড় শেষ করেননি তারাই শ্যামলের নিয়মিত খদ্দের। লবণাক্ত বাতাসের পাশেই কম দামে ছোট-ছোট প্লেটে ভাত-ডাল-আলুভর্তার সঙ্গে সুস্বাদু সব সামুদ্রিক মাছের স্বাদ মন জুড়ায় এসব পর্যটকের।

শ্যামলের সঙ্গে কথা হয় এই প্রতিবেদকের। শ্যামল জানান, এখন ব্যবসা বেশ ভালো যায়। মাঝে করোনার সময় খুব সমস্যায় ছিলাম। কোনো কাস্টমার ছিল না। তবে এখন সে অবস্থা কেটে গেছে। এখন আবার মাছও পাচ্ছি বেশ ভালো।

সমুদ্রকে কেন্দ্র করেই শ্যামলের হোটেল। যেদিন মাছ কম ওঠে সেদিন শ্যামলের বেচাকেনা কম হয়। মন একটু খারাপ থাকে। শ্যামল বললেন, সমুদ্রই তো টিকায়া রাখছে। আমি যেখানে আগে কাজ করতাম উনার পীরের নামেই আমার দোকানের নাম খাজা। উনি ভারতে এক খাজা বাবার ভক্ত ছিলেন। উনি মারা যাওয়ার পর আমি বেশ বিপদের মধ্যে পড়ি। তবে এই হোটেল খোলার পর আমার ভাগ্য ফিরে। আমি ভালো আছি।

সমুদ্র এমনই কত শত মানুষের জীবিকার ব্যবস্থা করে যাচ্ছে হররোজ তার ইয়ত্তা নেই।

ব্লু ইকোনমি শব্দটি যেভাবে এলো

সমুদ্র ও সমুদ্রকেন্দ্রিক সম্পদকে যদি টেকসই উন্নয়নের জন্য ব্যবহার করা হয় তবে তাকে ব্লু ইকোনমি বলা হয়। ওয়ার্ল্ড ব্যাংকের মতে, ব্লু ইকোনমি হলো- সমুদ্রের সম্পদকে স্থিতিশীলভাবে কাজে লাগিয়ে অর্থনৈতিক সমৃদ্ধি, উন্নত জীবন মান, এবং স্বাস্থ্য ও সাগরের প্রাণবৈচিত্র্য রক্ষা করে কর্মক্ষেত্র সৃষ্টি করা। সহজ ভাষায় বললে, ব্লু ইকোনমি সাগরের ও উপকূলীয় অঞ্চলের অর্থনৈতিক ব্যবহার সংক্রান্ত একটি বিষয়, যার সাথে জ্বালানি, জাহাজ চলাচল, মৎস্য শিকার, খনি থেকে সম্পদ আহরণ এবং পর্যটনকে নির্দেশ করে। সমুদ্র অর্থনীতি এমন সব বিষয়েরও কথা বলে, যা সরাসরি অর্থনৈতিক লাভ এনে দেয় না বরং দেশের কার্বন সংরক্ষণ, উপকূলীয় প্রতিরক্ষা, সাংস্কৃতিক মূল্যবোধ এবং জীববৈচিত্র্যকে সংরক্ষণ করে।

‘ব্লু ইকোনমি’ শব্দটি প্রথম ব্যবহার করে অর্থনীতিবিদ গুন্টার পউলি তার ‘দ্য ব্লু ইকোনমি: টেন ইয়ার্স, হান্ড্রেড ইনোভেশন, হান্ড্রেড মিলিয়ন জবস’ বইয়ে। তিনি এই বইয়ে ব্লু ইকোনমি মডেলের কথা বলেন। যেখানে স্থানীয়ভাবে প্রাপ্ত সম্পদকে কাজে লাগিয়ে পরিবেশজনিত সমস্যার নিরসন করা যায়। তার বইটি ২০১৪ সাল নাগাদ ৩৫টি ভাষায় অনুদিত হয়।

.বাংলাদেশে ব্লু ইকোনমি

২০১২ – ২০১৪ সালের মধ্যবর্তী সময়ে বাংলাদেশের সঙ্গে মিয়ানমার ও ভারতের সমুদ্রসীমা নিয়ে বিরোধ নিষ্পত্তি হওয়ার পর তা বাংলাদেশের পক্ষে যায়। এর ফলেই বাংলাদেশের সমুদ্র এলাকা ৩০ শতাংশ বৃদ্ধি পায়। যার ফলে দেশটি ১ লাখ ১৮ হাজার ৮১৩ বর্গ কিলোমিটার নতুন সমুদ্র অঞ্চল পায়। যা এর সমুদ্র সম্ভাবনাকে অনেকাংশে বৃদ্ধি করে। ফলে বাংলাদেশের পর্যটন, সামুদ্রিক মৎস্য আহরণ, প্রাকৃতিক সম্পদের খোঁজ, বাণিজ্য এবং জ্বালানি সম্ভাবনা বৃদ্ধি পায়।

এতকাল বাংলাদেশের অর্থনৈতিক সমৃদ্ধির চালকের ভূমিকায় অন্যান্য প্রাকৃতিক সম্পদের তুলনায় উপকূলীয় ও সামুদ্রিক প্রাণবৈচিত্র্য অবহেলিত ছিল। তবে বিগত বছরগুলোতে বাংলাদেশ সরকার সামুদ্রিক সম্ভাবনা ও সম্পদ আহরণের বিষয়টিকে গুরুত্ব দিয়েছে। তবুও বঙ্গোপসাগরের অপার সম্ভাবনাকে জাতীয় অর্থনৈতিক উন্নয়নে কাজে লাগানো যায়নি। অবৈধ মৎস্য আহরণ, জলদস্যুতা এবং সামুদ্রিক দূষণ বর্তমানে উদ্বেগজনক পরিস্থিতিতে রয়েছে। সুনির্দিষ্ট নীতিমালা প্রণয়ন করে এসব বন্ধ করা উচিত। বর্তমানে মৎস্য আহরণ মনিটরিং দুর্বল হওয়ায় নিয়মনীতি না মেনেই মৎস্য আহরণ করছেন জেলেরা। এতে সমুদ্রের ব্যাপক ক্ষতি হচ্ছে।

জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের অর্থনীতি বিভাগের চেয়ারম্যান, অধ্যাপক ড. খন্দকার আশরাফুল মুনিম আহমেদ সময় সংবাদকে বলেন, আমাদের দেশের শুটকি শিল্পের দিকে তাকালে লক্ষ্য করা যায় বেশিরভাগ মাছই পচা এবং বিভিন্ন ওষুধ মেশানো। সারা দেশে শুটকির ব্যাপক সম্ভাবনা থাকলেও মনিটরিংয়ের অভাব এবং আইনের ফাঁক থাকায় এমন দুর্নীতি দেদারসে চলছে।

সাগরের জলদস্যুতা, কক্সবাজারের পচা শুটকি নিয়ে এ শিক্ষক বলেন, এসবের কারণ আমি মনে করি পুরোটাই অর্থনৈতিক। নিয়মতান্ত্রিকতার অভাবে ফাঁকফোকর বের হয়। কেন ডাইক্লোরো ডাইফেনাইল ট্রাইক্লোরো ইথেন‍ (ডিটিটি) দিচ্ছে, এটার স্থায়িত্ব বাড়ানোর জন্য। সমন্বিত নিরাপত্তা ব্যবস্থা তৈরি করা হয়নি বলেই এমন দেখা যায়। নিরাপদ খাদ্যের যে কথাটা আমরা বলি সেটা দেশের অভ্যন্তরে যেমন ঘাটতিতে আছে তেমনি সমুদ্র তীরবর্তী অঞ্চলেও একই রকম আছে। নিরাপদ খাদ্য সর্বক্ষেত্রে বজায় রাখব এমন নীতি গ্রহণ করলে আমরা উপকার পেতে পারি। মাঠ পর্যায়ে দীর্ঘকাল ধরেই এ অভাব রয়েছে।

ব্লু ইকোনমির পরিসর

সারা বিশ্বেই ব্লু ইকোনমির ধারণা বিকশিত হচ্ছে এবং বাংলাদেশও এর বাইরে নয়। বাংলাদেশে ব্লু ইকোনমি আরও অনেক বিষয়ের সঙ্গে অন্তরঙ্গভাবে জড়িত। যার ভেতর খাদ্য উৎপাদন, জীবনযাত্রার মানোন্নয়ন, পরিবেশের ঘাত প্রতিঘাত সহনক্ষমতা বৃদ্ধি, জড়িত। প্রাতিষ্ঠানিক এবং নিয়মতান্ত্রিক সমঝোতা, নথি বা তথ্য, সামুদ্রিক পণ্য উদ্ভাবন ও ভিন্নতা সৃষ্টি করা, বৈজ্ঞানিক গবেষণা জারি রাখা, জনগণের ভেতর সচেতনতা সৃষ্টি, বিপণন কৌশল বের করা, উপকূলীয় অঞ্চলে দক্ষ জনবল তৈরি করা এবং প্রয়োজনীয় স্বল্প ও দীর্ঘমেয়াদি পরিকল্পনা হাতে নেয়ার মাধ্যমে বাংলাদেশের সমুদ্র অর্থনীতিতে পরিবর্তন আনা সম্ভব।

বাংলাদেশের সমুদ্র অর্থনীতিতে উন্নয়ন আনার লক্ষ্যে জীব ও জড় সম্পদ আহরণ, মনুষ্য সৃষ্ট স্থাপনাসমূহ, জ্বালানি উৎপাদন, গবেষণা ও সমীক্ষা, স্থলভিত্তিক পরিবহন ও ব্যবসা, জাহাজনির্মাণ ও পর্যটনের প্রসার ঘটানোর পাশাপাশি দরকার অপ্রচলিত প্রজাতির সন্ধান, সামুদ্রিক বায়োটেকনলজি, তেল গ্যাসের খনি সন্ধান, নবায়নযোগ্য জ্বালানি, সমুদ্র পর্যটনের প্রসার, সমুদ্র দূরত্বজনিত পরিকল্পনা প্রয়োজন।

সাস্টেইনেবল ডেভেলপমেন্ট গোলস (এসডিজি) অর্জনে বাংলাদেশের আরও কিছু বিষয়ে মনোযোগী হতে হবে। সামুদ্রিক মৎস্য আহরণের ক্ষেত্রে বাংলাদেশের কিছু পদক্ষেপ গ্রহণ দরকার। যেমন- বাণিজ্যিক ভাবে ৮০ মিটারের গভীর পানিতে মাছ ধরা (যেমন টুনা, লাক্ষ্যা), মাছ ধরার নতুন জায়গা নির্বাচন, সঠিক দাম নির্ধারণ ও মাছ ধরা পরবর্তী অর্থনৈতিক ক্ষতি পোষানো, মৎস্য সম্পদ সংরক্ষণ ও আরোহিত সম্পদের আকার সম্পর্কে সঠিক তথ্য জানতে হবে। এক্ষেত্রে একটি বিষয় মাথায় রাখতে হবে যে সমুদ্র থেকে পাওয়া মাছের প্রজাতিগুলো মানুষের সঙ্গে পরিচিত করতে হবে এবং নতুন প্রজাতির মাছচাষ পদ্ধতিও (যেমন- খাঁচা পদ্ধতি, অ্যাকুয়া কালচার, অ্যাকুয়া সিভিকালচার, ইন্ট্রিগ্রটেড মালটিট্রফিক অ্যাকুয়াকালচার) অবলম্বন করা যেতে পারে।

একটি প্রজাতিকে মানুষের সঙ্গে পরিচিত করতে এবং বাজারে আনতে পাঁচ থেকে বারো বছর সময় লাগতে পারে। সুনির্দিষ্ট প্রজাতির ব্রিড তৈরি করা। যেমন চিংড়ি চাষের ক্ষেত্রে এসপিএফ (স্পেশাল প্যাথোজেন ফ্রি) তৈরি করতে ৫ থেকে ১০ বছর সময় লাগতে পারে। সামুদ্রিক সম্পদের মজুতের পূর্ণাঙ্গ মূল্যায়ন তৈরি করতে ৫ – ১০ বছর সময় লাগতে পারে। এ ছাড়া প্রতি ২-৩ বছরে মজুতের শূন্যতা নিরূপণ করাও প্রয়োজন। এই বিষয়গুলো বেশ ব্যয়সাপেক্ষ।

বঙ্গোপসাগরের সুবিশাল সম্ভাবনা কাজে লাগাতে হলে এর জলবায়ুগত পরিবর্তন, পরিবেশ দূষণরোধ, জীববৈচিত্র্য রক্ষায় মনোযোগী হওয়ার বিকল্প নেই। পরিবেশগত দিক থেকে জটিল অবস্থায় থাকা অঞ্চলগুলোকে কেন্দ্র করে পর্যবেক্ষণ ব্যবস্থা গড়ে তুলতে হবে। বঙ্গোপসাগরের উপকূলীয় অঞ্চলের পরিবেশ রক্ষায় নৈব্যক্তিকভাবে তা পর্যবেক্ষণের জন্য সরকারের পাশাপাশি আন্তর্জাতিক সহযোগিতা প্রয়োজন।

ব্লু ইকোনমিতে পর্যটন

বিশ্বের দীর্ঘতম সমুদ্র সৈকতের অধিকারী বাংলাদেশের বিরাট সমুদ্রতট পর্যটনে টেকসই উন্নয়ন সাধন করতে পারে। বাংলাদেশে অবশ্য উপকূলীয় এলাকায় সমুদ্রকেন্দ্রিক পর্যটন ইতোমধ্যেই শুরু হয়েছে। তবে বিশ্বের অন্যান্য দেশের তুলনায় এখনো এটা অনেক কম। এ খাতে বাংলাদেশের আয় এখনো অনেক কম। স্থানীয় ও বিদেশি পর্যটকদের আকৃষ্ট করতে যে পর্যটন স্পটগুলো রয়েছে সেগুলোর উন্নতি সাধন করতে হবে। পর্যটনের জন্য খুলনা ও চট্টগ্রাম থেকে সমুদ্রে বিলাসবহুল ক্রুজশিপ চালু করা যেতে পারে। এসব এলাকায় সার্ফিং জোন, পানির নিচের পর্যটন, একটি কমিউনিটিভিত্তিক যোগাযোগ স্থাপন, বিভিন্ন এজেন্সির ভেতর আন্তঃসম্পর্ক একান্ত প্রয়োজন।

উল্লিখিত পদক্ষেপ গ্রহণের মাধ্যমে বাংলাদেশ তার জিডিপি বাড়াতে পারে, নতুন কাজ সৃষ্টি করতে পারে, দারিদ্র্য বিমোচন করতে পারে, বিদেশি মুদ্রা অর্জন করতে পারে। এসব ছাড়াও স্থানীয় সংস্কৃতি বিকাশের একটি মাধ্যমও সামুদ্রিক পর্যটন। এজন্য অন-এরাইভাল ভিসাসহ অন্যান্য সুবিধাদি দেয়াই প্রয়োজন।

শুধু পর্যটন বা সামুদ্রিক মৎস্য আহরণ নয়, ব্লু বায়োটেকনলজি, নবায়নযোগ্য জ্বালানি, অপ্রচলিত সামুদ্রিক সম্পদ আহরণ করেও ব্লু ইকোনমিকে এগিয়ে নিয়ে যাওয়া যেতে পারে। ব্লু-জৈবপ্রযুক্তি ব্যবহার করে মাছের স্বাদ বৃদ্ধি করা যায়, উচ্চ ফলনশীল মাছের প্রকরণ আলাদা করা সহজ হয়, জিনগত পরিবর্তন করে মাছের বেড়ে ওঠা প্রভাবিত করা যায়। এ ছাড়া সমুদ্র থেকে পাওয়া দ্রব্য থেকে জৈব প্রযুক্তির মাধ্যমে খাবার, ওষুধ, পশুর খাবার এবং সংশ্লিষ্ট দ্রব্যাদিও পাওয়া সম্ভব। এগুলো থেকে সম্পূর্ণ ভিন্ন দ্রব্য যেমন কসমেটিকস, সাপ্লিমেন্ট, এনজাইম, কৃষির রাসায়নিক ব্যবহার করা সম্ভব।

যেহেতু প্রচুর পরিমাণ নিয়মিত আরোহিত সামুদ্রিক মাছগুলোর ওপর চাপ বেশি পড়ছে সেহেতু অপ্রচলিত সামুদ্রিক মৎস্যের প্রতি মনোযোগী হতে হবে। যেমন মলাস্ক পর্বের প্রাণি আহরণ করা যেতে পারে। এগুলোর মধ্যে রয়েছে স্কুইড, অয়েস্টার, ঝিনুক প্রভৃতি। এ ছাড়া সমুদ্রের বাতাস, সৌরশক্তি, স্রোত, ঢেউ থেকে জ্বালানি শক্তির উৎপাদন সম্ভব। সুনির্দিষ্ট রূপরেখা তৈরির মাধ্যমে সরকারের টেকসই আহরণ এবং অপ্রচলিত মৎস্যের সংরক্ষণ বাড়াতে হবে।

অপ্রচলিত সামুদ্রিক খাবার নিয়ে ড. মুনিম বলেন, এটা আসলে সংস্কৃতির ব্যাপার। হঠাৎ করে এটা পরিবর্তন সম্ভব নয়। আমাদের সমাজ-সংস্কৃতি সবকিছুরই ভূমিকার হয়েছে এখানে। এটা সময়সাপেক্ষ ব্যাপার।

এ বিষয়ে অধ্যাপক মুনিম আরও বলেন, নবায়নযোগ্য জ্বালানি আমাদের ভবিষ্যত। এদিকে আমাদের আজ হোক কাল হোক যেতেই হবে। আমরা জানি জীবাশ্ম জ্বালানি যেভাবে কমে আসছে, সারা বিশ্বেই এটা এখন প্রচলিত ব্যাপার। আমরা এ বিষয়ে ইতোমধ্যেই দেরি করে ফেলেছি। এটা সক্ষমতার ওপর নির্ভর করে। আমাদের জ্বালানি ব্যবস্থা ও নীতি কেমন তার ওপর এর অগ্রগতি নির্ভর করে।

জাহাজ নির্মাণ ও জাহাজ ভাঙ্গা শিল্প

জাহাজ নির্মাণ বাংলাদেশের সমুদ্র অর্থনীতিতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখতে পারে। এতে বিপুল মানুষের কর্মসংস্থান সম্ভব। বাংলাদেশের জন্য এটি অত্যন্ত গুরুত্ব বহন করে। বাংলাদেশের জাহাজ শিল্পে আন্তর্জাতিক মানসম্পন্ন ক্ষুদ্র ও মাঝারি আকৃতির জাহাজ তৈরি হয়। বর্তমানে বাংলাদেশে জাহাজ নির্মাণ শিল্পের উৎপাদনশীলতার হার মাত্র ১১ দশমিক ৪, যা বিশ্বে সবচেয়ে কমের তালিকায় রয়েছে। প্রশিক্ষণের মাধ্যমে লোকবল তৈরি করে এ শিল্পকে এগিয়ে নেয়া সম্ভব।

জাহাজ নির্মাণ শিল্পের মতো জাহাজ ভাঙা শিল্পও বাংলাদেশের অর্থনৈতিক উন্নয়নে ভূমিকা রাখতে পারে। যখন জাহাজ পুরনো হয়ে যায় তখন ব্যবসায়ীরা সেগুলো বিভিন্ন বন্দরে খরচ করে রাখতে চান না। পরে সেগুলো ভেঙে সেখান থেকে জরুরি দ্রব্যাদি বের করে নতুন দরকারি জিনিস বানানো হয়। উপকূলীয় অঞ্চলের জনসংখ্যার বড় একটা অংশ জাহাজ ভাঙা শিল্পের সঙ্গে জড়িত। যদি পরিবেশবান্ধব উপায়ে জাহাজ ভাঙা শিল্প পরিচালনা করা হয় তবে এটিও বাংলাদেশের উদীয়মান ক্ষুদ্র-অর্থনীতিতে ভূমিকা রাখতে পারে।

ভবিষ্যতে করণীয়

ব্লু ইকোনমি টেকসই সাগর শাসনের একটি গুরুত্বপূর্ণ অংশ। সমুদ্রের সম্পদকে ব্যবহার করতে প্রয়োজন নতুন পদ্ধতি বাস্তবায়ন করা। যেমন ইকোসিস্টেম বেসড ম্যানেজমেন্ট (ইবিএম) বা মারিন স্পেটাল প্ল্যানিংয়ের (এমএসপি) মতো কর্মসূচির বাস্তবায়ন। ইকোসিস্টেম বা পরিবেশের ভারসাম্য রক্ষা করে সমুদ্রের বহুমাত্রিক ব্যবহারের মাধ্যমে কোন কোন খাতে প্রাতিষ্ঠানিকভাবে এগোনো উচিত তা বুঝতে হবে। সর্বোপরি বাংলাদেশের প্রয়োজন একটি সার্বিক পরিকল্পনা এবং এর বাস্তবায়ন।

আগেই ইউরোপীয় ইউনিয়ন ও ওয়ার্ল্ড ব্যাংক ব্লু ডেলটা গভর্নেন্স প্রজেক্ট হাতে নিয়েছিল। এ প্রজেক্টগুলো বাংলাদেশের ব্লু ইকোনমিতে ভূমিকা রেখেছিল। এগুলো সম্ভাবনার দ্বার খুলে দিয়েছে এবং এ নিয়ে সরকার যদি সচেতনতা সৃষ্টি করে জরুরি ভিত্তিতে জাতীয় পরিকল্পনা নেয় তাহলে উপকৃত হবে বাংলাদেশের ব্লু ইকোনমি।

তথ্যসূত্র: জার্নাল অব ওশান অ্যান্ড কোস্টাল ইকোনমিক্স, মেজর অপর্চুনিটিস অব ব্লু ইকোনমি, http://www.mofa.gov.bd/content/about-blue-economy, ব্লু ইকোনমি: আ পাথওয়ে ফর সাস্টেনেইবল গ্রোথ ইন বাংলাদেশ।


সর্বশেষ - জাতীয় সংবাদ