1. অন্যরকম
  2. অপরাধ বার্তা
  3. অভিমত
  4. আন্তর্জাতিক সংবাদ
  5. ইতিহাস
  6. এডিটরস' পিক
  7. খেলাধুলা
  8. জাতীয় সংবাদ
  9. টেকসই উন্নয়ন
  10. তথ্য প্রযুক্তি
  11. নির্বাচন বার্তা
  12. প্রতিবেদন
  13. প্রবাস বার্তা
  14. ফিচার
  15. বাণিজ্য ও অর্থনীতি

১৫ আগস্টের প্রথম বার্ষিকী পালন করতে গিয়ে নির্যাতনের শিকার তারা 

বিশেষ প্রতিবেদক : ইবার্তা টুয়েন্টিফোর ডটকম
বুধবার, ১৬ আগস্ট, ২০২৩

১৯৭৫ সালের ১৫ আগস্ট জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানকে সপরিবারে হত্যা করে সেনাবাহিনীর কিছু বিপথগামী সদস্য। বঙ্গবন্ধুকে হত্যার পর সারা দেশে আওয়ামী লীগের অধিকাংশ নেতা ছিলেন আত্মগোপনে। ঠিক তেমনি ভৈরবের নেতৃবৃন্দের মধ‌্যেও অনেক নেতা-কর্মীরা আত্মগোপনে ছিলেন।

এরপর কেটে যায় একটি বছর। ১৯৭৬ সালের ১৫ আগস্ট ভৈরবের ২২ জন নেতা-কর্মী বঙ্গবন্ধুর প্রথম মৃত্যুবার্ষিকী পালনের উদ্যেগ নেন। তৎকালীন ভৈরব থানা যুবলীগ নেতা বীর মুক্তিযোদ্ধা ফখরুল আলম আক্কাছের নেতৃত্বে এই সাহসী আয়োজনটি ভৈরবের হাজি আসমত কলেজের আশুরঞ্জন ছাত্রাবাসে করা হয়েছিল।

এই ২২ জন গোপনে গোপনে স্থানীয় আওয়ামী লীগ, যুবলীগ, ছাত্রলীগের প্রায় শতাধিক নেতা-কর্মীকে আয়োজনের কথা জানান। এসব শুনে অনেক নেতা-কর্মীরাই সেদিন ভয় ও আতঙ্কে ছিলেন। তবে ফখরুল আলম আক্কাছ সেদিন সবাইকে আশ্বস্ত করেছিলেন। তিনি বলেছিলেন, মুসলমান হিসেবে কারো নামে মিলাদ দোয়া পড়ানো কোনো অপরাধ নয়।

এরপর ১৯৭৬ সালের ১৫ আগস্ট মিলাদ দোয়া ও কোরআন খতমের আয়োজন করা হলো। ১২ জন মৌলভীকে দাওয়াত দেওয়া হলো। ওই দিন বিকেল সাড়ে ৩টায় হুজুরগণ কলেজের নতুন হোস্টেলে কোরআন খতম শুরু করেন। একে একে ২২ নেতা-কর্মী হোস্টেলে উপস্থিত হলেন। তখন বিকেল ৪টা বাজে। এ সময় হঠাৎ করে একদল পুলিশ কলেজের নিউ হোস্টেল ঘিরে ফেলে।

তখন পুলিশ সদস‌্যরা বলতে থাকেন, ‘তোরা কিসের মিলাদের আয়োজন করেছিস? কিসের বঙ্গবন্ধু। কার জন্য দোয়া পড়াবে। বন্ধ কর কোরআন খতম।’ এরপর একদল পুলিশ মিলাদের আয়োজন পণ্ড করে দেয় এবং আয়োজকদেরকে লাঠিপেটা ও রাইফেলের বাট দিয়ে আঘাত করতে থাকে। এতে কয়েকজন গুরুতর আহত হন। এ ঘটনায় ফখরুল আলম আক্কাছ প্রতিবাদ করলে তাকেও মেরে গুরুতর আহত করা হয়। পরে ২২ জনকে গ্রেপ্তার করে থানায় নিয়ে হাজতে রাখা হয়।

সেই দিন যাদের গ্রেপ্তার করা হয় তারা হলেন, তৎকালীন যুবলীগ নেতা ফখরুল আলম আক্কাছ (সাবেক পৌর মেয়র) আসাদুজ্জামান ফারুক (বর্তমানে সাংবাদিক), যুবলীগ নেতা রুহুল আমিন, আজমল ভূইয়া, মোশারফ হোসেন, মো. মাহবুব আলম, মতিউর রহমান, মফিজুর রহমান, জিল্লুর রহমান জিল্লু, আসাদ মিয়া, আতাউর রহমান, আসাদুল হক, ফিরোজ মিয়া, দিলিপ চন্দ্র সাহা, দিজেন্দ্র চন্দ্র সাহা, ফজলুর রহমান, আবদুল হামিদ, ইদ্রিছ মিয়া, মাহবুব হোসেন, রসরাজ সাহা, সুবল চন্দ্র কর, শাহজালাল হোসেন। এই ২২ জনের মধ্য মো. মাহবুব আলম, সুবল চন্দ্র কর, জিল্লুর রহমান জিল্লু, মোশারফ হোসেন, আসাদ মিয়া ও ফজলুর রহমান আর বেঁচে নেই। তবে এখনও বেঁচে আছেন ১৬ জন।

এই ২২ জনকে ঘটনার দিন থানায় নিয়ে হাজতে রাখার পরদিন সকালে বিশেষ ক্ষমতা আইনে পুলিশ বাদী হয়ে মামলা দিয়ে তৎকালীন মহকুমা আদালত কিশোরগঞ্জে পাঠানো হয়। সেদিন তাদের অপরাধ ছিল বঙ্গবন্ধুর নামে মৃত্যুবার্ষিকী পালন করা। ঘটনার দিন মিলাদের আয়োজন থেকে ১২ জন মৌলভীকে পুলিশ আটক করার পর মুচলেকা নিয়ে তাদেরকে থানা থেকে ছেড়ে দেওয়া হয়েছিল। কিশোরগঞ্জের আদালতের বিচারক সেদিন ২২ জনকে জামিন না দিয়ে কারাগারে পাঠিয়ে দেন। পরবর্তীতে তারা পর্যায়ক্রমে দীর্ঘদিন পর কারাগার থেকে মুক্তি পান।

এ বিষয়ে বীর মুক্তিযোদ্ধা ও সেদিনের কারা নির্যাতিত যুবলীগ নেতা ফখরুল আলম আক্কাছ বলেন, তৎকালীন সামরিক শাসক জিয়াউর রহমানের শাসনামলে ঘটনাটি ঘটেছিল। সেদিন আমরা কোনো অপরাধ করেনি। জাতির জনক বঙ্গবন্ধুর প্রথম মৃত্যুবার্ষিকী পালন করার জন্যই পুলিশ আমাদেরকে গ্রেপ্তার করেছিল।

তিনি বলেন, মুক্তিযুদ্ধে অংশ নিয়েছিলাম জীবন বাজি রেখে, তখন ভয় করেনি। আর বঙ্গবন্ধুর নামে মিলাদ পড়াব সেই ভয় তখন ছিল না। অথচ সেদিন আমাদেরকে পুলিশ নির্যাতন করে গ্রেপ্তার করলো। তবে আমার কোনো আফসোস নেই, জাতির জনকের নামে মিলাদ পড়াতে গিয়ে আমরা দীর্ঘদিন কারাভোগ করেছি। এতে আমরা আজ গর্বিত।

সেদিনের ছাত্রলীগ কর্মী আসাদুজ্জামান ফারুক বলেন, ১৯৭৬ সালের দুঃসময়ে আমরা সাহসের সঙ্গে বঙ্গবন্ধুর প্রথম মৃত্যুবার্ষিকী পালন করতে গিয়ে ছয় মাস কারাগারে ছিলাম। বর্তমানে আওয়াম লীগ সরকার ক্ষমতায় আছে। এই সুদিনে আমাদের কথা আজ কেউ মনে করে না। আমরা তখন যা করেছিলাম জাতির পিতাকে ভালোবেসে করেছিলাম, তাকে শ্রদ্ধা জানাতে করেছিলাম।

তৎকালীন যুবলীগ নেতা হাজি রুহুল আমিন বলেন, ওই সময়ে এ দেশের কোনো স্থানে বঙ্গবন্ধুর প্রথম মৃত্যুবার্ষিকী পালন করতে গিয়ে কোথাও কোনো নেতা-কর্মী গ্রেপ্তার হয়েছে কিনা আমাদের জানা নেই। অথচ সেদিন আমরা সাহসের সঙ্গে ভৈরবে বঙ্গবন্ধুর নামে মিলাদ মাহফিলের আয়োজন করেছিলাম। বিষয়টি প্রধানমন্ত্রীকে জানাতে পারলে আমরা গর্বিত হতাম। আমাদের ২২ জনের মাঝে আজ অনেকেই বেঁচে নেই। কিন্তু এখনও আমরা যারা বেঁচে আছি ওদিনের ঘটনায় কারাভোগ করলেও আমরা গর্ববোধ করি।


সর্বশেষ - জাতীয় সংবাদ