1. অন্যরকম
  2. অপরাধ বার্তা
  3. অভিমত
  4. আন্তর্জাতিক সংবাদ
  5. ইতিহাস
  6. এডিটরস' পিক
  7. খেলাধুলা
  8. জাতীয় সংবাদ
  9. টেকসই উন্নয়ন
  10. তথ্য প্রযুক্তি
  11. নির্বাচন বার্তা
  12. প্রতিবেদন
  13. প্রবাস বার্তা
  14. ফিচার
  15. বাণিজ্য ও অর্থনীতি

জামায়াত-শিবিরের তাণ্ডবে ক্ষয়ক্ষতি ১৫ লাখ টাকা

বিশেষ প্রতিবেদক : ইবার্তা টুয়েন্টিফোর ডটকম
বৃহস্পতিবার, ১৭ আগস্ট, ২০২৩

মানবতাবিরোধী অপরাধের মামলায় আমৃত্যু কারাদণ্ডপ্রাপ্ত দেলাওয়ার হোসাইন সাঈদীর মৃত্যুর পর তার মরদেহবাহী অ্যাম্বুলেন্স ঘিরে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয় (বিএসএমএমইউ) ও শাহবাগ মোড়ে ভাঙচুর-অগ্নিসংযোগের ঘটনাকে কেন্দ্র করে জামায়াত-শিবিরের সঙ্গে পুলিশের সংঘর্ষ হয়েছে। তবে, জামায়াত-শিবিরের সঙ্গে সংঘর্ষ এড়াতে ৫১৯ রাউন্ড রাবার বুলেট ব্যবহারের কথা জানিয়েছে পুলিশ।

এছাড়া ভাঙচুর-অগ্নিকাণ্ডের ঘটনায় প্রায় ১৪-১৫ লাখ টাকার ক্ষতি হয়েছে বলে দাবি করছে পুলিশ।

এছাড়া ১৪২ রাউন্ড সিসা বুলেট, ১৩টি লংগ্যাসের সেল, ২১টি শর্টগ্যাসের সেল, ৩৯টি সফট কাইনেটিক প্রজেক্টাইল, ২৩টি সেভেন ব্যাং গ্রেনেড এবং ৩০টি সাউন্ড গ্রেনেড ছুড়েছে বলে শাহবাগে দায়ের করা মামলা সূত্রে তথ্য পাওয়া গেছে।

ঢাকা মহানগর (ডিএমপি) পুলিশ জানিয়েছে, দেলাওয়ার হোসাইন সাঈদীর মরদেহের গোসল শেষে পরিবার প্রস্তুতি নেয় পিরোজপুর নিয়ে যাবে। তখন বিএসএমএমইউ ও শাহবাগে আগে থেকে অবস্থান নেওয়া কয়েক হাজার জামায়াত-শিবিরকর্মী দাবি তোলেন যে, ‘জানাজার নামাজ পড়ে মরদেহ নিতে চাই।’ তখন পুলিশ তাদের সেখানে (শাহবাগ চত্বর) জানাজার নামাজ পড়তে বলে। রাত সোয়া ২টার দিকে তারা জানাজার নামাজের পরিবর্তে আধা ঘণ্টা ধরে মোনাজাত করেন। তারা বলেন, আমরা জানাজা নামাজ পড়বো না মোনাজাত করেছি, পরে আমরা গায়েবানা জানাজা নামাজ পড়বো।

‘কিন্তু যখন মরদেহ গাড়িতে করে নিয়ে যাওয়া জন্য বের করা হয়, তখন হাজার হাজার জামায়াত-শিবির নেতাকর্মী গাড়ির সামনে শুয়ে পড়েন। তারা মরদেহ পিরোজপুরে নিয়ে যেতে দেবেন না। এসময় মরদেহবাহী গাড়ির সঙ্গে থাকা পুলিশ অফিসার ও সদস্যদের ওপর হামলা করেন জামায়াত-শিবিরের কর্মীরা। গাড়ি ভাঙচুরও শুরু করেন তারা। এ হামলায় ডিসি রমনাসহ পুলিশের বেশ কয়েকজন সিনিয়র অফিসার আহত হন। তারা পুলিশের ৪-৫টি গাড়ি ভাঙচুর করেন। দুটি মোটরসাইকেলে আগুন ধরিয়ে দেন। পুলিশ ধৈর্যসহকারে এ তাণ্ডব সহ্য করে।’

একপর্যায়ে হাসপাতালে চিকিৎসাধীন রোগীদের কথা মাথায় রেখে ভাঙচুর-অগিকাণ্ড ঠেকাতে আইনশৃঙ্খলা রক্ষায় বাধ্য হয়ে অত্যন্ত সীমিত আকারে শক্তি প্রয়োগ করে পুলিশ। কিছু টিয়ারগ্যাস নিক্ষেপ করে সাঈদীর মরদেহ পিরোজপুর পাঠানোর ব্যবস্থা করা হয়।

এ বিষয়ে জানতে চাইলে ডিএমপির মিডিয়া অ্যান্ড পাবলিক রিলেশন্স বিভাগের উপ-পুলিশ কমিশনার (ডিসি) মো. ফারুক হোসেন জানান, সাঈদীর মৃত্যুর পর বিএসএমএমইউতে জামায়াত-শিবিরের নেতাকর্মীরা আসতে শুরু করে। একপর্যায়ে তারা হাসপাতালের গেটের সামনে উসকানিমূলক স্লোগান দেওয়া শুরু করেন। গভীর রাতে ঢাকা মেডিকেল কলেজ, বিএসএমএমইউ ও বারডেম হাসপাতালের উদ্দেশে আসা জরুরি রোগী ও স্বজনরা হাসপাতালে যেতে না পেরে আর্তনাদ করতে থাকেন। আন্দোলনকারীদের রাস্তা ছেড়ে দেওয়ার জন্য অনুরোধ জানালে পুলিশের সঙ্গে তারা বেপরোয়া ও মারমুখী আচরণ করেন।

তিনি বলেন, এরপর ভোরের দিকে সাঈদীর মরদেহবাহী অ্যাম্বুলেন্স যখন হাসপাতাল থেকে বের হবে তখন গাড়ির সামনে বাধা সৃষ্টি করে ইট-পাটকেল, লাঠি ও রড দিয়ে পুলিশের কাজে বাধা দেন তারা। এরপর বিএসএমএমইউ’র ভেতর অগ্নিসংযোগ করেন। এসময় সরকার পতনের আন্দোলন শুরু হবে ঘোষণা দিয়ে রাষ্ট্রদ্রোহী স্লোগান দিতে থাকেন এবং পুলিশকে লক্ষ্য করে ককটেল বিস্ফোরণ করেন। এমতাবস্থায় মানুষের জানমাল রক্ষা ও নিজেদের আত্মরক্ষার্থে পুলিশ রাবার বুলেট, কাঁদানেগ্যাস ও সাউন্ড গ্রেনেড, সিসা বুলেট ব্যবহার করে তাদের ছত্রভঙ্গ করে।

ডিএমপির যুগ্ম কমিশনার (অপারেশনস) বিপ্লব কুমার সরকার বলেন, শুধু সাঈদীকে ঘিরেই নয়, যখনই জামায়াতে সুযোগ পাচ্ছে তখনই পুলিশের ওপর হামলা, সাধারণ মানুষের জানমালের ক্ষতি ও গাড়িতে আগুন দিচ্ছে। ২০১৪ সালে সাঈদীর মামলায় রায়ের সময়ও জামায়াতে ইসলামীর নেতাকর্মীরা জ্বালাও-পোড়াও করেছিল। সাঈদী মৃত্যুর পর তাদের উদ্দেশ্য ছিল ১৫ আগস্টের প্রোগ্রাম বানচাল করার। ২০১৪ সালে যারা হামলা ও বোমা নিক্ষেপ করেছিল ও সাঈদীকে চাঁদে দেখার প্রোপাগান্ডা চালিয়েছিল, তারাই শাহবাগ ও বিএসএমএমইউয়ে তাণ্ডব চালিয়েছে।

ডিএমপি কমিশনার খন্দকার গোলাম ফারুক বলেন, পুলিশ ধৈর্যসহকারে এ তাণ্ডব সহ্য করে। তারপরও আমরা কোনো শক্তি প্রয়োগ করিনি। ফজরের নামাজের পরে তাদের আবারও অনুমতি দেওয়া হলো জানাজার নামাজ পড়ার। কিন্তু তারা আমাদের অফিসারদের বের করে দিয়ে বিএসএমএমইউ দখলে নেন। তারা মরদেহ পিরোজপুর নিতে দেবেন না। এরপর ফেসবুক তারা প্রচার শুরু করলো সারাদেশ থেকে জামায়াত-শিবিরের নেতাকর্মীদের শাহবাগে জড়ো হওয়ার জন্য। তখন আইনশৃঙ্খলা রক্ষায় বাধ্য হয়ে অত্যন্ত সীমিত আকারে শক্তি প্রয়োগ করা হয়। আমরা কিছু টিয়ারগ্যাস নিক্ষেপ করি। এরপর সাঈদীর মরদেহ পিরোজপুর পাঠানোর ব্যবস্থা করি। কারণ হাসপাতালে অনেক রোগী ছিল। এ জন্য পুলিশ অত্যন্ত ধৈর্যের পরিচয় দিয়েছে।

সাঈদীর মরদেহবাহী অ্যাম্বুলেন্স ঘিরে বিএসএমএমইউ ও শাহবাগ মোড়ে হামলা-ভাঙচুরের ঘটনায় জামায়াত-শিবিরের ৫ হাজার নেতাকর্মীর বিরুদ্ধে মামলা হয়েছে। মঙ্গলবার (১৫ আগস্ট) রাতে শাহবাগ থানায় দায়ের করা এ মামলায় সরকারি কাজে বাধা, মারধর, গাড়িতে আগুন দেওয়ার অভিযোগ আনা হয়েছে।

এতে আসামি হিসেবে নামোল্লেখ আছে চারজনের। তারা হলেন- হামিদুর রহমান আজাদ, সাঈদীর ছেলে মাসুদ সাঈদী, জামায়াতে ইসলামীর কেন্দ্রীয় কর্মপরিষদ সদস্য ও ঢাকা মহানগর দক্ষিণের সেক্রেটারি ড. শফিকুল ইসলাম মাসুদ ও ঢাকা মহানগর জামায়াতে ইসলামীর সহকারী সাধারণ সম্পাদক মো. সাইফুল ইসলাম। এছাড়া অজ্ঞাতনামা সাড়ে ৪ হাজার থেকে ৫ হাজার জনকে আসামি করা হয়েছে।

এর আগে সোমবার (১৪ আগস্ট) রাত ৮টা ৪০ মিনিটে বিএসএমএমইউতে চিকিৎসাধীন অবস্থায় মারা যান দেলাওয়ার হোসাইন সাঈদী।

২০১৯ সাল থেকে কাশিমপুর কারাগারে আছেন দেলাওয়ার হোসাইন সাঈদী। ২০১০ সালের ২৯ জুন রাজধানীর শাহীনবাগের বাসা থেকে তাকে গ্রেফতার করা হয়।

মুক্তিযুদ্ধ চলাকালে হত্যা, অপহরণ, নির্যাতন, ধর্ষণ, অগ্নিসংযোগ, লুণ্ঠন, ধর্মান্তর করাসহ মানবতাবিরোধী অপরাধের আটটি অভিযোগ প্রমাণিত হওয়ায় ২০১৩ সালের ২৮ ফেব্রুয়ারি দুটি অভিযোগে তাকে মৃত্যুদণ্ড দেন আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল।

এরপর আসামি ও রাষ্ট্রপক্ষের করা দুটি আপিল আংশিক মঞ্জুর করে বেঞ্চের সংখ্যাগরিষ্ঠ বিচারপতিদের মতে ২০১৪ সালের ১৭ সেপ্টেম্বর সাঈদীর বিরুদ্ধে আমৃত্যু কারাদণ্ড দিয়ে সংক্ষিপ্ত রায় ঘোষণা করেন আপিল বিভাগ। রায় পুনর্বিবেচনার (রিভিউ) আবেদন করা হলে ২০১৭ সালের ১৫ মে আবেদন খারিজ করে আমৃত্যু কারাদণ্ড বহাল রাখেন আপিল বিভাগ।


সর্বশেষ - জাতীয় সংবাদ