1. অন্যরকম
  2. অপরাধ বার্তা
  3. অভিমত
  4. আন্তর্জাতিক সংবাদ
  5. ইতিহাস
  6. এডিটরস' পিক
  7. খেলাধুলা
  8. জাতীয় সংবাদ
  9. টেকসই উন্নয়ন
  10. তথ্য প্রযুক্তি
  11. নির্বাচন বার্তা
  12. প্রতিবেদন
  13. প্রবাস বার্তা
  14. ফিচার
  15. বাণিজ্য ও অর্থনীতি

দেশে জি-৩ রুই মাছ চাষে নতুন সম্ভাবনা

নিজস্ব প্রতিবেদক : ইবার্তা টুয়েন্টিফোর ডটকম
রবিবার, ৪ জুন, ২০২৩

জি-৩ রুই মাছ নিয়ে স্বপ্ন বুনছে যশোর। ‘জেনেটিক্যালি ইম্প্রুভড’ রুই মাছের এই জাতটির উৎপাদন সাধারণ রুই মাছের তুলনায় ৩৭ শতাংশ বেশি। ‘ওয়ার্ল্ড ফিশ’ উদ্ভাবিত এ জাতের রেণু উৎপাদন করছে যশোরের ছয়টি হ্যাচারি। এসব হ্যাচারি থেকে দেশের বিভিন্ন জেলায় এ পোনা সরবরাহ করা হচ্ছে। চাষি পর্যায়ে এ মাছ ছড়িয়ে দেওয়া সম্ভব হলে আগামী তিন বছরে পুকুরে রুই মাছের উৎপাদন লক্ষাধিক টন বৃদ্ধি সম্ভব বলে জানিয়েছেন সংশ্লিষ্টরা।

সূত্র জানায়, আন্তর্জাতিক গবেষণা সংস্থা ‘ওয়ার্ল্ড ফিশ’ বাংলাদেশে ২০১২ সালে রুই মাছের একটি উন্নত জাত উদ্ভাবনের উদ্যোগ নেয়। এর অংশ হিসেবে ২০১২-১৩ সালে হালদা, পদ্মা ও যমুনা নদী থেকে রেণু সংগ্রহ করা হয়। এরপর ধারাবাহিকভাবে এই তিন নদীর মাছের মধ্যে থেকে সর্বোৎকৃষ্ট বৈশিষ্ট্যের সমন্বয় করে জাত উন্নয়ন (জেনেটিক্যালি ইমপ্রুভড) করা হয়। এভাবে প্রথম ও দ্বিতীয় প্রজন্মের পর সর্বশেষ তৃতীয় প্রজন্ম বা জি-৩ জাত উদ্ভাবন করা হয়েছে।

ওয়ার্ল্ড ফিশের তথ্য অনুযায়ী, ২০২০ ও ২০২১ সালে ওয়ার্ল্ড ফিশ কৌলিতাত্ত্বিকভাবে উন্নত তৃতীয় প্রজন্ম বা জি-৩ রুই মাছের রেণু স্বল্প পরিসরে কিছু সংখ্যক হ্যাচারিতে অবমুক্ত করা হয়। পরে এসব হ্যাচারি মাছ বড় করে তোলে এবং নার্সারি ও খামারিদের কাছে বিক্রির জন্য বীজ উৎপাদন শুরু করে। হ্যাচারিতে অবমুক্তের পাশাপাশি ওয়ার্ল্ড ফিশ ২০২১ সালের মে থেকে ২০২২ সালের জুন পর্যন্ত যশোর, নাটোর ও রাজশাহী জেলার ১৯টি আধা-বাণিজ্যিক খামারে জি-৩ রুইয়ের পরীক্ষামূলক চাষ সম্পন্ন করে। পরীক্ষার উদ্দেশ্য ছিল, হালদা, পদ্মা ও যমুনা নদী থেকে উৎপন্ন অনুন্নত সাধারণ রুই এবং হ্যাচারি থেকে সংগ্রহ করা বহুল সমাদৃত একটি বাণিজ্যিক রুইয়ের সঙ্গে জি-৩ রুইয়ের তুলনামূলক বৃদ্ধির হার যাচাই করা।

পরীক্ষা শেষে জি-৩ রুই ১৯টি খামারের প্রতিটি খামারেই বৃদ্ধির দিক থেকে প্রথম স্থান অর্জন করে এবং সব খামারের গড় হিসাবে নদীতে উৎপন্ন অনুন্নত রুই থেকে ৩৭ শতাংশ বেশি বৃদ্ধি পায়।

ওয়ার্ল্ড ফিশের ফিশ ব্রিডিং অ্যান্ড রিসার্চ প্ল্যাটফর্ম ম্যানেজার মো. মাসুদ আক্তার জানান, জি-৩ রুই মাছের উৎপাদন সাধারণ রুইয়ের তুলনায় ৩৭ শতাংশ বেশি। এই মাছের নেতিবাচক কোনো দিক নেই। তাই সারাদেশে এই মাছ ছড়িয়ে দিতে হবে। দেশে ২০২০-২১ অর্থবছরে শুধু পুকুরে রুই মাছ উৎপাদন হয়েছে ২ লাখ ৯৪ হাজার ৮৩৭ মেট্রিক টন। রুইয়ের পরিবর্তে জি-৩ রুই ছড়িয়ে দিতে পারলে আগামী তিন বছরে উৎপাদন আরও ১ লাখ ৯ হাজার ৮৯ মেট্রিক টন বৃদ্ধি করা সম্ভব, যা বাংলাদেশ সরকারের ২০৪১ সালের লক্ষ্যমাত্রা পূরণে উল্লেখযোগ্য ভূমিকা রাখতে সক্ষম।

সংশ্লিষ্ট সূত্র জানায়, ২০২০-২১ অর্থবছরে এই জাতটি দেশের নির্বাচিত ১৯টি হ্যাচারিতে সরবরাহ করা হয় ব্রুড মাছ উৎপাদনের জন্য। এর মধ্যে যশোরের ছয়টি হ্যাচারি রয়েছে। হ্যাচারিগুলো হলো মা ফাতিমা ফিশ হ্যাচারি, মুক্তেশ্বরী ফিশ হ্যাচারি, মাতৃ ফিশ হ্যাচারি, রূপালি ফিশ হ্যাচারি, মধুমতি ফিশ হ্যাচারি ও ন্যাশনাল ফিশ হ্যাচারি। গত বছর প্রথমবারের মতো যশোরের এই হ্যাচারিগুলো জি-৩ রুইয়ের ২৭৬ কেজি রেণু উৎপাদন করে। এবছরও এরইমধ্যে এই হ্যাচারিগুলো থেকে প্রায় ৮শ কেজি জি-৩ রুই রেণু উৎপাদন করে চাষি পর্যায়ে সরবরাহ করেছে।

জি-৩ রুইয়ের রেণু উৎপাদনে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখায় যশোরের এই ছয় হ্যাচারি মালিককে সম্মাননাও প্রদান করেছে ওয়ার্ল্ড ফিশ। চাহিদা সাপেক্ষে এই বছর জেলার হ্যাচারিগুলোর ২-৩ মেট্রিক টন রেণু উৎপাদনের সক্ষমতা রয়েছে। তবে এজন্য চাষিদের এই মাছ চাষে উদ্বুদ্ধ করতে হবে বলে হ্যাচারি মালিকরা জানিয়েছেন।

যশোর জেলা মৎস্য হ্যাচারি মালিক সমিতির সভাপতি ও মা ফাতিমা ফিশ হ্যাচারির স্বত্বাধিকারী আলহাজ ফিরোজ খান বলেন, বাংলাদেশে মাছের ঘাটতি পূরণে জি-৩ রুই অভাবনীয় ভূমিকা রাখবে। এজন্য ওয়ার্ল্ড ফিশের মাধ্যমে যশোরের ছয়টি হ্যাচারি এই মাছের রেণু উৎপাদন করে সারাদেশে ছড়িয়ে দিচ্ছে। এই রেণু উৎপাদনে যশোরের হ্যাচারিগুলো গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখছে। সারাদেশে এই মাছের চাষ ছড়িয়ে দেওয়া সম্ভব হলে রেণু উৎপাদনে নেতৃত্ব দেবে যশোরের হ্যাচারিগুলো।

যশোর জেলা মৎস্য হ্যাচারি মালিক সমিতির সাধারণ সম্পাদক ও মাতৃ ফিশ হ্যাচারির স্বত্বাধিকারী জাহিদুর রহমান গোলদার বলেন, জি-৩ রুইয়ের রেণু উৎপাদন করে সরবরাহ করছেন তারা। এর উৎপাদনের হার তুলনামূলক বেশি হওয়ায় রেণুর চাহিদা বাড়ছে। এর চাষ ছড়িয়ে দিতে পারলে দেশের মাছ উৎপাদনের ঘাটতি যেমন পূরণ হবে তেমনি বিদেশেও রফতানি করা সম্ভব হবে।

চলতি বছরই প্রথমবারের মতো জি-৩ রুইয়ের চাষ শুরু করেছেন সাতক্ষীরার বিনেরপোতা এলাকার মৎস্যচাষি আরশাদ আলী সরদার।

তিনি বলেন, হ্যাচারি মালিকদের কাছে শুনেছেন জি-৩ রুই মাছের বৃদ্ধি অনেক বেশি। এ কারণে এ বছরই তিনি পরীক্ষামূলক জি-৩ রুই মাছের পোনা ছেড়েছেন। একমাসে বেশ ভালোই বাড়ছে। আশা করছি ভালো ফল পাওয়া যাবে। কাঙ্ক্ষিত উৎপাদন হলে এই চাষের পরিধি আরও বাড়াবেন বলে জানান তিনি।

জি-৩ রুই নিয়ে কথা হয় যশোর জেলা মৎস্য কর্মকর্তা ফিরোজ আহম্মেদের সঙ্গে। তিনি জানান, রুই মাছের ‘জেনেটিক্যালি ইম্প্রুভড’ করে এই জাতটি উদ্ভাবন করেছে ওয়ার্ল্ড ফিশ। চাষিদের কাছ থেকে জেনেছেন এর উৎপাদনের হার ৩৫ শতাংশ বেশি। একই পরিবেশে ও একই খাবারে এই মাছটি চাষ করা সম্ভব এবং এর কোনো নেগেটিভ দিক নেই। গুণগত মান ধরে রেখে এই মাছ চাষ ছড়িয়ে দেওয়া গেলে মাছের উৎপাদন বৃদ্ধিতে এটি গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখবে।

তিনি আরও উল্লেখ করেন, যশোরের ছয়টি হ্যাচারি এই মাছের রেণু উৎপাদন করছে। সারাদেশে রেণু ছড়িয়ে দিতে হ্যাচারিগুলো গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখতে সক্ষম হবে যদি তারা সততা ও আন্তরিকতার সঙ্গে গুণগতমান ধরে রেখে রেণু সরবরাহ করতে পারে।


সর্বশেষ - জাতীয় সংবাদ