ব্যথা-আঘাত কিংবা স্নায়ুবিক নানা সমস্যার ক্ষেত্রে পার্শ্বপ্রতিক্রিয়াবিহীন চিকিৎসা পদ্ধতি ফিজিওথেরাপি। চিকিসৎকরা বলছেন, কেবল অসুস্থ ব্যক্তিদের নয়; মানবদেহের কার্যকারিতা ধরে রাখা আর শারীরিক স্বাভাবিক সঞ্চালনের জন্য সুস্থ ব্যক্তিদেরও প্রয়োজন ফিজিওথেরাপি।
তবে যথাযথ চিকিৎসা নিশ্চিতে বড় প্রতিবন্ধকতা হচ্ছে স্বীকৃত জনবলের অভাব আর যত্রতত্র অনুমোদনহীন সেন্টার গড়ে ওঠা। এক্ষেত্রে অপচিকিৎসার বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিতে আইনের কঠোর প্রয়োজন ও নজরদারির তাগিদ দিচ্ছেন বিশেষজ্ঞরা।
গাজীপুরের বিজয়, মস্তিস্কের প্রদাহজনিত রোগে আক্রান্ত হয়ে দীর্ঘদিন থাকতে হয় আইসিইউ, লাইফ সাপোর্টেও। প্রতিবন্ধকতা দেখা দেয় হাঁটাচলা, কথা বলায়। তবে ফিজিওথেরাপি নিয়ে এখন অনেকটাই স্বাভাবিক ছন্দে বিজয়।
বিজয় বলেন, হাঁটাচলার বাইরে কথা বলতে পারতাম না। আবার চোখেও ঝাপসা দেখতাম। এখন সেটা অনেকটাই কমে গেছে।
স্ট্রোক আক্রান্ত জাকিয়া খান কিংবা বৈদ্যুতিক খুঁটি থেকে পড়ে পঙ্গুত্ব বরণ করা ক্যাবল অপারেটর হৃদয়ের গল্পটাও হতে চলছে অনেকটা একই রকম। হারিয়ে ফেলেছিলেন সব আশা, তবে এখন স্বপ্ন বুনছেন আবারো স্বাভাবিক চলার। কারো বা দুর্ঘটনা যার ভিত গড়ে দিয়েছে ফিজিওথেরাপি।
হৃদয় বলেন, হাটা তো দূরের কথা বিছান থেকেই নড়তে পারতাম না। এখন কিছুটা হাটতে পারি।
জাকিয়া খান বলেন, এখন আমি হাটতে পারছি, কথাতেও জড়তা আসে না। হাতটা একটু নরম হয়েছে আশা করি হাতটাও ভালো হয়ে যাবে।
বিশেষজ্ঞরা বলছেন, শরীরে দীর্ঘমেয়াদি বিভিন্ন ব্যথা, হাড়-মাংসপেশিতে আঘাত, অসারতা, দুর্ঘটনা, স্নায়ুবিক বিভিন্ন সমস্যা, নানা ধরনের অস্ত্রোপচারের পর পার্শ্বপ্রতিক্রিয়াবিহীন কার্যকর চিকিৎসা পদ্ধতি ফিজিওথেরাপি।
সেন্টার ফর দ্য রিহ্যাবিলিটেশন অব দ্য প্যারালাইজড (সিআরপি) ফিজিওথেরাপি বিভাগের বিভাগীয় প্রধান আনোয়ার হোসেন বলেন, কোনো জয়েন্টে ব্যথা, কোনো মাসলে ব্যথা অথবা খেলা করার সময় কোনো ইনিজুরির কারণে হতে পারে। আবার স্ট্রোক করছে একপাশ প্যারালাইসিস হয়ে গেছে বা অটিজমের কারণ। এই ধরনের সমস্যার ক্ষেত্রে কিন্তু ফিজিওথেরাপি অবশ্যই দরকার। আবার যারা সুস্থ আছেন তাদের ভালো থাকার জন্যও দরকার।
তবে ফিজিওথেরাপির ক্ষেত্রে বড় প্রতিবন্ধকতা হচ্ছে স্বীকৃত ও দক্ষ জনবলের অভাব। বাংলাদেশ ফিজিক্যাল থেরাপি অ্যাসোসিয়েশনের তথ্যমতে, ব্যথা, ব্যথাজনিত উপসর্গ, প্রতিবন্ধিতাসহ বিভিন্ন রোগের কারণে দেশে প্রায় দুই কোটি মানুষের ফিজিওথেরাপি চিকিৎসা প্রয়োজন।
অথচ বিপরীতে স্বীকৃত বিশ্ববিদ্যালয় থেকে ডিগ্রিধারী ফিজিওথেরাপিস্ট মাত্র সাড়ে ৩ হাজার। আরেক উদ্বেগ হচ্ছে, অনুমোদন ও স্বীকৃত জনবল না নিয়েই যেখানে সেখানে ফিজিওথেরাপি সেন্টার গড়ে ওঠা। ফলে বাড়ছে অপচিকিৎসার ঝুঁকি।
সিআরপির নির্বাহী পরিচালক ড. সোহরাব হোসেন বলেন, তিন মাসের অথবা ছয় মাসে কোর্স করেই তারা চিকিৎসা দিচ্ছে এবং মনে করছে আমি একজন ফিজিওথেরাপিস্ট। এই ভুঁইফোড় প্রতিষ্ঠানগুলো খুব ভয়ংকর। এটা যদি আমাদের দেশে নিয়ন্ত্রণ করা না যায় তাহলে রোগীরা সঠিক চিকিৎসা পাবে না।
ফিজিওথেরাপির মান নিয়ন্ত্রণে আইনের যথাযথ প্রয়োগ, নজরদারি আর মানসম্মত শিক্ষা নিশ্চিতের তাগিদ বিশেষজ্ঞদের।