1. অন্যরকম
  2. অপরাধ বার্তা
  3. অভিমত
  4. আন্তর্জাতিক সংবাদ
  5. ইতিহাস
  6. এডিটরস' পিক
  7. খেলাধুলা
  8. জাতীয় সংবাদ
  9. টেকসই উন্নয়ন
  10. তথ্য প্রযুক্তি
  11. নির্বাচন বার্তা
  12. প্রতিবেদন
  13. প্রবাস বার্তা
  14. ফিচার
  15. বাণিজ্য ও অর্থনীতি

পেটে মিলল ইয়াবা : বেঁচে থাকতে মুখ খোলেননি

নিজস্ব প্রতিবেদক : ইবার্তা টুয়েন্টিফোর ডটকম
সোমবার, ১২ সেপ্টেম্বর, ২০২২

এক হাজার পিস ইয়াবাসহ গত ১৬ আগস্ট পুলিশের হাতে গ্রেপ্তার হন সিদ্দিক আহমেদ (৬২)। পরদিন আদালতে হাজির করার সময় তার পেট ব্যথা শুরু হয়। তাৎক্ষণিক নেওয়া হয় রাজারবাগের কেন্দ্রীয় পুলিশ হাসপাতালে। প্রাথমিক চিকিৎসা শেষে তাকে ফের আদালতে পাঠানো হয়। কিন্তু ব্যথা না কমায় তাকে ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে নেওয়া হয়। কর্তব্যরত চিকিৎসক সঙ্গে সঙ্গে তাকে মেডিসিন ওয়ার্ডে পাঠান। সেখানে নেওয়ার পথে মারা যান তিনি।

চিকিৎসার শুরু থেকে মৃত্যুর আগ পর্যন্ত পেট ব্যথার আসল কারণ আড়াল করেন সিদ্দিক আহমেদ। বিষয়টি ধরা পড়ে ময়নাতদন্ত করতে গিয়ে। চিকিৎসক দেখতে পান, তার পেটে কালো পলিথিন প্যাঁচানো একটি প্যাকেট। সেখানে মেলে ৩৫ পিস ইয়াবা।

সংশ্লিষ্ট চিকিৎসক জানান, ওই প্যাকেটের কারণে সিদ্দিক আহমেদের পেটে ব্যথা হয়। অথচ শুরু থেকে তিনি বিষয়টি এড়িয়ে যান। শেষ পর্যন্ত মৃত্যুকে বরণ করতে হয় তাকে।

মতিঝিল গোয়েন্দা পুলিশ সূত্রে জানা যায়, গত ১৬ আগস্ট বিকেল ৫টার দিকে গোপন তথ্যের ভিত্তিতে রমনা থানার ইস্কাটন গার্ডেন সরকারি অফিসার্স কোয়ার্টারের ৫ নম্বর গেটের সামনে অভিযান চালায় তাদের একটি দল। পুলিশের উপস্থিতি টের পেয়ে পালানোর সময় আটক করা হয় সিদ্দিক আহমেদকে। এ সময় তার কাছ থেকে এক হাজার পিস ইয়াবা উদ্ধার করা হয়। ওই দিনই উপ-পরিদর্শক (এসআই) এরশাদ হোসেন বাদী হয়ে রমনা থানায় মাদক আইনে একটি মামলা দায়ের করেন। মামলা নং-১৯।

পরদিন সকালে আদালতে নিয়ে যাওয়ার সময় সিদ্দিক আহমেদ জানান, তার পেট ব্যথা করছে। পরে তাকে রাজারবাগের কেন্দ্রীয় পুলিশ হাসপাতালে নেওয়া হয়। সেখানে পরীক্ষা শেষে আবারও তাকে আদালতে নেওয়া হয়। আদালতে গিয়ে তিনি আবারও পেটে ব্যথায় গুরুতর অসুস্থ হয়ে পড়েন। আদালত থেকে তাকে ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের জরুরি বিভাগে নেওয়া হয়। পরীক্ষার পর চিকিৎসক তাকে মেডিসিন বিভাগে ভর্তির জন্য পাঠান। জরুরি বিভাগ থেকে মেডিসিন বিভাগে নিয়ে যাওয়ার সময় মারা যান সিদ্দিক আহমেদ।

নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক মতিঝিল গোয়েন্দা পুলিশের এক কর্মকর্তা বলেন, সিদ্দিক আহমেদের মৃত্যুর ঘটনায় শাহবাগ থানায় একটি অপমৃত্যু মামলা (মামলা নং-১০৪) দায়ের হয়েছে। এরপর ঢাকা জেলা প্রশাসক কার্যালয়ের সিনিয়র সহকারী কমিশনার ও নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট মো. আব্দুল্লাহ আল মাহফুজের উপস্থিতিতে তার সুরতহাল প্রতিবেদন তৈরি করা হয়। প্রতিবেদন শেষে ময়নাতদন্তের জন্য আসেন ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের ফরেনসিক বিভাগের চিকিৎসকরা। ময়নাতদন্তের সময় তার পেটের ভেতর স্কচটেপ দিয়ে কালো পলিথিনে মোড়ানো একটি প্যাকেট পাওয়া যায়। প্যাকেট খোলার পর দেখা যায় সেখানে ৩৫ পিস ইয়াবা ট্যাবলেট।

তিনি বলেন, প্রাথমিকভাবে আমরা ধারণা করছি ওই ইয়াবা ট্যাবলেট তার পেটে থাকায় ব্যথা অনুভব করেছিলেন। ব্যথা নিয়ে তিনি মারা গেলেন কিন্তু মৃত্যুর আগ পর্যন্ত আমাদের কাছে স্বীকার করলেন না। এর আগে তার কাছ থেকে এক হাজার পিস ইয়াবা উদ্ধার করা হয়। পেটে ইয়াবা থাকার বিষয়টি জানালে আমরা দ্রুত ব্যবস্থা নিতে পারতাম।

অপমৃত্যু মামলার তদন্ত কর্মকর্তা শাহবাগ থানার উপ-পরিদর্শক (এসআই) সুব্রত দেবনাথ বলেন, ময়নাতদন্তের সময় ফরেনসিক বিভাগের চিকিৎসক তার পেটে কালো স্কচটেপ দিয়ে প্যাঁচানো একটি প্যাকেট পান। প্যাকেট খোলার পর দেখা যায় সেখানে ৩৫ পিস ইয়াবা ট্যাবলেট। পরে ফরেনসিক বিভাগ থেকে আলামত হিসেবে ৩০ পিস ইয়াবা ট্যাবলেট আমার কাছে হস্তান্তর করা হয়। বাকি পাঁচ পিস রাসায়নিক পরীক্ষার জন্য মহাখালী পাঠানো হয়।

সুরতহাল প্রতিবেদন তৈরির সময় তার শরীরে কোনো আঘাতের চিহ্ন পাওয়া যায়নি— বলেন তদন্ত কর্মকর্তা।

ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের ফরেনসিক বিভাগের বিভাগীয় প্রধান অধ্যাপক ডা. কাজী গোলাম মোখলেছুর রহমান বলে, ময়নাতদন্তের সময় পেটের ভেতরে পলিথিনে মোড়ানো ৩৫ পিস ট্যাবলেট আমরা পেয়েছিলাম। তবে সেটি ইয়াবা কি-না, তা জনতে রাসায়নিক পরীক্ষার জন্য পাঁচ পিস আমরা মহাখালীতে পাঠিয়েছি। বাকি ৩০ পিস আলামত হিসেবে পুলিশের কাছে হস্তান্তর করা হয়েছে। রাসায়নিক পরীক্ষার রিপোর্ট পাওয়া গেলে বলতে পারব ট্যাবলটেগুলো ইয়াবা কি-না।

এ বিষয়ে জানতে চাইলে মতিঝিল বিভাগের গোয়েন্দা পুলিশের উপ-কমিশনার রিফাত রহমান শামীম বলেন, সিদ্দিক আহমেদ ইয়াবা ব্যবসায়ী। তার নামে ২০১৭ সালে টেকনাফ থানায় একটি মামলা (মামলা নং-৯), ২০১৮ সালে নারায়ণগঞ্জ থানায় একটি (মামলা নং-১৮) এবং ২০২১ সালে কর্ণফুলী থানায় একটি মাদকের মামলা (মামলা নং-৪২) রয়েছে। তার পরিবারও মাদক ব্যবসার সঙ্গে জড়িত। ময়নাতদন্ত শেষে তার ছেলে ও জামাতার কাছে মরদেহ হস্তান্তর করা হয়েছে।

‘আমরা বুঝতেই পারিনি তার পেটে ইয়াবা থাকতে পারে। এমনকি মৃত্যুর আগ মুহূর্ত পর্যন্ত তিনি বলেননি তার পেটে ইয়াবা আছে। যদি তিনি বিষয়টি আমাদের জানাতেন তাহলে তার পেট থেকে ইয়াবা বের করার ব্যবস্থা করতাম। ইয়াবাগুলো বের করলে হয়তো তিনি বেঁচে যেতেন’— বলেন এ কর্মকর্তা।


সর্বশেষ - জাতীয় সংবাদ