1. অন্যরকম
  2. অপরাধ বার্তা
  3. অভিমত
  4. আন্তর্জাতিক সংবাদ
  5. ইতিহাস
  6. এডিটরস' পিক
  7. খেলাধুলা
  8. জাতীয় সংবাদ
  9. টেকসই উন্নয়ন
  10. তথ্য প্রযুক্তি
  11. নির্বাচন বার্তা
  12. প্রতিবেদন
  13. প্রবাস বার্তা
  14. ফিচার
  15. বাণিজ্য ও অর্থনীতি

পুলিশ হাসপাতালের অফিস সহকারী ঢাকায় কিনলেন ৪ কোটি টাকার বাড়ি

নিজস্ব প্রতিবেদক : ইবার্তা টুয়েন্টিফোর ডটকম
শুক্রবার, ১৬ সেপ্টেম্বর, ২০২২

রফিকুল ইসলাম চাকরি করেন রাজারবাগ কেন্দ্রীয় পুলিশ হাসপাতালে। বর্তমানে তার পদ অফিস সহকারী কাম মুদ্রাক্ষরিক। বেতন পান ২৭ হাজার ১১০ টাকা।

সরকারি সুযোগ-সুবিধা কেটে হাতে পান ২০ হাজার ৪৩০ টাকা। অথচ এই কর্মচারী খিলগাঁওয়ের পূর্ব গোড়ানে সাড়ে ৩ কাঠা জমিতে ৮টি ফ্ল্যাটসহ ৪ তলা একটি বাড়ি কিনেছেন। বাড়িটির বর্তমান বাজার দাম চার কোটি টাকার ওপরে। মৌজা অনুযায়ী দলিলে লেখা হয়েছে ১ কোটি ২৭ লাখ টাকা।

এই অফিস সহকারীর সঙ্গে সাফ কবলা দলিলে নাম আছে মহিদুর রহমান জুয়েলেরও। তিনি দীর্ঘদিন ধরে এই হাসপাতালে ঠিকাদারি করেন।

পুলিশ হাসপাতালে কর্মরত একজন কর্মকর্তা নাম প্রকাশ না করার শর্তে বলেন, ‘টেন্ডার নিয়ন্ত্রণ, অতিরিক্ত বিল-ভাউচার, ওষুধ সরবরাহে অনিয়মসহ নানা খাত থেকে একটি সংঘবদ্ধ চক্র কোটি কোটি টাকা হাতিয়ে নিচ্ছে। পুলিশ কল্যাণ ট্রাস্টের টাকা এভাবে লুটেপুটে খাবে, তা আর সহ্য করা যাচ্ছে না।’

তিনি বলেন, ‘একজন অফিস সহকারী ২০ হাজার টাকা বেতন পেয়ে যদি ঢাকা শহরে একটি বাড়ি কিনে নিতে পারেন, তাহলে তাকে যারা পরিচালনা করেন সেসব কর্মকর্তা কী পরিমাণ অবৈধ সম্পদের মালিক হয়েছেন, তা দুদকের অনুসন্ধানের প্রয়োজন হয়ে পড়েছে। কারণ, কেন্দ্রীয় পুলিশ হাসপাতালটি পরিচালিত হয় পুলিশ কল্যাণ ট্রাস্টের টাকায়।’

তথ্যানুসন্ধানে দেখা যায়, খিলগাঁওয়ের পূর্ব গোড়ানের আদর্শ স্কুলসংলগ্ন ৩৯৭ হোল্ডিং নম্বরের বাড়িটির ক্রয়-বিক্রয়ে প্রকৃত তথ্য গোপন করা হয়েছে। মোটা অঙ্কের সরকারি ট্যাক্স ফাঁকি দিতে দলিলে ইমারত নির্মাণের বাস্তব তথ্য আড়াল করা হয়। দলিলে প্রায় সাড়ে তিন কাঠা (০৫৭২ অযুতাংশ) জমির দাম ধরা হয়েছে ৬৭ লাখ টকা। আর ৪ হাজার স্কয়ার ফুট ইমারতের দাম ধরা হয়েছে ৬০ লাখ টাকা।

মোট ১ কোটি ২৭ লাখ টাকা দলিলে দেখানো হয়েছে। খিলগাঁও সাবরেজিস্ট্রি অফিসের দলিল নং ৩৪১। তারিখ ২০২১ সালের ১৩ জানুয়ারি। অথচ বাস্তবে দেখা গেছে, ৪ তলা বাড়িটিতে ৮টি ফ্ল্যাট রয়েছে। প্রকৃতপক্ষে প্রতিটি ফ্লোরে ১৯শ স্কয়ার ফুট রয়েছে। এ হিসাবে ৮টি ফ্ল্যাটে ৭ হাজার ৬শ স্কয়ার ফুট হয়। এর বাইরে নিচতলায় একটি গাড়ির পার্কিং ও ছাদে চিলেকোঠা রয়েছে।

মৌজা দরে ১ কোটি ২৭ লাখ টাকা দলিলে উল্লেখ করা হলেও বাড়িটি কেনা হয়েছে প্রায় ৪ কোটি টাকায়। প্রায় আড়াই কোটি টাকা গোপন করা হয়েছে। এছাড়া ২১ মাস আগে বাড়িটি রেজিস্ট্রি করা হয়। কিন্তু মালিকের প্রকৃত তথ্য গোপন করতে বিদ্যুৎ বিল এখনো আগের মালিক সৈয়দ আবেদ মনসুরের নামেই চালিয়ে দেওয়া হচ্ছে।

বাড়ি কেনার কোটি কোটি টাকা আয়ের উৎস সম্পর্কে জানতে রফিকুল ইসলামের সঙ্গে দেখা করার চেষ্টা করা হয়। পুলিশ হাসপাতালে গিয়েও তাকে পাওয়া যায়নি। বারবার তার মোবাইল ফোনটিও বন্ধ পাওয়া যায়। বৃহস্পতিবার দুপুর আড়াইটার দিকে তার মেয়ে মোবাইল ফোন রিসিভ করে বলে, বাবা ঘুমাচ্ছে। এরপর বারবার ফোন করা হলেও আর রিসিভ করেনি। খুদে বার্তা পাঠিয়েও কোনো জবাব পাওয়া যায়নি।

তথ্যানুসন্ধানে জানা যায়, ১৯৮৬ সালের ১ জুলাই অফিস সহকারী পদে পুলিশ হাসপাতালে যোগ দেন রফিকুল ইসলাম। তার বাড়ি গোপালগঞ্জের কাশিয়ানী উপজেলার ধানজাইল গ্রামে। আর মহিদুর রহমানও ঠিকাদারি করেন দীর্ঘদিন ধরে। তার বাড়ি মানিকগঞ্জের হরিরামপুর উপজেলার পূর্ব খলিলপুরে। এসব ঠিকাদারের হাত ধরে পুলিশ হসপাতালের দায়িত্বে থাকা আরও কয়েকজন ঊর্ধ্বতন পুলিশ কর্মকর্তা একই কায়দায় কোটি কোটি টাকা হাতিয়ে নিয়েছেন। গিফট হিসাবে নিয়েছেন গাড়িও।

রফিকুল ইসলামের আয়বহির্ভূত সম্পদ অর্জনের বিষয়ে জানতে চাইলে তার এক সহকর্মী নাম প্রকাশ না করার শর্তে বলেন, ‘এক বছর ধরে রাজারবাগ কেন্দ্রীয় পুলিশ হাসপাতালের সব টেন্ডার নিয়ন্ত্রণ হয় পুলিশ সদর দপ্তর থেকে।

এর আগে হাসপাতাল কর্তৃপক্ষের হাতে ছিল সবকিছু। ওই সময় ওষুধ চাহিদাপত্রসহ হাসপাতালের আনুষঙ্গিক সরঞ্জামাদি টেন্ডারের সব কাজ ছিল রফিকুল ইসলামের হাতে। ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারা সার্জিক্যাল সরঞ্জামাদির চাহিদাপত্রসহ সব ধরনের টেন্ডারের কাজ তাকে দিয়েই করান। এই টেন্ডার নিয়ন্ত্রণ করেই কোটি কোটি টাকা হাতিয়ে নিয়েছে রফিকুল ইসলামসহ একটি প্রভাবশালী সিন্ডিকেট।

তিনি বলেন, টাকার বিনিময়ে দরপত্রে অংশ নেওয়া সর্বনিম্ন দরদাতার তথ্য গোপন করতেন। এতে সরঞ্জামাদি কেনায় সর্বনিম্ন দরদাতাকে কৌশলে আড়াল করে দেওয়া হতো। খরচ দেখানো হতো অতিরিক্ত টাকা। বিনিময়ে রফিকসহ এই সেক্টরের সিন্ডিকেট সদস্যরা প্রত্যেকেই বিপুল অঙ্কের টাকা ভাগাভাগি করতেন।

১৯৫৪ সালে প্রতিষ্ঠিত রাজারবাগ কেন্দ্রীয় পুলিশ হাসপাতালটির আধুনিকায়ন করেন বর্তমান আইজি ড. বেনজীর আহমেদ। পুলিশ কল্যাণ ট্রাস্টের আওতায় এই হাসপাতালটি পরিচালিত হয়। এর আগে আইসিইউ স্বল্পতায় পুলিশ সদস্যরাই উন্নত চিকিৎসা পেতেন না। এর মধ্যে কোভিড-১৯ ছড়িয়ে পড়লে দায়িত্ব পালন করতে নেমে শত শত পুলিশ সদস্য করোনায় আক্তান্ত হন। এই হাসপাতালটি ছিল শুধু পুলিশ সদস্যদের চিকিৎসাকেন্দ্র। করোনাকালীন এই হাসপাতালের দরজা উন্মুক্ত করে দেওয়া হয়। সাধারণ মানুষসহ রাজনীতিক, আমলা, রাষ্ট্রের অন্যান্য ক্ষেত্রের গুরুত্বপূর্ণ ব্যক্তিরা করোনা চিকিৎসা নিয়েছেন এখানে।

কোনো নিবিড় পরিচর্যাকেন্দ্র বা আইসিইউ ছিল না। বর্তমান পুলিশপ্রধানের তত্ত্বাবধানে নির্মাণ করা হয়েছে ১৫ বেডের আইসিইউ এবং ১৪ বেডের এসডিইউ। এখন এই হাসপাতালে ১৫০ জনের মতো চিকিৎসক রয়েছেন।

হাসপাতালটির দায়িত্বরত কর্মকর্তারা বলেছেন, চাহিদার সঙ্গে তাল মিলিয়ে বেড়েছে চিকিৎসা ও সেবার মান। তবে সরবরাহ বা ঠিকাদারিতে কি হচ্ছে তা কেউ জানে না।

হাসপাতালের পরিচালক পুলিশের ডিআইজি সালেহ মোহাম্মদ তানভীরের কাছে প্রশ্ন করা হয়, হাসপাতালের ঠিকাদারের সঙ্গে পিওন থেকে শুরু করে একটি শক্তিশালী চক্র তৈরি হয়েছে। হাসপাতালে এদের প্রভাব ভয়াবহ আকার ধারণ করেছে। একজন অফিস সহকারীও ঢাকায় চারতলা বাড়ি কিনেছেন। বিষয়টিকে আপনি কীভাবে দেখছেন? জবাবে তিনি বলেন, ‘দুই মাস হলো হাসপাতালে যোগদান করেছি। এসব বিষয়ে খোঁজ নিয়ে করণীয় ঠিক করা হবে।’


সর্বশেষ - জাতীয় সংবাদ