বিদেশ থেকে আমদানি করা জ্বালানি তেল খালাসে আর লাগবে না লাইটার জাহাজ। ১২ দিন নয়; তেল খালাস হবে মাত্র ৪৮ ঘণ্টায়। বছরে সাশ্রয় হবে ৮০০ কোটি টাকা।
অক্টোবরেই গভীর সমুদ্রে নোঙর করা বড় জাহাজ থেকে পাইপলাইনে কক্সবাজারের মহেশখালীতে আসতে যাচ্ছে জ্বালানি তেল। এরই মধ্যে প্রকল্পের ৯৮ শতাংশ কাজ শেষ। এর মাধ্যমে আমদানিকৃত জ্বালানি তেল খালাস ও পরিবহন প্রক্রিয়ায় আধুনিক যুগে প্রবেশ করতে যাচ্ছে বাংলাদেশ।
সিঙ্গেল পয়েন্ট মুরিং প্রযুক্তি, বহির্বিশ্বের মতো তেল খালাসে এবার নতুন প্রযুক্তির যুগে প্রবেশ করছে বাংলাদেশ। যার জন্য গভীর সমুদ্রে বসানো হয়েছে বিশেষ বয়া। সেই বয়ার মাধ্যমে গভীর সমুদ্রে নোঙর করা বড় জাহাজ থেকে সমুদ্রের তলদেশ দিয়ে যাওয়া ডাবল পাইপলাইনে মহেশখালীতে নির্মিত স্টোরেজ ট্যাঙ্কে আসবে জ্বালানি তেল।
প্রকল্প সংশ্লিষ্টরা জানায়, এসপিএম প্রকল্পের আওতায় ২২০ কিলোমিটার পাইপলাইনের পাশাপাশি তৈরি করা হয়েছে ছয়টি বিশালাকার স্টোরেজ ট্যাঙ্ক। ছয়টির মধ্যে প্রতিটি ৬০ হাজার কিলোলিটার ধারণ ক্ষমতার তিনটি ট্যাঙ্কে অপরিশোধিত তেল এবং বাকি প্রতিটি ৩৬ হাজার কিলোলিটার ধারণ ক্ষমতার তিনটি ট্যাঙ্কে সংরক্ষণ করবে ডিজেল। একই সঙ্গে তৈরি করা হয়েছে পাম্প স্টেশন, বুস্টার পাম্প, জেনারেটর, মিটারিং স্টেশন, ফায়ার ফাইটিং সিস্টেম। যা এখন পুরোপুরি দৃশ্যমান।
প্রকল্প পরিচালক প্রকৌশলী মো. শরিফ হাসনাত বলেন, জ্বালানি তেল সংরক্ষণের জন্য বিশালাকার তিনটি ক্রুড অয়েল ট্যাঙ্ক ও তিনটি ডিজেল অয়েল ট্যাঙ্ক করা হয়েছে। প্রত্যেকটি ক্রুড অয়েল ট্যাঙ্কে ধারণ ক্ষমতা ৪২ হাজার মেট্রিক টন করে তিনটি ট্যাঙ্কে ১২৬ মেট্রিক টন এবং প্রত্যেকটি ডিজেল অয়েল ট্যাঙ্কে ধারণ ক্ষমতা ২৬ হাজার মেট্রিক করে তিনটি ট্যাঙ্কে ৭৮ হাজার মেট্রিক টন মজুদের সক্ষমতা রয়েছে। সবমিলিয়ে এই প্রকল্পের মাধ্যমে দুই লাখ চার হাজার মেট্রিক টন জ্বালানি তেল মজুদের সক্ষমতা বাড়ছে।
মো. শরিফ হাসনাত আরও বলেন, প্রকল্পের পরীক্ষামূলক কার্যক্রম বা কমিশনিংয়ের কাজ পুরোপুরি অক্টোবরের শেষের দিকে কিংবা নভেম্বরের প্রথম সপ্তাহে শুরু হবে। প্রথমে ক্রুড অয়েল কমিশনিংয়ের কার্যক্রম শুরু হবে এবং তার পরপরই ডিজেল অয়েল কমিশনিংয়ের কার্যক্রম শুরু হবে- এভাবে পরিকল্পনা করা হয়েছে। আশা করছি, যথাসময়ে এটা সম্পন্ন করতে পারব।
চায়না পেট্রোলিয়াম পাইপলাইন ইঞ্জিনিয়ারিং কোম্পানি লিমিটেড বর্তমানে দেশের প্রথম এসপিএম সিস্টেম তৈরি করেছে। বাংলাদেশ ও চীনের জিটুজি প্রকল্পের আওতায় আট হাজার ৩৪১ কোটি টাকা ব্যয়ে নির্মিত হয়েছে এসপিএম। বাংলাদেশ পেট্রোলিয়াম কর্পোরেশন কর্তৃপক্ষ বলছে, বছরে অর্থ সাশ্রয়ের পাশাপাশি তেল পরিবহনেও নৈরাজ্য কমানো সম্ভব এই প্রযুক্তিতে।
বাংলাদেশ পেট্রোলিয়াম কর্পোরেশনের চেয়ারম্যান এ বি এম আজাদ বলেন, গভীর সাগর থেকে পাইপলাইনের মাধ্যমে মহেশখালী ট্যাঙ্ক পাম্প স্টেশনে তেল মজুদ করা হবে। যেটির মাধ্যমে তেল আনা হবে সেটি হচ্ছে এসপিএম বয়া, যা গভীর সাগরে স্থাপন করা হয়েছে।
বাংলাদেশ পেট্রোলিয়াম কর্পোরেশনের চেয়ারম্যান এ বি এম আজাদ আরও বলেন, এসপিএম প্রকল্পের ৯৮ শতাংশ কাজ শেষ হয়েছে। আমরা আগামী অক্টোবরের শেষের দিকে কমিশনিংয়ের দিকে যাব। কমিশনিংটা শেষ হলে পরে আশা করি, নভেম্বর বা ডিসেম্বরের দিকে পুরো অপারেশনাল কাজে আমরা চলে যেতে পারব।
সংশ্লিষ্টদের দেয়া তথ্যমতে, এসপিএম প্রতি বছর ৯ মিলিয়ন মেট্রিক টন তেল আনলোড করার ক্ষমতা রাখে।