1. অন্যরকম
  2. অপরাধ বার্তা
  3. অভিমত
  4. আন্তর্জাতিক সংবাদ
  5. ইতিহাস
  6. এডিটরস' পিক
  7. খেলাধুলা
  8. জাতীয় সংবাদ
  9. টেকসই উন্নয়ন
  10. তথ্য প্রযুক্তি
  11. নির্বাচন বার্তা
  12. প্রতিবেদন
  13. প্রবাস বার্তা
  14. ফিচার
  15. বাণিজ্য ও অর্থনীতি

তোমার নির্লজ্জ চোখ নামিয়ে কথা বলো হে আমেরিকা

নিউজ এডিটর : ইবার্তা টুয়েন্টিফোর ডটকম
বুধবার, ২৭ সেপ্টেম্বর, ২০২৩

অংশগ্রহণমূলক নির্বাচন অতি আবশ্যক। নইলে সরকারের নৈতিক ভিত্তি দুর্বল হয়ে পড়ে। নইলে সরকার জনবিচ্ছিন্ন হয়ে যায়, রাষ্ট্রে দুর্নীতি বেড়ে যায়, জঙ্গি-সন্ত্রাসসহ নানা অপশক্তি মাথাচাড়া দেয়, আমলাতন্ত্র রাজনীতিবিদদের চোখ রাঙায়, মুনাফাখোর ও কালোবাজারিরা লাগামহীন হয়ে পড়ে। তাতে তৈরি হয় জনঅসন্তোষ। আর একবার জনঅসন্তোষ রুদ্ররূপ ধারণ করলে সহজে থামানো যায় না। তখন জনগণ বিকল্প রাজনৈতিক শক্তি হিসেবে সামনে যাকে পায় তাকেই সমর্থন দিতে শুরু করে। এর বড় উদাহরণ চীন। বিপ্লবের আগে চিয়াং কাই শেকের শাসনে অতীষ্ঠ হয়ে উঠেছিল চীনের জনসাধারণ। তারা বিকল্প খুঁজছিল। তারা কমিউনিস্টদের মোটেই পছন্দ করতো না। কমিউনিস্ট সম্পর্কে তাদের ছিল সম্পূর্ণ ভ্রান্ত ধারণা। এই ধারণা গড়ে ওঠার পেছনে ছিল মার্কিন সাম্রাজ্যবাদী শক্তি। তারা পেছন থেকে চিয়াং কাই শেকের নেতৃত্বাধীন জাতীয়তাবাদী কুয়োমিনটাং দলকে সহযোগিতা করে যাচ্ছিলো। কিন্তু চিয়াং কাই শেকের দুঃশাসনে অতীষ্ঠ জনগণের হাতে আর কোনো বিকল্প ছিল না। তাই তারা অপছন্দের কমিউনিস্টদেরই সমর্থন দিতে শুরু করলো। বিপুল জনসমর্থন পেয়ে চীনা কমিউনিস্ট পার্টি ও লাল ফৌজবাহিনী চিয়াং কাই শেককে হটিয়ে রাষ্টক্ষমতা দখল করে নিয়েছিলো।

চীনে মাও সে তুং-এর মতো নেতা ছিল। বাংলাদেশে তার মতো কোনো নেতা নেই। আওয়ামী লীগ, বিএনপি ও কিছুটা জাতীয় পার্টি ছাড়া এ দেশে জনসম্পৃক্ত বড় কোনো রাজনৈতিক দল আপাতত নেই। আছে কী? কেউ সুনির্দিষ্টভাবে ‘আছে’ বলতে পারলে ‘নাই’ দাবি প্রত্যাহার করে নেবো। সুতরাং অংশগ্রহণমূলক নির্বাচন না হলে, গণতন্ত্র অবরুদ্ধ হয়ে পড়লে যে কোনো সময় অপশক্তি মাথাচাড়া দিয়ে উঠতে পারে। জনগণ বুঝে না বুঝে সেই অপশক্তিকে সমর্থন দিয়ে বসতে পারে। এ দিকটা রাজনীতিবিদদের ভাববার বিষয়। কিন্তু বাংলাদেশের আসন্ন নির্বাচন নিয়ে সাম্রাজ্যবাদী আমেরিকা যেভাবে বাংলাদেশকে চোখ রাঙাতে শুরু করেছে, তাতে মনে হচ্ছে এই দেশ আমেরিকার উপনিবেশ। কোনো দেশের যেকোনো ভিসানীতি থাকতেই পারে। বর্তমানে বাংলাদেশের বিস্তর নাগরিক ইন্ডিয়ার ভিসা পাচ্ছে না। টুরিস্ট ভিসা বন্ধ রেখেছে আপাতত। কনফারেন্স ও মেডিকেল ভিসা পেতেও কষ্ট হচ্ছে। এটা তাদের আপাতত ভিসানীতি। তাই বলে তারা দূতাবাসে প্রেস কনফারেন্স করে এই নীতির কথা ঘোষণা করছে না, যা আমেরিকা করলো।

সম্প্রতি আমেরিকা ঘোষণা দিলো যে, আসন্ন নির্বাচনকে বাধা দেওয়া বাংলাদেশি নাগরিকদের ওপর যুক্তরাষ্ট্রের পররাষ্ট্র দপ্তরের নিষেধাজ্ঞা আরোপ শুরু করেছে। আইন প্রয়োগকারী সংস্থা, ক্ষমতাসীন দল ও বিরোধী দলের সদস্যরা এতে অন্তর্ভূক্ত রয়েছেন। ব্যাপারটা এমন যে, মা তার পুত্র-কন্যাদের এই বলে শাসন করছে, ‘ঠিকমতো পড়ালেখা না করলে আজ তোমাদের ভাত বন্ধ।’ পিতা তার পুত্র-কন্যাদের এই বলে শাসন করছে, ‘আমার কথা না শুনলে তোমাদের একটা টাকাও দেবো না। আমার কথা না শুনলে এই বাড়িতে তোমাদের স্থান নেই। তোমাদের ত্যাজ্য ঘোষণা করলাম।’ প্রশ্ন হচ্ছে, হে আমেরিকা, আমরা তোমাকে মা মানলাম কিনা? বাপ মানলাম কিনা? তোমাকে হুঁশিয়ারি করার অধিকার আমরা দিলাম কিনা? তোমার দেশে তুমি যাকে ইচ্ছে তাকে প্রবেশাধিকার দেবে, প্রবেশাধিকার বাতিল করবে, এটা তোমার একান্তই ব্যক্তিগত ব্যাপার। কিন্তু এটাকে তুমি যেভাবে ফলাও করে প্রচার করছো, যেভাবে চোখ রাঙাচ্ছো, তাতে মনে হচ্ছে বাংলাদেশ তোমার উপনিবেশ। এই উপনিবেশে তোমারই রাজত্ব চলছে। মনে হচ্ছে এ দেশের মানুষ তোমার হুকুমের গোলাম।

আমেরিকা, তোমার এই চোখ রাঙানি দেখলে মনে পড়ে যায় দুই’শ বছরের বৃটিশ ঔপনিবেশিক শাসন ও আমাদের পরাধীনতার সেই মর্মন্তুদ ইতিহাস। মনে পড়ে যায় পশ্চিম পাকিস্তানের তেইশ বছরের দু:শাসনের নির্মম ইতিহাস। মনে পড়ে যায় আমাদের মুক্তিসংগ্রামে তোমার বিরোধিতার ইতিহাস। মনে পড়ে যায় আমাদের বিরুদ্ধে তোমার পাঠানো সপ্তম নৌ-বহরের কথা। মনে পড়ে যায় পৃথিবীর দেশে দেশে তোমার মাস্তানির কথা। হে খড়গধারী আমেরিকা, তুমি আমাদের গণতন্ত্রের সবক শেখাচ্ছো ভালো কথা। কিন্তু একবার কী তাকিয়ে দেখবে নিজের দিকে? তুমি পৃথিবীর শীর্ষ অস্ত্র উৎপাদনকারী রাষ্ট্র। প্রতি পাঁচ সেকেন্ডে একটি আগ্নেয়াস্ত্র তৈরি হয় তোমার দেশে। সেই আগ্নেয়াস্ত্রে প্রতি চৌদ্দ মিনিটে নিহত হয় একজন মানুষ। অস্ত্রই তোমার অর্থনীতির অন্যতম প্রধান চালিকাশক্তি। তুমি মারণাস্ত্র উৎপাদন করে আবার তুমিই শান্তির বুলি আওড়াও। নারীরা সবচেয়ে বেশি ধর্ষিত হয় তোমার দেশে। পৃথিবীতে ধর্ষণকবলিত রাষ্ট্রের তালিকায় তুমি শীর্ষে। জাতিগত ও ধর্মগত হামলার ঘটনা বেশি ঘটে তোমার দেশে। বর্ণবাদী সাদারা কালোদের সবচেয়ে বেশি নির্যাতন চালায়, হত্যা করে তোমার দেশে। তোমার দেশে বর্ণবাদের শিকার হয়নি এমন মানুষ খুঁজে পাওয়া দুষ্কর।

হে মরণাস্ত্রের কারবারি আমেরিকা, গণহত্যার ঘটনা বেশি ঘটে তোমার দেশে। স্কুলে ঢুকে বন্দুকধারীরা হত্যাকাণ্ড ঘটায় তোমার দেশে। একের পর এক বন্দুক হামলায় তুমি পর্যদুস্ত। বন্দুক হামলা থেকে রেহাই পাচ্ছে না তোমার দেশের স্কুল, কলেজ, বিশ্ববিদ্যালয়, হাসপাতাল, গীর্জা ও শপিংমল। তোমার দেশে দারিদ্যের সংখ্যা চার কোটি। জীবন-বিধ্বংসী মাদকের ব্যবহার তোমার দেশেই বেশি। তুমি মাদক ছড়িয়ে দিচ্ছো পৃথিবীর দেশে দেশে। বাংলাদেশের এতো এতো দুর্নীতিবাজ কোটি কোটি টাকা এদেশে থেকে পাচার করে তোমার দেশে নিয়ে গেছে, তোমার দেশে বাড়ি-গাড়ি কিনছে, তাতে তুমি একবারও বলোনি দুর্নীতিবাজরা তোমাদের ভিসা পাবে না। হে সুবিধাবাদি আমেরিকা, ইসরায়েল যে প্রতিদিন ফিলিস্তিনের মানুষদের মারছে, ইসরায়েলের ব্যাপারে তোমার ভিসানীতি কী? শি জিনপিং যে নিজেকে আজীবন চীনের প্রেসিডেন্ট ঘোষণা করে বসে আছে, চীনে তোমার ভীসানীতি কী? সংঘাতে-সংঘাতে পর্যদুস্ত পাকিস্তানে তোমার ভিসানীতি কী? সৌদি আরব যে সিরিয়ায় গণহত্যা চালাচ্ছে, সৌদিতে তোমার ভিসানীতি কী? মিয়ানমার যে আঠারো লাখ রোহিঙ্গাকে বাংলাদেশে ঠেলে দিলো, মিয়ানমারে তোমার ভিসা নীতি কী? আফ্রিকার দেশে দেশে যে সংঘাত, সহিংসতা, সামরিক অভ্যুত্থান চলছে, সেসব দেশে তোমার ভিসা নীতি কী?

এতো অপরাধ তোমার, এতো অশান্তি তোমাতে, এতো বৈষম্য তোমাতে, এতো এতো অসঙ্গতি তোমার, এতো এতো মাস্তানি তোমার, অথচ তুমিই কিনা শান্তির পথে আহ্বান করছো আমাদের। তুমিই কিনা চোখ রাঙাচ্ছো আমাদের। একটি স্বাধীন দেশের নাগরিক হিসেবে, একজন গর্বিত বাঙালি হিসেবে তোমার এই চোখ রাঙানি বড় বেশি লাগছে। চোখে লাগছে, কানে লাগছে, গায়ে লাগছে। হে আমেরিকা, তুমি নির্লজ্জ চোখ নামাও। চোখ নামিয়ে কথা বলো।

লেখক : স্বকৃত নোমান – কথাসাহিত্যিক


সর্বশেষ - জাতীয় সংবাদ