1. অন্যরকম
  2. অপরাধ বার্তা
  3. অভিমত
  4. আন্তর্জাতিক সংবাদ
  5. ইতিহাস
  6. এডিটরস' পিক
  7. খেলাধুলা
  8. জাতীয় সংবাদ
  9. টেকসই উন্নয়ন
  10. তথ্য প্রযুক্তি
  11. নির্বাচন বার্তা
  12. প্রতিবেদন
  13. প্রবাস বার্তা
  14. ফিচার
  15. বাণিজ্য ও অর্থনীতি

পলিনেট হাউস : কৃষি উন্নয়নের এক নতুন মাত্রা

বাণিজ্য প্রতিবেদক : ইবার্তা টুয়েন্টিফোর ডটকম
রবিবার, ২৩ অক্টোবর, ২০২২

সবজি চাষের জন্য বর্তমানে দেশের সবচেয়ে উপযোগী জেলা রাজশাহী। এ জেলার কৃষকরা সবজি চাষে রয়েছেন শীর্ষে। তবে জলবায়ু পরিবর্তনের বিরূপ প্রভাবে কৃষিক্ষেত্রে বেড়েছে ঝুঁকি। এ অবস্থায় ক্রমেই হুমকির মুখে পড়ছে কৃষি। তাই কৃষিকে বাঁচাতে নতুন নতুন গবেষণা শুরু করেছে কৃষি বিভাগ। এরই একটি অংশ ‘পলিনেট হাউস’। জলবায়ু ঝুঁকির চ্যালেঞ্জ মোকাবিলায় কৃষি বিজ্ঞানের নতুন উদ্ভাবন ইতিমধ্যে কৃষকদের মধ্যে সাড়া ফেলেছে।

সবজি চাষসহ আধুনিক কৃষিকাজের জন্য এখন নতুন প্রযুক্তি ‘পলিনেট হাউজের’ জুড়ি নেই। এর মাধ্যমে শীতকালীন সবজি যেমন গ্রীষ্মকালে উৎপাদন করা যাবে, তেমনি গ্রীষ্মকালের সবজিও শীতে উৎপাদন করা যাবে খুব সহজেই। হাতের মুঠোয় নতুন এই প্রযুক্তি চলে আসায় কৃষককে কোন বেগ পেতে হবে না। ‘পলিনেট হাউস’ প্রযুক্তির মাধ্যমে ভারি বৃষ্টি, তীব্র তাপদাহ, কীটপতঙ্গ, ভাইরাসজনিত রোগ ইত্যাদির মতো প্রতিকূল পরিস্থিতিতেও নিরাপদ থাকবে শাক-সবজি এবং ফলমূলসহ সব ধরনের কৃষি উৎপাদন।

কৃষি বিভাগের তথ্যমতে, পাইলট প্রকল্পের মাধ্যমে সরকারি উদ্যোগে দেশের সব বিভাগে অন্তত একটি করে পলিনেট হাউস নির্মাণ করে দেওয়া হচ্ছে। তা দেখেই উদ্বুদ্ধ হয়ে উঠছেন কৃষকরা। দেশের সবজি ভান্ডার খ্যাত রাজশাহী বিভাগে এমন ২১টি ‘পলিনেট হাউস’ তৈরি করা হয়েছে। এরমধ্যে রাজশাহীর পবা উপজেলা খড়খড়িতে তৈরি পলিনেট হাউসে সুফল পেতে শুরু করেছেন কৃষক।

রাজশাহীর পবা উপজেলার খড়খড়িতে ‘কৃষক বন্ধন বিসমিল্লাহ্ নার্সারির স্বত্বাধিকারী শামসুল আলম কাদুর ২৫ শতক জমিতে কৃষি বিভাগ থেকে সম্পূর্ণ সরকারি সহযোগিতায় পলিনেট হাউস করে দেওয়া হয়েছে। এতে উন্নতমানের পলি ওয়ালপেপার ব্যবহার করা হয়েছে। লোহার অ্যাঙ্গেলের ওপর পলিপেপার দিয়ে তিনটি শেডে এই পলিনেট হাউস নির্মাণ করা হয়েছে। এতে ব্যয় হয়েছে প্রায় ১৫ লাখ টাকা। এর স্থায়িত্বকাল ধরা হয়েছে প্রায় ২০ বছর।
এরপর রক্ষণাবেক্ষণসহ বিভিন্ন জিনিসপত্র পরিবর্তনের প্রয়োজন হতে পারে। প্রথমবার কৃষি বিভাগের পক্ষ থেকে পুরো খরচ দেওয়া হয়েছে। তবে এই টাকা শোধ দিতে হবে না। কৃষক শামসুল আলমকে একটি শর্ত দিয়েছে কৃষি বিভাগ। শর্তটি হচ্ছে- এখানে উৎপাদিত বীজ, শাক-সবজি ও ফলমূল স্থানীয়ভাবে সবার কাছে ন্যায্যমূল্যে বিক্রি করতে হবে। আর এ জন্য বিক্রির রশিদ বই রাখতে হবে। শামসুল আলম কাদু বলেছেন, তার নার্সারির পাশেই এই পলিনেট হাউস নির্মাণ করে দিয়েছে কৃষি বিভাগ। গত জুলাই থেকে এর ভেতরে চাষাবাদ শুরু করেছেন। তিনি ৮০ হাজার টাকার বীজ বুনেছেন। এখান থেকে চারা উৎপাদন করছেন।

এখানে শীতকালীন টমেটো, ফুলকপি ও কাঁটা বেগুন এবং চায়না বেগুনের বীজ বুনেছেন। আপাতত তিনি বীজ থেকে চারা উৎপাদন করছেন। এরপর অন্যান্য ফসল চাষের ব্যাপারেও ভাববেন। তবে পলিনেট হাউসের মধ্যে এই দুই মাসের মধ্যেই তিনি উন্নতমানের বীজ উৎপাদনে সফলতা পেয়েছেন।
এতদিন নিম্নমানের চারা ও মেয়াদোত্তীর্ণ চারা নিয়ে উদ্বেগ-উৎকণ্ঠার মধ্যে থাকতেন কৃষক। কিন্তু তার এখান থেকে উন্নতমানের বীজের চারা পেয়ে অনেক খুশি। বাজারের চেয়ে দামও কম। তাই অনেকেই এখন ব্যক্তি উদ্যোগেই এই পলিনেট হাউস নির্মাণের কথা ভাবছেন।

স্থানীয় কৃষি বিভাগ সূত্রে জানা যায়, পলিনেট হাউসে উচ্চমূল্যের ফসল যেমন ক্যাপসিকাম, ব্রকলি, রকমেলন, রঙিন (হলুদ) তরমুজ, রঙিন ফুলকপি, বাঁধাকপি, লেটুস ও অন্যান্য অসময়ের সবজির পাশাপাশি চারা উৎপাদনের সুযোগ তৈরি হয়েছে। এছাড়াও গ্রীষ্মকালেও ফলবে শীতকালীন সবজি। এর মধ্যে টমেটো, ফুলকপি, বেগুন, গাজর ইত্যাদি ফসল রয়েছে। এর ফলে সবজি চাষে যেমন বৈচিত্র্য আসবে, তেমনি অনেকেই আয়ের নতুন উৎসের সন্ধান পাবে। ওপরে উন্নতমানের পলিথিনের আচ্ছাদন থাকে। তাই এতে সূর্যের ক্ষতিকর রশ্মি ভেতরে প্রবেশে বাধা পায়। এজন্য অতি বৃষ্টি বা প্রাকৃতিক দুর্যোগেও ফসল অক্ষত থাকে। আর এই পদ্ধতিতে কৃষকরা সারা বছর সবজি চাষ করতে পারবেন। এতে তাপমাত্রা নিয়ন্ত্রণ করে সব ধরনের সবজি চাষ করে কৃষক আর্থিকভাবে সফলতা পাবেন। কৃষি বিভাগ থেকে এ বিষয়ে প্রয়োজনীয় পরামর্শ দেওয়া হচ্ছে।

রাজশাহীর পবা উপজেলার কৃষি কর্মকর্তা শফিকুল ইসলাম বলেছেন, অসময়ে সবজি চাষের জন্য পলিনেট হাউস দেশে আধুনিক কৃষি প্রযুক্তিতে নতুনভাবে সংযোজন হতে যাচ্ছে। গবেষণার উদ্ধৃতি দিয়ে তিনি জানান, পলিনেট হাউসে ফসলের উৎপাদন ২০ শতাংশ বেশি। পাশাপাশি পোকামাকড়ের আক্রমণও ৭০ শতাংশের কম হবে। প্রাথমিকভাবে খরচ কিছুটা বেশি হলেও এতে উৎপাদন খরচ অত্যন্ত কম হবে। উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা শফিকুল ইসলাম আরও জানান, পবায় এই প্রথম পলিনেট হাউস তৈরি হয়েছে। যা দেখে এখন শিক্ষিত বেকার যুবকরাও আগ্রহী এবং উদ্বুদ্ধ হচ্ছেন। তারা আশা করছেন, পলিনেট হাউসের মাধ্যমে উচ্চমূল্যের ফসল যেমন ফলবে তেমনি অফ সিজনে অন্যান্য সবজিও উৎপাদন হবে। পাশাপাশি চারা উৎপাদনের সুযোগও তৈরি হবে। ফলে রাজশাহী অঞ্চলে সবজি চাষে গতি বৃদ্ধি পাবে।

রাজশাহী কৃষি সম্প্রসারণ অধিদফতরের উপ-পরিচালক মোজদার হোসেন জানান, আধুনিক প্রযুক্তি সম্প্রসারণের মাধ্যমে রাজশাহী জেলায় কৃষি উন্নয়ন প্রকল্পের আওতায় পবায় পলিনেট হাউস স্থাপন করা হয়েছে। এ পদ্ধতিতে কৃষকরা সারা বছরই সব ধরনের সবজি চাষ করতে পারবেন।


সর্বশেষ - জাতীয় সংবাদ