1. অন্যরকম
  2. অপরাধ বার্তা
  3. অভিমত
  4. আন্তর্জাতিক সংবাদ
  5. ইতিহাস
  6. এডিটরস' পিক
  7. খেলাধুলা
  8. জাতীয় সংবাদ
  9. টেকসই উন্নয়ন
  10. তথ্য প্রযুক্তি
  11. নির্বাচন বার্তা
  12. প্রতিবেদন
  13. প্রবাস বার্তা
  14. ফিচার
  15. বাণিজ্য ও অর্থনীতি

আগাম আলু চাষে ব্যস্ত নীলফামারীর কৃষকরা

ডেস্ক রিপোর্ট : ইবার্তা টুয়েন্টিফোর ডটকম
বুধবার, ২৫ অক্টোবর, ২০২৩

উত্তরের কৃষি অর্থনীতি নির্ভর জেলা নীলফামারী। এ জেলার অধিকাংশ মানুষ জীবিকা নির্বাহ করে কৃষিকাজ করে। জেলার উর্বর দোআঁশ, বেলে দোআঁশ মাটিতে বিভিন্ন রকম ফসল ফলানো যায়। দীর্ঘ দিন ধরে এ জেলার কৃষকেরা অল্পপুঁজিতে আগাম আলু চাষ করে আসছে। স্থানীয় বাজারে চাহিদা মিটিয়ে সারাদেশে পৌঁছে দিতে ও ভালো দাম পাওয়ার স্বপ্নে আগেভাগে উচুঁ সমতল জমিতে এই আলু রোপণ করে ব্যস্ত সময় পার করছেন নীলফামারীর প্রান্তিক ও মাঝারি চাষিরা।

আগাম জাতের আলু রোপণের জন্য হিমাগার থেকে বীজ সংগ্রহ, জমি প্রস্তত, সার প্রয়োগসহ বিভিন্ন কাজে দিনভর ব্যস্ত তারা। ভাদ্র ও আশ্বিন মাসে স্বল্পমেয়াদি আগাম আউশ, আমন ধান কাটা ও মাড়াই শেষ করে সেই জমিতে এবার আলু রোপণের পালা।

সরেজমিনে জেলার বিভিন্ন উপজেলা ঘুরে দেখা গেছে, আলু রোপণকে ঘিরে মাঠজুড়ে কৃষকের মাঝে প্রাণচাঞ্চল্য ফিরে এসেছে। দ্বিগুণ লাভের আশায় মাঠে কেউবা জমি তৈরি, আগাছা পরিষ্কার ও বীজ সংগ্রহ নিয়ে নিজেদের মতো ব্যস্ত সময় পার করছেন।

জেলা কৃষি অফিস সূত্রে জানা গেছে, জেলায় এ বছর ২১ হাজার ৭১২ হেক্টর জমিতে আলু চাষের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়েছে। যার মধ্যে আগাম আলুর লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়েছে ৮ হাজার ৮০০ হেক্টর। গত বছরের তুলনায় আলু চাষ বৃদ্ধি পাবে। দোআঁশ মাটিতে ৫০-৫৫ দিনে উত্তোলনযোগ্য সেভেন জাতের আগাম আলুর বীজ রোপণে মধ্যেই উত্তোলন যোগ্য হয়ে ওঠে। যার আলু যত আগে উঠবে, সে তত বেশি লাভবান হবেন। মৌসুমের শুরুতে নতুন আলু ভোক্তাকে দিতে পারলে চড়া বাজারমূল্য পেয়ে দ্বিগুণ লাভবান হবেন।

জানা গেছে, বিগত বছরে সেপ্টেম্বর মাসের শুরুতে আলু চাষ করা হলেও এবছর বৈরী আবহাওয়ার কারণে দেরিতে চাষ করতে হচ্ছে কৃষককে। তাছাড়া জমিগুলোতে ত্রি-ফসলী হিসেবে ব্যবহার করেছে কৃষক। প্রতি বছর আগাম আলু চাষ করে স্বাবলম্বীও হয়েছেন অনেক প্রান্তিক ও মাঝারি কৃষক। বাড়তি দামের আশায় চাষিরা আগেভাগেই আলু রোপণ করছেন।

নীলফামারী সদরের কচুকাটা বন্দরপাড়া এলাকার কৃষক রফিকুল ইসলাম বলেন, এ বছর ৪ বিঘা জমিতে আগাম আলু রোপণ করেছি। এবার আলুর বীজ ৪০ থেকে ৫০ টাকা কেজি কিনতে হয়েছে। তাতে আগেভাগে আলু উত্তোলন করতে পারলে ৭০ থেকে ৮০ টাকা কেজি দরে বাজার ধরা যাবে। এর থেকে কম দাম পেলে আমাদের আলু চাষ করে লোকসানে পড়তে হবে।

একই এলাকার মহসিন আলী আগাম আলু চাষ করেছেন ৫ বিঘা জমিতে। তিনি বলেন, আমাদের এদিকের ডাঙা জমিগুলো একদম উঁচু এবং বালুমিশ্রিত। ভারী বৃষ্টিপাত হলেও তেমন ভয় থাকে না। তাই আগেভাগে দ্বিগুণ লাভের আশায় আগাম আলু চাষ করছি।

জলঢাকা উপজেলার মীরগঞ্জের কালকেট দোলাপাড়া গ্রামের তোফাজ্জল হোসেন বলেন, যেভাবে সার কিটনাশকের দাম তাতে বিঘা প্রতি ৪০ থেকে ৫০ হাজার টাকা খরচ হচ্ছে। আগাম আলু আবাদ করে আমরা চিন্তিত থাকি। যদি ৮০ থেকে ১০০ টাকা কেজি দাম না পাই তাহলে আলু আবাদ করে লস হবে।

একই এলাকার আনিছুর রহমান বলেন, গত বছরের তুলনায় এবার আলুর বীজের দাম তিন গুণ বেড়েছে। বেড়েছে কৃষি উপকরণের দামও। এবার আগাম বৃষ্টি হওয়া অনেক লাগানো আলুর পচেঁ গেছে। আলু দাম না পেলে আমরা কৃষক মারা যাবো। আমরা কৃষক আগাম আলু চাষ করে চিন্তিত থাকি দাম পাবো কী না। সরকারের কাছে আবেদন যাতে আগাম আলুর দাম পাই।

কিশোরগঞ্জ উপজেলার বাহাগিলী ইউনিয়নের দক্ষিণ বাহাগিলী গ্রামের মমতাজ আলী বলেন, প্রত্যেক বছরের মতো এবারও ১১ বিঘা জমিতে আগাম জাতের আলু রোপণের প্রস্ততি নিয়েছি। এর মধ্যে সেভেন জাতের চার বিঘা জমিতে বাকি সাত বিঘা দুই-একদিনের মধ্যে রোপণ শেষ করবো। আবহাওয়া ভালো থাকলে ৫৮ থেকে ৬০ দিনের মধ্যে আলু ঘরে তুলতে পারবো। বাজারদর ভালো পেলে সার, বীজ, পরিবহন ও শ্রমিক বাবদ খরচ বাদে ১১ বিঘায় লাভ হবে প্রায় পাঁচ থেকে ছয় লাখ টাকা পর্যন্ত।

একই এলাকার আব্দুল জব্বার ১৩ বিঘা জমিতে আগাম আলু রোপণ করছেন। তিনি বলেন, এ এলাকার মাটি উঁচু এবং বালুমিশ্রিত হওয়ায় বড় ধরনের প্রাকৃতিক দুর্যোগে ক্ষতিগ্রস্ত না হলে আগাম আলু চাষে তেমন কোনও ভয় থাকে না। ফলন কম হলেও রাজধানীসহ বিভাগীয় শহরে চড়া দামে আলু বিক্রি করে দ্বিগুণ লাভবান হওয়া যায়।

কিশোরগঞ্জ উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা লোকমান আলম বলেন, কিশোরগঞ্জ উপজেলার মাটি ও আবহাওয়া আগাম আলু চাষের জন্য খুবই উপযোগী। প্রতি বছর এ এলাকার কৃষক আগাম আলু চাষ করে দ্বিগুণ লাভ করে থাকেন। গত বছরের চেয়ে এবার ৪০০ হেক্টর বেশি জমিতে আলু চাষের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়েছে।

নীলফামারী জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উপ-পরিচালক ড. এস. এম. আবু বকর সাইফুল ইসলাম বলেন, চলতি বছর ২১ হাজার ৭১২ হেক্টর জমিতে আলু চাষের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়েছে। যার মধ্যে আগাম আলুর লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়েছে ৮ হাজার ৮০০ হেক্টর। যা গত বছরের তুলনায় আলু চাষ বৃদ্ধি পাবে। বর্তমান আবহাওয়া অনুকূলে থাকায় উঁচু জমিতে আলুচাষে কৃষকদের পরামর্শ দেওয়া হচ্ছে। নিচু জমিতে আবহাওয়া দেখে রোপণের কথা বলা হচ্ছে।


সর্বশেষ - জাতীয় সংবাদ